আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুপ্রিমকোর্টকে রায় পুনর্বিবেচনার দাবি পেশাজীবীদের



আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমানের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত পেশাজীবী সমাবেশে বিশিষ্টজনরা সুপ্রিমকোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, আদালতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। আদালতেরও উচিত শ্রদ্ধা করার জন্য জনগণকে সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। আদালত অবমাননা মামলার রায় পুনর্বিবেচনা করে অবিলম্বে মাহমুদুর রহমান ও অলিউল্লাহ নোমানের মুক্তি দাবি করেন তারা। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এ সমাবেশের আয়োজন করে।

এতে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব চাষী নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি প্রফেসর ড. আ.ফ.ম. ইউসুফ হায়দার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. খলিলুর রহমান, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. সদরুল আমিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক প্রফেসর ড. আবুল হাসনাত, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এসএম রফিকুল ইসলাম, বিএফইউজে মহাসচিব এমএ আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, মোহাম্মদ জাকারিয়া, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মাহমুদুর রহমান মুক্তি সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক বাছির জামাল প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, দেশের ভবিষ্যত্ নিয়ে সাধারণ জনগণ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। কারণ, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা আজ ক্ষুন্ন হয়েছে।

জাতি আজ স্তম্ভিত। জাতির বিবেকের ধারক-বাহকদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান অন্যতম। দেশ থেকে মিথ্যাচার ও পাপাচার দূর করতে হলে সংকল্পবদ্ধ হয়ে মাহমুদুর রহমানের আদলে সত্য উচ্চারণে নির্ভীক হওয়ার বিকল্প নেই। অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহুবব হোসেন বলেন, সত্য প্রকাশের জন্য মাহমুদুর রহমানকে কারদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু মাহমুদুর রহমানকে কারারুদ্ধ করা হয়নি, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে বাকরুদ্ধ করা হয়েছে।

আদালতের রায় সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা আদালতের উচ্চ আসনে আছেন, তাদেরকে বুঝতে হবে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সচেতন। নিজেদের ভাবমূর্তি তাদের নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে। ব্রিটিশ আইন দিয়ে বিচার করা যাবে না। সত্য কথা বলা প্রসঙ্গে খন্দকার মাহবুব বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য মাহমুদুর রহমানের মতো ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ১৩টি মামলা করা হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এক-এগারোর স্বৈরাচারী শাসকের সময় থেকেই মাহমুদুর রহমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেন।

বিশ্বে যারা অন্যায়ের কাছে মাথানত না করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি তাদের মধ্যে একজন। তিনি বাকস্বাধীনতার ভবিষ্যত্ মুক্তির গতিপথ সৃষ্টি করেছেন। মাথা উঁচু রেখে সত্য উচ্চারণে তিনি সাংবাদিকদের জন্য উদাহরণ। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, ইতিহাস মাহমুদুর রহমানকে ধারণ করবে। তিনি বের হয়ে আসবেন বীরের বেশে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের যে ধারণা নিয়ে তিনি লড়াই করছেন, দেশের জনগণ সে লড়াইকে বেগবান করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, রাজনীতি আমার কাছে বড় নয়। আমার কাছে বড় হলো স্বাধীনতা। মৌলিক অধিকার রক্ষা করার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধ আওয়ামী লীগের একক কোনো বিষয় নয়।

আওয়ামী লীগের নেতিবাচক বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের জানতে হবে আওয়ামী লীগ কত খারাপ। ওপর ওপর খারাপ জানলে হবে না। গভীরে যেতে হবে। তিনি বলেন, সব পেশাজীবীর মতো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও আজ সরকারের প্রতি বিরক্ত। সামনে অন্ধকার উল্লেখ করে রাজনৈতিক নেতাদের তিনি আন্দোলনের আহ্বান জানান।

রুহুল আমিন গাজী সরকারের জনপ্রিয়তা কমার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে, মাঠে, রাজপথে একজনও সরকারের পক্ষে কথা বলছে না। বিচার বিভাগ সম্পর্কে বলেন, সঠিক বিচার পাওয়ার আশা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিচারের মাধ্যমে অবশ্যই মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। বিচার নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে তাহলে বিচারকদের একদিন মানুষের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। প্রফেসর আ.ফ.ম. ইউসুফ হায়দার বলেন, বর্তমানে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে একদলীয় শাসন চলছে।

বিরোধী রাজনৈতিক দল বা মতকে সরকার দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। মাহমুদুর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, ১/১১ সরকার যাকে গ্রেফতার করতে পারেনি, বর্তমান সরকার সত্য কথা বলায় তাকে গ্রেফতার ও কারাবন্দি করেছে। প্রফেসর ড. সদরুল আমিন বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে বলেন, আইনের শাসন থাকলেই ন্যায়বিচার থাকে না। সারাদেশে অনাচার-অত্যাচার চলছে। ক্ষমতা আছে বলে সরকার ইচ্ছা করলেই মামলা করতে পারে না।

প্রফেসর খলিলুর রহমান বলেন, মাহমুদুর রহমান একটা প্রতীকে পরিণত হয়েছে। মাহমুদুর রহমানকে আটকে রেখে সরকার আগুনের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ভোটের জোরে লাফালাফি করে না। যারা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে তারা যা বলছে সে অনুযায়ী সরকার পরিচালিত হচ্ছে। মাহমুুদুর রহমানকে আটকে রেখে তারা শিক্ষা দিতে চাচ্ছে।

কিন্তু তা তারা পারবে না। অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া বলেন, সরকার মাহমুদুর রহমানকে ভয় পায়। এজন্য তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, জেল-জরিমানা করছে। রিয়াজুল ইসলাম রিজু মাহমুুদুর রহমানের বিচার আপিল বিভাগে করা প্রসঙ্গে বলেন, এটা কিসের আলামত? সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না উল্লেখ করে আন্দোলনের জন্য রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।