আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দারসুল হাদীস

দেশের মানুষকে ভালোবাসি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম সরল অনুবাদঃ হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (রা রাসুল (স হইতে বর্নণা করেন তিনি বলেছেন, তোমাদের যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে সে যেন হাত দ্বারা বাধা দেয়,যদি তাতে সক্ষম না হয় সে যেন মুখ দ্বারা বাধা দেয়,আর যদি তাতে ও সক্ষম না হয় তাহলে সে অন্তরে ঘৃণা করবে। তবে উহা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক। (মুসলিম) *রাবী পরিচিতিঃ নাম সাদ,পিতার নাম মালেক,মাতার নাম আনীসা বিনতে আবির হারিস। তিনি আনসার সাহাবী। পূর্ব পুরুষ খুদরা ইবনে আউফের নামানুসারে তাকে খুদরী বলা হয়।

হিজরতের ১০ বছর পূর্বে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক সুত্রেই তাকে মুসলিম গন্য করা হয়। কারণ তার পিতামাতা দুজনই ৬২২ খ্রীষ্টাব্দে মুসলমান হন। বয়স কম থাকায় বদর ওহুদে তিনি অঙশগ্রহণ করতে না পারলে ও বনী মুস্তালিকের যুদ্ধ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ১২ টি গাযওয়ায় অংশ নিয়েছিলেন। ৩০ জন সাহাবী দ্বারা পরিচালিত একটি সারিয়ায় তিনি দলপতির দাযিত্ব পালন করেন।

ফকীহ এবং মুহাদ্দিস ইবনুল আসীর বলেন,তিনি মুকসিরীন সাহাবীদের অন্যতম। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ১১৭০ টি। তার মধ্যে মুত্তাফাকুন আলাই ৪৬ টি এবং বুকারী শরীফে একক ভাবে ১৬ টি,ও মুসলিম শরীফে ৫২ টি হাদীস উল্লেখ রযেছে। তিনি ৮৪ বছর বয়সে ৭৪ হিজরীতে জুমাবার মদীনায় ইন্তেকাল করেন। জান্নাতুল বাকীতে তাকে সমাহিত করা হয়।

*ব্রাখ্রা বিশ্লেষণঃ আলোচ্য হাদীসে মুনকার প্রতিরোধ করতে বলা হয়েছে। এখন মুনকার তা জানতে হবে। মুনকার শব্দটি আরবী মারুফ শব্দের বিপরীত। এর অর্থ হলো আপত্তিকর। পরিভাষায় এটা হলো সকল প্রকারের অশ্লীল গর্হিত কাজ।

............এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে পবিত্র কোরআন হাদীসের প্রায় সব জায়গায় "আমরু বিল মারুফ এবং নাহি আনিল মুনকার" একসাথে বলা হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য হাদীসে ঈমানের তিনটি স্তর বর্নণা করতে গিয়ে মুধুমাত্র "নাহি আনিল মুনকার" এর কথা বলা হয়েছে। কারণ সঃ কাজের আদেশ পালন করে দায়িত্ব পালন করা যত সহজ,অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করা তত সহজ নয। বরং অনেক কঠিন। সেই জন্য কুসমাস্তীর্ন পন্হা দ্বারা ঈমানের শ্রেণীবিভাগ নির্ণয় না করে,বরং কন্টকাকীর্ন পন্হা দ্বারা ঈমানের স্তর বণৃনা করা হয়েছে।

*হাদীসে প্রথমে অন্যায় কাজকে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করতে বলা হয়েছে। এটা হলো প্রথম শ্রেণীর ঈমানদারের কাজ। আর অন্যায় কাজকে বাধা দিলে বাতিল শক্তি তা আপন মনে নিবে না। বরং সেই প্রতিরোধ দমন করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে। তাই একাকি ভাবে এটা সম্ভব নয়,প্রয়োজন সংঘবদ্ধতার চরম পরাকাষ্ঠা।

কোরআনের বাণীঃ "তোমরা হলে সর্বোত্তম জাতি মানবতার কল্যাণে তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে,তোমরা মানুষকে সঃ কাজে আদেশ করবে,আর অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবে। "(আলে ইমরানঃ ১১০) "অবশ্যই তোমাদের মাঝে একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, সঃ কাজে আদেশ করবে,আর অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবে। "(আলে ইমরানঃ ১০৪) ..........আর এভাবে হাত দিয়ে বাধা দেয়া রাষ্ট্রশক্তির দ্বারাই সম্ভব। কোরআনের বাণীঃ "আমি যাদেরকে জমীনে ক্ষমতা দান করি তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে,যাকাত আদায় করে,সঃ কাজে আদেশ করে,আর অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করে। "(হাজ্জঃ ৪১) .................এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে,প্রথম শ্রেণীর ঈমানদার হতে হলে রাষ্ট্রশক্তি অর্জন করা প্রয়োজন।

আর এটা কোন আন্দোলন ছাড়া প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। কোরআনের বাণীঃ "শ্চিয়ই আল্লাহ তায়ালা কোন জাতির ভাগ্য ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা না করে। "(রা'আদঃ ১১) "তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর,পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। "(আশ শুরাঃ ১৩) ..................সুতরাং রাষ্ট্রশক্তি অর্জনের জন্য প্রয়োজন জিহাদ তথা ইসলামী আন্দোলন। আন্দোলন ছাড়া জগতের কোন কাজই সিদ্ধ হয় না।

কোরআনের বাণীঃ "আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার মত জিহাদ কর,তিনিই তোমাদেরকে (এই কাজের জন্য ) বাছাই করেছেন। "(হাজ্জঃ ৭৮) "তোমরা লড়াই করতে থাক,যতক্ষণ না ফেতনা দূর হবে এবং দ্বীন সম্পূর্নরুপে আল্লাহ তায়ালার জন্যই হয়ে যাবে। "(আনফালঃ ৩৯) "তোমাদের কি হয়েছে যে,তোমরা আল্লাহর পথে সে সব অসহায় নর নারী ও শিশুদের জন্যে লড়াই করো না,যারা ফরিয়াদ করছে হে আমাদের প্রতিপালক,আমাদের এই যালেমদের জনপদ থেকে বের করে নিয়ে যাও !"(নিসাঃ ৭৬) হাদীসের বাণীঃ "আর তোমরা তোমাদের সম্পদ,জান,এবং জিহ্বা দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর। " 'সর্বোত্তম জিহাদ হলো দাম্ভিক শাসকের সামনে সত্য কথা বলা। " "কিয়ামত পর্যন্ত দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (জিহাদ) অব্যাহত থাকবে।

" তাই বলা যায় সরাসরি হাত দিয়ে বাধা দেয়া ,রাষ্ট্রশক্তির মাধ্যমে বাধা দেয়া, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না থাকলে এর জন্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা,সবগুলো প্রথম শ্রেনীর পরিচয় বহন করে। চাই রাষ্ট্রশক্তি অর্জনের এই আন্দোলন সফল হোক কিংবা ব্যর্থ,সেটা মুখ্য নয়। হাদীসের বাণীঃ "নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কারো চেহারা বা অর্থ সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তাকান তোমাদের অন্তর এবং কাজের দিকে। " * এর পরে বলা হয়েছে যারা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করার সামর্থ না রাখে তারা যেন মুখ দ্বারা বাধা দেয়। এটা হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর ঈমানদারের কাজ।

যা শুধু দাওয়াতের পর্যায়ে পড়তে পারে। এর কয়েকটি প্রক্রিয়া হতে পারে। ১.প্রচার মাধ্যমঃ দেয়াল লিখন,পোষ্টারিং,রেডিও,টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে। ২.লিখনী মাধ্যমঃ পত্র পত্রিকা,সাময়িকী,প্রবন্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে এর কুফল বর্ণনা ৩.অন্যান্য মাধ্যমঃ ওয়াজ,নসীহত,সিম্পোজিয়াম,সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে। কোরআনের বাণীঃ "আর তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে আল্লাহর দিকে আহবান করে,সঃ কাজ করে আর বলে নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের অর্ন্তভূক্ত।

"(হা-মীম সাজদাহঃ ৩৩) "ডাক তোমার রবের দিকে হিকমত এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে। "(নাহলঃ ১২৫) হাদীসের বাণীঃ "তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও তা অন্যের নিকট পৌঁছিয়ে দাও। " * এর পরে বলা হয়েছে যারা উপরের দুইটি পন্হায় সামর্থ না রাখে তারা যেন অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে,তথা সে নিজেকে এটা থেকে বিরত রাখে। তবে এটা দুর্বল ঈমানের পরিচয় তথা third class। এটাকে এক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বার্থপর বলা যেতে পারে।

অথ্যাঃ আপনি বাঁচলে বাপের নাম। এরা শিরকের স্বর্গরাজ্যে বসবাস করে ও নিজেকে ধন্য মনে করে। কামেল ঈমানদারের ফুরঝুরি ছড়ায়। প্রকৃতপক্ষে সে যালেমের লকব থেকে মুক্তি পায় না। কোরআনের বাণীঃ "তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হবে যে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত সাক্ষ্যকে গোপন করে ?"(বাকারাহঃ ) হাদীসের ভাষায় সে বোবা শয়তানঃ "সত্য কথা থেকে যে বিরত থাকে সে বোবা শয়তান্" অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর পীর নামের জাহেলরা নিজেদের পকেট ঠিক রাখার জন্য শয়তানের দোসরদের ভূমিকা পালন করে।

কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে টু শব্দ উচ্চারণ করে না। উপরে তিন পর্যাযের ঈমান বর্ণনা করা হয়েছে। যাকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে A+,A,A- বলা যেতে পারে। দুনিয়ার ব্যপারে আমরা সবাই A+ পেতে আগ্রহী। আখেরাতের ব্যপারে ভেবে দেখেছি কি ?কোরআনের বাণীঃ "বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধন্য দিচ্ছ অথচ আখেরাত উত্তম এবং অবশিষ্ট।

"(আ'লাঃ১৬) "সেই দিন মানুষ তার ভাই থেকে ,তার মাতা থেকে,পিতা থেকে,তার স্ত্রী থেকে এবং সন্তান থেকে পলায়ন করবে। "(আবাসাঃ ৩৪-৩৬) *দারসের শিক্ষাঃ ১.প্রথম শ্রেণীর ঈমানের স্বার্থকতা প্রমানের জন্য সর্বশক্তি দিযে অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে হবে। ২.এর জন্য প্্রয়োজনে কুরআন,সুন্নাহ ভিত্তিক কঠিন কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। ৩.অনিবার্য কারণে প্রথম পর্যায়ের কাজে সফল না হলে মুখে বাধা দান করতে হবে কঠোরভাবে। ৪.তৃতীয় পর্যায়ে নিজের ঈমান প্রমানের প্রশ্ন অবান্তর।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।