আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাকাতের কবলে পড়লাম। কিছু টাকাও ইনকাম হলো।সাথে অফুরন্ত লাবণীয় প্রেম!



গত ৫ অগাষ্ট রোজ বৃহস্পতিবার রাত আটটায় ঢাকা থেকে লক্ষীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া জননী পরিবহনে এক দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কারো আহত হবার ঘটনা ঘটেনি কিন্তু প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা ও মালামাল লুট হয়েছে। ডাকাত দলের প্রথম গ্রুপ যাত্রী বেশে সায়েদাবাদ থেকে ওঠে, শেষের গ্রুপ মেঘনা ব্রীজের টোল কেন্দ্র থেকে উঠেছে। উঠেই তারা ধারালো চাকু এবং পিস্তল দিয়ে ড্রাইভার ও হেল্পপারকে জিম্মি করে ফেলে। চলন্ত গাড়ি থেকে হাতবাধাঁ অবস্থায় ড্রাইভারকে তারা ফেলে দেয়।

ডাকাত দলের এক সদস্য খুবই ঝুকিপূর্ণভাবে গাড়ি চালায় আর বাকী সদস্যরা ডাকাতি করে। তারা একে একে সব যাত্রীর হাত বেধে ফেলে এবং কসটেপ দিয়ে মুখ আটকিয়ে ফেলে। প্রায় দেড় ঘন্টার ডাকাতি শেষে তারা বাসটি ভিন্ন রুটে নিয়ে যায়। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বি.বাড়িয়া -সিলেট রুটে গাড়িটিকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত বুড়িচং থানার দেবীদ্বার পুলিশ ফাড়ির সন্নিকটে গাড়ি থামিয়ে চলে যায়। উল্লেখ্য ডাকাত দলের সিনিয়র দু সদস্য পথে নিমশার নামক বাজারে সাধারন যাত্রীর মতো নেমে যায়।

বাকিরা বুড়িচং থানার কাছে নেমে যায়। নেমে যাবার পথ দুটি মাইক্রোবাস ও একটি সিএনজি তাদের বহন করে ক্যান্টনমেন্টের দিকে চলে যায়। দুজন যাত্রীর প্রায় আড়াই লাখ টাকা ডাকাতি হয়। অনেকের ধারনা ,এই দু যাত্রীকে টার্গেট করেই ডাকাতি সংঘটিত হয়। জননী পরিবহনের আহত ড্রাইভার এবং পেছন থেকে আসা জননী পরিবহনের অন্য গাড়ীর লোকজনের সহায়তায় নিমসারে নেমে যাওয়া ডাকাত দলের সদস্য আবদুল মান্নান ধরা পড়ে।

রাতে তাকে দেবীদ্বার পুলিশফাড়িতে আটক রাখা হয়। ডাকাত দলের পুলিশ ফাড়ির কাছে নেমে যাওয়াটা সবার কাছে রহস্যময় মনে হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ এখানে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। হতাশ যাত্রীদের কাছে বিষফোড়ার উপর নুনের ঘায়ের মতো লেগেছে পুলিশেল ডাকাতি পরবতী বিরক্তিকর ভূমিকা। তারা যাত্রীদের নিরাপদে না পৌছিয়ৈ সবাইকে গাড়িসহ আটক করে সবার নামা ঠিকানা ও লুট হওয়া মালের বিবরন লিখতে লিখতে প্রায় রাত ৩/সাড়ে তিনটার মতো সময় নষ্ট করে।

পরবতীর্তে পরিবহনের মালিক এবং দেবীদ্বার পুলিশফাড়ির ইনসার্জ জাহাঙ্গীর আলমের বিশেষ সহায়তায় অন্যরুটের একটা বাস ভাড়া করে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌছে দেওয়া হয়। যাত্রীরা যখন সকাল বেলায় নিজ নিজ বাড়ীতে ফিরল,তাদের পেছনে পড়ে রইল এক অভিশপ্ত রাতের ডিজিটাল বাংলাদেশ। কিছু স্মরনীয় ঘটনা: ১.আমার কাছে ছিল বোধ সর্বসাকুল্যে পাঁচ হাজার টাকা। আর আমার নতুন প্ল্যানের জন্য কেনা নকিয়া ২৭০০ একটা সেট যার দাম ৫৬৫০ টাকা,যেটা আমি একদিনও ব্যবহার করিনি। লাবণীর কথায় বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি সিফাত,মা,আব্বা,আপা,পিচ্ছির ছবি তোলার জন্য।

কারন হয়ত বহুদিন তাদের সাথে আমার কথা বা দেখা হবেনা। সুতরাং এ ছবিগুলোই আমাদের স্মৃতিচারনে সহায়ক হবে। সায়েদাবাদ থেকেই আমি আমার অনেক পুরোনো প্রায় ৫০০ টাকা বাজারমূল্যের সিমেন্স সেট দিয়ে প্রিয়তমার সাথে কথা বলছিলাম। গাড়ি যখন মেঘনা ব্রীজ পার হচ্ছিল আমি বললাম তাকে সেই ব্রীজের কথা। সে জানতে চাইল,ব্রীজের নাম কী? আমি তাৎক্ষনিকভাবে ব্রীজের নাম ভুলে গেলাম।

আবার বলছিলাম গতবার যখন আমি বাড়িতে যাচ্ছিলাম তখন তার সাথে আমি এতটা কথা বলতে পারিনি কারন তার ভাই ভাবী তখন ছিল। তবু সে একটু কথা বলছিল হারামজাদার সাথে কথা বলার স্টাইলে,যা আমার একদম ভাল লাগেনি। এসব কথা বলতে বলতে দেখলাম গাড়িতে অন্ধকার কিছুটা হৈ ছৈ। ধর শালারে,বাঁধ ইত্যাদি শব্দ শুনে আমি তাকালাম। দেখলাম কিছু লোককে পেছনের দিকে ঠেলে নিয়ে আসা হচ্ছে।

হাতে রশি দেখে ডাকাত মনে হলো। কিন্তু ডাকাত তো চিনিনা। কারন অভিজ্ঞতা নেই। আবার পুলিশ চেকআপ মনেও হলো কিছুক্ষনের জন্য। যাই হোক আমি লাবণী বলতে গাড়িতে হৈ ছৈ ডাকাত-টাকাত মনে হচ্ছে।

বলেই আমি কেটে দিলাম। ডাকাত বলে শিওর হলাম। তারাতারি সিম কার্ড খুলে বুক পকেটে নিলাম। ব্যাগ খুলে নতুন মোবাইলটা কই রাখব জায়গা খুজতেছিলাম। আমি বেশ কিছু সময় পেলাম কারন প্রায় পেছনে আমি বসেছি।

আমি দেখতে পাচ্ছিলাম অন্যদের হাত বাধছিল,মুখে কসটেপ লাগাচ্ছিল। কোন জায়গা পাচ্ছিনা। আমার পাশের ছেলেটা নিশ্চু বসে আছে। কোথাও কিছু লুকাচ্ছেনা সে। সামনের সিটের ডান পাশের কভারের ভেতরে নতুন মোবাইলটা লুকালাম।

লুকানোর আগে বন্ধ করতে গিয়ে দেখলাম বন্ধ হচ্ছেনা বরং আলোকিত হচ্ছে। শেষে বন্ধ না করেই সেখানে লুকালাম। কিন্তু গাড়ির ঝাকুনিতে মোবাইলটি নিশ্চিত যেকোন সময় পড়ে যাবে। তাই হাত দিয়ে ধরে রাখলাম যখনই ডাকাতরা সামনে আসত হাত সরিয়ে নিতাম। মানিব্যাগের টাকাটা সরালাম।

জুতার ভেতর ঢুকালাম। কিন্তু মানিব্যাগ খালি থাকলেও সমস্যা তাই পাশের ছেলেকে বললাম কিছু টাকা দেন। তার বিশ টাকা ডানের প্যান্টের পকেটে মোবাইলের সাথে রাখলাম। যথাসময়ে হাত বাধল,মুখে কসটেপ পুরল। ঐ অবস্থায় কিছুক্ষন বসে বসে ভাবলাম এবং দেখলাম সামনের সিটের পেছনে টিন মারা।

তার উপর দিকে কিছুটা ফাকা জায়গা আগে,আফসোস হলো এ জায়গাটা এতক্ষন দেখিনি কেন? সিনিয়র দুজনের একজন বলল,আপনার মোবাইলটা দেন। আমি হাতের দ্বারা ইশারা করে ডান পকেট দেখালাম। মোবাইলটা নিল ডান পকেটে হাত দিল বাট খালি। মানি ব্যাগ নিতে যাবে,তার আরেক সহকর্মী ডাক দিল,সে চলে গেল। তবে যাবার আগে কোলে থাকা ব্যাগ নিয়ে গেল।

পরে মনে পড়ল ব্যাগে বীকন ফার্মাসিউটিক্যালের দুটা রিফান্ড আছে যার সমমূল্য দশ হাজার টাকা। ওরা ঐ টাকা তুলতে পারবেনা কিন্তু আমার ও ক্ষতি হবে। কয়েকবার করে কয়েকজন কয়েকজন সার্চ করছে প্রতিবারই সবার কাছে কিছুনা কিছু পাওয়া যাচ্ছে। ওদের দুজন নিমসারে নেমে যাওয়ার পর দাত দিয়ে হাতের বাধন খুললাম। পাশের লোকটা কেবলই মানা করছিল।

হাত খুলে জুতার ভেতরের টাকা আর মোবাইলটা টিনের ভেতর ঢুকালাম। মানিব্যাগটা রাখলাম মোবাইল রাখার সাবেক জায়গাতে। কয়েকজনের হাত খুলে দিলাম। মোটামুটি আমরা ৪/৫জন হাতখুললাম। কিছু একটা করব ভাবছি।

ওরা আবার পেছন দিকে এল। নিজেরা নিজেরা হাত বাধার অভিণয় করে বসে থাকলাম। কেউ একজন ঝাপটে ধরলে নিশ্চিত আঘাতপ্রাপ্ত হবে কিন্তু ডাকাতরাও ধরা পড়বে কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? আমার মোটামুটি সবই রইল ব্যাগ আর পুরোনো মোবাইল ছাড়া। ওরা সবাই নেমে যাবার পর এক মহিলা চিৎকার করে ওঠল সাথে সবাই। চারপাশের গ্রামের লোকজন জড়ো হলো।

ডাকাতদের মাইক্রো বাসটি পাশ ঘুরে আমাদের আর গ্রামের লোকদের ভিড়ের ভেতর দিয়ে চলে গেল। পেছন পেছন খালি হাতে অযথাই দৌড়ালাম। একটা ইটের টুকরাও যদি পেতাম। বাসে এসে দেখলাম সবার ব্যাগই ফেলে গেছে জিনিসপত্র নিয়ে। আমার ব্যাগটি পেলাম সবার পরে।

একটা পাসপোর্টের ভেতর রিফান্ডের দুটা চেক পেলাম। হাফ ছেড়ে বাচলাম। হিসেব কষে দেখলাম আমার ব্যাগের ভেতরের দুকেজি আম আর দশ টাকা দামের পাপড়ের পেকেটটা নেই। বাসের সামনের করিডোরে ছড়ানো ছিটানো আমের আটি আর আপেল দেখলাম। নিশ্চয় আমার আম।

সিটের পেছনের টিন খুলে টাকা আর মোবাইল বের করতে আমাকে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়েছে। শেষে লাঠি ঢুকিয়ে টিন ভেঙ্গে টাকা মোবাইল উদ্ধার করেছি। সবাই বলল,ভাই আপনি দুরাকাত নফল নামাজ পইড়েন। ২.আমি টেনশনে ছিলামঐ সময়ে যদি আমার মোবাইলে কোন কল আসে। যদি শুধু নাম্বারটা দুতিনজন জানে তবু।

ঠিকই রাত দেড়টার দিকে শিবলী ফোন করেছে যখন কাহিনী শেষ। বাড়িতে নতুন নাম্বারটা জানাতে চাইনা তাই ফোন করে বললাম সমস্যার কথা। পাশের লোকের মোবাইল থেকে ফোন করছি এটাও বললাম। বিভিন্নজনকে মোবাইল দিয়ে হেল্প করলাম যোগাযোগ রক্ষার জন্য। ওদিকে আমার জানু আমার মোবাইল বন্ধ দেখে উতলা হয়ে গেল।

সে জানে অথচ কাউকে বলতে পারছেনা। ফেসবুকে ঐ সময়ে তার লেখা ব্যাকুল কথাগুলি........ “Tomar ki holo?phone bondo kano?tumi je bolle baser vetor dakat ,tobe ki mobile nea nelo?kichu vavte chi na tumi phone koro please please amar onek kanna pacce. valo vabe fery aso tomar laboner jonno 143 143 kotiber” “ Khub tenson hocce tumi valo aco to?please allah sharif k amar kace ferea dao.143 143 143 143...........” “Obosese katha holo akto sosti pelam.mobile neace to somosa nai tomar kicu koreni atar jonno dakatder donnobad.taratari fery aso143 143 143 .........” ৩. বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিয়নকে বলে রাখলাম তুমি কাল অফিসে থেকো। শুক্রবার আমি অফিসে কাজ করব। ইডি স্যারকে বলে রাখলাম। একটু পরেই স্যারকে চাবি বুঝিয়ে দিয়ে বললাম স্যার বাড়ি যাচ্ছি।

স্যার বলল কী ব্যাপার! বললাম জানিনা,যেতে ইচ্ছে করছে। ডাকাত ভাগ্য কি আমাকে ডেকে নিয়ে গেল? ৪.তিনটা মহিলা বাসে ছিল। দুজন বয়স্ক,একজন একটু জোয়ান। তিনজনেই বোরখা পরা সম্ভবত বিবাহিত। ডাকাতদের একজন বলল,ঐ মহিলাদের কিছু করিসনা কিন্তু সেই অল্প বয়স্ক মহিলার গায়ে হাত দিল।

একটা হুংকার শুনলাম,”মহিলাদের গায়ে হাত দিয়েন না” “ঐ শালারে ভাল কইরা বান” একটা হুজুর প্রতিবাদ করাতে তাকে ভাল করে আঙ্গুলসহ বাধা হলো। আল্লাহ একটা নগদ বিচার করেছে,ধরা পড়া,গনধোলাই খাওয়া ডাকাত দলের একমাত্র সদস্যটিই হলো মহিলা লান্জনাকারী। আহত বদমাসটিকে ঐ দাড়িওয়ালা ছেলেটি কয়েকটি কিক মারল। কিন্তু আমি দুঃখজনকভাবে মিস করলাম। ৫. এক ভদ্রলোকের নিল ২৭০০০ টাকা।

তার আত্নীয়রা প্রাইভেট কার নিয়ে এসে তাকে পুলিশফাড়ি থেকে নিয়ে গেল। আমরা যারা রয়ে গেলাম,তারা সবাই ছিল ক্ষধার্ত। উনার এক রিলেটিভ সবার নাস্তা খাওয়ার জন্য ১০০০ টাকা দিল। অথচ এই মহত্নটা দেখানোর কথা গাড়িওয়ালার। যাই হোক নাস্তা বাবদ ৮০০টাকা খরচ হলো।

বাকী ২০০ যাদের পুরো পকেট খালি তাদের দেয়া হবে। একজন বলল তার ৩০ টাকা লাগবে। কিন্তু ভাংতি নাই । আমার কাছে পুরো একশ ভাংতি ছিল। ভাংতি দিলাম।

এখন আমার রিকশা ভাড়া কই। শেষে আমাকে ২০ টাকা দিল। সুতরাং রেজাল্ট দাড়ালো ডাকাতের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আমার বিশ টাকা ইনকাম। ৬. পুলিশের আচরন ছিল অসন্তোষজনক। তারা আমাদের বাড়ি ফেরা নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন ছিলনা।

শেষে আমি যখন ডাকাতের ছবি তুলতে তুলতে বললাম এটা দৈনিক আমার দেশে দেখবেন,তখন তারা খুব সচেতন হয়ে আমাকে সাহায্য করতে লাগল। কারেন্ট ছিলনা,কিন্তু টর্চ আলো ডাকাতের মুখে মেরে আমার ছবি তুলতে সহায়তা করলো। ডাকাতের নাম লিখে দিল। ওখানকার ইনচার্জ-এর নাম লিখতে বলল। এমনকি পরবর্তীতে তাদেরকে যেন অবশ্যই ফোন করি।

তারা মিথ্যা মিথ্যা বাহবা নেয়ার চেষ্টা করল। যেমন গাড়িটি আটক। ডাকাত আটক। শরীফ হোসাইন মৌন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.