আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুরুর গল্প



আমার ঠাকুরদা মারা গেলে তাঁর চালু ব্যবসা দেখাশোনার অভাবে নষ্ট হয়ে গেল। ঠাকুমা ভাল সেলাই জানতেন। হাতে বানানো নানা জিনিস বিক্রী করে ঠাকুমা সংসার চালাতে লাগলেন। বাবা দৌলতপুর কলেজ থেকে সেই বছরই আই.এস.সি পাশ করলেন ফার্স্ট ডিভিশনে। কিন্তু পয়সার অভাব তাই পড়াশুনোর ওখানেই ইতি টানতে হল।

ইতিমধ্যে মেয়েরা বিয়ের যোগ্য হয়ে উঠেছে। ঠাকুমার কথামত বাবা তাই বাড়ি বন্ধক দিয়ে বোনেদের বিয়ে দিলেন। ইতিমধ্যে বাবার চাকরী জুটে গেল কলকাতার আলিপুর কোর্টে। বাবা কলকাতায় চলে এলেন। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ের কাছে একটা বাসা ভাড়া করে থাকতে লাগলেন।

শ্যামবাজারে বাবার কাছে থাকলেন ছোটোকাকা। এই সময়েই মাসিমার সাথে এবং পরে মার সাথে বাবার বিয়ে হয়। আমার দাদুর দুই মেয়ে ,এক ছেলে। বড় মেয়ের নাম ফুল। ফুলের মতই সুন্দর দেখতে।

আর ছোট মেয়ের নাম সুধা। ছোট মেয়ের জন্মাবার দশ বছর পরে দিদিমার এক ছেলে হয়। ফুলের বিয়ে হয়েছিল ১৪ বছর বয়সে ঝিনাইদহে,আমার বাবার সাথে। ফুলের গায়ের রং ছিল দুধে আলতায় গোলা,কোঁকড়া কোঁকড়া একমাথা চুল। আমার বাবাও ছিলেন সুপুরুষ।

ফুলের বাচ্চা হওয়ার সময় ওরা বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিল। অজপাড়াগাঁ,সেখানে কোন ভাল ডাক্তার ছিল না। ফুল প্রায় ছোটো বোঙ্কে ভয় দেখিয়ে বলত ,আমি যদি মরে যাই,তবে একপা নিমগাছে আর একপা তোর ঘরের মধ্যে দিয়ে তোকে ভয় দেখাবো”। প্রত্যেক সপ্তাহে প্রচুর ফল পার্সেল করে ফুলের জন্য জামাই পাঠিয়ে দিত। প্রসবের সময় গর্ভযন্ত্রণা শুরু হলে প্রচন্ড খিঁচুনী হতে হতে শেষে ধনুষ্টংকার হয়ে গেল ফুলের।

শেষপর্যন্ত ফুটফুটে সুন্দর একটা ছেলে হল, কি্ন্তু ফুল কে বাঁচানো গেলনা । ফুলের দেওর বাড়িতে আসছিল বৌদির খবর নিতে। পথেই ফুলের শবযাত্রা চোখে পড়ল তার। বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে মাসিমা মারা গেলেন ষোল বছর বয়সে । দাদা সদ্যজাত শিশু ।

দিদিমার কোলে তখন এক বছরের মামা। দিদিমা মা মরা ছেলেটাকে বুকে করে মানুষ করতে লাগলেন। বাচ্চা টাকে বড় করতে হবে আবার সুপুরুষ,সুচাকুরে জামাইকেও হাতছাড়া করা যায়না । দিদিমা শেষপর্যন্ত দাদুর অমতেই ছোট মেয়ে সুধার সাথে জামাইয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন। বাবার বয়স তখন ছাব্বিশ আর সুধা মানে আমার মা মাত্র বারো ।

এই বিয়েতে দাদুর মত ছিলনা। দাদু বাড়ী থেকে রাগ করে চলে গেলেন। বিয়ে দিলেন মার জ্যাঠামশাই। মাসিমা কে বিয়ে দিয়েছিলেন দাদু কত ধুমধাম করে আর মার বিয়ে হল সাদা লালপাড় শাড়ী পরে, আর গাঁদা ফুলের মালা গলায় দিয়ে। মা কতদিন দুঃখ করে নিজের বিয়ের এই গল্প আমাকে শুনিয়েছেন।

মরা দিদির উদ্দেশ্যে বলতেন, ও আমার চিরশত্রু ছিল । ও না মরলে তো আমার এখানে বিয়ে হতনা। ঠাকুমা মাসিমাকে ভালোবাসতেন কিন্তু মাকে একদম সহ্য করতে পারতেন না । খুব কষ্ট দিতেন। মা মাসিমার মত অত ফরসা সুন্দরী ছিলেন না, তবে লম্বা দোহারা চেহারা, মাথায় একঢাল কালো চুল, সব মিলিয়ে মাকে ভালই লাগতো ।

মার মুখেই শুনেছি বিয়ে হয়ে এসে বড় ভাতের হাঁড়ির ফ্যান গালতে গিয়ে হাঁড়ির পাশেই মা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। সংসারে কাজ শিখতে শিখতে, দাদাকে মানুষ করতে করতে মা একদিন গর্ভবতী হয়েছিল। এসময়ে মার খুব বাজে ধরণের টাইফয়েড হল। প্রচুর ওষুধ খেতে হত, পথ্য শুধু দুধ সাবু। মার শরীর ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

সংসারের কাজ করতে পারত না। ঠাকুমা পিসিমারা মুখ ঝামটা দিত। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও মা বেশি কাজ করতে পারত না। দশ মাস পুরো হওয়ার আগেই আমি জন্মালাম। ছোট্ট,কম ওজনের অপরিণত শিশু।

মা বলতেন, অনেক ওষুধ খেয়েছিলাম তো তাই তুই হয়েছিলি জিওল মাছের মত কালো। কিন্তু মুখ খানা তুলি দিয়ে আঁকা। মার বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।