আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেসরকারি ৪৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্য নির্ধারিত হবে আজ

ভাঙ্গাকুলার ছাই...

৪৭ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্য নির্ধারিত হবে আজ। এছাড়া অবৈধভাবে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনাকারী আরও ৯ বিশ্ববিদ্যালয়কে চূড়ান্ত নোটিশও দেয়া হবে। সদ্য বিলুপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন এমনকি নবপ্রণীত আইন অনুযায়ীও এসব বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে একদিকে সনদের মেয়াদ পার করেছে অন্যদিকে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনার বৈধতাও হারিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ৪৭ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ফের সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত সময় দেয়া হতে পারে। আর অবৈধভাবে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনকারীদের জরিমানা করাসহ বন্ধ করার নির্দেশনা হবে।

পুরনো আইনে প্রতিষ্ঠার ৫ বছর আর নতুন আইনে ৭ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু ২টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে গমন করেছে আর ২টির মেয়াদ ৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। বাকি ৪৭টিই আইন লংঘন করে চলছে। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আর পরিচালনার বৈধতা নেই। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, অনেক হয়েছে, এবার সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেয়ার।

সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মিটিংই আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নতুন আইনের নির্দেশনা অনুযায়ী সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রত্যেককে একটি সময় বেঁধে দেয়া হবে। আর আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনার ইসুøটি এখন মৃত। আইনে এটা পরিচালনার কোন সুযোগই নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নিজেদের কর্মগুণে অবৈধ হয়ে পড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাসে গমনে ব্যর্থতাই নয়, আরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষার নামে সনদ বিক্রি, গলাকাটা টিউশন ফি আদায়, শিক্ষকদের প্রতিশ্রুত বেতন-ভাতাদি না নেয়া, সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আউটার ক্যাম্পাস খোলা, শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে শিক্ষাদান না করেই সনদ প্রদান, কোন কোন ক্ষেত্রে কোচিং সেন্টারের মতো একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা, সরকারি আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়নে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে বিঘ্নসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ কারণে শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার শর্ত ও সময়সীমার বিষয়টিই নয়, তাদের আউটার ক্যাম্পাস ও দূরশিক্ষণ কার্যক্রম, জারিকৃত পরিপত্র লংঘন করে ভিআইপি রোড ও আবাসিক এলাকায় ক্যাম্পাস স্থাপন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’, অবৈধ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়, দারুল ইহসান ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটির মতো দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। সূত্র নিশ্চিত করেছে, ১১ জুলাই সংসদে পাস হওয়া নবপ্রণীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ধারা ৩, ৫, ৬(৫)/৩৫, ৩৮, ৩৯, ৪৭, ৫০ ও ৫২। আইন বাস্তবায়নের জন্য নীতি-নির্ধারণী এই বৈঠকে সংস্থাপন, অর্থ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ ইউজিসি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের প্রতিনিধিও যোগদান করছে।

কোন আমলে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৬টি। ইউজিসি বলছে, বন্ধ করে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আদালতের রায়ে আবার চালু হওয়ায় তাদের স্বীকৃতি দিতে হচ্ছে ফের আইনি সমাধান না হওয়ায় পর্যন্ত। এই পাঁচটি বাদ দেয়ার পরও ৪৭টিরই বৈধতা নেই। এর মধ্যে নর্থসাউথ ও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের বয়স ১৮ বছর। ইনডিপেনডেন্ট, দারুল ইহসান, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকাল অ্যান্ড টেকনোলজির বয়স ১৭ বছর, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১৬, এশিয়ান, ইস্টওয়েস্ট, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, গণবিশ্ববিদ্যালয় ও পিপলস ইউনিভার্সিটি ১৪, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ১০, ব্র্যাক, মানারাত, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, লিডিং, বেগম গুলচেমনআরা ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ৯, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, সাউথইস্ট, স্টামফোর্ড, ডেফোডিল, স্টেট, ইবাইস, সিটি, প্রাইম, নর্দার্ন, সাউদার্ন, গ্রিন ৮ বছর পার করেছে।

অতীশ দীপংকর ৬ এবং বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ৫ বছর পার করেছে। আশা ও ইস্ট ডেল্টা ৪ বছর পার করেছে। বাকি ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৭ বছর হয়েছে। অর্থাৎ, ১৩টির মেয়াদ শেষ হয়েছে একযুগেরও বেশি সময় আগে। ১৯৯১-১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে এ ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালে আসার পর ২০০০ সাল পর্যন্ত চারটির অনুমতি দেয়। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি পায়। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে চট্টগ্রামের ইসলামী ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে। সম্প্রতি নর্থসাউথ নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে। আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ও তেজগাঁওয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়েছে।

বসুন্ধরায় ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস হচ্ছে। এছাড়া ইস্টওয়েস্ট, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি জমি কিনেছে বলে দাবি করছে। নাম প্রকাশ না করে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, যারা জমি কিনেছে বলে দাবি করছে, তাদের কারও জমি মালিকের নামে আবার কারও জমি অন্য কোন সংস্থার নামে বলে তারা জানতে পেরেছেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, যারা একটি এনজিও’র নামের জমিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি হিসেবে দেখিয়েছিল। আউটার ক্যাম্পাসঃ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ গতকাল ইউজিসি থেকে বৈধভাবে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনাকারীদের নাম তারা সংগ্রহ করেছে।

২০০১ সালে চারটি এবং পরে ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস খোলার অনুমতি দেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে- ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির চট্টগ্রাম শাখা, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক ইসলামী ইউনিভার্সিটি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমানে বিলুপ্ত) ঢাকা ক্যাম্পাস। পরে লিডিং ইউনিভার্সিটির ঢাকা এবং আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজশাহী ক্যাম্পাস অনুমোদন দেয়া হয়। এর বাইরে আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অনুমতি মন্ত্রণালয় দেয়নি। ইউজিসি থেকে মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার প্রেরিত তালিকায় দেখা যায়, নর্দার্ন, শান্ত মারিয়াম, সাউথইস্ট, রয়েল, অতীশ দীপংকর, এশিয়ান, ইউআইটিএস, দারুল ইহসান ও আমবান ইউনিভার্সিটি অবৈধভাবে আউটার ক্যাম্পাস চালাচ্ছে।

২০০৭ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সরকার আউটার ক্যাম্পাস কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আর কোন ছাত্র ভর্তি করা যাবে না। যাদের ভর্তি করা হয়েছে, তারা শিক্ষাজীবন শেষ করলে কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু এরপরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে বলে ইউজিসির কাছে প্রমাণ রয়েছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান মঙ্গলবার যুুগান্তরকে জানান, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি অবৈধভাবে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনাকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যাগ্র।

তারা আইন-কানুনের তোয়াক্কা করে না। জানা গেছে, অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ই রাজশাহী শহরে তাদের অবৈধ বাণিজ্য চালাচ্ছে। এছাড়া রংপুর, বগুড়া, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটে শাখা রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের। মন্ত্রণালয়ের মতে, ‘অযাচিতভাবে বাংলাদেশের যত্রতত্র এমনকি দুর্গম/প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন কোন উপজেলায় পর্যন্ত আউটার ক্যাম্পাস ও দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের নামে আরআরসি, আউটরিচ, ভর্তি কেন্দ্র, তথ্য কেন্দ্র ইত্যাদি খুলে জনসেবার নামে সনদ বিক্রির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। ’ ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, নতুন আইনে আর আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনার সুযোগ নেই।

এখন এগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে। উৎস মুসতাক আহমদ দৈনিক যুগান্তর আগস্ট ১৮, ২০১০, বুধবারঃ ভাদ্র ৩, ১৪১৭। আপডেট রাত ৩:১৫ Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.