আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাচম্যানের খেরোখাতা - ২

শারদশশীর অনন্ত অপেক্ষায় তোর চোখের সবুজ রঙ আকাশনীল হয়ে গেলে ঠিক ধরে নিস আমি হারিয়ে গেছি ঘাসেদের দলে...
(একেবারেই নিজের কিছু সুখ দুঃখের পাচালি...) আমি মিশনারী স্কুলে পড়েছি প্লে থেকে ক্লাস টু পর্যন্ত। খুব লাজুক ছিলাম। সহজে কারো সাথে মিশতে চাইতাম না। বিশেষত মেয়েদের সাথে। আমাদের স্কুলের নিয়ম ছিল প্রতি সপ্তাহে সিট প্ল্যান ঠিক করে দেয়া।

এই সপ্তাহে যে বেঞ্চে আমার সিট পড়ল, পরের সপ্তাহে আর সেখানে বসার উপায় থাকত না। নির্দিষ্ট সিটেই বসতে হত। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মিউচুয়াল রিলেশনশীপ ডেভেলপ করার জন্য হয়ত এই বুদ্ধি। যাহোক হঠাত আমার সিট পড়ল বুবলি নামের এক ক্লাসমেটের সাথে। পরের দিন ক্লাসে গিয়ে সিট দেখে আমার তো মাথাই খারাপ! আমি কিছুতেই ওর সাথে বসবনা।

মিসেরা আমাকে নিয়ে পড়লেন মহা বিপদে। টিফিন পিরিয়ডে আম্মুকে এক মিস খুলে বললেন সেকথা। আম্মু কোন মতে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি কইয়ে আমাকে ওই সিটে বসিয়ে দিল। পরে অবশ্য বুবলি আমার ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। আমার জেনুইন বন্ধু ছিল বাবাই, হৃদয়, ইকো, শৈবাল, সবুজ।

ওদের সাথেই ঘুরতাম সব সময়। বাবাই দের বাসায় প্রায়ই যাওয়া আসা ছিল। আমার নিজের কোন ভাই বোন নেই। কিন্তু আমার কাজিনদের আমি নিজের ভাই বোনের মতই দেখতাম। ফলসরুপ একদিন যখন হেড মিস্ট্রেস আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমরা কয় ভাই বোন, তখন আমি বলেছিলামঃ পাচ বোন এক ভাই (আমার মায়ের দিকের কাজিনরা সবাই বোন।

) আর আমি সবার চেয়ে ছোট! তার পর যেদিন মিসের সাথে আম্মুর দেখা হল সেদিন উনি আম্মুকে বললেনঃ একটা ছেলের জন্য পাচটা মেয়ে নেয়া কিন্তু আপনার একেবারেই উচিত হয়নি। আম্মু তো হতভম্ব! স্কুলে আমি কখনোই দুষ্টুমি করতাম না। ছোটবেলা থেকেই খুব শান্তসিষ্ট ছিলাম। আমার কারণে কখনোই স্কুলে আব্বু আম্মুর ডাক পড়েনি। তবে প্রায়ই স্কুলে খাতা, পেন্সিল, ওয়াটার পট ইত্যাদি হারিয়ে আসতাম।

আমাদের লিখতে হত পেন্সিল দিয়ে। ক্লাস টুতে উঠে পেন দিয়ে লেখার অনুমতি পেলাম। শ্রুতলিপি বলে একটা টাস্ক ছিল। মিস রা যা বলতেন, শুনে শুনে সেটাই লিখতে হত। এটা বোধহয় আমার সবচেয়ে প্রিয় টাস্ক ছিল! আমার একটা খুব ভাল বান্ধবী ছিল অরিন, দারূণ ভাল মনের মেয়ে।

ওর কাছে আমি কমিকস ধার নিতাম, আর ও আমার কাছে নিত গল্পের বই। আমার প্রিয় মিস ছিলেন লেসলি মিস। উনি ইংরেজী পড়াতেন। কেন ওনাকে এত ভাল লাগত আমি নিজেও জানি না। আর সব মিসই আমার উপর প্লিজড ছিলেন।

কাউকে কোনদিন বিরক্ত করিনি। দীপা নামের একটা মেয়ে পড়ত আমাদের ক্লাসে। দেখতে যে তেমন আহামরী সুন্দরী ছিল তা নয়, কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন এই মেয়েটিকেই আমার ভীষণ ভাল লেগে গেল। ও ছিল আমাদের মুক্তি মিস এর ভাগ্নি। ওরা হিন্দু ছিল।

ওই বয়সে বুঝতাম না হিন্দু হলে সমস্যা কি? যেই আমাকে জুজ্ঞেস করত কাউকে ভাল লাগে কিনা, তখনি মুচকি হেসে ওর কথা বলে দিতাম। হাতার ভেতর হার্ট একে অর নাম লিখে রাখতাম। সেই বয়সে এতটা রোমান্টিসিজম কোথায় পেলাম, এখন মনে পড়লেই হাসি পায়! খুব একটা ভাল ছাত্র ছিলাম না, কিন্তুই নাম্বার কখনোই ৯০ এর নিচে নামত না। আমাদের ছিল ৯০তে A+ এখন সেকথা মনে পড়লে ভাবি, এত নাম্বার তখন কিভাবে পেতাম, আর এখন কেন পাই না? ক্লাস টু’র পর আমি চলে আসি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে, থ্রি তে ভর্তি হই। তারপর ওখানকার সব বন্ধুদের সাথে আর কখনো দেখা হয়নি... আজ সবার কথা খুব মনে পড়ছে।

হৃদয়, আল-ইমরান, ইকো, বাবাই, শৈবাল, সবুজ, বুবলি, দীপা, অরিন, লতা, লোপা, প্রিয়াংকা... তোদের কথা অনেক মনে পড়ে... যেখানেই থাক, অনেক ভাল থাকিস তোরা...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।