আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথে পথে দুর্ভোগ

গৃহবধূ আখতারা কণা ঈদ করে স্বামী ও ১০ মাসের সন্তানকে নিয়ে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা থেকে শুভ বসুন্ধরা বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন বৃহস্পতিবার রাত ৮টায়। তিনি ঢাকায় পৌঁছেন পরদিন রাত ৮টায়। অথচ বাসে এ পথে লাগার কথা ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। আবার হাতীবান্ধায় শুক্রবার সন্ধ্যায় যাদের রওনা দেওয়ার কথা, সেই বাস ঢাকা থেকে পৌঁছেছে গতকাল বেলা ১১টার পর। এভাবে অবর্ণনীয় কষ্ট নিয়ে কর্মস্থল ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে সারা দেশের মানুষ।

আর এ অবস্থা চলছে গত কয়েক দিন। উত্তরবঙ্গের বগুড়া পার হওয়ার পর থেকে এ দুর্ভোগের শুরু। এর পর যমুনা সেতু কোনোমতে পার হওয়ার পর প্রতিটি যানবাহনকে টাঙ্গাইল আসতেই কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা রাস্তায় থাকতে হচ্ছে। আর এ দীর্ঘ সময় সড়কে থাকায় চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নারী ও শিশুদের। পয়ঃ সমস্যা সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে নারীদের।

উত্তরবঙ্গের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল ও সন্ধ্যার বাসের যাত্রীরা গতকাল সকাল ১০টার পর বাসে উঠতে পেরেছে। অনেককেই বাসের আশায় মধ্যরাত পর্যন্ত বিছানা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে। কেউ কেউ রাতে থেকেছেন কাউন্টারেই, অনেকে স্থানীয় হোটেলে আশ্রয় নিয়ে রাত কাটিয়েছেন। বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া থেকে ঢাকাগামী সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, শুক্রবার সকাল ৮টার বাসে টিকিট কেটে বিকাল সোয়া ৩টায় বাসে উঠে শনিবার সকাল ৭টায় ঢাকায় পৌঁছেন। তিনি জানান, পথে যমুনা ব্রিজ থেকে চান্দুরা পর্যন্ত ব্যাপক যানজট।

চান্দুরার পর জ্যাম থাকলেও সে তুলনায় সময় লেগেছে কম। পথে পথে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। মহাসড়কের এমনো কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে সেখানে কোনো খাবার নেই। বাথরুম নেই। দুই থেকে তিন কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে হয়েছে।

রাতে তেমন নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চোখে পড়েছে খুব কম। এদিকে গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বগুড়া পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করেন। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন ঢাকার বাইপাইলে বগুড়ার শ্রমিককে মারধর করা ও পুলিশের চাঁদাবাজির প্রতিবাদে বগুড়া-ঢাকা, বগুড়া-রংপুরসহ সব সড়ক অবরোধ করে। অবরোধের ফলে বগুড়া অঞ্চলের মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।

বগুড়া ট্রাফিক ফাঁড়ির ইনচার্জ খলিলুর রহমান জানান, বগুড়ায় পরিবহন শ্রমিকরা প্রায় ৩ ঘণ্টার মতো সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের পর সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলে তারা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। দুপুরের পর থেকে বগুড়ায় কোনো যানজট নেই।

এদিকে গাজীপুর অংশের চন্দ্রা এলাকায় শনিবার তৃতীয় দিনের মতো তীব্র যানজট দেখা দেয়। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, গেল বৃহস্পতিবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় যমুনা সেতু থেকে টাঙ্গাইল হয়ে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়।

এদিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো একই সমস্যায় পড়েছে। গত শুক্রবার বিকালে মহাখালী বাসটার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসগুলো শনিবার সকাল ৭-৮টায় টাঙ্গাইল এসে পৌঁছে। রাত ১টার দিকে ছেড়ে আসা সংবাদপত্রের গাড়ি সকাল ১০টার মধ্যেও পৌঁছতে পারেনি। টাঙ্গাইলে দায়িত্বরত জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মুরাদ জানিয়েছেন, রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপ রয়েছে। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালক যত্রতত্র গাড়ি চালানোর ফলে এই যানজট দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

রাস্তায় ছোটখাটো দুর্ঘটনার কারণে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট স্থবির : শুক্রবার বিকালে ঘাটে এসে ফেরি না পেয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের রাত কাটাতে হয়েছে কাওড়াকান্দি ঘাটে। এ ফেরিঘাটের কয়েক কিলোমিটার আগ থেকে বাস ও মালবোঝাই ট্রাকের দীর্ঘ লাইন সরছে না। দূরপাল্লার যাত্রীরা সারা রাত কাওড়াকান্দি ঘাটে অবস্থান করে অনেকেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘ যানজটের কারণে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ সব শ্রেণীর যাত্রীকে হেঁটে পাঁচ্চর থেকে কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট পর্যন্ত পৌঁছতে হয়।

যাত্রীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ নিয়ে বিপাকে যাত্রীরা। সরেজমিন দেখা যায়, কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩-৪ দিন ধরে পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় কাওড়াকান্দি ঘাটে আটকে পড়েছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের হাজারো যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।

মাদারীপুর থেকে ঢাকাগামী চন্দ্র পরিবহনের যাত্রী মশিউর রহমান জানান, সকালে মাদারীপুরের মস্তফাপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটে তীব্র যানজটের কারণে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে এসেছি।

বিআইডবি্লউটিএর কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক এম এ বাতেন মিয়া জানান, পরপর দুই দিনের হরতাল, ঈদ শেষে রাজধানীমুখো মানুষের অতিরিক্ত চাপ ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাতায়াত ইত্যাদি কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

দৌলতদিয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় গাড়ির সারি : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় তিন দিন ধরে যানবাহনের জট খুলছে না। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা থেকে ছেড়ে আসা পাঁচ শতাধিক যানবাহন গতকাল বিকাল পর্যন্ত পারাপারের অপেক্ষায় থাকে। দুই দিন আগে আসা অনেক পণ্যবাহী ট্রাকও আটকে আছে।

দুপুরে দেখা গেছে, ফেরিঘাট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা শুধু ট্রাকের সারি। এ ছাড়া ফেরিঘাট থেকে ক্যানালঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রীবাহী বাসের সারি।

বিআইডবি্লউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ে সহকারী ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম বলেন, তিন শতাধিক সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক ও দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।

তিল ধারণের ঠাঁই নেই লঞ্চ-বাস টার্মিনালে : ঈদের ছুটি শেষ। ফিরতে হবে ঢাকায়।

কিন্তু তিন দিন ধরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই বরিশাল নৌবন্দরে। বন্দরের বাইরের সড়কের প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে রিকশা-গাড়ির জট। গতকালও বরিশালের বাস ও লঞ্চ টার্মিনালের চিত্র এমনই। বরিশাল থেকে ১৩টি বৃহদাকার লঞ্চ এবং বিআইডবি্লউটিসির দুটি স্টিমার উপচেপড়া যাত্রী নিয়ে গতকালও ঢাকার উদ্দেশ্যে বরিশাল ছেড়ে গেছে। গতকাল বিকালে বরিশাল নৌবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, স্রোতের মতো মানুষ ছুটছে ঢাকার লঞ্চের নির্ধারিত পন্টুনের দিকে।

পন্টুনে থাকা ১৩টি লঞ্চ বিকাল ৫টার মধ্যে যাত্রীতে টইটুম্বুর। লঞ্চের ছাদ এমনকি প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের কেবিনের সামনের স্থানও দখল করে নেন যাত্রীরা।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, রবিশাল, বগুড়া ও টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী প্রতিনিধি)

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।