আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্ধকার এবং আলো খোঁজার দৃশ্যপট

পরাঞ্জয়ী...

ঘুটঘুটে অন্ধকারটা আজকাল বড় আপন লাগে। বহুদিন পর চুল আঁচড়াতে ইচ্ছে করছে। চিরুনীটা খুঁজে পেলাম না। আলোতে আমার চোখ ঝলসে যায়। আমি অন্ধকার খুঁজি।

দিনের আলোয় চোখ বুঁজে খুঁজি অমানিশা। চোখ খুললেই দেখি মায়ের শরীরের ছোপ ছোপ কালচে দাগ। আমি ভয় পাইনা। আমার স্বত্তা জুড়ে অভিশাপের বিষবাস্প কুন্ডুলি পাকায়। আমি কাঁদিনা।

স্মৃতির আগুনে পুড়ে গেছে চোখের নদী! আমার চোখ জ্বলে। পুড়ে যায় শুভদৃষ্টির মুহুর্তগুলো। "মা" এর সাথে, তোমার সাথে, ফুলের সাথে, পাখির সাথে! আমি একরাশ ছাইয়ের স্তুপে দাঁড়িয়ে অভিশাপ দেই "ধ্বংস হও, ধ্বংস হও, ধ্বংস হও"! আমি অন্ধ হয়ে বাঁচি, অন্ধ হয়ে খুঁজি আমার শৈশব, আমার আগুনঝরা রুপের ফাগুনের দিন গুলোকে। কোথাও পাইনা। এখানে খুঁজি, সেখানেও।

নেই, নেই, নেই। সবখানে দেখি আমার বখে যাওয়া ভাইয়ের হাড্ডিসার শরীরের উদ্ধত পাঁজরের হাঁড়গুলি। সে লকলকে চোখে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। উত্তর খোঁজে ওর জীবনের। আমার কাছে জবাব নেই।

পিতৃত্বের দাবীর বিনিময়ে ওর "জবাব"টাকে আমি বেঁচে দিয়েছি! ও কাঁদেনা। তুখোড় মেধাবী ভাইটা আমার নিত্য নতুন কলাকৌশল আবিস্কার করে.....মানুষের পকেট কাঁটার, জোর করে ছিনিয়ে নেবার! খোলা আকাশের নীচে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আমাকে অভিশাপ দেয় "তুই মর, তুই মর, তুই মর!" সেন্ট্রাল জেইলের সামনে দিয়ে যাবার সময় দেখি হাজার কয়েদীর ভীড়ে বাবার বিবর্ণ মুখ। সেখানে ৩০ বছরের সঙ্গিনীকে হত্যার অনুশোচনা। না, আমি ভুল দেখি। বাবা এখন শেষ বয়সে নুতন সঙ্গিনীর মালিক।

আমি কিছুতেই সেদিন বলতে পারিনি "আমার জন্মদাতাই আমার গর্ভধারিনীর হত্যাকারী"। আমি জানতাম, আমি সব জানতাম! আমি জানতাম সেদিনের সেই তচনছ করা ঘরের দৃশ্য গুলো মোটেও কোন সন্ত্রাসীর করা নয়, আমার ঘরেই ছিল পিতার মুখোশে সেই সন্ত্রাসী! তবুও আমি মুখ খুলিনি। যে বীজ থেকে আমার জন্ম তারই ডালপালা গুলো আমার মুখ চেপে রেখেছিল। আমার মায়ের ক্ষতবিক্ষত সেই মলিন মুখটাও পারেনি আমার ভেতরের "আমি" টাকে জাগিয়ে তুলতে। আমি সেদিন থেকে নিজেকে অভিশাপ দেই "তুই নরকে যা, নরকে যা, নরকে যা"! আমি যখন পৌছেছিলাম সেদিন, আমার ঘরভর্তি ছিল পুলিশ দারোগা আর হাজার মানুষের ভীড়! আমি সোজা চলে যাই মায়ের ঘরটিতে।

দেখলাম মা আমার নামায পড়া শেষে তাসবীহ গুনছে। এগিয়ে গিয়ে বলতে চাইলাম "মা গো আমি এসেছি"। দেখলাম জায়নামায খালি। মা শুয়ে আছে পাশে। ভাইটি বসে আছে তার পাশে।

রক্তের ফোঁটা গুলো শুকিয়ে গেছে নাক গড়িয়ে কান পর্যন্ত এসে! আমি বসলাম মায়ের পাশে। মা বললো "যা মা গোসল করে নে, এত জার্নি করে আসলি, আমি ভাত দিচ্ছি"। আমি শান্ত মেয়ের মত গোসল করলাম। টেবিলে গিয়ে বসলামও। সবাই আড়চোখে তাকালো আমার দিকে।

আমি ডাকলাম "মা ভাত দাও, কতক্ষন বসব আর?" সবাই আবারও কেমন করে তাকায়। আমি ভাত চাই, মা দেয়না। আমি আবার গিয়ে মায়ের পাশে বসি। মা ঘুমায়, গভীর ঘুম! যেন কত রাত না ঘুমিয়ে বড় ক্লান্ত! আমি জাগাইনা তাকে। ঘুমাক! আমার মায়ের পাশে ধূপ জ্বলায়, ঢেকে দেয় শরীরটা।

ঘুমের ভেতর গোসল করানো হয় মা'কে। আমি যাই মশারির ভেতর। মায়ের সারা গায়ে কালচে কালচে দাগ। আমি বুঝি মা কে আমার শাস্তি দেয়া হয়েছে। মা আমার অনেক বড় অপরাধ করেছিল।

আমার বাবার খুব প্রিয় এই আমাকে এক শুয়োরের বাচ্চার হাতে তুলে দিয়েছিল ধর্ম মতে! আমার বাবাও বুঝেনি আমার মা ও আমার খুব প্রিয়! আমি মুখ খুলিনি, সেদিনও না আজও না। তাই আমি আজ আর কিছুই দেখিনা। চোখ বুজে খুঁজি সেই নরকের কীট টাকে। খুঁজি সেই শুয়োরের বাচ্চাটা কে। আমার অন্ধকারে আমি তাকে টেনে আনবোই! সেদিন আমার ভাইটি পাবে তার প্রশ্নের জবাব, বাবা পাবে তার ৩০ বছরের সঙ্গিনী হত্যার বিচার আমি পাব আলো............অনেক আলো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।