আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুখরা রমনীদ্বয়ের (হাসিনা-খালেদা) বক্তব্যে সাদৃশ্য অনেক!!

লেখিতে এবং পড়িতে ভালবাসি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্বাহী প্রধান "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী"। ১৯৯১ সালে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর বাংলাদেশ সরকারের নির্বাহী প্রধান ছিলেন/আছেন দুইজন সম্মানিত এবং শ্রদ্ধাভাজন মাতৃসমতুল্য দুইজন মহিলা। এই দুইজনই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছেন। এর ফলে সাধারণ রাজনৈতিক এবং দলীয় কর্মীরা একজনকে উপাধী দিয়েছেন "জননেত্রী ও গণতন্ত্রের মানষকন্যা" এবং অন্যজনকে দিয়েছেন "আপষহীন দেশনেত্রী"।

একজন সেনা কর্মকর্তার বিধবা গৃহিণী থেকে রাজপথ হয়ে রাজনীতির শীর্ষে আরেকজন রাজনৈতিক পরিবার থেকে বার বার পোড় খেয়ে রাজপথ হয়ে রাজনীতির শীর্ষে এবং বর্তমান বাংলাদেশের নির্বাহীর প্রধান মানে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন। এই মহিয়ষী দুই রমনীর দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অভিজ্ঞতার সাথে আছে দীর্ঘ ১০বছর করে দেশ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা ( শেখ হাসিনা সাড়ে ৯ বছর শেষ করেছেন, বাকী সময়টাও আশা করি সুন্দরভাবে শেষ করবেন)। এইদুই জন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের আশা- আকাংখার মূর্ত প্রতিক। এদের উত্তরসূরীরা দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত অন্য কারোর হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের কোন লক্ষণ নাই। এরাই স্বপদে বহাল থাকবেন বলেই মনে হয়।

১৯৮১ সালে রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর থেকে, এই দুই রমনী স্বৈরাচার এরশাদ সরকারকে উৎখাত ইস্যুতে একি ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, একি রকম রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করেছেন এবং অভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নেতা-নেত্রীকে সংঘবদ্ধ করেছিলেন। দুইজনই সাধারণ মানুষদের একটা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন, একটি দূর্নীতিমুক্ত শোষনহীন সন্ত্রাসমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন। এই দুই মুখরা রমনীর মধুর কথায় বাংলাদেশের মানুষ মধুর স্বপ্নে বিভোর ছিলেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অনেক নিজেদের জীবনও উৎসর্গ করেছেন। সেই স্বপ্নের পথে রক্ত দিয়েছেন নূর হোসেন, ডাঃ মিলনসহ অনেক রাজনৈতিক কর্মী থেকে পেশাজীবি মানুষ। যে স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে ৩০লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন ও ২লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম দিয়েছিলেন সে স্বপ্ন কি আজো পূরণ হয়েছে?? ঠিক তেমনি যে স্বপ্ন নিয়ে তরুন সমাজ স্বৈরাচার এরশাদ সরকারকে গদি থেকে টেনে হেচড়ে নামিয়েছেন সেই স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছে?? আমাদের সাধারণ মানুষের কোন স্বপ্নই রাজনীতিবিদরা পূরন করেননি, করছেও না, ভবিষ্যতে করবে বলেও মনে হয় না।

আসুনএই দুই রমনীর ভাষা এবং বক্তব্যের সাদৃশ্য গুলো দেখি: ১) পরাজিত দল সব সময় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে দাবী করেন: ১৯৯১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই দুই রমনীর অবস্থানের পার্থক্য আসে, পাঁচ বছর একজন প্রধানমন্ত্রী হলে অন্যজন বিরোধী দলের নেত্রী হোন। নির্বাচনে যিনি জয়ী হোন ওনি নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মনে করেন এবং যিনি পরাজিত হোন তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে মনে করেন। এই ক্ষেত্রে দুইজনের ভাষার সাদৃশ্য লক্ষ্যণীয় শুধু সময় ও অবস্থানের পার্থক্য থাকে। ২। ১৯৯১-১৯৯৬: হাসিনার নিয়মত রাজনৈতিক বক্তব্যের সারমর্ম: ক) সরকার দেশ চালাতে ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ, পদত্যগ করা উচিত।

খ) দূর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ সরকার। গ) স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী সরকারের কাছে স্বাধীনতা নিরাপদ নয়/। ঘ) স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ সরাকারের কাজ ঙ) হরতাল অবরোধের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। চ) এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। চাই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী দূর্বার আন্দোলনের হুমকি।

খালেদার নিয়মিত রাজনৈতিক বক্তব্যের সারমর্ম: ক) ব্যর্থ বিরোধীদল ধ্বংসাত্ত্বক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ব্যহত করতে চায়। খ) হরতাল, জ্বালাও পোড়াও করে দেশের সম্পদ নষ্টকারীদের সম্পর্কে সজাগ থাকুন। গ) আওয়ামী লীগ দেশের জন্য করে না, বিএনপি দেশের উন্নয়নে কাজ করে। ঘ) সারাদেশে সরকারের উন্নয়ের জোয়ার বইছে, আগামী নির্বাচনেও আমরাই জয়ী হবো। ১৯৯৬-২০০১: হাসিনার ভাষা হয়ে খালেদার ভাষা এবং খালেদার ভাষা হয়ে যায় হাসিনার।

দুই জনের কাল, পাত্র আর অবস্থানের ভিন্নতা হলেও মুখের ভাষার কোন ভিন্নতা খোঁজে পাওয়া যায়। খালেদা জিয়ার নতুন সংযোজন: আওয়ামী লীগ দেশটাকে ভারতের কাছে বিক্রি করার পায়তারা করছে। এই দেশে আওয়ামী লীগ আমার ক্ষমতায় এলে দেশে ইসলাম থাকবে না, মসজিদে ওলু ধ্বনি হবে ইত্যাদি। হাসিনার সংযোজন: বিএনপি রাজাকারের দল, এরা ক্ষমতায় এলে দেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে। ২০০১-২০০৬: হাসিনার কথায় নতুন মাত্রা পায়: বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে দেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে, দেশে জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা পাবে, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না।

দূর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। মানুষের জাল-মালের নিরাপত্তা নেই। খালেদা:র কথায় সংযোজন: দেশটা ভারত হয়ে যাবে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবেন না, আবার বাকশাল কায়েম করবে। সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজিতে দেশ ছেয়ে যাবে। ২০০৮-২০১৩ চলমান: হাসিনার নিয়মিত বক্তব্য: ক) বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ পাকিস্তান ও আফগানস্থান হয়ে যাবে। খ) আবার হাওয়া ভবন তৈরী করবে। গ) মানুষ বিদ্যুত পাবে না। দেশের পেছনের দিকে হাটা শুরু করবে। ঘ) একমাত্র আওয়ামী লীগই দেশের জন্য করে।

ঙ) স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার বানচাল করবে। চ) মুক্তিযোদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে ফেলবে ইত্যাদি খালেদা নিয়মিত বক্তব্য: ক) দেশ ভারত হয়ে যাবে, দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হবে আর বিচার ব্যবস্থা বলে কিছু থাকবে না। খ) গণতন্ত্র বলে কিছু থাকবে না, দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা পাবে। গ) মসজিদে আজাব হবে না, হিন্দুরা ওলু ধ্বনি দিবে। ঘ) ছাত্রলীগ আর যুবলীগের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, হল দখল, টেন্ডারবাজী ও খুনাখুনিতে দেশ ছয়েয় যাবে।

ইত্যাদি। দুইজনের আশংকা এবং চিন্তা একি বিষয় নিয়ে। সময়ের হেরফেরে শুধু দুইটি মুখের পরিবর্তন আসে, কিন্তু ভাষা যা তাই বিদ্যমান। বাংলাদেশ আজও ভারত হয়নি, পাকিস্তানও হয়নি। দেশ পিছিয়ে যায়নি, এগিয়েই চলেছে।

৪২ বছরের বাংলাদেশ একজনের প্রচেষ্টার ফল না, সম্মিলিত প্রয়াস। এমনকি স্বৈরাচার এরশাদ সরকারও অনেক কাজ করেছে। মসজিদে ওলুধ্বনিও হয় না, দেশ আফগানস্থান ও না। তারেক-কোকো-জয়-রেহেনা আছে এবং থাকবে। ছাত্রদল-যুবদল এবং ছাত্রলিগ ও যুবলীগের কর্মকান্ডও শেষ হবে না।

তাহলে এদের পার্থক্য কোথায়?? একজন ৯০এর পতিত স্বৈরাচার নিয়ে রাজনীতি করে অন্য জন রাজাকার নিয়ে রাজনীতি করে। একজন রাজাকারকে পৃষ্ঠপোষকতা করে, অন্য জন রাজাকার ইস্যু বাঁচিয়ে রেখে সুবিধা খোঁজে। একজন রাজাকারদের বিষয়ে নীরব থাকে অন্যজন এই ইস্যূকে কাজে লাগিয়ে আবার ক্ষমতায় আসার পায়তারা করে। মুক্তিযোদ্ধ এবং স্বাধীনতা নিয়ে রাজনীতি হতে পারে না, যেমন পারেনা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে। হাসিনা এবং খালেদার মধ্যে নাম আর পার্থক্য ছাড়া অন্য কোন পার্থক্য নেই।

রাজনীতিতে দুইজনের অবস্থান, চিন্তা-চেতনা এবং কর্মসূচী একি। এদের অবস্থানে পার্থ্যের কারণে শুধু ব্যবহারের পার্থক্য দেখা যায়। দুইজনেই দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত তবে গদি ছাড়তে নয়, শত শত মানুষ মরলেও এদের চাওয়া-পাওয়ার পরিবর্তন হবে না। রবীন্দ্রনাথের মত- "তোরা যে যা বলিস ভাই, আমি আমার সোনার হরিণ চাই। " এই দুই মুখরা রমনীর মুখের ভাষা এবং চিন্তা চেতনা যতদিন পরিবর্তন না হবে ততদিন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।

ধন্যবাদ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।