আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমজান এলো বলে... (৩)

জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।

পুঁজিবাদী সমাজে আছি, যেখানে সাফল্যের মাপকাঠিই হলো কতটুকু উপার্জন করা হলো, সঞ্চিত হলো। ইসলামের ফিলোসফিতে আমার অন্যতম ভালো লাগা হলো অর্থনীতি সম্পর্কে দর্শন। যাকাত সম্পর্কে কুরআনে যেই সব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো পড়ে চমকে যেতে হয়। যাকাত প্রসঙ্গ আসলেই অর্থ সম্পদওয়ালাদের বলা হয়েছে, 'দরিদ্রদের অংশ' তাদের দিয়ে দিতে, অর্থ্যাৎ নিজের উপার্জনের, অর্থের, সঞ্চয়ের অতটুকু অংশকে আসলে 'নিজের' বলে দাবী করার উপায় নেই, অতটুকু নিজের কাছে তবু থাকা মানে অন্যের অর্থ 'অন্যায় ভাবে' আত্মসাত করা।

আমি ভেবে দেখলাম আমাদের দেশে কোটিপতি তো কম নয়। প্রত্যেকের উপার্জনের ২.৫% জাকাত মানে ২.৫ লাখ টাকা। লাখপতি আরও অনেক বেশি, মোটামোটি মধ্যবিত্ত হলেই সঞ্চয় করে লাখপতি হয়ে যায় সহজেই। প্রতি লাখের জন্য জাকাত, দরিদ্রের সম্পদের পরিমান আড়াই হাজার টাকা। এই টাকাগুলো পরিকল্পিত ভাবে নির্দিষ্ট ফান্ডে গেলে অনেকগুলো মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারতো।

মেয়েরা বিয়েতে কি বিষম পরিমানের গয়না পরে আজকাল! সেগুলোর জাকাতও তো কম না। সস্তা শাড়ি বিলি করে মানুষ মারার আয়োজন করে আর নিজের প্রতিপত্তি সম্পর্কে ঢাক ঢোল পিটানোর ব্যবস্থা না করে একই টাকাগুলো দিয়ে যদি গ্রামের একটা মেয়েকে সেলাই মেশিন কিনে দেয়া হতো, ছোট ফার্ম কিনে দেয়া হতো, ছোট্ট একটা দোকান কিনে দেয়া হতো, সুদের ঋনে ভুগতে থাকা কারও ঋন শোধ করে দেয়া হতো, কোন গরীব ছেলেমেয়ের জন্য বছর ব্যাপী কোন ফান্ড খুলে সেখান থেকে তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হতো, কোন বিয়ে আটকা থাকা মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে হয়তো জাকাতের হক আদায় হতো। টাকার মালিককে টাকা ফিরিয়ে দেয়া হতো। সত্যিকার অর্থে। জাকাত সম্পর্কে অসচেতন মানুষ অনেক, অথচ জাকাত ফরজ অনেকেরই।

অনেকেই ভাবে সারা বছর এভাবে সেভাবে তো দান করা হয়ই, জাকাত আলাদা করে হিসেব করে দেয়ার কি দরকার? যদি সেটা জাকাতের পরিমানের চেয়ে কম হয়, তাহলে যে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে পৃথিবীর মালিকের সামনে দাঁড়াতে হবে! জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য পরিমানটা খুব বেশি না, তাই দেখে নিন আপনার উপর জাকাত ফরজ কি না। গয়নার জাকাতের ব্যাপারটা অনেকেই ভুলে থাকে, এখন আড়ং-এর রূপার গয়নার চল শুরু হওয়ার পরে, জাকাত কিন্তু ফরজ হয়ে যেতে পারে খুব সহজেই। কারণ জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য রূপার পরিমানটা সোনার তুলনায় খুবই অল্প। এ তো গেল যতটুকু গরীবদের অধিকার, আপনার যেই অংশে বিন্দুমাত্র, বিন্দুমাত্র অধিকার নেই, সেই অংশ। তাছাড়া আপনার নিজের উপার্জন, নিজের সঞ্চয় তো আছেই।

পুঁজিবাদী সমাজকে একটু দূর থেকে দেখলে হাসিই পায়, একদল পাগলের কোন উদ্ভট নিয়মের খেলা মনে হয়। আমরা উপার্জনের জন্য যেমন খেটে মরি, প্রতিযোগিতা করি, খরচের জন্যও কিন্তু তেমনই প্রতিযোগিতা করি। উপার্জন বাড়লো তো আরেকটু বেশি টাকা খরচ করে জামা কাপড় থেকে শুরু করে বাড়ি গাড়ি... সেগুলোতে টানাটানি পড়লে আবার উপার্জন বাড়াও, তারপরে আবার খরচ বাড়াও... যেন কিছু তাড়িয়ে বেড়ায়... টাকা আনি আর টাকা খরচ করি। কিন্তু একটু ভাবলেই দেখা যায়, এই বেশির ভাগ খরচই অপ্রয়োজনীয়। নিতান্তই।

এমন একটা সময়ে আছি আমরা যখন না খেয়ে মানুষ মরছে, শীত গরমে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। মানুষ হয়ে বাঁচতে পারছে না। দরিদ্রেরা দিনে দিনে আরও দরিদ্র হচ্ছে। অথচ, মোবাইলে আরেকটু কম কথা বলে, দুই কাপ চা কম খেয়ে কিংবা সিগারেট বাদ দিয়ে প্রতি মাসে এমন টাকা জমানো যায়, যা দিয়ে একজন মানুষের সারা মাসের খাওয়ার খরচ চলে যাবে। সত্যিই, যারা ক্ষুধায় জ্বালায় মরছে, তাদের চাওয়াটা খুব বড় না! প্রবাসীদের জন্য ব্যাপারটা আরও সহজ।

দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ এত বেশি, যে প্রতিদিন খুব সামান্য টাকা বাঁচালেই, একটু সাবধানে কোন বিলাসী খরচ বাদ দিলে বা ঘরের কোনে কোন মাটির ব্যাংক রেখে দিয়ে, প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু খুচরা পয়সা রাখলেই বছরের শেষে এমন অর্থ জমে যায়, যা দিয়ে খুবই সামান্য পর্যায়ের হলেও 'কিছু করা' যায়। টাকাগুলো এমন যেগুলো থাকলে খরচ হবেই, কিন্তু না থাকলে, টের পাওয়া যায় না। আপনি আমি টের পাবো না, কিন্তু টের পাবে, সত্যিকারের পরিবর্তন হবে, এমন মানুষ কম নেই পৃথিবীতে! এই অভ্যাসটাই শুরু করতে পারেন রমজানে। (চলবে হয়তো...)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।