আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যৌতুক দিয়েও রক্ষা হলো না সোনিয়ার

তক

যৌতুক দিয়েও রক্ষা হলো না সোনিয়ার। স্বামীর চাহিদা মোতাবেক যৌতুকের দাবি করা ১৫ হাজার টাকা পরিশোধের এক মাসের মাথায় খুন হলো সে। বিয়ের মাত্র ৬ মাসের মাথায় নৃশংস খুন হলো স্বামী নাসিরের হাতেই। লাশ গুম করার জন্য পাকা ফ্লোর ভেঙে মাটি খুঁড়ে গর্তও করে ঘাতক স্বামী তবে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ লাশ গুমের আগেই তাকে আটক করে। গতকাল সকালে রাজধানীর শ্যামপুর থানার জুরাইনে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ সোনিয়ার লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। স্বজনদের অভিযোগ, নাসির গলাটিপে সোনিয়াকে হত্যা করেছে। পরে পুলিশের কাছে খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে ঘাতক স্বামী। এ ঘটনায় সোনিয়ার বাবা সামাদ বেপারি বাদী হয়ে শ্যামপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ও স্বজনরা জানায়, গতকাল ১০২ পশ্চিম জুরাইনের কবরস্থান রোডের রিপন মিয়ার বাড়ি থেকে সোনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ বাড়িতে সোনিয়ার বাবা সামাদ বেপারি ভাড়া থাকতেন। একই বাড়িতে নাসির ঘরজামাই হিসাবে থাকতো। ঘটনার আগের দিন রাতে সোনিয়া ও তার স্বামীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সোনিয়ার বাবা সামাদ বেপারি গিয়ে তাদের ঝগড়া থামায়। সকালে সোনিয়া ও তার স্বামীকে সোনিয়ার মা লুৎফুন্নেছা নাস্তা দিয়ে তাদের মেজ মেয়ে শাহানার বাসায় যায়।

এ সময় নাসির আবার সোনিয়ার সঙ্গে যৌতুক নিয়ে ঝগড়া শুরু করে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে সোনিয়াকে খুন করে নাসির। পরে লাশের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের চালের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। এরপর সোনিয়ার লাশ গুম করার চেষ্টা করে নাসির। এ কারণে ঘরের পাকা ফ্লোর ভেঙে মাটি খনন করতে থাকে।

খোঁড়াখুঁড়ির শব্দে পাশের ভাড়াটিয়ারা এসে জড়ো হয়। এ সময় জানালা দিয়ে তারা সোনিয়ার লাশ দেখে। এ সময় বাড়িওয়ালাসহ ভাড়াটিয়ারা মিলে নাসিরকে আটক করে। পরে থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে সোনিয়ার লাশ উদ্ধার করে। সোনিয়ার বড় ভগ্নিপতি হাশেম জানায়, ৬ মাস আগে সোনিয়ার সঙ্গে নাসিরের বিয়ে হয়।

নাসির ছিল মুদি দোকানের কর্মচারী। এ কর্মচারী ছেলেটির সঙ্গে প্রেম করেছিল তার ছোট শ্যালিকা সোনিয়া। মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে মা বাবা ছেলেটিকে মেনে নেয়। বিয়ের পর সোনিয়ার বাবা নিজের টাকায় নাসিরকে গোপীবাগে মুদি দোকান খুলে দেন। দোকান খুলে দেয়ার পর থেকে নাসির বিভিন্ন সময়ে দোকানের নাম দিয়ে সোনিয়ার বাবার কাছ থেকে টাকা আদায় করতো।

টাকার জন্য প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত দু’জনের মধ্যে। এরপরও তার বাবা টাকা দিয়ে যাচ্ছিল। হাশেম জানায়, আমার শ্বশুরের সব টাকা সোনিয়ার নামে ব্যাংকে রাখা হয়েছে। এ টাকা হাতানোর জন্যই নাসির তাকে খুন করতে পারে বলে তিনি সন্দেহ করেন। তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত হত্যা।

খুনি পালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগভর্তি কাপড় চোপড় নিয়ে প্রস্তুত ছিল। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসির যৌতুকের জন্য খুন করেছে বলে স্বীকার করে। সোনিয়ার কয়েকজন স্বজন জানান, প্রেম করে পরিবারের অমতে বিয়ে করায় নাসিরের সব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতো সোনিয়া। বিয়ের এক মাস পর থেকেই যৌতুকের জন্য সোনিয়াকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে নাসির। দুই মাসের মাথায় তার শ্বশুর-শাশুড়ি বাধ্য হয়ে নাসিরকে মুদি দোকান দিয়ে দেয়।

এরপরও নির্যাতন থামেনি। শ্যামপুর থানার এস আই আফজাল হোসেন জানান, সকাল সাড়ে আটটার দিকে পশ্চিম জুরাইনে ভাড়া বাসা থেকে সোনিয়ার গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় সোনিয়ার স্বামী নাসির উদ্দিনকে। শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জমিরউদ্দিন জানান, গণপিটুনির শিকার নাসিরউদ্দিনকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোনিয়ার মা বাদী হয়ে নাসিরউদ্দিনকে আসামি করে শ্যামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসির সোনিয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.