আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ আত্নকথন (অস্পষ্টতা, অধিকার আর অভিমানের বিড়ম্বণা )

বাংলাদেশ কে ভালোবাসি

১ তোর জন্য ফেলে রাখা সবটুকু শ্রদ্ধাবোধ ফেলে যাচ্ছি রাতভোরের এই সময়ের গতিময়তায়। আবছা অন্ধকার টা কেটে যাবে আর আমি হবো তুই বিহীন পরিপূর্ণ মানুষ। রাত্রি তার সাথে করে নিয়ে যাবে তোকে ঘিরে আমার অর্থহীন শ্রদ্ধাবোধ , বৃথাই নিজেকে তোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেউ একজন ভাবার প্রবণতা আর আমার সীমিত মানসিক স্থিরতা তোকে বুঝতে চাওয়ার। সম্ভবত তোকে বুঝতে বুঝতে কিংবা বুঝার চেষ্টা করতে করতে আমি ক্লান্ত! তাই রাত্রির সাথে সাথে তুই সংক্রান্ত সমস্ত ভাবনাদের বলিদান । ।

২ সেদিন ঝুম বৃষ্টি ছিল। ব্যস্ত রাজপথের জলমগ্নতা দেখতে দেখতে আমার দিনভরের লেকচারের ক্লান্তি ঝেড়ে দিয়েছিলাম নিকোটিনের উপর। এই ঝুম বৃষ্টি , সিগারেটের উড়ন্ত ধোঁয়া আর আমি! যখন ঘরে ফিরলাম অবিরাম বর্ষণ তখন ক্লান্ত। যন্ত্রটাতে বসে পড়লাম, দূরে থাকা বন্ধুদের কাছে থাকতে। তুই আমার বন্ধু হতে চাইলি।

স্নিগ্ধ সুন্দর নাম টা আমার উপেক্ষা করার সব শক্তি কেড়ে নিলো। সেই যে শুরু ভেবে দেখিনি কোন দিন তোকে নিয়ে ভাবনার দোকান খুলে বসবো। তখন ভাবতে ইচ্ছে হয়নি তোকে নিয়ে লিখা আস্ফালনে ডায়েরীর পাতা শেষ হয়ে যাবে। খুব সম্ভবত বৃষ্টিপাত সেদিন থামতে চাচ্ছিলোনা। গভীর রাতে আর বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাইনি।

। ৩ কখনো প্রজাপতির ডানা হয়ে , কখনো রংধনুর রঙ হয়ে তুই নিজের গল্পের রাজকন্যা সেজে আমার বন্ধু হলি!! সেই বন্ধু, যার নিত্যদিনের সমস্ত কাজে তোর রাজ্যের আগ্রহ। খুনসুটিতে মাতিয়ে রাখতি চ্যাট বক্স। আশ্চর্য দ্রুততায় আমার মনোজগতে তোর দখলদারি শুরু হয়ে গেলো। চাওয়া পাওয়ার হিসেবের খাতাটা বন্ধ রেখে আপন করে নিলি আর আমার খুব কম আপন মানুষের রাজ্যের একজনা হয়ে গেলি।

এই আমি ভেবে নিলাম তোর এই উচ্ছলতা শুধুমাত্র আমার জন্য বোধহয়, কেন ভাববোনা যে কারো কাছেই তো তুই রংধনুর রঙ এর মত করে ধরা দিবিনা!! ভেবে নিয়েছিলাম তোর শাসন আর খুনসুটি আর কারো জন্য হতেই পারেনা , হবেই বা কেমন করে ? আমি তো একজনই!! ৪ “অধিকার“ শব্দটা ভ্রান্তি গায়ে মেখে ঘুড়ে বেড়ায়। সম্পর্ক সম্পর্ক খেলায় এ এক জটিল সমীকরণ। অধিকার এলো , যাতনা শুরু!! অধিকার নেই তুই থেকেও নেই!! তোর আর আমার মাঝে এই জটিল জিনিসটার অবতারণা হয়েছে খুব অবচেতনভাবে! বুঝতে পারিনি সুঁইয়ের মত করে প্রবেশ করছে আমাদের নিত্যদিনের খুনসুটিতে। তারপর ধীরে ধীরে অভিমান এলো তোর হাত ধরে । সম্ভবত,আমি তখনো বুঝে উঠতে পারিনি তোর সাথে “অভিমান” করার “অধিকার” আমার আছে কি? কেন তোর রেজাল্টের পরে আমি ফোন করে স্বান্তনা দিলাম না,এটা নিয়ে তোর ব্যাপক মাত্রার অভিমান আমাকে কিছুটা বিনোদন ও দিয়েছিল।

আমি কি করে জানবো তুই প্রফে ফেইল মারবি!! তোর পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আমি তোকে ফোন করিনি , তুই ও না । ফেসবুকে তোকে পেতাম না , তাই কিছুদিন একটা দূরত্ব তৈরী হয়েছিল। নিকিতার ছবি আমি তোকে তিনবার দেখিয়েছি , তিনবারই তুই বলেছিলি “দোস্ত লেগে পড় ,আমার পছন্দ হইছে “। কি করে বুঝবো এমনি এমনি বলেছিলি। ।

আর ঐ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তোর আর আমার দূরত্বের সময়টাতে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার দিনরাত্রির সমীকরণে অন্য কারো হিসেব কষা শুরু। তোকে পেলে স্বভাব বশত তোর সাথেই সবার আগে শেয়ার করতাম। এইটা নিয়ে তুই আমাকে দেখিয়ে দিলি অভিমানের সাতকাহন। কেন তোকে বললাম না , কেন তোর অন্য মানুষের মুখ থেকে শুনতে হলো , এই মেয়েকে তোর পছন্দ না , ওই সময় ভেবেছিলি আমি এমনিতেই অন্য কারো ছবি দেখাচ্ছি। তোর রাগ ভাঙ্গানোর চেয়ে আমার কাছে তখন নারী মনের জটিলতা নিয়ে কবিতা লিখারী ইচ্ছেটা বেশী মাত্রায় ছিল।

। ৫ তোকে নিয়ে নিকিতার কিঞ্চিত সন্দেহ আমি উড়িয়ে দিয়েছিলাম। তোর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আমার চিরস্থায়ী ধারণা আমাকে তোকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য করলো। সম্ভবত আমার ভাবনার মত করেই তুই ভাবিস ভেবেছি বলেই ভেবে বসিছি, আমি তোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেউ একজন। আমাকে অনলাইনে আগের মত না পেয়ে তোর মন খারাপ হবার খবর টা আমি পেয়েছিলাম খুব তাড়াতাড়ি।

চেষ্টা করতাম তোকে বুঝিয়ে বলতে। কখনো চাইনি এমন কিছু আসুক আমাদের মাঝে যাতে এই স্নিগ্ধ সম্পর্ক টা নষ্ট হয়ে যাক। ভেবেছি তোকে সব সময় আমার পাশে পাবো বন্ধু হিসেবেই !! ৬ তারপর যখন আমার স্বপ্নভঙ্গ হলো তোকে বলার মত মানসিক অবস্থা ছিলনা। তুই বুঝে নিলি আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে । খুব ভালো বন্ধুর মত আমাকে আগলে রাখলি।

ধীরে ধীরে আমাদের ফোনালাপের সময়সীমা বাড়তে লাগলো। সেই সাথে নানা বিষয়ে তোর অভিমান। বন্ধুরা বলতো একটা ছেলে আর মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারেনা , এটা নাকি পরীক্ষিত সত্য ! আমি মানতাম না , এখনো মানিনা। তুই সম্ভবত আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস যেটা তুই নিজেই বুঝিস না , কিংবা একান্তই বাস্তববাদী মেয়েদের মত ইচ্ছে করে চেপে রাখিস । এমনটাই বলতো বন্ধুরা! ওদের কথামত তোর মনের কথা বের করার জন্য তোর কাছ থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম ।

একদিন তোকে ফোন করে বলেছিলাম দোস্ত , আমাদের মনে হয় আর কথা বলা উচিৎ হবেনা । দেখ আমরা প্রায় প্রতিদিন ফোনে কথা বলি। এটা বদ অভ্যাস হয়ে যাবে । আর ইদানিং আমাদের ঝগড়া টাও বেশী হচ্ছে , সম্ভবত অধিকার এসে ভর করেছে তাই। এক সময় তোর সংসার হবে , তার চেয়ে বড় কথা আমার ভিতরে অন্য রকম ভাবনারা এসে ঢু মারতে শুরু করেছে , যেটা একদম ই উচিৎ না , আমাদের বন্ধুই থাকা ভালো ! তাই আমি কিছুদিন তোকে ফোন করবোনা , তুই ও করিস না ।

তুই কিছু বলবি? • না আমার কিছু বলার নেই!রাখি !! বলেই তুই ফোন অফ করে দিলি ! ঘন্টাখানেক পরেই তোর মেসেজ দেখে আমি একচোট হেসে নিলাম ! লিখেছিলি আমি তোর ভালো বন্ধু হতে পারিনি তাই ঝগড়া হয় , ঠিক আছে আর ফোন দিবোনা , ভালো থাকিস । কিছুক্ষন পরই আবার ফোন করলি , তোকে যেন আমি বাসায় গিয়েই ফোন দেই ! তোর মেগাবাইট কেনার জন্য ফ্লেক্সি করতে , কাল ই দিয়ে দিবি ! আমার হাসি পাচ্ছিলো এত্ত বড় লেকচার দেয়ার পর ও বাসায় গিয়েই তোকে ফোন করার আদেশ শুনে। বুঝতে পারছিলাম না তুই কি চাচ্ছিস ! দূরে থাকা আর হয়ে উঠলোনা , তুই সংক্রান্ত অস্পস্টতা গায়ে মেখেই চলতে থাকলো ঝগড়া , খুনসুটি আর বন্ধুত্ব! ৭। “ অধিকার “ আমাকে ভাবাতে বাধ্য করলো একটা ভুল বুঝা দিয়ে ! তোকে সঙ্গত কারণে ভুল বুঝলাম , রাগারাগি করলাম। তুই বুঝালি কিছুক্ষণ পর নিজেই রাগ করে বসে থাকলি।

পরদিন যখন বুঝলাম শুধু শুধু বেশী রেগে এটা সেটা বকেছি তখন তোকে সরি বলেছি অনেক বার । বুঝতে পারলি আমাকে,সব ঠিক ! মাঝে মাঝেই তুই ফোন উঠাস না , দুই থেকে তিনদিন টানা ফোন করেও তোকে পাওয়া যায় না ! তুই নাকি ওই সময় ব্যস্ত ছিলি । এই প্রথমবারের মত অভিমান এলো আমার হাত ধরে । আমি নাকি তোর বেষ্টফ্রেন্ড , পরেও ব্যাক করা যায় না ! তুই বুঝতেই পারিস না এটা বিরক্তির সূচনা করে ! অগ্যতা আমি তোকে বুঝতে চেষ্টা করলাম , হ্যাঁ আসলেই ব্যাস্ত ! ৮ আর এই রাতের আস্ফালন আর রাতের কাছে তোকে ফেলে আসার আত্নকথন। এই ফোন না ধরা , ক্রমাগত একের পর এক তোর উপেক্ষা আবার কাছে আসা আবার উপেক্ষার ভাষা আমি বুঝতে পারিনা, তোর গত একবছরের কাছে আসা -উপেক্ষা -কাছে আসা –উপেক্ষা তোর প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধকে অনেকটাই নষ্ট করে ফেলেছে ।

আবার তুই আমার শুধু বন্ধুই থাকতে চাস। খুব সম্ভবত অধিকার আর অভিমান এসে অস্পষ্ট এই সম্পর্কে রঙ এনেছিল আবার বিবর্ণ করে দিলো নাকি তোর মানসিক অসুস্থতা ? এই সময়টাতে ভাবছিলাম তোর কলেজের বন্ধুকে আমি এড পাঠানোতে কেন তুই রেগে ঐ মেয়েকে ব্লক করিয়েছিস আমাকে দিয়ে । শুধু জানতে চাওয়ায় তুই আমার ফোন ধরিস নি ৩০ দিন। পরে একদিন বলেছিলি তোর কাছের কেউ যদি অন্য কারো হয়ে যায় এই ভয় তোর কাজ করে তাই এমনটা করেছিলি । আমি সত্যি সত্যি তোকে বুঝতে পারিনা , এই আমি তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড আবার আমার ফোন না ধরতে পারলে পরে ব্যাক করার গুরুত্বটাও বুঝতে পারিস না , আবার আজ ফোন করবো , কাল ফোন করবো বলে ফোন না ধরার মানসিক যন্ত্রণা তোর প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ।

তোকে বুঝিয়ে বলতে বলতে আর তোর না বলা সমস্যা বুঝতে বুঝতে আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সম্ভবত হেরে গেছি অস্পষ্টতা , অধিকার আর অভিমানের খেলায়। তাই রাতভোরের এই সময় সমীকরণে তোর বিদায় হোক ,আবার কোন বৃষ্টিরাতে তুই হয়তো বুঝতে পারবি নিজে নিজেই,আমাকে না হয় নিজেকে! এই যন্ত্রনা আর যাতনা থেকে মুক্তি পেতেই রাতভোরের গতিময়তায় তুই সংক্রান্ত ভাবনাদের বলিদান। । কেউ একজন বলেছিলেন “বুঝাতে না পারলে সময়ের হাতে ছেড়ে দিন , সময় তাকে বুঝিয়ে দিবে তাতেই হয়তো অস্পষ্টতা কেটে যাবে ”! সেদিন যদি কোন দিন , আসে বুঝে নিবো আমার অধিকার আর অভিমানের সীমারেখা !


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।