আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্রনাথের "হৈমন্তীর" ডিজিটাল সংস্করন ----------দি "হ" (প্রথম পর্ব)

যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।

বরের বাপ সবুর করতে পারিতেন কিন্তু কন্যার বাপ সবুর করতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন, ইদানীং যে হারে মেয়েটা ইতস্তত ঘোরাঘোরি,বয়ফ্রেন্ড নিয়া ফাস্টফুডের দোকানে দৌড়াদৌড়ি করিতেছে তাতে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোন রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া গিয়াছে। আমি ছিলাম বর।

সুতরাং বিবাহ সম্পর্কে আমার মত যাচাই করা অতি আবশ্যক ছিল। কিন্তু আমার পূর্ববর্তী প্রেমিকা অভিভাবকদের কাছে আমার সম্পর্কে কিছু কানকথা শুনিয়েছিল। যাহা রটে তাহা কিছুমাত্র ঘটে। তাই বুকে হাত দিয়া বলিতে পারি না আমার সহিত ওই মেয়েটির কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে মেয়েটি যে নির্লজ্জের মত তাহা আমার অভিভাবকদের কাছে বলিয়া দিবে তাহা আমার কল্পনার অতীত ছিল।

যাই হোক এজন্য অভিভাবক গন আমার বিবাহের জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়া গেলেন। আমাদের দেশে যে মানুষ একবার বিবাহ করেছে তাহাদের উদ্বেগ উতকন্ঠা দেখিয়া আমার মনে ভয় জন্মিল। বাঘের দেখা পাইলে সিংহ শাবকের যে অবস্থা হয় তাদের অবস্থাও একই। তবে আমি ডিজিটাল যুগের মানুষ এসব ভয় পাইলে কি আর চলে। তবে বিবাহের পর আমার চিরজাগ্রত প্রেমিকসত্তা যে আর প্রেম করিতে পারিবে না ইহা মনে করিয়া মনে কিছুক্ষন সুখের মত ব্যথা অনুভব করিলাম।

এখন আমি কি করতেছি। ব্লগের জন্য ডিজিটাল হৈমন্তি লিখিতে বসিয়া উপন্যাসের মত হইয়া যাইতেছে। তবে আর কি ই বা করিতে পারি। মনে ছিল, কয়েক বতসরের যে কালো মেঘ মনের মধ্যে জমিয়া ছিল তাহাকে বৈশাখসন্ধ্যার ঝোড়ো বৃষ্টির মত প্রবল বর্ষনে শেষ করিয়া দিব। কিন্তু মোর অন্তরে আজ আশা নাই, ভাষা নাই,রোদন করিবার মত অশ্রুটুকুও নাই।

তবে একথাও ঠিক যে জৈষ্ঠ্যের খড়রৌদ্রই তো জৈষ্ঠ্যের অশ্রুশুন্য রোদন। আমার সঙ্গে যাহার বিবাহ হয়েছিল তাহার সত্য নামটাই দিব। যাতে আপনারা এই নামটি বিষয়ে বিশেষ অবগত হয়ে থাকতে পারেন। তাহার নাম হ। শুনেছি ছোটকালে তার পিতৃদেব হৈমন্তি নামটি রাখিয়াছিলেন।

তবে নামটি তাহার বিশেষ পছন্দ হয় নাই। তাই নিজের নাম নিজেই ডিজিটাল কশ্রে রাখছে “হ”। তাহার নামটা শুনিয়াই তাহারত প্রতিও আমার আগ্রহ জন্মিল। হ এর পিতৃদেব অনেক অনেক যৌতুকের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। তার ওপর হ তাহার পিতার একমাত্র সন্তান।

ইত্যাদি কারনে আমার অভিভাবকবৃন্দ হ এর পূর্ববর্তী প্রেমকাহিনী কিছুটা জানিয়া কিছুটা না জানিয়া তাহার সহিত আমার বিবাহের আয়োজন করিলেন। হ ঠিক করিল থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিবাহ করিবে। অগত্যা কি আর করা। সবার রাজি হইতে হইল। পঞ্জিকার পাতা উল্টাইতে থাকিল।

দু একটা করে মাস চলিয়া যায়। অবশেষে আসিল সেই শুভক্ষন থার্টি ফার্স্ট নাইট। বিবাহের চারিদিকে হট্টগোল। আতসবাজি দিয়া বিবাহ উদযাপন না থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন হইতেছে কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। মাঝে মাঝে গান শোনা যাইতেছে, “আইজ আমরার কুসুমরানীর বিবাহ হইব, বিবাহ হইব”।

হ নাকী খুব হুমায়ুন আহমেদের খুব ভক্ত। এর প্রমান এই গানের মাধ্যমে কিছুটা পাইলাম। এমন গান হইচই হট্টগোলের মধ্যে হঠাত কন্যার হাতখানি হাতখানি আমার হাতের উপর পড়িল। উত্তপ্ত কড়াইয়ে পানির ফোটা পড়িলে যেমন ছ্যাত করিয়া উঠে তেমনি অবস্থা হইল আমার। কারন যে হাতখানা পড়িয়াছে তাহা অত্যন্ত শক্ত ঠেকিতেছে।

আড়চোখে ঘটনা কি বুঝিতে তাকাইয়া দেখি কন্যা গ্লাভস পড়িয়া আছেন। আমার যেন ঘাম দিয়া জ্বর ছাড়িল। মন বার বার করিয়া বলিতে লাগিল,”পাইছি রে পাইছি,আমি ইহারে পাইছি। “ কন্যার বাপ গৌরিসঙ্কর আমাকে ডাকিয়া বলিলেন, আব্বাজান কন্যা আমার অতি ভাল। একটু বেশি খরচাপাতি করে।

তা সমস্যা না। তুমি তো ভগবানের কৃপায় ভালই কামাই রোজগার কর। কি আব্বাজান ঠিক বলেছি না? আমি আস্তে আস্তে বলিলাম, ঠিক বলেছেন,অতি সত্য কথা। কিছু খরচাপাতি করা ভাল। কিন্তু মনের মধ্যে অথবা বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করিলাম।

শ্বশুরমশাই তাহার কন্যার কাছ থেকে বিদায় লইবার সময় বলিলেন, আম্মাজান, অনুমতি দেন। যাই। কন্যা বলিল, যাইবা না তো থাকবা নাকি! বিরাট আশ্চর্য। আব্বাজান আপনে মাথার ডাক্তার দেখান। কথাবার্তা কি বলেন তার ঠিক নাই।

আর শুনেন আমার ডিজুস সিমটা রাইখ্যা আসছি। ওইট্যা পাঠাইয়া দিবেন। কন্যার কর্কস কন্ঠের এহেন কথাবার্তা শুনে আমি টাশকি কাহিলাম। মনে হইল মাথা ঘুরাইয়া পড়িয়া যাইব। অনেক কষ্ঠে নিজেকে সামলাইলাম।

বন্ধুদের অনেককেই তো বিবাহ করিতে দেখিলাম। এমন কন্যা আমি জীবনেও দেখি নাই। মন্ত্র পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী নামক বস্তূটি পুরুষ জাতিকে গ্রাস করে শুনিয়াছি। তারপর আস্তে আস্তে হজম হয়। হজম ভাল হইলে স্বামীর সদগুন প্রকাশিত হয় স্ত্রী রত্নের মুখ হইতে।

আর বদহজম হইলে বর বাবাজির শনির দশাতেই কেটে যায় পুরো সপ্তাহ, মাস,বছর এবং এমনকি গোটা জীবন কাল। তবে আমি মনে মনে বলিলাম, আমি তাহার সম্পত্তি নই,সম্পদ ও নই। আমার গায়ে হাত দিলে আমিও কম যাই না। এই বলে মনে মনে নিজেকে স্বান্তনা দিলাম। বাসর রত্রি তে আমি গিয়া দেখি সে কাহার সাথে যেন মোবাইল ফোনে কথা বলিতেছে।

আমি অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। কিন্তু তাহার কথা তো আর শেষ হয় না। কিছুক্ষন পর সে সিম চেঞ্জ করিতেছে দেখিয়া বলিলাম, "হ" আপনার কথা কি শেষ? হ ঝংকার দিয়া কহিল, কথা শেষ মানে কি? আমি বোবা হয়ে যাব?আমার কথা শেষ না টাকা শেষ। তুমি যাও তো এই নাম্বারে ৫০০ টাকা ফ্লেক্সি করে আস। আর শোন আমারে আপনি করে বলবা না।

লোকে শুনলে কি বলবে?তুমি করে বলবে। এখন যাও। কুইক । আমি উত্তরে কিছু বলিতে সাহস করিলাম না। জলদি টাকা ফ্লেক্সি করে আসিলাম।

তাহার কথা চলিতে লাগিল আর আমি আস্তে আস্তে ঘুমাইয়া গেলাম। ওই রাতে স্বপ্নে দেখিলাম একটা অজগর সর্প আমাকে গিলিয়া খাইতেছে,আর আমি তারস্বরে চেচাইতেছি। (প্রথম পর্বের সমাপ্তি) দ্বিতীয় পর্ব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।