আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছবি ব্লগ: স্পেস শাটল

আমি একটা পাগল, যারা আমার প্যাচাল শোনে তারা আরো বড় পাগল।

মানুষের তৈরী যত উন্নত জিনিস রয়েছে স্পেস শাটল তার মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম। নাসার এই মহাকাশযান প্রথম তৈরী হয় ১৯৮১ সালে এবং ১৯৮২ সালে এর পূর্ণ ব্যবহার শুরু হয়। সাধারণ রকেটের সাথে এর অনেক পার্থক্য রয়েছে। রকেট মাত্র একবার ব্যবহার করা যায় কারণ এর অনেক অংশই আর ফেরত পাওয়া যায় না।

আর রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পাঠানো অংশের অবতরনও অনেক ঝামেলাপূর্ণ। এসকল সমস্যার অসাধারণ সমাধান হল এই স্পেস শাটল। এর প্রতিটা অংশই আবার অন্য মিশনের জন্য ব্যবহার করা যায়। স্পেস শাটলের প্রধানত ৩টি অংশ থাকে - ১. অরবিটার ২. সলিড রকেট বুস্টার বা এস আর বি ৩. এক্সটার্নাল ফুয়েল ট্যাংক বা এক্সটার্নাল ট্যাংক বা ই টি স্পেস শাটল বলতে সাধারনত অরবিটারকে বোঝেন সবাই, কিন্তু এই তিনটি অংশ একত্রে স্পেস শাটল বা স্ট্যাক যা দেখতে নিম্নরুপ এর মধ্যে এসআরবি ও অরবিটার বারবার ব্যবহার করা হয়। এক্সটার্নাল ট্যাংক পুর্নব্যবহারযোগ্য হলেও একে আর ব্যবহার করা হয় না।

আসুন আমরা স্পেস শাটলের কিছু ছবি দেখি ১. এটা হচ্ছে নাসার "ভেহিকল এসেম্বলি বিল্ডিং" বা ভি এ বি যেখানে অরবিটার, এস আর বি এবং ই টি মিশনের জন্য যুক্ত করা হয়। একে অরবিটার প্রসেসিং ফ্যাসিলিটি (ও পি এফ) বলে। অরবিটারকে ভি এ বি তে নেয়া হচ্ছে ই টি কে ভি এ বি তে নেয়া হচ্ছে এবার অরবিটার, এস আর বি এবং ই টিকে জোড়া দেয়া হচ্ছে সব অংশ যুক্ত করা হলে শাটলকে ক্রলার ট্রান্সপোর্টারে করে লঞ্চ প্যাডে পাঠানো হয়। ক্রলার ট্রান্সপোর্টারের কিছু ছবি দেখি এবার দেখি শাটলকে লঞ্চ প্যাডে নিয়ে যাওয়া একটা মজার জিনিস হচ্ছে শাটল লঞ্চের আগের সময়কে মাইনাস টাইম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন টি মাইনাস ১০ মিনিটস, টি মাইনাস ১৫ সেকেন্ডস ইত্যাদি।

লঞ্চ প্যাডে আসার পর শাটলে পে-লোড অর্থাৎ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী লোড করা হয়। এসময় শাটলকে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। টি মাইনাস ৯ ঘন্টা থেকে ই টিকে ফুয়েলিং করা হয়। অর্থাৎ এতে তরল হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন ভরা হয়। টি মাইনাস ৩ ঘন্টা থেকে শাটলের কাছে শুধু স্পেশালাইজড টিমকে, যাদের "আইস টিম" বলা হয়, যেতে দেয়া হয়।

এদের একটি দল শাটলকে শেষ বারের মত চেক করে এবং আরেকটি দল নভোচারীদের অরবিটারে প্রবেশে সাহায্য করে এবং ককপিটের দরজা বন্ধ করতে সহায়তা করে। আসুন লঞ্চ প্যাডে দন্ডায়মান শাটলের কিছু ছবি দেখি টি মাইনাস ২০ মিনিটের সময় লঞ্চ কন্ট্রোল সেন্টার আরো প্রায় ২৩০০ ( ) পরীক্ষণ চালায় যার মধ্যে আবহাওয়া, বিভিন্ন যন্ত্রের রিডিং সহ আরো অনেক জিনিস থাকে। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তবে পরবর্তী কাজে অগ্রসর হয়। টি মাইনাস ৯ মিনিটে গ্রাউন্ড লঞ্চ সিকোয়েন্সার (জি এল এস) অর্থাৎ লিফট অফের কাজ শুরু হয় এবং পরবর্তী সব কিছু কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। জি এল এস আবার সবকিছু পরীক্ষা করে দেখে।

এ পর্যায়ে কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আর ঠিক থাকলে টি মাইনাস ৯ সেকেন্ডে অরবিটারের মেইন এঞ্জিন চালু হয়। আর ৯ সেকেন্ড পর শাটল তার যাত্রা শুরু করে। আমার কাছে স্পেস শাটলের লিফট অফকে মনে হয় পৃথিবীর সবচে সুন্দর দৃশ্য। আমার সারা শরীরের লোম দাড়িয়ে যায়, এ সময় এক অন্যরকম অনুভূতি হয় যা ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

মজা লাগে ধারাভাষ্যকার যখন বলে, "এন্ড লিফট অফ, উই হ্যাভ আ লিফট অফ"। টি প্লাস ১২৬ সেকেন্ডে এস আর বি শাটল থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং এর সাথে থাকা কিছু থ্রাস্টার রকেট এদের শাটল থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এস আর বির সাথে থাকা প্যারাস্যুট একে অক্ষত আবস্থায় সাগরে অবতরণ করায় এবং উদ্ধারকারী জাহাজ এদেরকে তুলে নেয়। এস আর বি শাটল থেকে পৃথক হয়ে যাবার পর অরবিটারের তিনটি মেইন এঞ্জিন বাকি পথটুকু পাড়ি দিতে সহায়তা করে। এক পর্যায়ে ই টিও পৃথক হয়ে যায়।

এটি বায়ুমন্ডলের সাথে ঘর্ষনে পুড়ে যায়। এবার আপনাদের লিফট অফের কিছু ছবি দেখাই সবশেষে অরবিটারটি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে তার কাজ সম্পাদন করে। এবার পালা বাড়ি ফেরার, অর্থাৎ রি-এন্ট্রি। বায়ুমন্ডলে সফলভাবে প্রবেশ করার পর এবার ল্যান্ডিং এর পালা। স্পেস শাটলের বিশেষত্ব এখানেই।

এটি রকেটের মত উড্ডয়ন করলেও সাধারন প্লেনের মতই রানওয়েতে ল্যান্ড করতে পারে। যেখানে রকেটের ক্যাপসুল সাগরে অবতরণ করে যাকে বলে স্প্ল্যাশ ল্যান্ডিং। অরবিটারগুলো সাধারণত কেপ কেনাভেরালের কেনেডি স্পেস সেন্টারে অবতরণ করে। তবে আবহাওয়া বা অন্যকোন কারণে অন্যান্য কোন স্থানে অবতরণ করলে তাকে আবার কেনেডি স্পেস সেন্টারে পাঠানোর জন্য নাসার রয়েছে একটি শাটল ক্যারিয়ার যা হচ্ছে নাসার জন্য বিশেষভাবে তৈরী একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান। আসুন এরও কিছু ছবি দেখি তারপর সবকিছু আবার সেই আগের মতই।

আমার এই পোস্ট দেবার উদ্দেশ্য আসলে এই স্পেস শাটলগুলোকে ট্রিবিউট জানাবার জন্য। কারণ আর কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যাবে শাটলের ব্যবহার আগামী ১লা নভেম্বর হবে শাটল ডিসকভারির শেষ মহাকাশযাত্রা। নাসা ইতিমধ্যে স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউশনের এয়ার এন্ড স্পেস মিউজিয়ামকে ডিসকভারিকে দেবার অঙ্গীকার করেছে। কিছু নীতিমালা মানা ও ২৮.৮ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বাকি শাটলগুলোকেও হস্তান্তর করা হবে। শাটল কর্মসূচি বন্ধ করা হলেও নাসা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) এ যাতায়াত ও রসদ আনা-নেবার জন্য রাশিয়ান সয়ুজকে ব্যবহার করবে।

তাছাড়াও নাসার কিছু মহাকাশযান নির্মানাধীন আছে, যেমন: ক্রু এক্সপ্লোরেশন ভেহিকল (সি ই ভি), এরেস ১ ও ৫। তাছাড়া মার্কিন বিমান বাহিনী ও বোয়িং এর এক্স-৩৭ কে ধরা হচ্ছে ভবিষ্যতের মহাকাশযান। মার্কিন বিমান বাহিনীর ডেপুটি সেক্রেটারী গ্যারি পেটন একে শাটলের চাইতে উন্নত প্রযুক্তি বলে অভিহিত করেছেন যা দূরপাল্লার মহাকাশযাত্রায়ও সক্ষম হবে বলেছেন। এছাড়াও বেসরকারী পর্যায়ে স্পেস এক্স এর ফ্যালকন ৯ এবং ড্রাগন মহাকাশযান এবং অরবিটাল সায়েন্স কর্পোরেশন এর টরাস ২ ও সিগনাস নামক মহাকাশযান নাসা ব্যবহার করবে বলে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঘোষনা দিয়েছে। শেষে আমার পছন্দের কিছু ছবি ** এ পোস্টের সকল তথ্য উইকিপিডিয়া, নাসার ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া।

তবুও তথ্যজনিত অনেক ভুল থাকতে পারে যার দায় সম্পূর্ণ আমার। ** এ পোস্টের সকল ছবি নাসার ফেসবুক একাউন্ট ও অন্যান্য সূত্র থেকে সংগৃহীত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।