আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনথ্রাক্স নয় মারাত্মক রোগ

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

লেখাটি ১৮-০৯-২০১০ তারিখের দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা থেকে নেয়া। ডা. মো. শহীদুল ইসলাম পরিচালক, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্ট প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, ঢাকা বেশ কিছুদিন ধরে দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত অন্যতম বিষয় হচ্ছে গবাদিপশুর তড়কা বা আনথ্রাক্স। মানুষের মন থেকে সংশয়-সন্দেহ দূর করার জন্য সবার উচিত রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা এবং প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার ব্যবস্থা নেয়া। তড়কা বা আনথ্রাক্স কী এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।

Bacillus anthracis নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে এ রোগের উৎপত্তি। এর জীবাণু মাটি ও বাতাসের সংস্পর্শে আসার পর সাধারণত ৪ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে এদের চারপাশে একটি গোলাকৃতির শক্ত আবরণের সৃষ্টি হয়। এ আবরণকে স্পোর বলে। এরপর শত বছর পর্যন্ত এ জীবাণুটি বেঁচে থাকে- যা খাদ্য, শ্বাসনালী কিংবা চামড়ার কোন ক্ষত দিয়ে প্রাণীর দেহে প্রবেশ করে রোগের সৃষ্টি করে। সাধারণত হঠাৎ বৃষ্টির পর রোদ উঠলে এ রোগের জন্য অনুকূল আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়।

কারণ, বৃষ্টির ফোঁটার আঘাতে মাটির নিচে থাকা ব্যাকটেরিয়ার স্পোর মাটির উপরে ঘাসে চলে আসে। তখন পশু মাঠে চরার সময় খাবার বা শ্বাসনালী দিয়ে এ রোগের জীবাণু দেহে প্রবেশ করে। উৎপত্তি ও রোগের বিস্তার ১৭৭৩ সালে প্রথম এ রোগটি শনাক্ত হয়। ধারণা করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে রোগটি প্রথম দেখা যায়। পরে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য, পশমের কাপড়, হাড়ের গুঁড়া ইত্যাদি রফতানির মাধ্যমে এ রোগটি বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করে।

আগেই বলা হয়েছে, খাদ্য, শ্বাসনালী কিংবা চামড়ার কোন ক্ষত দিয়ে জীবাণু প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে রোগের সৃষ্টি হয়। সাধারণত চারণভূমিতে ঘাস খাওয়ার সময় খাদ্যের সঙ্গে এ রোগটি গবাদিপশুর শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত গবাদিপশুর সংস্পর্শে থাকা মানুষের শরীরে এ রোগ সহজে আক্রমণ করতে পারে। আক্রান্ত পশুর জবাই করা মাংস থেকেও মানুষের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে। এছাড়া মানুষের মধ্যে যারা চামড়া ও পশম কারখানায় কাজ করে তারা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

তবে মনে রাখা ভালো, এ রোগের জীবাণু মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না কিংবা গাভীর দুধ থেকেও এ রোগ ছড়ায় না। রোগের লক্ষণ আক্রান্ত গবাদিপশুর মধ্যে সাধারণত তিন ধরনের তড়কা বা অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা যায়। প্রথমত : অতীব চরম ধরনের তড়কা। অনেক সময় আক্রান্ত পশুর মধ্যে রোগের কোন লক্ষণই দেখা যায় না কারণ হঠাৎ করে পশুটি মারা যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে আক্রান্ত পশু দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

দ্বিতীয়ত : চরম ধরনের এ রোগে আক্রান্ত পশু ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। আক্রান্ত পশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০৭ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যায়। নাক-মুখ দিয়ে লালা ঝরে, শ্বাসকষ্ট হয়, পেট ফাঁপা দেখা দিতে পারে, শরীর কাঁপতে থাকে এবং চোখ জ্বলজ্বল করে ও পানি ঝরে। তৃতীয়ত : সাধারণ ধরনের এ রোগে আক্রান্ত পশু ৩-৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। পূর্বোক্ত একই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।

উল্লেখ্য, মানুষের শরীরে এ রোগটি সাধারণ ধরনের হয়ে থাকে। আক্রান্ত মানুষের ত্বকে ফোসকা হয়ে তা গলে চাকতির মতো ঘা হয়। চিকিৎসা সাধারণ অতীব চরম ধরনের রোগে আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা করার কোন সুযোগ থাকে না। তবে চরম ও সাধারণ ধরনের রোগে আক্রান্ত পশুকে দ্রুত পেনিসিলিন বা এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করলে পশুটির সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে এ রোগে আক্রান্ত মানুষকে সিপ্রোফ্লক্সাসিলিন দ্বারা চিকিৎসা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

তবে সাধারণ পেনিসিলিনে এ রোগ দ্রুত নিরাময় হয়। প্রতিরোধ - আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে। - দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। - অসুস্থ গবাদিপশুকে জবাই করা যাবে না। - মৃত পশু এবং এর বর্জ্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে কমপক্ষে ছয় হাত মাটির নিচে রেখে মৃতদেহের উপরে কলিচুন বা ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে।

- মৃত পশুর চামড়া যাতে ছাড়ানো না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। - আক্রান্ত এলাকার সব গবাদি পশুকে টিকা দিতে হবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা ১. প্রাণিসম্পদ বিভাগ ডিজিজ সার্ভিলেন্স কার্যক্রম জোরদার করে আক্রান্ত এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক বর্তমান ও আগের রোগের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে এবং সেগুলো পর্যালোচনা করছে। ২. পর্যালোচনাপূর্বক তথ্যসমূহ প্রচার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩. প্রতি উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ওই এলাকায় গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণপূর্বক জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে টিকা চেয়ে পত্র প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

৪. রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, গবাদিপশুর মালিক, মসজিদের ইমাম ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকের সহযোগিতায় সভা-ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হচ্ছে। তাছাড়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারে করণীয় বিষয়ে লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হচ্ছে। ৫. প্রতি উপজেলায় পশু জবাইয়ের স্থান চিহ্নিত করে জবাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে সুস্থ পশু জবাই এবং জবাইয়ের স্থান জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৬. প্রতি জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নিয়মিত পশু জবাই কার্যক্রম মনিটরিং করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং মিউনিসিপালিটি ও পৌরসভাতেও অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৭. এসব কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে তড়কা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.