আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাকশালের নয়া নকশা প্রস্তুত!

হট নিউজ

আ'লীগ ভালো কথা যতটা জোর গলায় বলতে পারে অন্যরা এর ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে বলে আমার মনে হয় না। তাই তারা তাদের অন্যায় কাজগুলো ভালো কথার মধ্য দিয়ে চালিয়ে দেয় বেশ ভালোভাবে। নইলে বিরোধীদলকে সংখ্যার দিক দিয়ে গুণবেন না বলে যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ছিল তার কিঞ্চিত পরিমাণ সত্যতা জাতি কেন দেখতে পেল না? এরকম অসংখ্য ভালো কথার মধ্য থেকে একটি মাত্র ভালো কথার প্রসঙ্গ টেনে কলমের কালি। [যে কালি নাকি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র] খরচ করতে চাই না। আমরা দেখেছি- নিজ দেশের বদনাম দেশের বাইরে গিয়ে করতে অন্যদের হৃদয় কাঁপলেও তাদের হৃদয় বিন্দুমাত্র কাঁপেনি।

তাই বুঝি এই বলে বলিয়ান হয়ে বর্তমান কৃষিমন্ত্রী সংসদে বলতে পেরেছিলেন- [বিরোধীদলীয় নেত্রীকে লক্ষ্য করে] আপনারা ক্ষমতায় থাকতে কোন দেশ একটা মিস্ডকল পর্যন্ত দিয়েছে কি? অন্যদিকে আমাদের নেত্রীর সাথে তো প্রতিনিয়তই কথা হয় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে। বেশ ভালই বললেন তিনি। তাদের সাথে কি কথা হয় বা কোন বিষয়ে কথা হয় সে কথা নাইবা জানলাম। তবে বিগত সময়গুলোতে তারা বিরোধীদলে থাকাকালীন বিদেশী সাহায্যের উপর হস্তক্ষেপ করেছে এভাবে দেখুন দেশটা আসলে চোর-ডাকাত-বদমায়েশ-জঙ্গিতে ছেয়ে গেছে। তাই বলি কিনা-সাহায্য-সহযোগিতার হাতটা এখন গুটিয়ে রাখুন।

আবার আমরা যখন ক্ষমতায় আসব, তখন সহায়তার পাইপলাইনটা না হয় আবার চালু করবেন। এভাবে নিজের দেশের উপর কুড়াল মেরে আসছি আমরা। তাদের এহেন কর্মকান্ডে বিদেশীদের কাছে আমরা চিত্রিত হয়েছি কখনো Bottomless Basket বা তলাবিহিন ঝুড়ি হিসেবে। কখনোবা দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে। আর জাতির স্থপতি শেখ মুজিবের দৃষ্টিতে চোরের খনি হিসেবে।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আ'লীগ শাসন প্রক্রিয়ায় বিরোধীদলের ভূমিকাকে সত্যিকার অর্থে সুনজরে দেখেছেন বলে আমার মনে হয় না। এমনকি তারা বিরোধীপক্ষের মতামত, যৌক্তিক দাবি কী সংসদে কী বাইরে সহ্য করতে সবসময় কেন জানি অনিচ্ছুক থাকেন। তাই বুঝি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালে তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে গঠন করেছিলেন-- বাকশাল! সেই আ'লীগ আজ ক্ষমতার পালাবদলের পরিক্রমায় ক্ষমতাসীন। দেশের এই সময়ে দাঁড়িয়ে সেই বাকশালের নয়া নকশা নির্মাণ আবারও বুঝি দেখতে ইচ্ছে! ‘অসির চেয়ে মসি বড়'- এ আপ্তবাক্যটি অন্যকোন দেশের বেলায় খাটলেও আমাদের বেলায় আর খাটছে না। কারণ, প্রধানমন্ত্রী আজ জননেত্রী থেকে শিক্ষিকা হয়ে গেছেন বলে।

তার শিক্ষাতত্ত্ব এমনটিই বলছে। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯ ফেব্রুয়ারি আ'লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে বিরোধীদলকে শিক্ষা দেয়ার কথা বলেছেন। ‘... তাদের শেখানোর প্রয়োজন আছে' কথাতেই তিনি আজ শিক্ষিকার ভূমিকায় অবতীর্ণ। এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয়- প্রধানমন্ত্রী কিন্তু হাইকোর্ট কর্তৃক বেশি কথার মানুষ বলে আখ্যায়িত হয়েছিলেন। আর এখানেই আমাদের প্রশ্ন জাগে- এতদিন কোথায় ছিলেন শিক্ষিকা হিসেবে কিংবা তার শিক্ষাতত্ত্ব? ক্ষমতা পাওয়ার পরপরই এমন কাহিনী সন্দেহের যন্ত্রণাকে কি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় না।

নিশ্চয়ই দেয়। তার মানে- মসির চেয়ে অসির জোরই বেশি দেখালেন বলে মনে হলো। যাই হোক, একথা অস্বীকার করার জো নেই- শিক্ষা দেয়ার সাথে শিক্ষা নেয়ারও একটি বিষয় জড়িত থাকে। হয়তো তা ভুলে গেছেন। আসল কথা হচ্ছে- ইতিহাসের শিক্ষা থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।

তারা হয়তো এনীতিই অনুসরণ করছেন। যা হোক আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম সরকারের একচোখা দিনবদলের নামে নাম বদলের রাজনীতির কথা। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে আ'লীগ তাদের নগ্ন উদ্দেশ্য জাতির সামনে দিগম্বর করলেন। এ বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করার তারও আগে অর্থাৎ আ'লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তাড়াহুড়া করে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের নাম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক নামকরণ করেন। ভাসানী নভোথিয়েটারকে করেন বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার।

এমনকি বংশীয়করণের সবচেয়ে কালো নজির স্থাপন করলেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন স্টেডিয়াম এর নাম পরিবর্তন করে করলেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। মনে হয়েছিল বীরশ্রেষ্ঠের চেয়ে তাদের কাছে আত্মীয়ই শ্রেষ্ঠ। ১৯৯৬-২০০১ এর আ'লীগ আর বর্তমানের আ'লীগ সরকার কিছুটা পার্থক্য রেখেছেন। ৯৬'র সরকার নাম বদলের জন্য এতবেশি তাড়াহুড়া করেনি যতটা এ সময়ে করছে। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের যুক্তি দেখানো হয়েছে এভাবে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ের আলোকে কোন স্বৈরশাসক ও অবৈধ শাসকের নামে বাংলাদেশে কোন স্থাপনার নাম থাকতে পারে না।

এ আচরণে সরকারের দ্বিমুখিতা ফুটে ওঠেছে। এদেশে স্বৈরাচার বলতে প্রথমেই যার নাম আসে তিনি হলেন এরশাদ। সেই তাকে সরকারের অংশ হিসেবে রেখে কেবলমাত্র হাইকোর্ট থেকে ঘোষিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এ্যাকশানে যাওয়াটা আর যাই হোক সাধারণ সচেতন মানুষের কাছে বরাবরই খটকা লেগেছে। সরকারের এ একগুঁয়েমীতে আজ রাজ্যপুড়ে ছাই হয়ে যাবার জোগাড়। হাইকোর্টের এ রায়ের ক্ষেত্রে সরকারের লুকোচুরি খেলা যদিওবা চলছে, ইতিহাসকে তো অস্বীকার করা যায় না।

সেই ইতিহাস যেন নীরব রোদন করে জানাচ্ছে- অন্তত আড়াই বছর জিয়াউর রহমান দেশের বৈধ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সরকারের নিখুঁত চোখে জিয়ার ব্যাপারে খুঁতটি ছিল হয়তো এখানেই- জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের একদলীয় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছিলেন। সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা দেন। অবশ্য তিনি সংসদীয় ব্যবস্থা কায়েম না করে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি কায়েম করেছিলেন। আসলে সত্য বলতে কী পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল যে একটা সামরিক সরকার এসে একটা দেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়।

আমার মনে হয়- জিয়াউর রহমানের এ একটা বড় অবদানই বড় ভুল ছিল! ‘এক নেতার এক দেশ, ভেঙ্গে জিয়া করলো শেষ'- এর কারণেই বোধ হয়, তাদের যত রাগ, বিরাগ, অনুরাগ সবই বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপর। কেন এমনটি তিনি করতে গেলেন? আজ এই জিয়াউর রহমানের নাম মুছে দিতে সরকার সব চেষ্টার কোনটার ত্রুটি করছেন না। তারই অংশ হিসেবে শহীদ জিয়ার মাজার থেকে তার নামফলকটি পর্যন্ত তুলে নিয়েছেন শাসকগোষ্ঠী। এ ঘটনায় আজ পর্যন্ত কোন বুদ্ধিজীবী কিংবা আমাদের সুশীল (!) সমাজ বক্তব্য দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। বরং আব্দুল গাফফার চৌধুরী সাহেব শাসকগোষ্ঠীর এহেন কর্মকান্ডে খুশিতে আটখানা।

তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘কালের কণ্ঠে'র উপ-সম্পাদকীয়তে লিখেছেন- ‘হাসিনা সরকারের সাহসী সিদ্ধান্তে জাতি আরেকটি কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে' ছোট্ট এ লেখাটিতে তিনি শুধু ‘কলঙ্ক' শব্দটি লিখেছেন ১১ বার। উনার এ লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে, তার কাছে অন্য যে কোন শব্দের চেয়ে ‘কলঙ্ক' শব্দটিই সবচে প্রিয়। এমন আটখানা হয়ে ‘কলঙ্ক' শব্দ বেশি বেশি রাতকানারাই' দেখে থাকেন!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.