আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই দুঃখে ভরা পৃথিবীতে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসাই আমাদের বাঁচার প্রেরণা যোগায়

:)

এমনো দিন আসে, মনে হয় সারাটাদিন কোনভাবে কেটে যাক! আমি যেন টের না পাই ... ... অনেক কাজের লিস্ট করি, একটার পর একটা, নিজেকে ব্যাস্ত রাখা! কিছুতেই যেন সেকেন্ড হিসেব না করতে হয়, মিনিট গুলো যেন ঘন্টা হয়ে যায় আর দিনটা যেন দ্রুত রাত হয়ে যায়! তারপরও মন তো তার মত করেই চলে, দিন ঠিকই মহাকাল হয়ে যায়! ছোট ছোট ঘটনাগুলোও কত সময় ধরে ছায়ার মত সাথে সাথে থাকে। বিমর্ষ করে, কখনো কাঁদায় ... ... কখনো নতুন করে আশা করতে সাহস যোগায়, মোহাবিষ্ট করে। বিচিত্র সব রঙ সময়ের, জীবনের একেক ক্যানভাসে তার একেক রকম রঙ আর তুলির ব্যবহার। শেষ পর্যন্ত যে ছবিটা আঁকা হবে তা কেই বা জানে? একমাত্র স্রষ্টা ছাড়া? কেউ না! আট বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে মেঝো মামা, কঠিন বাস্তবতায় খুব স্বাভাবিক নিয়মেই ওনার স্ত্রীর সাথে অল্প কিছুদিন পর থেকে আর কোন যোগাযোগ নেই আমাদের, মৃত্যুর মাত্র তিন মাস আগে মামার বিয়ে হয়েছিল। দীর্ঘ আট বছর পর আজকে ধানমন্ডির কোন এক রাস্তায় ওনার সাথে দেখা হয়ে গেল, অল্প সময়ের জন্য।

ওনার কোলে ছোট্ট একটা বাবু, অদ্ভূত আবেগে আক্রান্ত হলাম... ... খুব কম সময়েই। কথাও বলা হলোনা। এই ছোট্ট বাবুটা হতেওতো পারতো আমাদের কেউ কিংবা এরকম অন্য কোন এক দেবশিশু ... ... ... ... সব কিছু ছাপিয়ে হারিয়ে যাওয়া আপনজন সারাটা পথ যেন রিকশায় আমার পাশে বসে রইলো। মা মা কে বড় মনে পড়ে! আমার একদম ছোট ভাইটা তার বন্ধুর কাজে সাহায্য করতে গিয়েছে আজ, ওদের আট-দশ জনের বন্ধুদের দলটা আজকে আযিমপুর, লালবাগের পথশিশুদের সাথে ইফতার শেয়ার করবে। সাড়ে পাঁচটারও কিছু পরে ফোন করে কথা বললাম, খুব ই খুশী ওরা... ... খুব সুন্দর করেই কাজ শেষ করেছে।

একশ তিরিশ শিশুর হাসিমুখের প্রেরণা অনেক, ওর কথাই তাই বুঝতে পেরেছি! ইফতারের কিছুক্ষন পর আবারো ফোন, মর্মান্তিক রকম মলিন কন্ঠ। কাজ শেষে ফিরতে গিয়ে দেখে রাস্তায় অনেক গন্ডগোল পলাশীর ওদিকটায়। ওরা এগিয়ে গিয়ে দেখতে গেল। বাসের চাপায় স্পট ডেড আট-দশ বছরের একটি শিশু। ছিন্ন –বিচ্ছিন্ন দেহ... ... জুতা ,পোষাক।

আর ওদের বুক ভেঙ্গে গেল যখন দেখলো দেহের পাশে পড়ে আছে একটা ইফতারের প্যাকেট। ওদেরি দেয়া, হয়তো মাত্র বিশ-পঁচিশ মিনিট আগে!! আমি আর কল্পনা করতে পারিনি ... ... ... ... সতের-আঠারো বছরের কিশোরদের দলটা কী কঠিন ভাবে জীবন দেখলো! এই শিশুদের কাছে ওরা গিয়েছিল, তাদের হাসিমুখ ও দেখেছিল... ... ... ক্যামেরার ফ্লাশব্যাকে যখন কিছুক্ষন আগে মাত্র তোলা ছবি থেকে তারা বাচ্চাটাকে পয়েন্ট আউট করলো, লাল জামা পড়া আর অট্টহাসি দেয়া... ... ... ওরা কিভাবে সামলেছিলো নিজেদের আমি জানিনা! আমি জানতেও চাচ্ছিলাম না ছেলেটার কথা... ... ... মৃত ভাইয়ের পাশে বসে কাঁদতে থাকা ছোট ভাইটার কথাও ভাবতে চাচ্ছিনা! সবাই কি সব কিছু নিতে পারে? আমার সব এলোমেলো হয়ে যায়! আল্লাহ , তুমি কেন এভাবে মানুষকে পরীক্ষা দাও???? এই শিশুর পরিবার কিভাবে বাকিটা দিন শেষ করেছে? একটু পর ওঠা সূর্যটা কি ওদের জন্যও না!? :-( অনেক হাহাকারেই দিনটার প্রতিটা মুহুর্ত পার হচ্ছিল ... ... তারপরও ভীষন অপ্রত্যাশিত কিন্তু খুব খুব আকাঙ্খিত কোন কন্ঠস্বরের সামান্য 'হ্যালো’তেও কান্না সামলানো দায় হয়ে যায়। দৃশ্য-মান জগতের ওপারের কোন এক আনন্দময় জগতে অল্প সময়ের জন্য যেন প্রবেশের অনুমতি মিলেছে! আবার এ পারে ফিরে আসতে হয়েছে। বাস্তব সেই আনন্দময় জগতের অস্তিত্ব খুজতে গিয়ে ব্যার্থ আমি শুধু চোখের কোণে অশ্রুই টের পেয়েছি। ছোট বেলায় যত রকম উপায়ে ভাইদের যন্ত্রনা দেয়া যায়, তার সব গুলোই আমার প্র্যাকটিস করা আছে! ওদের ক্রিকেট বল স্টোরে লুকিয়ে রাখা, ব্যাট ভেঙ্গে দেয়া, মনোপলির বোর্ড ছিড়ে ফেলা ... ... ... থেকে শুরু করে আম্মুর কাছে নালিশ করা, অকারণে মার খাওয়ানো ... সব! এখন অপরাধবোধে আচ্ছন্ন হই! কিন্তু তারপরও মনে হয় আবারো যন্ত্রণার দিনগুলো না হয় ফিরে আসুক! আবার সবাই একসাথে থাকি ... ... ছোটটা তার বড় দুই ভাইকে কঠিন ভাবে মিস করে, হোস্টেল থেকে ফেরার অপেক্ষায় থাকে আর ইফতারের অন্তত একঘন্টা আগে থেকে জানাতে থাকে আমি যেন ঠিক সময়ে খাবার টেবিলে থাকি! ইফতারের সময় ওর একমাত্র সঙ্গী এখন আমি ই।

কদিন আগে ফেইসবুকে নোট লিখেছে আমার একটা ভাই, ওটা কতবার পড়ে ফেলেছি হিসেব নেই। আরো বহুবার পড়া হবে কিন্তু কমেন্ট করা হবেনা জানি। লেখাটার শেষ দিকের কিছু অংশ পড়ে মনে হয়েছিল, হু ... জীবন আসোলেই অপূর্ব এক তুর্কি ঘোড়া! সেই অংশটুকু, "... ... একটি ছোট্ট মেয়ের ক্যান্সার হয়েছে, একমাত্র চিকিৎসা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন। মেয়েটির ভাইয়ের সাথে ম্যাচ করলো,ডাক্তার জানালেন এটি জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন...... অপারেশন শেষ হওয়ার পর ভাইটি ডাক্তারকে প্রশ্ন করছে, আমি আর কতক্ষন বাঁচবো? (ভাইটি ভেবেছিলো সে তার বোনকে বোনম্যারো দিলে সে মারা যাবে, কিন্তু তারপরও সে রাজি হয়েছিলো) এই দুঃখে ভরা পৃথিবীতে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসাই আমাদের বাঁচার প্রেরণা যোগায়। " ৫/৯/২০১০


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।