আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই শহীদের গল্প শুনো

বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ না নিয়েও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে বাঙালির বিজয়কে এগিয়ে নিয়ে গেছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে জীবন বাজি রেখে বেগবান করেছেন মুক্তিসংগ্রামকে। তেমনি দু'জন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী শহীদ মোহাম্মদ শাহ ও তারেক হুদা। শহীদ মোহাম্মদ শাহ শহীদ মোহাম্মদ শাহ’র জন্ম ১৯৫১ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার মরিয়মনগর গ্রামে। বাবা সৈয়দ আহম্মদ ছিলেন ব্যবসায়ী।

১৪ ভাইবোনের মধ্যে মোহাম্মদ শাহ পঞ্চম। তত্কালীন চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমান চুয়েট) দ্বিতীয় ব্যাচের (পুরকৌশল বিভাগ) শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তিনি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের। কিন্তু এর আগেই তিনি শহীদ হন।

কারণ তাঁর কর্মকাণ্ড হানাদার বাহিনীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি ও তাঁর আরেক ভাই আহাম্মদ শাহ (সে সময়ে রাঙ্গুনিয়া কলেজের স্নাতক (বিকম) শেষ বর্ষের ছাত্র) চন্দ্রঘোনায় তাঁদের নিজস্ব পেট্রল পাম্প (হাজি সৈয়দ আহম্মদ অ্যান্ড সন্স) এবং গ্রামের বাড়িতে ওষুধের দোকান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের যানবাহনের জ্বালানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করতেন। এ দুই ভাইয়ের সাহায্যে রাঙ্গুনিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাক বাহিনী রাঙ্গুনিয়ায় ঢুকে রাঙ্গুনিয়া কলেজে অবস্থান নেয়। দুই ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার বিষয়টি জেনে হত্যার পরিকল্পনা করে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরেরা।

সে অনুযায়ী ১৬ এপ্রিল রাঙ্গুনিয়া কলেজের দক্ষিণে মাজারের পুকুর পাড়ে দুই ভাইকে হত্যা করে সেখানেই মাটি চাপা দেওয়া হয়। পরে গ্রামবাসী দুই সহোদরের মস্তকবিহীন লাশ নিয়ে তাঁদের নিজ গ্রামে দাফন করেন। শহীদ মোহাম্মদ তারেক হুদা শহীদ মোহাম্মদ তারেক হুদা ১৯৪৮ সালে বরিশাল জেলার কাউখালী থানার পারসাটুরীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. শামসুল হুদা। ১৯৬৮ সালে তিনি তত্কালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রথম ব্যাচের (যন্ত্রকৌশল বিভাগ) শিক্ষার্থী ছিলেন।

কিন্তু প্রকৌশল জীবনের প্রথম ধাপটি পার হতে না হতেই দেশব্যাপী শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ঘনঘটা। প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েই তিনি যুদ্ধে চলে যান। পরে জানা যায়, তিনি শহীদ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছ থেকে জানা যায়, তারেক হুদা অত্যন্ত মেধাবী, চটপটে ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি ছিলেন। অবসরে গিটার বাজাতেন।

চুয়েট অ্যাথলেটিক ক্লাবের লোগোটির ডিজাইন তাঁর তৈরি করা। চুয়েটে এ দুই শহীদের নামে দুটি ছাত্রাবাস রয়েছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসগুলোতে এমন কত শত নাম না জানা শহীদ রয়েছেন যাদের বীরত্বের ইতিহাস আমাদের জানা নেই। প্রিয় ব্লগারদের কাছে অনুরোধ আপনারা ব্লগে নিজ নিজ ক্যাম্পাসের বীর শহীদদের নিয়ে লেখা দিন । আসুন চেষ্টা করি কালের গহব্বরে হারিয়ে যাওয়া এসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস এক সঙ্গে সংকলিত করে কিছু করা যায় কিনা ।

আপনারা সাহায্য করলে আমি নিশ্চিত তা অসম্ভব হবেনা। আপনাদের আওয়াজের প্রতীক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।