আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিতলীর এখন প্রমোশন হচ্ছে!

কখনো সুরের ছন্দ মেলেনা,তো কখনো তাল তবু গেয়ে যেতে হয় মিলিয়ে সাথে সময়ের সুর-তাল!
তিতলী খুব মনোযোগ দিয়ে কার্টুন দেখছে,সামনে গ্লাসে জুস রাখা আর হাতে চিপস। তবে তিতলীর ভাব সাব দেখে মনে হচ্ছে,সে হলিউডের কোন একশন মুভি দেখছে!বাবা রুমে এসে তিতলীর পাশে বসলেন,ওর হাত থেকে চিপসের বক্সটা নিয়ে চিপস মুখে দিতে দিতে বললেন, -দেরে মা,খবরটা দে তিতলী এতো কাছে থেকেও তা শুনতে পেলো বলে মনে হলো না!তা দেখে বাবা আবারো বললেন, - কিরে মা?শুনিসনি?খবর দেখবো,বাংলা চ্যানেল দে তিতলী টিভির দিকে তাকিয়ে মুখ কুঁচকে বলল, -বাবা,বেশি বেশি খবর দেখা ভালো না,হার্টের সমস্যা হয়!!আজকে খবর দেখার দরকার নেই। বাবা চিপস খেতে খেতে বললেন, -আজকের খবর দেখাটা দরকার,অন্তত হেডলাইন গুলো দেখি চল। -বাবা,১১টার সময় দেইখো,খবর তো সব সময় একই তাই না? -হুম,কার্টুনও সব সময় একই। এখন তুই চ্যানেল পাল্টা... -বাবা,এটা কার্টুন সিরিয়াল,আমি মিস করতে পারবো না! -কিন্ত মা জননী,এখন খবর না দেখলে আমার শান্তি লাগবে না!,রাত জাগতে পারবো না তো!সকালে অফিস আছে! তিতলী বাবাকে [তার ভাষ্য মতে,বাচ্চা বাবাকে!!] আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো,কিন্তু বলতে পারলো না,কারন এমন সময় মা রুমে আসলেন,হাতে খেজুরের বাটি।

মুখটা হাসিতে জ্বল জ্বল করছে,বাবা-মেয়ের হাতে খেজুর দিয়ে বললেন, -নাও,আলহামদুলিল্লাহ বলে খাও। বাবা বললেন, -সুখবর আছে নাকি কোন?সেটা আগে বলো। মা হেসে বললেন, -তোমার প্রমোশোন হয়েছে,শ্বশুড় থেকে দাদা হতে যাচ্ছো! বাবা চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেললেন 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে খেজুরটা মুখে দিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন,তিতলী হাতে খেজুর নিয়ে তখনো টিভির দিকে তাকিয়ে আছে! -এই যে নতুন ফুপি?খেজুর খাবেন না? তিতলী কপাল কুঁচকে তাকালো বাবার দিকে,কিছুক্ষন পর বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে ফেলল! -তার মানে,ভাইয়া-ভাবি আম্মু-আব্বু হবে? -হুম,আলহামদুলিল্লাহ বল,একটু আগে তমাল ফোন করে জানালো। -তারমানে,মিশু ও খালামণি হবে?ইয়াহু... তিনজন এক সাথে হেসে ফেলল। একটু পর তিতলী জিজ্ঞেস করলো, -আম্মু,ভাবীর ছেলে হবে নাকি মেয়ে? -এতো তাড়াতাড়ি বলা যাবে নাকি?কয়েকমাস যাক,তারপর...আর আল্লাহ খুশী হয়ে যেটা দিবেন,সেটাই তো যথেষ্ট,ছেলে কি আর মেয়ে কি।

উত্তেজনায় তিতলীর রাতে যেনো ঘুমই আসছে না!ভাবি-ভাইয়া মিশুদের বাসায় বেড়াতে গেছে ক'দিন আগে। কাল বিকেলে হয়তো আসবে,ইশ...কখন যে সকাল হবে,কখন স্কুলে যাবে! সব্বাইকে জানাতে হবে। টিফিন আওয়ারে রিদিতা হাইবেঞ্চের উপরে বসে সবার দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছে! কিন্তু সবাই ব্যাস্ত তিতলীকে নিয়ে,সে সবাইকে ক্যাডব্যারি দিচ্ছে,আর বলছে, -শোন,আমার সাথে সাথে কিন্তু তুইও ফুপি হবি বুঝেছিস?মিশুর মতো খালা হবি না,ও তো দেখ,কেমনে কমিকস পড়তেছে!তোরা শুধু ফুপি হচ্ছিস,খালা না কিন্তু বুঝলি?রেডি হয়ে যা এখন থেকে হুম...! একটু পর রিদিতা হাত-পা ছুঁড়া শুরু করলো, -এই তোরা কেউ কি আমার কথা শুনবি?কেউ কেন আমার কথা শুনে না...আআআআ!! তুবা চকোলেট খেতে খেতে ওর পাশে যেয়ে বসে বলল, -বল,কি হইছে?শুনতেছি আমি! -না হবে না,তিতলীকেও শুনতে হবে,ঐ কমিকসওয়ালী মিশুকেও শুনতে হবে! -চিন্তা করিস না,ওরাও শুনতেছে,তুই বল! রিদিতা এবার নড়েচড়ে বসল,মুখে হাসি ফুঁটিয়ে বলল, -একটা গুড নিউজ আছে! আমার ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে,আমার হবু ভাবিও ডাক্তার,এই ডিসেম্বর মাসে বিয়ে। তুবা সাথে সাথে হাত তালি চেঁচাতে লাগল, -মেয়েরা শুন সবাই,আমাদের রিদিও এইবার ননদ হয়ে যাচ্ছে,তার ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে!তালিইই...সবাই দাও তালি! মিশু কমিকস থেকে মুখ তুলে বলল, -ঐ রিদু,তোর ভাবিও কি তোর ভাইয়ের মতো চশমা পড়ে? রিদিতা কপাল কুঁচকে বলল, -হুম পড়ে,তবে পাওয়ার কম। তুবা এক চোখ টিপে বলল, -ভাবিস নারে মিশু,দুইদিন আগে আর পরে!ভাই-ভাবি দু'জনেই একই পাওয়ারে দেখবে!মুহাহাহা! রিদিতা নাক ফুলিয়ে বলল, -ঐ,খবরদার আমার ভাবিরে নিয়ে কিছু বলবি না!আমি কখনো তিতুর ভাবী কে নিয়ে কিছু বলছি?ডাক্তার ভাবির দাম বুঝছ?হুহ... আমার বাসায় এখন দুইইইজন ডাক্তার!একজন হার্ট এর আরেকজন বাচ্চাদের!বুঝেছিস? তিতলী চকোলেট বন্টন শেষে সামনের হাইবেঞ্চে বসে বলল, -এতো ঘর ভর্তি ডাক্তার দিয়ে তোরা করবি কি? শোন,তুইও কিন্তু আমার সাথে সাথে ফুপি হচ্ছিস,বুঝলি? তোর ভাবিকে বলসি,ভবিষতে আমাদের বাবুকে যেনো ভালো মতো ট্রিটমেন্ট করায়,এবং সেটা ফ্রি তে! রিদিতা কিছু বলার আগেই তুবা বলে উঠলো, -এইরে তিতু,তুই আর ডাক্তার পাইলি না!চশমার পাওয়ার যদি কম হয়,তাহলে তোর ভাইয়ার বাবুকে দেখবে কিভাবে!হেহেহেহে!! সাথে সাথে রিদিতা ঝাঁপিয়ে পড়লো তুবার উপর! তিতলী ওদেরকে ছাড়াতে ছাড়াতে টিফিন আওয়ার শেষের ঘন্টা পড়ল।

শুক্রবার দিন,সকালে নাশতা করে আম্মুর রুমে এসে তিতলী দেখলো আম্মু আলমারী থেকে অনেক দিনের পুরোনো কাপড়-চোপড় বের করছে!ওকে দেখে আম্মু বলল, -এই এদিকে আয় তো,এই সুটকেসটা খুলে দেখতো জিনিস গুলো ঐটাতেই আছে কি না! -কার কিসের জিনিসপত্র?! -আরে তোর আর তমালের ছোট বেলার কিছু জামা-কাপড় আর খেলনা গুলো। তিতলী কপাল কুঁচকে সুটকেস খুলে দেখল,কাপড় গুলো ঐটাতেই আছে। -আম্মু এটাতেই আছে,কিন্তু এগুলো দিয়ে কি করবে? আর এখানে তো কাপড় এর সাথে আমার পুতুল-খেলনা,ভাইয়ার ও কি কি সব জানি আছে! -হুম,এগুলো ই তো সামনে কা্জে লাগবে! তমালের বাবুর জন্য -ইইই!এইসব জিনিস আমি বাবুকে ধরতেই দিবো না আম্মু! আম্মু বিরক্ত হয়ে বললেন, -বেশি বুঝিস না তো!না দিলে এগুলো জমিয়ে রেখেছিস কোন দুঃখে?! তিতলী কিছু না বলে জিনিস গুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। বেশ কিছু কাপড়ের পুতুল দেখলো,এগুলো সব নীরা ফুপি বানিয়ে দিয়েছিলো,কিছু ছোট ছোট জামা,যেগুলোতে আম্মু-ফুপি হাতের কাজ করেছিলো সুন্দর করে, বেশ কিছু চুলের বান্ড- ক্লিপ...দেখতে দেখতে হঠাত তিতলীর মনে হলো,ভাইয়ার যদি একটা মেয়ে হয়,তাহলে কি ওর সব কিছুই বাবুকে দিয়ে দিতে হবে?! আম্মুকে জিজ্ঞেস করতেই হেসে বললেন, -তোর ইচ্ছে,দিবি কি দিবি না!তবে এটাই নিয়ম,আমিও তাই করেছি,তারপর তোর নীরা ফুপি,সেও তো তার কতো কিছু তোকে দিয়ে দিয়েছে,তোর শিমুল মামাকে দেখিসনি?সে ও তো তারা জামা-কাপড়,র‍্যাকেট-ক্রিকেট ব্যাট তোর ভাইয়া কে দিয়ে দিতো! তিতলী পুতুল গুলো হাতে নিয়ে চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসল! ওর হঠাত মনে হলো, -ভাইয়ার যদি মেয়ে হয়,তাহলে কি ওকে আমার সব কিছু দিয়ে দিতে হবে?এমনকি এই রুমটাও!না,না তা কি করে হয়! ও তো ওর আম্মুর সাথেই থাকবে তাই না?... নাহ,কেমন কেমন যেনো লাগছে তিতলীর! ভাবতে ভাবতে ল্যান্ড ফোন থেকে মিশু কে ফোন দিলো। -কিরে?ফোন দিছিস কেন?সিসিমপুর দেখিস না তুই? -পরে দেখবো,আচ্ছা শোন, আমি একটা ব্যাপার চিন্তা করছি! -কি ব্যাপার?বলে ফেল -আচ্ছা,ভাবির যদি একটা মেয়ে হয়,মানে ধর যে মেয়ে হলো,তাহলে ও যখন বড় হবে তখন কি ওকে আমার সব জিনিস পত্র দিয়ে দিতে হবে?! -আপুর কি মেয়ে হবে?তুই বা আপু কেউ কি এমন স্বপ্ন দেখছিস?! -আরে নাহ,তুই প্যাচাইস না তো!প্লিজ বল না?আমার সব কিছু কি দিয়ে দিতে হবে? মিশু কিছুক্ষন উমম করে বলল, -তোকে যদি দিতে হয়,তাহলে তো আমাকেও দিতে হবে!কারন,আমিও তার একমাত্র খালা হবো! এক কাজ করি,তুই হাফ দিস,আমি হাফ দিবো তাহলে হবে না? -দোস্ত,দিতেই কি হবে? -সেটাই তো আমার কথা,দিতে হবে এই চিন্তা তোর মাথায় কে ঢুকিয়েছেরে?আর দিলেই বা কি! আচ্ছা,দেখ,তুই তোর বাসার কতো আদরের মেয়ে,একদম প্রিন্সেস!তাই না? -হুম,তুই ও তো কম আদরের না।

-তাহলে তোর পরে যে বাবুটা আসবে,সেও তো তোর-আমাদের প্রিন্সেসই হবে তাই না? তিতলী কিছুক্ষন ভেবে বললো, -হুম,তা তো হবেই। আমি তো ওকে কাউকে কোলে নিতে দিবো না,সারাক্ষন আমার কোলেই থাকবে! -হুম,হইছে,আমিও আছি,তুই বারবার আমাকে বাদ দিচ্ছিস!ইইই!! -ওকে,ওকে সরি!এবার বল... -শোন,আমার কি মনে হয় জানিস,তুই আমি প্রিপারেশন নিয়ে রাখি,যে আপুর যে বাবুটা আসবে,তাকে আমরা হৃদয় উজার সব দিবো্‌ জিনিস থেকে শুরু করে আদর... আমি-তুই কি রিদির মতো নাকি?খালি এটা আমার-ওটা আমার করি! -অবশ্যই না,আর নীরা ফুপিও কিন্তু কখনোই আমাকে কিছু দিতে না করেনি,চাওয়ার আগেই সব দিতো। -সেটাই,দেখ,এই জন্যই কিছু নীরা ফুপিকে সবার থেকে একটু বেশিই ভালোবাসিস,আমিও আমার লতা খালামণিকে সে জন্য বেশি ভালোবাসি,কারন,আমি না চাইতেও ওর কাছে সব পেতাম,ওর সব সুন্দর জিনিস গুলো আমাকে দিতো,মুখে আদর-শাসন যতোটা না করতো,দেয়ার বেলায় কখনোই না করতো না। -আসলেই তো,তাহলে যদি আমরাও দেই,আমাদের বাবুটাও তাহলে আমাদেরকে অনেক ভালোবাসবে তাই না? -হুম,সেটাই দেখ,তুই-আমি অফিসিয়ালী খালা-ফুপি হতে এখনো অনেক দেরী,আর আমাদের কি ই বা এমন জিনিস আছে,যা ঐ বাবুর কাজে লাগবে!ওর তো নতুন জিনিস নিয়েই কূল পাবে না!শুধু শুধু আমাদের পুরোনো জিনিস দিয়ে ও কি করবে? তিতলী এবার একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, -উফফ,দোস্ত,শান্তি পেলাম!আসলেই বোকার মতো ভাবছিলাম... থ্যাঙ্কস দোস্ত,তুই কি সুন্দর সহজ করে দিলি!জানিস সেদিন পাশের বাসার কেয়া'পু বলছিলো,'কখনো কিছুকে 'আমারই শুধু' ভাবতে নেই,বরং আমার কিছু অন্যদেরকে দেয়ার মাঝেই আনন্দ,তাতে মন বড় হয়। ' -হুম,এটাকে বলে শেয়ারিং মনে হয়! কেয়া'পু কে ভালো করে আরেকবার জিজ্ঞেস করিস,আর শোন,থ্যাংকস বলার কিছু নেই,এইরকম উদ্ভট চিন্তা শয়তান মাথায় দিবেই!ওকে,রাখিরে এখন।

আল্লাহ হাফেজ -ওকে,কাল ক্লাসে কথা হবে,আল্লাহ হাফেজ। তিতলী আর মিশু আজকাল ক'দিন পর পরই তাদের রুমে টর্নেডো চালায়!! দু'জনেই ওয়ার্ড্রোব,ড্রেসিং টেবিল সব খুঁজে খুঁজে জিনিস পত্র আলাদা করছে,এমনকি কমিকস-গল্পের বইগুলোও...!! কারন,তারা দু'জনেই খালা-ফুপি হবে,তাই এগুলো সব তাদের অনাগত বাবুটার জন্য...! এমন বেহিসেবি দেয়ার মতো খালা-ফুপি থাকলে আর কিছু কি লাগে?! [অনেকেই মনে করতে পারেন,লেখাটায় আরো অনেক কিছুকে,কিছু তত্ত্বকে সহজ ভাষায় দেয়া যেতো!কিন্তু আমি চেয়েছি সদ্য কৈশোরে পা'দেয়া দুটো মেয়ের মানুষিকতাটাকে ঠিক ওদের মতো করেই তুলে ধরতে। কৈশোর বয়সটা খুব সহজ-সাবলীল এবং বিশুদ্ধ চিন্তা নিয়ে বড় হবার বয়স,এই বয়সে 'অনেক বেশি বুঝতে হবে অন্যদের চেয়ে' এমনটা হওয়া ঠিক না! যেই সময়ে যতটুকু যেভাবে বুঝার দরকার,ততটুকুই বুঝতে পারা উচিত এবং বড়দেরও উচিত,সেভাবেও ওদেরকে বুঝানো,ওদের চিন্তা গুলোকেও সেভাবেই গ্রহন করা]
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।