আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড়দের জন্য শিক্ষাঃ এখনো কেন টিপসই থাকবে?

বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।

টিপসই কি কোন সম্মানজনক ব্যাপার? আমার কাছে তা মনে হয়না। এই অসম্মানজনক টিপসই ব্যবস্থাটি কেন যে যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে টিকে রয়েছে বুঝতে পারি না। একুশ শতকে কেন বাংলাদেশের মানুষ টিপসই দিয়ে চলবে তা ভেবে দেখতে হবে।

যেখানে মানুষ চাঁদে গিয়ে পা রেখেছে, মঙ্গল গ্রহও এখন বলতে গেলে হাতের মুঠোয় সেই সময়ে বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষ আঙ্গুলে কালি মাখিয়ে টিপসই দিয়ে কাজ চালায় এটা কি মানব সভ্যতার জন্য কোন ভাল লক্ষণ? আমরা সবাই হয়তো বিএ, এমএ পাস হতে পারব না। কিন্তু সামান্য নাম সই করার মতো শিক্ষাটুকু নেয়া কি আসলেই অনেক কঠিন কাজ? জন্মগতভাবে আমাদের দু’টি চোখ রয়েছে। এই চোখ দুটি থাকার কারণে আমরা জগতকে দেখতে পাই। কিন্তু আমরা যদি আমাদের যদি শিক্ষা না থাকে তাহলে বিশাল জগতের কিছুই আমরা দেখতে পাব না। চোখ থাকতেও আমরা হয়ে যাব কানা।

তাই শিক্ষার ব্যাপারে কোন আপোষ করা চলবে না। শিক্ষা আমাদেরকে গ্রহণ করতেই হবে। আর শিক্ষার জন্য শিশু বয়সে বিদ্যালয়ে যেতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। আমাদের জীবনে বিদ্যালয়ের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না।

শিক্ষা যেমন একটি জাতির মেরুদন্ড। তেমনি একটি ব্যক্তি শিক্ষাব্যতীত শুধু মাত্র এক তাল মাংস পিন্ড বৈ আর কিছু নয়। আমাদের জ্ঞানচক্ষুকে উন্মোচিত করতেই হবে। এক সময় একটা গান রেডিওতে অনেক শোনা যেতঃ হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ....! চোখ থাকতে অন্ধ থাকার দিন শেষ করে দিতে হবে। কার্যত শিক্ষা রক্ত মাংসের একজন মানুষকে পরিপূর্ণভাবে মানুষ করে তোলে।

তার জ্ঞান, দক্ষতা আর নৈতিক চরিত্রে পজিটিভ পরিবর্তন আনে শিক্ষা। যে মানুষটি পড়াশোনা জানে না, এক বার ভাবুন তো তার কথা। বিশাল জ্ঞান জগতের সে কিছুই জানে না। সংবাদপত্র, বই এই সব কোন কিছুই তার কোন কাজে লাগে না। তারা টিভি দেখে, রেডিও শুনে।

কিন্তু অনেক কিছু্ই তারা বুঝে না। কারণ তাদের জ্ঞানচক্ষু বন্ধ। আমাদের চারিদিকে কত সুন্দর সুন্দর সব বিলবোর্ড, সাইন বোর্ড বিজ্ঞাপন এই সব কিছুই তার কোন উপকারে লাগে না। আর লাগে না বলেই সে জগতকে দেখতে পারে না। আর তাই এক অর্থে সে অন্ধ।

তাই আমি চাই, বাংলাদেশের সব মানুষ পড়াশোনা করুক। নিজেকে জানুক। উন্নত জীবন গড়ে তুলুক। তাদের বন্ধ জ্ঞানচক্ষুকে খুলে দিতে হবে। দেশের সিংহ ভাগ মানুষকে জ্ঞান জগতের বাইরে রেখে কি করে একটি দেশ উন্নত হতে পারে।

আমাদের ভাগ্যবিধাতারা কেন এই কথাটি সঠিকভাবে অনুভব করতে পারেন না? দারিদ্র্য শিক্ষা গ্রহণে সামান্য বাঁধা হলেও বাংলাদেশে সরকারী পর্যায়ে শিক্ষা দান কর্মসূচী প্রশংসার দাবিদার। সমস্যা হচ্ছে, দরিদ্র লোকেরা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠাতে চান না। তারা মনে করেন, যে সময়ে ছেলে মেয়েরা স্কুলে থাকবে সেই সময়ে তারা অন্য কাজ করে টাকা উপার্জন করতে পারবে। তাই সরকারী স্কুলগুলোতে বিনামূল্যে বই সরবরাহ করা, উপবৃত্তি ইত্যাদি দেবার পরও সকল শিশু স্কুলগামী হয়নি। এখনো গ্রামে গেলে দেখা যায় অনেক শিশু আছে যারা কখনোই স্কুলে যায়নি।

এই হল হাল। এই হালের পরিবর্তন না করতে পারলে শিক্ষার মান বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বয়স্ক শিক্ষার কার্যক্রম কি আর এখনো আছে? অথচ এটা থাকা উচিত। বয়স্ক শিক্ষার কার্যক্রম মূলত কোন সময় কার্যকর ছিল না। এটা ছিল কাগজে কলমে একটা প্রথা মাত্র।

বয়স্কদেরকে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। এখন প্রশ্ন, বয়স্করা কেন শিক্ষা গ্রহণ করবে? কেন তাদের জন্য শিক্ষা অপরিহার্য? শিক্ষা গ্রহণ না করলে কি এমন ক্ষতি? অনেকেই প্রশ্ন করে, এই বয়সে পড়াশোনা করে লাভ কী? তাদের এই কথায় যুক্তি যে নেই তা নয়। কি করবে তারা পড়াশোনা করে? সরকারের উচিত হবে এমন কোন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে বয়স্করা তাদের শিক্ষাকে সামান্য হলেও কাজে লাগাতে পারে। কি ভাবে কাজে লাগানো যায়: ১।

সব ধরনের বিদ্যুত বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদি বাংলায় করতে হবে যাতে তারা পড়তে পারে। বুঝতে পারে বিলের সঙ্গতি আর অসঙ্গতি। ২। যে কোন ধরনের বিল পরিশোধের সময় গ্রাহকের স্বাক্ষর দেবার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোন টিপসই গ্রহণযোগ্য নয়।

ফলে যে কোন লোক কম পক্ষে নাম লিখতে শিখবে। নাম লেখা শিখতে হলে সামান্য গণিতও শিখতে হবে। ফলে তার সামান্য পড়াশোনা তার কাছে অসামান্য কাজে লাগবে। ৩। জমি -জমার দলিলে অবশ্যই সই দেয়ার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে পড়াশোনা করবে। এখনো বেশীর ভাগ দলিলে টিপসই দেখা যায়। আঙ্গুলের ছাপ অবশ্যই কোন কোন ক্ষেত্রে লাগতেই পারে। তবে তা অন্য প্রয়োজনে। টিপসই কখনোই লিখিত স্বাক্ষরের বিকল্প হতে পারে না।

৫। ছেলে-মেয়েদের স্কুলের রেজাল্ট শিটে অভিভাবকের স্বাক্ষর দেবার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ফলে কোন অভিভাবক আর টিপসই দিতে পারবে না। ৬। সর্বোপরি টিপসই দেয়া যে সম্মানের কোন ব্যাপার নয় এই বোধটা তাদের মাঝে জাগিয়ে তুলেতে হবে।

৭। স্থানীয় শিক্ষকদেরকে তাদের বাড়ির আশেপাশের লোকদেরকে সাক্ষর করে তুলতে কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষকদেরও সামাজিক দায়িত্ব থাকতে হবে। ৮। যারা এসএসসি কি এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তাদেরকে দিয়ে কম পক্ষে তিন জন লোককে সাক্ষর করার কাজে লাগাতে হবে।

তিনজন লোককে স্বাক্ষর করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর বরাদ্দ করতে হবে। ৯। পড়াশোনা জানে না এমন লোকদেরকে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। নিরক্ষর লোকেরা জনপ্রতিনিধি হলে জনগণের অবস্থা যে কি হতে পারে তা বলাই বাহুল্য। ১০।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, যে গণতন্ত্রের কথা আমরা প্রতিনিয়ত বলি তা কিন্তু মূলত শিক্ষিত লোকের শাসন ব্যবস্থা। চলনে, বলনে আর মননে শিক্ষিত না হলে সেই গণতন্ত্র অর্থবহ হতে পারে না। যে মানুষ নিজেকেই চিনে না সে মানুষ সরকার নির্বাচন করবে কি করে? মানুষ যাতে তার নাম লিখতে পারে, মোটামুটি যোগ বিয়োগ লিখতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এই দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র তার শিক্ষিত নাগরিকদেরকে একাজে সম্পৃক্ত করতে পারে।

এ কাজ যত দ্রুত করা যাবে ততই মঙ্গল। সিংহ ভাগ মানুষকে অশিক্ষার অন্ধারে রেখে কোন জাতি কি উন্নতি করতে পারে? স্বাধীনতার পর প্রায় ৪০ বছর কেটে গেছে। আজো আমরা সেই অন্ধকারেই রয়ে গেলাম। এমন দিন কি আসবে না যে দিন এই বাংলাদেশের এক জন মানুষও আর টিপসই দেবে না? আমি কি সেই দিনের প্রত্যাশা করতে পারি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।