আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইনস্টাইনের চোখে ধর্ম এবং বিজ্ঞান

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।

আমাদের দেশে শিক্ষার কাছ থেকে বিজ্ঞানকে দূরে ঠেলে রাখার এক আত্মঘাতী প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। দেশে এমনিতেই শিক্ষার হার কম। তার উপর বিজ্ঞান শিক্ষা দিন দিন কমতে কমতে একেবারে তলানীতে এসে ঠেকেছে।

শহর কেন্দ্রিক মুষ্টিমেয় কিছু ধনী শিক্ষার্থী ছাড়া বিজ্ঞান নিয়ে কেউ পড়তে চায় না। আর এই ধনীদের বিজ্ঞান পড়ার উদ্দেশ্য ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তার হওয়া। কেউ বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য বিজ্ঞান পড়ে না। বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে থাকলে কি হবে। ধর্ম শিক্ষায় আমরা প্রাণপাত করে ফেলি।

ধর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত করে একজন শিক্ষার্থীকে গোঁড়া ধার্মিক বানিয়ে ফেলার চেষ্টা হাতে নেই। মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণে আমরা যে ব্যয় করি তার কানাকড়িও বিজ্ঞানাগার বা গবেষণাগার নির্মাণে ব্যয় করি না। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য তো নয়ই। ধর্ম শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা করা। ধর্ম শিক্ষায়ও বিজ্ঞানকে আনতে হবে।

নিদেনপক্ষে বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলি সবাইকে পাঠদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সোয়াব কামানো কিংবা নাম কামানোর উদ্দেশ্যে ফ্রি এতিমখানা, ফ্রি মাদ্রাসা, ফ্রি মসজিদ করে সারা বাংলাদেশ সয়লাব করে দেই কিন্তু একটি ফ্রি বিজ্ঞান স্কুল করতে পারি না। আমার মতে বিজ্ঞান শিক্ষাকে একদম ফ্রি করে দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের এক কোটি মাধ্যমিক শিক্ষার্থী যদি বিজ্ঞান গ্রুপে ভর্তি হতে চায় প্রত্যেককে ফ্রি পড়াতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব।

প্রতিটি স্কুলে যারা বিজ্ঞান পড়তে চায় তাদের ভর্তুকি দিয়ে পড়িয়ে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গড়ে তোলার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। ভূমিকাটি বেশি দীর্ঘ করব না। আজ আমি বিজ্ঞানের এমন একটি সূত্রের কথা বলব যা দ্বারা এ বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সূত্রটি এই- E = mc2 (ই ইকুয়াল টু এমসি স্কয়ার) এখানে E = Energy m = mass c২ = Square time of velocity. আলোর বর্গের গতিতে কোন বস্তু গতিলাভ করলে সে নিজেই একটি শক্তিতে পরিণত হয়। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আলোর গতিতে কোন বস্তু ছুটতে পারবে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

আমি কর্পোরেট দৃষ্টিকোণ থেকে বলি- E = Energy m = money c2 = Square time of corporate world. এবার বিশ্লেষণে আসি। বর্তমান বিশ্বে শক্তি হচ্ছে পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদী ব্যক্তি এবং রাষ্ট্র মানেই শক্তি। এই শক্তি অর্জন করতে হলে দরকার মানি বা অর্থ। ছলে বলে কৌশলে এই অর্থ অর্জন করতে হবে।

আর সি বা কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড হচ্ছে এই পুঁজির নিয়ন্ত্রণকারী। বর্তমান বিশ্বে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে কর্পোরেট জগত আগ্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে। আমি শিক্ষার ক্ষেত্রে সূত্রটিকে একটু ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করি- E = Education m = manpower c2 = square time of computer education শিক্ষাকে যদি একটি বড় শক্তি ধরি তাহলে আমাদের দেশের পুরো জনগোষ্ঠীকে তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। ভবিষ্যতের দুনিয়া হবে তথ্যসমৃদ্ধ দুনিয়া। এই তথ্য শক্তির সাথে পারমাণবিক শক্তির ক্ষমতা পরাজিত হবে।

ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে তথ্যযুদ্ধ। ধরা যাক আমেরিকা পারমাণবিক বোমার ভয় দেখিয়ে বিশ্বে যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। এই বোমার ভয়ে বিশ্বের তাবৎ তাবৎ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো আমেরিকাকে ভয় করে চলছে। এই পারমাণবিক বোমাটি আর কিছুই নয়। ই ইকুয়ালটু এমসি স্কয়ারের কারসাজি।

এই সূত্র দ্বারা আবিষ্কৃত শক্তির ভয়েই বিশ্ব কুপোকাৎ। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই সূত্রটি বাস্তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৩% সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। লক্ষ্য করুন এখানে কিন্তু ১০০% বলা হয়নি। আরও ০.০০০০০০০০৭% সম্ভাবনা থেকে যায়। আর মহাবিশ্বের কাছে এই রহস্যটুকুই সর্বশক্তিমান।

মানুষ সেই সর্বশক্তিমান রহস্যটুকুকেই আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ যখন এই রহস্যটুকু বের করে ফেলতে পারবে তারপরে কি হবে আমি দিব্যি অনুভব করতে পারছি। এটি বেশি কিছু নয়। আলোর গতিতে চড়ুই পাখির মত এদিক সেদিক ফুরুৎ উড়াল দেবে। তবে এই শক্তিটি থাকবে মুষ্টিমেয় কয়েকজন শক্তিশালী মানুষের হাতে।

ও হ্যাঁ, বলছিলাম পারমাণবিক বোমার কথা। আমেরিকা বোমা বানিয়ে সেই বোমা হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে নিখুঁতভাবে ছুঁড়ে মারার জন্য প্রোগ্রাম সাজিয়ে বসে আছে। ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে কত দ্রুত সেই বোমা লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানতে পারবে। আলোর গতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতির ক্ষেপণাস্ত্র সেকেন্ডে কয়েক হাজার কিলোমিটার হতে পারে।

ধরা যাক ২০৩৪ সালে কোন কারণে বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। আমেরিকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাহ্ এই সমস্ত তেলাপোকাসম দেশগুলোকে দুনিয়ার বুকে রেখে লাভ নেই। হিরোশিমা-নাগাসাকির মত একেবারেই উড়িয়ে দেই না কেন! পারমাণবিক বোমার আঘাতে মানুষগুলো স্রেফ কর্পূরের মত উবে যাবে। মাটিচাপা দেওয়ার ও কোন ঝামেলা থাকবে না। যেই ভাবা সেই কাজ।

সেকেন্ডে ১০০০ কিলোমিটার বেগে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আগায় করে পারমাণবিক বোমাটি ধেয়ে আসছে। কয়েক সেকেন্ড মাত্র। এই কয়েক সেকেন্ডই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সময়ের হিসেবে অনন্তকাল হতে পারে যদি এর চেয়েও অধিক গতি নিয়ে সেই ক্ষেপণাস্ত্রটির উপর ঝাঁপিয়ে পরা যায়। মাঝপথে ক্ষেপণাস্ত্রকে থামিয়ে সোজা আমেরিকার ঘরেই ফেরত পাঠানো যায়। কিংবা নিষ্ক্রিয় করে বগলদাবা করে নিজের ঘরে নিয়ে আসা যায়।

প্রয়োজন আরেকটি উন্নত প্রোগ্রামিং। এবং এটি শুধু জ্ঞানের মাধ্যমেই সম্ভব। সুতরাং অপশক্তিকে রুখতে জ্ঞানের শক্তিই যথেষ্ঠ। এ সব কিছুই ঘটতে পারে যদি গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা যায়। এর জন্য দরকার বিজ্ঞান চর্চা।

আর যে কোন চর্চা মানেই শিক্ষা। গোঁড়ামি করে ধর্ম আঁকড়ে থাকার মানে হচ্ছে জনগণকে ঠুলি পড়িয়ে বসিয়ে রাখা। ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে শোষণ করাটাও সহজ। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ধর্ম এবং শিক্ষা নিয়ে কিছু মূল্যবান কথা বলেছেন। আইনস্টাইনের জীবনী থেকে কিছু কথা তুলে দিলাম।

"মানুষের ব্যাক্তিগত ঈশ্বর ভাবনায় তাঁর আস্থা ছিল না। তিনি নিজেই বলেছেন যদি তাঁর মধ্যে ধর্মানুভূতি বলে কিছু থেকে থাকে তবে তা শুধু- অসীম শ্রদ্ধাবোধ সেই বিজ্ঞানের জন্য যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্ম, বিধাতাপুরুষ, পরকাল এসব নিয়ে তিনি নিজের মুখেই বলেছেন, মৃত্যুর পর শাস্তির ভয়ে মানুষ জীবিত অবস্থায় পাপ করা থেকে বিরত থাকবে এটা তিনি আশা করেন না। তাঁর কাছে এধরনের যুক্তির কোন মূল্য নেই। মানুষকে সুপথে রাখতে পারে আইনস্টাইনের ভাষায় সেই মানবিক মূল্যবোধ যা তাঁর হৃদয়ে প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হয় এমনভাবে- তোমার সম্পূর্ণ অস্তিত্বের মূলে রয়েছে অপরের ঘাম ঝরা কঠোর পরিশ্রম।

হাজারো জীবিত আর মৃত মানুষের কর্মের সুফল তুমি- মানুষ আজ প্রতিনিয়ত ভোগ করছ। শিক্ষাই শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে এই দায়িত্ববোধের উপলব্ধি এনে দিতে পারে। ধর্ম বা মৃত্যুভয় নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।