আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনবদলের চমক নিয়ে জনগণ শংকিত

কবি হওয়ার ভান করি, উদাস হই; ভালোবাসার মাহাত্ব খূঁজি

রাশেদুল হাসান সরকার একের পর এক ডিজিটাল চমক বা দিনবদলের চমক দেখিয়েই চলছে। সরকারের এসব ডিজিটাল চমকে চমকিত হোক আর শংকিত হোক তাতে কার কি আসে! দেশের, দেশের জনগণের উপকারে আসবে না আসবে তা খতিয়ে দেখার সময় কই ডিজিটাল সরকারের! দেশের মানুষ ইতিমধ্যে বেশ কতটি চমকের ফলাফল বিশে ষণে চরম ভোগান্তির মধ্যে আছে। পাঠ্যপুস্তক কেলেঙ্কারী, উপজেলা নির্বাচন, ডিজিটাল সময় নির্ধারণ, পিলখানা হত্যাকান্ড, ট্রানজিট ও টিপাইমুখ চমকের ঘা টনটন করে উঠলেও সেই ঘায়ে লবণ ছিটাতে সরকারের উদ্ধতভাব বিস্ময় সৃষ্টি করে। দিনবদলের সরকার আসলে কাদের দিন বদলের চেষ্টায় মত্ত এমন প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায়। জনগণের দিনবদল করবে এমনটি কখনোইতো বলা হয়নি বরং যাদের দিনবদলের কথা বলা হয়েছে তাদেরতো দিন বদল হচ্ছে।

এশিয়ান হাইওয়ের নামে ভারত থেকে ভারতে ট্রানজিট কি দিনবদল নয় ? এ সুবিধান ফলে, ভারতের হাজার হাজার নারী পুরুষের দিনবদল কি হবে না ? অবশ্যই হবে। টিপাইমুখ ড্যাম নির্মিত হলে সিলেটের ৩৮ শতাংশ জলাভূমি শুকিয়ে যাবে। ক্রমান্বয়ে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। দেশের হাজার হাজার মানুষের দিনবদল হবে। সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা আবাহিকায় জীববৈচিত্র ধ্বংশ, বরাক-সুরমা-কুশিয়ারার তলদেশ পর্যন্ত ভরাট, নদীভাঙন মারাতœক আকার ধারণ, এতদ অঞ্চলে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টিসহ মানুষ না খেয়ে মরার অবস্থান সৃষ্টি হবে।

একের একের পর এক দিনবদলের চমকে ক্রমশ আতংকিতই বলা চলে। এমন কটি আতংকিত চমকের মুখোশ উম্মোচনে প্রভৃত্ত হলাম। এক. তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির মিছিলে পৈশাচিক নিষ্ঠুরতায় মেতে উঠেছিল পুলিশ। জনগনের খেয়ে পরে জনগনের সম্পদ রক্ষায় নিবেদীত প্রাণ সূর্য সন্তানদের উপর হামলা সরকারের আসল রুপ বেরিয়ে পড়ে। পুলিশের এ তান্ডবে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মোহাম্মদ সহ অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ আহত হন।

আনু মোহাম্মদকে রাস্তায় ফেলে লাঠি ও বুটের আঘাতে হাত ও পা গুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। এ আন্দোলন বন্দ হয়ে গেলে দিনবদল সহজেই সম্পন্ন হবে এমনটাই ভেবেছিল সরকার। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষায় আন্দোলন কারীদের আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে পারলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও বন্দর সুবিধা দিয়ে তাদের সিংহাসনে বসানো দাদা বাবুদের দিনবদলের কাজটা কিছুটা হলেও সম্পন্ন হবে। কিন্তু সরকারের এ আশা গুড়েবালি। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সাঙ্গ জনগনের একাত্ত্বতায় সরকারের নমনীয় সুর লক্ষ্য করা যায়।

দেশের মানুষের প্রয়োজনে বিবেচনা না করে সরকার সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানী বা জনগোষ্ঠির হাতে জনগনের সম্পদ তুলে দেয়ার আশা নিরাশায় পর্যবশিত হয়। মডেল পিএসসি-২০০৮এ জাতীয় স্বার্থবিরোধী শর্তও বিতর্কের জন্ম দেয়। বিতর্কের জন্ম দেয় দিনবদলের। দুই. দেশের কৃষিখাত থেকে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ও সরাসরি ভুর্তুকি পুরোপুরি প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ডিজিটাল সরকারের কাছে বিশ্ব ব্যাংকের এ ডিজিটাল পরামর্শ ডিজিটাল চিন্তার সূত্রপাত ঘটায়।

বিশ্বব্যাংকের এ পরামর্শ বাস্তবায়িত হলে প্রজনন ক্ষমতাহীন বিদেশী হাইব্রীড় বীজ, কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়বে। বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানীগুলো তাদের স্বার্থ হাসিলের এক সূবর্ণ সুযোগ পেয়ে যাবে। যেখানে কৃষকরা প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন বীজ বারবার বীজতলায় বপন করতে পারত অন্যদিকে বিদেশী প্রজনন ক্ষমতাহীন হাইব্রীড় বীজ কৃষককে বারবার কিনতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার তাদের দিনবদলের প্রকল্প হাতে নিয়ে ফেলেছে। ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রজেক্ট (এন.এচিপি) নামে প্রকল্পটি জানুয়ারী থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে।

তিনধাপে ১৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্প কৃষি মন্ত্রনালয় এবং মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রনালয় যৌথভাবে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাকেও প্রকল্পের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। ১৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকে বরাদ্ধকৃত ঋণের পরিমাণ ১২৪২ কোটি টাকা। কিন্ত বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, ঋণ দিয়ে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিশ্বব্যাংকেরই পরামর্শ অনুসরন করতে গিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোর কৃষিখাত পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েছে। একথা দিবালোকের মত সত্য।

বরাবর কৃষিখাতকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখলেও এ প্রকল্পটি নিশ্চিত প্রশ্নের জন্ম দেয়। সোনালী আঁশ বলে খ্যাত পাটের উন্নয়নের কথা বলে ধ্বংশের মুখে নিক্ষেপ করেছে এ বিশ্বব্যাংকই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ডিজেল ভর্তুকি খাতে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হলেও বিশ্বব্যাংকের বিরোধীতার মুখে ২৫০ কোটি টাকা বিতরণ করতে হয়। মোদ্দাকথা বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ এবং সরকারের যৌথ প্রকল্পটি ডিজিটাল আতংক। তিন. প্রশাসনে গণপদোন্নতি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করলেও সেই রেকর্ড ভাঙ্গায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

পদোন্নতির সংবাদ নিয়ে আসছে। অতি স¤প্রতি একদিনেই তিন স্তরে মোট ৫০৩ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদে ৬০ জন, যুগ্নসচিব পদে ১৬৩ জন ও উপসচিব পদে ২৮০ জন কর্মকর্তা সরকারের আর্শিবাদে পদোন্নতি পেলেও বেশির ভাগকেই একই পদে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে বিগত সরকারের আমলে জেলা প্রশাসক পদে কর্মরত অনেক কর্মকর্তাই ঢালাও পদোন্নতির স্বাদ গ্রহণ করতে পারেননি। কর্মহীন ঢালাও পদোন্নতির মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের পুনবার্সন সরকারের নিলজ্জতা প্রকাশ পায়।

তথ্যমতে আপগ্রেড়সহ যুগ্নসচিব পদের নিয়মিত পদের সংখ্যা ৪৩০ টি। বর্তমানে এ পদে ৩৩৫ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এ পদে আরো ১৬৩ কর্মকর্তার পদোন্নতির ফলে অতিরিক্ত ৬৮ জনই বেকার। অতিরিক্ত সচিব পদের নিয়মিত পদ সংখ্যা ১০৮ হলেও বর্তমানে এ পদে ১২৬ জন কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। আরো ৬০ জন এ পদে পদোন্নতির ফলে অতিরিক্ত সচিবে অতিরিক্ত হয় ৭৮ জন।

পদ না থাকলেও এসব অতিরিক্ত পদোন্নতির ফলে সরকারকে কোটি টাকা পানিতে ফেলতে হবে। চার. সরকারের আরেকটি ডিজিটাল সিদ্ধান্ত ব্যাপক রশিকতার জন্ম দেয়। এর আগে বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাবার জন্য ঘড়ির কাঁটা একঘন্টা এগিয়ে এনে বিতর্কের জন্ম দেয়। ঘাটতিতো কমছেই না বরং বেড়েই চলছে। এ নিয়েও সরকারকে মুখরোচক অনেক কথা শুনতে হয়েছে।

আবারও বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাবার একটি নব কৌশল বের করেছেন এবং অচিরেই ডিজিটাল সরকার এ কৌশল বাস্তবায়নের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এবার সে কৌশলটার কথা বলা যাক- বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাবার জন্য মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অফিস আদালতে হাফশার্ট পরে আসতে হবে। যুক্তি হাফশার্ট পরলে গরম কম লাগবে। এসি চালানোর প্রয়োজন হবে না। তাতে বিদ্যুৎ খরচ কম হবে।

এতো গেল পুুরুষদের কথা নারীরা কি পরবে এমন প্রশ্নও রসিয়ে রসিয়ে বলতে শোনা যাচ্ছে। নারী উন্নয়নের সরকার অফিস আদালতে এসি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিলে কর্মজীবী নারীদের অবস্থা কি হবে ? তারা কেমন পোশাক পরিধান করবে এমন কৌশল নির্ধারণ করার পরামর্শ দেননি মহাজোট সরকার। সমঅধিকার দাবীকারী নারীদের কথাই এবার বলা যাক। তাদের দাবী আদায়ের পথটা পরিস্কারই বলা চলে। সমঅধিকারের নামে উলঙ্গপনা/বেহায়পনা যাদের উদ্দেশ্য তারা নতুন দায়ীর ইস্যু সৃষ্টি করতে পারে।

পাঁচ. দিনবদলের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মার তরতাজা ইলিশ পাঠিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের জন্য। দুষ্পাপ্য এ ইলিশের জন্য দেশের জনগন তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষার প্রহর গুনলেও যে ইলিশ দাদা বাবুদের দেশে পাচার হচ্ছে প্রভাবশালী চক্রদ্বারা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও ভারত প্রীতি গাঢ় করতে প্রীতি উপহার স্বরুপ দু’বাস্ক পদ্মার ইলিশ স্বানন্দে গ্রহণ করলেও রাখতে পারেননি সিং পরিবার। তাই বলে কি তার প্রীতির ভাটা পড়বে ? ভালবাসার মাহত্ব কি ? কোন স্বার্থই বা হাসিলের জন্য এমন গায়ে পড়ে ভালোবাসার ভাব দেখানোর চেষ্টা করেন। বুঝা গেল সরকারের ভারত প্রীতি কমেনি বরং লাউয়ের ডগার মত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

দেশের মানুষ শংকিত ভালোবাসার ভারে শেষে মাচাটাই ভেঙে যায়। গতকালের আরেকটি ডিজিটাল চমক হাসির উদ্রেক ঘটায়। যানজট কমাতে সরকার, ব্যাংক, বীমা ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সমূহের অফিস সময় পূর্ণনির্ধারণ করে দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত তাদের অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। প্রশ্ন জাগে তাতে কি যানজট নিরসন আদৌ সম্ভব হবে ? ক্রমান্বয়ে যানজট যে প্রকট আকার ধারন করছে তাতে মনে হয় না যানজট দূরিভূত হবে।

যে দেশের সিগন্যাল বার্তি সবুজ সংকেত দেয়ার পরও ট্রাফিক পুলিশের হাত উঠে থাকে সে দেশে যানজট নিরসন স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। স্বয়ং ট্রাফিক পুলিশই ট্রাফিক আইন মেনে চলে না যেখানে যানজট দুঃস্বপ্ন নয় কি। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে টাকা নেয়ার দৃশ্য আমার মত অনেকেরই চোখ এড়ায়নি। এ যানজট এড়ানোর জন্য সরকারকে বিজ্ঞান সম্পন্ন কৌশল নির্ধারণ করে যানজট নিরসনের স্বার্থকে ভূমিকা পালন করতে হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.