আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমজান মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধি বনাম আমাদের সীমাবদ্ধতা



মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্কদরএর সময় শুরু হয়ে গেছে.. মুসলিমদের পবিত্রতম মাসটির বিদায় ধ্বনি শোনা যায়... এখন একটু হিসেব মিলিয়ে দেখা যায় পুরোমাসের লাভ ক্ষতির.. আমাদের প্রচেষ্টা কতোখান সৎ ও সত্য ছিলো! রমজান মাসের সংযম আর আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টায় আমরা কতোখানি সৎ আর সফল..! পবিত্র রমজান মাসে সূর্যদোয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনাহারে থেকে আমরা সিয়াম সাধনা করি। মুসলিম মাত্রেই এই মাসে সকল খারাপ কাজ পরিহার করে মহান আল্লাহ্' এবাদতে মনোনিবেশ করা একান্ত কাম্য। সংযমের মাস.. এই সংযম শুধু রসনার নয়, আমাদের সকল অন্যায় চর্চা, স্বভাব, আগ্রহ এবং কৌতুহলেরও। কতোজন মুসলিম এই রমজানের হাজার কৌতুহল সত্ত্বেও নিজের কুরিপু দমন করতে সক্ষম হয়েছেন! রমজান মাসে সিয়াম সাধনার সাথে সাথে জাকাত আদায় করে এবং ঘরে অথবা মসজিদে তারাবীর নামাজ পড়ে আল্লাহ্'র সন্তোষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে থাকি। শুধু এর মাঝেই কি রমজান মাসের তাৎপর্য নিহিত থাকে? এই সারাদিন অনাহারের মাঝে আমাদের যে আত্মশুদ্ধি হবার কথা তা কতোখানি ঘটে? সিয়াম সাধনার মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য হলেও আমরা হতদরিদ্র অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভব করি, তারপর... এই অনুভব কি আমাদের আত্মা, আমাদের আমলকে পরিশুদ্ধ করে? রমজান শেষে বছরের বাকী সময় আমরা অনাহারী মানুষের কাছে খাবার নিয়ে ছুটে যাই? অথবা নিজেদের অপব্যয় কমিয়ে ক্ষুধার্তদের আহারের জোগান দেই? আমরা কতোজন পবিত্র এই মাসের শিক্ষা সত্যিই লাভ করি? আমরা পথে ঘাটে হত দরিদ্র ক্ষুধার্ত মানুষের সামনে বসে নির্দ্বিধায় হাতের আইসক্রীম সাবাড় করি, অথবা বিলাসী রেস্টুরেন্টের জানালা দিয়ে তাঁদের চোখের সামনে আস্বাদ করি মজার ফ্রাইড চিকেন, বার্গার অথবা পিজ্জার স্বাদ! আমরা যাঁরা নিজেদের ধার্মিক মনে করি তাঁরা ক'জন সত্যিকার ভাবে ইসলাম সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি, অন্তত নিজের ইবাদতের ভুলভ্রান্তি শুধরে সঠিক পথে চলতে জানি? যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় পালন করে আসা বিদা'ত আমরা ত্যাগ করতে পারিনা, ছলে বলে কৌশলে তার বৈধতা দিতে চেষ্টা করি।

অথচ একবারও নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবনের চেষ্টা করিনা.. আপাতঃ দৃষ্টিতে ধর্মের নামে করে আসা কাজটি দিয়ে মহান আল্লাহ'র সন্তোষ্টি নয় বরং অসন্তোষ্টি লাভ করছি। শবেবরাতঃ বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে মহামারীর মতো যে বিদা'তের চর্চা!!! অনেকে যুক্তি দিতে চেষ্টা করেন, “এসময় হালুয়া রুটি, আতশবাজি নিষেধ তবে সারারাত জেগে ইবাদত করা জরুরী, কারন এই রাতে ভাগ্য নির্ধারন হয়!!!” এটা কি ভীষণ হাস্যকর ও ভুল কথা তা একটু ভেবে দেখলেই স্পষ্ট হয়। যে রাতে ভাগ্য নির্ধারন করা হবে তা নিশ্চয় অত্যন্ত মহিমান্বিত ও গুরুত্বপূর্ণ। অথচ, একটি দুর্বল হাদীস ছাড়া আর কোথাও এর উল্লেখ পর্যন্ত নেই! নাহ্! এই হাদীস মতের বিরুদ্ধে যাবার কারণে “দুর্বল” নয়, এর দুর্বলতা এখানেই যে আর কোন সহীহ হাদীসে এর উল্লেখ নেই। অথচ এমন একটি রাত সম্পর্কে মহা নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর একবার চুপিসারে একজনকে নয়, বরং অনেক অনেক বার সকলকে সচেতন করে বলার কথা।

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ সময়, দিন, রাত সম্পর্কে তিনি এমনটিই করেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা, মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে ম্পষ্ট ভাবে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করতেন যদি তা যদি সত্য হতো। বিশ্বের বড়বড় আলেমগণ যে দিবসের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানেননা, মহানবী(সঃ) যে দিবস সম্পর্কে কোন নির্দেশ দিয়ে যাননি, যে দিবস সম্পর্কে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা কোন আদেশ করেননি.. তেমন কাল্পনিক একটি দিবস অতি (?)পবিত্রতার সাথে আমাদের উপমহাদেশে পালিত হয়, আর আমাদের দেশে তো রীতিমতো সরকারী ছুটি!!! শবেবরাত সম্পর্কে একজন স্কলারের সুন্দর একটি আলোচনা। মিলাদ মাহফিলঃ এই মিলাদকে ব্যাধী বলার কারণে হয়তো অনেকে আমার প্রতি প্রচন্ড ক্ষুণ্ন হবেন! অথচ এই ব্যাধী আমাদের সমাজে ক্যান্সারের মতো ছেয়ে গেছে। যে কোন শুভ কাজ, শোক, আনন্দ, হতাশায় যেন মিলাদ বাংলাদেশের সমাজে এক অপরিহার্য অনুষ্ঠান!! আমরা একবারও ভেবে দেখিনা উপমহাদেশের বাইরে বিশ্বের আর কোন দেশের মুসলিমরা এই জিনিসের নামও কখনও শুনেননি!! পবিত্র নগরী মক্কা মদীনায় এর কোন অস্তিত্ব নেই! অনেকে বলেন মূ্হম্মদ (সঃ) এর প্রতি সন্মান দেখাতেই এই রেয়াজ, তাঁর সন্মানেই উঠে দাঁড়ানো.. কি ভয়ংকর কথা!! আমরা যারা নিতান্ত বাধ্য হয়ে কর্তব্য পালনের মতো নিয়মিত অথবা অথবা অনিয়মিত ভাবে নামাজটা আদায় করি, দিবসের অন্য সময় আল্লাহ্'র এবাদত হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থেকে ভালো মন্দ পার্থিব কাজে মগ্ন থাকি, এই আমদের নবী প্রেম তাঁর সাহাবা, তাবেঈন, তাবেতাবেঈনদের চেয়ে বেশী?? যাঁদের জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে আল্লাহ্'র ইবাদতে, মহানবীর আদেশ নিষেধ সঠিক ভাবে পালনের সাধনায়! মিলাদ আমাদের মুষ্টিমেয় হুজুরদের ইহলৌকিক লাভের একটি ব্যবসা মাত্র.. এতে পারলৌকিক কোন মঙ্গল আছে বলে হাদীস কুরআনে উল্লেখ নেই, বিশ্বের বড় বড় আলেম উলামাদের জানা নেই.. যদি পারলৌকিক কিছু থাকে তা হয়তো বিদা'ত পালনের কারনে কিছু অমঙ্গল ও গুনাহ্।

কুলখানি ও চল্লিশাঃ এসম্পর্কে বলাটা জরুরী.. এই ব্যাপারটিই দুঃখজনক, পীড়াদায়ক! ইসলামধর্ম অত্যন্ত শান্ত সৌম্য। এখানে জন্ম ও মৃত্যুকে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করতে বলা হয়েছে। আমাদের উপমহাদেশ দৈনন্দিন জীবনে মুসলিমদের সাথে হিন্দুদের জীবন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। হিন্দু ধর্ম অত্যন্ত উৎসব মুখর, বলা হয় তাঁদের “বারো মাসে তেরো পূজা। ” এটা তাঁদের ধর্ম তাঁদের আচার.. কিছু মুসলিম হয়তো এমন বর্ণাঢ্য আচারের প্রতি তীব্র আকর্ষণবোধ করায়, বাঙালী মুসলিমদের মাঝেও হিন্দুদের শ্রাদ্ধের মতো কুলখানী, চল্লিশার প্রথা শুরু করেছে।

এমনকি মৃত্যু দিবস পালনও ইসলাম সমর্থন করেনা। আর আমরা, মৃত্যু দিবসে সরকারী ছুটি ঘোষনা করেই নয়, বরং মাসব্যাপী মৃত্যু মাস পালনের বিকৃত উৎসবে মেতে উঠি। পা ছুঁয়ে সালামঃ বাংলাদেশের মুসলিম ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশের মুসলিমদের এই অদ্ভুত উপায়ে সন্মান প্রদর্শন করতে দেখা যায়না। এর কারণ হিসেবে কিছু আগে উল্লেখ করা কারনটিই প্রধান মনে হয়.... প্রণাম দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে পা ছুঁয়ে সালামের প্রচলন। এমন আরো অনেক অনেক বিদা'ত আর ভ্রান্তিতে আমাদের বাস, যা আমরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করলেও আদতে আল্লাহ'র অসন্তোষ্টির কারণ হচ্ছি মাত্র! আর এসব বিদা'ত জিইয়ে রেখে লাভবান হচ্ছে একশ্রেনীর স্বার্থান্বেষী মহল, যারা হুজুরের বেশে নসীহত করলেও হয়তো ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেনা অথবা জেনে শুনে অন্যায় করে।

শবে বরাত সম্পর্কে অনেকে দুর্বল কন্ঠে যুক্তি দেন..”সারারার নামায পড়ার মাঝে তো খারাপ কিছু নেই” আমরা কি যে কোন একটি দিনে সারা রাত নামায পড়ার মতো করে পড়ি, না আমাদের মনের গহীনে শবেবরাতের এই কাল্পনিক বিশেষত্ব বিরাজ করে? অন্য দিন এভাবে রাত জেগে নামাজ না পড়ে, শুধু এই রাতে কেনো? - মানুষকে যেমন তেমন বলা গেলেও আমরা ভুলে যাই মহান আল্লাহ্ অন্তর্যামী, তিনি আমাদের মনের উদ্দেশ্য ও নিয়ত সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। আর নিজের মতো করে বছরের নির্দিষ্ট রাতে বেশী বেশী ইবাদত করা জায়েজ মনে হলে, সপ্তাহে শুক্রবারের মতো সোমবার অথবা বুধবার অথবা যেকোন আরেকটি দিন নির্দিষ্ট করে জুম্মার মতো নিয়মিত বড় জামাতে নামাজ পড়া যায়!!! আসলে কি তা ঠিক? বিদায় হজ্জের সময় কি বলা হয়নি যে মহান আল্লাহ আমাদের দ্বীন ইসলামকে পূর্ণ করেছেন? তাহলে আমরা কেনো এতে নিত্যনতুন সংযোজনের ধৃষ্টতা দেখাই? কুরআন আর সহীহ হাদীসের বাইরে যে সব আচার, বা কুসংস্কার আমরা ইসলাম ধর্মের অঙ্গ বলে বিশ্বাস করি তা বিদা'ত যা অত্যন্ত গুনাহ্'র কাজ! আমরা কি পারি এই পবিত্র মাসে বংশপরম্পরায় মেনে আসা বিদা'ত থেকে মুক্ত হয়ে আত্মশুদ্ধি করতে? খুব সহজ নয় জানি, তবু চেষ্টা করতে পারি.... মনে রাখতে হবে, প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) বংশপরম্পরায় চলে আসা তাঁর পূর্বপুরুষের ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করেই সত্যের পথে এসেছিলেন.. প্রচন্ড প্রতিকূলতার মাঝে সৃষ্টিকর্তার একাত্ববাদ প্রচার করেছিলেন। ***আমরা বিভিন্ন সময় ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে অন্যের প্রতি আক্রমণাত্বক হয়ে উঠি, একজন মুসলিম হিসেবে কুরআন ও সহীহ্ হাদীস মেনে নিজে কতোখানি সঠিক ভাবে পালন করছি, নিজের অজান্তে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করছি কিনা তা ভেবে দেখা জরুরী। । ***


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।