আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যৌতুক বিহীন বিয়ের অঙ্গীকার (যৌতুক নেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ যা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। যৌতুক আদায়ের জন্য নির্যাতন করলে বা স্ত্র্রীর মৃত্যু ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতুদন্ড।

জানার আগ্রহ মানুষের চিরন্তন, বই হলো তার বাহন, আইনের মৃত্যু আছে কিন্তু বইয়ের মৃত্যু নেই। যারা এখনো বিয়ে করেননি (প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ) সবাই হাত তুলুনঃ ১. যৌতুক চাওয়া মানে ভিক্ষা চাওয়া। ২. যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি ৩. যৌতুক কে না বলুন। ৪. যৌতুক নেবও না। ৫. যৌতুক দেবও না।

৬. খুশী হয়ে যা (উপহার) দেয় তা আদবের সাথেই নিব। যৌতুক নেয়া ও দেয়ার ব্যাপারে আমরা দায়ী নয় কি? যৌতুক নেয়া ও দেয়ার ব্যাপারে দেশে প্রচলিত বিদ্যমান আইন তোয়াক্কা না করে শিক্ষিত পরিবারগুলোতে যৌতুক প্রবণতা এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। আবার কোনো মধ্যবিত্ত পরিবার বিবাহ উপযুক্ত কন্যার জন্য সরকারি চাকুরে জামাই পেলে; সামাজিক ব্যাধি ও আইনত অপরাধ যৌতুক বর পক্ষকে যা লাগে তা দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। কারণ চাকুরে জামাইয়ের কাছে কন্যা সুখে শান্তিতে থাকবে। অনুরূপ সরকারি চাকরিপ্রাপ্ত ছেলের বাবাও মোটা অঙ্কে যৌতুক নিয়েই ছেলেকে বিয়ে দিয়ে থাকেন।

অবশ্য এরকম বাবা সবাই তা বলা ঠিক হবে না। এছাড়া বর্তমান সমাজে একটি নতুন প্রবণতা চালু হয়েছে যে ‘যৌতুক না চাইলে কন্যার পিতা বেশি দেবেন’। ফলে শিক্ষিত পরিবারে এখন যৌতুক বিষয়ে তেমন কোনো চাহিদা থাকে না। যে কারণে মেয়ের বাবা মেয়েকে স্বর্ণের গহনা, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, ফ্রিজ, রঙিন টেলিভিশন, মোটরসাইকেলসহ নানান কিছু ট্রাকে করে নতুন জামাইয়ের বাসায় পৌঁছে দেন। যা সামাজিকভাবে যৌতুক হলেও ভদ্র মহলে এটা নাকি যৌতুকের আওতায় পড়ে না ! ইসলাম ধর্মে যৌতুক দেয়া ও নেয়াকে হারাম এবং স্ত্রীর দেনমোহর আদায় করা স্বামীর জন্য ফরজ বা অবশ্যই করণীয় উল্লেখ রয়েছে।

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় হারাম যৌতুকের তুলনায় স্বামীর ক্ষেত্রে স্ত্রীর দেনমোহর আদায় করার জন্য মেয়েপক্ষ কিংবা বিবাহের সময় উপস্থিত ব্যক্তিরা কেউই জোর দেন না। আবার দেনমোহরানা ইসলামের দৃষ্টিতে খোদ ছেলের সামর্থ্যের ওপর ধার্য করার কথা বলা হলেও তা করা হয় না। বাস্তবে সেই দেনমোহরানা আদায় না করে ‘সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী স্ত্রীর কাছে স্বামী দেনমোহরানা মাফ চাইবে; আর স্ত্রী যদি খুশি মনে মাফ করেন তবে নাকি মাফ হয়ে যাবে’-এ ধরনের কথাবার্তাও অনেক সময় শোনা যায়। একদিকে যৌতুকের দায়গ্রস্ত বাবার অসামর্থ্য অন্যদিকে যৌতুকলোভী স্বামীর নানামুখী নির্যাতন। বাধ্য হয়ে বিবাহিত নারী এ জঞ্জাল ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যাও করেন।

আবার কোনো নারী স্বামীর নানামুখী নির্যাতন সহ্য করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করলেও যৌতুকলোভী স্বামী তাকে শেষ পর্যন্ত যৌতুক না পেয়ে যে কোনো উপায়ে হত্যাও করেন। বর্তমান সমাজে যৌতুকের দায়ে নারী নির্যাতন মানবিক সমস্যাটি ব্যাপকহারে বেড়েছে। পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় এ অবহেলার শিকার হন আমাদের মা-বোনেরা। বর্তমান সমাজব্যবস্থা থেকে যৌতুক প্রবণতা আমরা কী দূর করতে পারব না? যৌতুকের কুফল সম্পর্কে আমরা কী সামাজিকভাবে সচেতন হতে পারি না? যৌতুক নামক মানবিক অপরাধ ও নির্যাতন থেকে আমরা কী মা-বোনদের রক্ষা করতে পারব না! যার জন্য আমাদের নানামুখী প্রচার, মানববন্ধন, নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করতে হচ্ছে। যৌতুক বিভিন্ন দিক নিয়ে উকিল ও কন্যার বাবার প্রশ্নোত্তরঃ উকিল : সমাজে যৌতুক হলো একটি কঠিন সামাজিক রোগ।

আমাদের সমাজে গরীব-ধনী সব পরিবারেই যৌতুক প্রথা বিদ্যমান। যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। গ্রাম- শহর সব জায়গাতেই স্ত্রীরা স্বামীদের বা তাদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে, কখনো কখনো মারাও যাচ্ছে। একাধিক সন্তানসহ নারীকে প্রায়ঃশই ঘর সংসার হারাতে হয় যৌতুকের কারণে। বাংলাদেশে হত্যাকান্ডের শিকার নারীর বিরাট অংশই যৌতুকের বলি।

আমাদের প্রচলিত আইন যৌতুক প্রথা সমর্থন করে না। আইনে যৌতুক দেয়া ও নেয়া উভয়ই অপরাধ। বাবা : আমরাতো যৌতুক বলতে শুধু মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে ছেলে পক্ষ যা দাবী- দাওয়ার মাধ্যমে আদায় করে নেয় তাকেই বুঝি। উকিল সাহেব আইনেও কি যৌতুক বলতে এটাই বুঝায়? উকিল : সাধারণ অর্থে ‘যৌতুক’ বলতে বিয়ের সময় মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে ছেলে পক্ষের দাবী- দাওয়া আদায়কে বুঝালেও, আইনে বিয়ের শর্ত হিসেবে বর বা কনে যে কোন পক্ষের দাবী-দাওয়াকে যৌতুক বলে। ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন অনুসারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি কোন পক্ষ অপর পক্ষকে বিয়ের আগে-পরে-চলাকালীন যে কোন সময় যে কোন সম্পদ বা মূল্যবান জামানত হস্তান্তর করে বা করতে সম্মত হয় সেটাই যৌতুক বলে বিবেচ্য হবে।

ব্যাখ্যা : ১ বাবা : বিয়েতে উপহার দিলে তাও কি যৌতুক হবে? উকিল : সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের উপহার যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে না। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে যে এই উপহার অবশ্যই বিয়ের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয় এমন কেউ প্রদান করতে হবে এবং বিয়ের পণ (যৌতুক) হিসেবে প্রদান করতে পারবেন না, উপহার হিসেবে দিতে হবে। অর্থাৎ বিয়ের শর্ত হিসেবে ৫০০ টাকার সমমূল্যের কোন কিছুও দেয়া যাবে না, দিলে তা আইন অনুসারে যৌতুক হবে এবং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ অনুসারে বিবাহ স্থির থাকার শর্তে বা বিবাহের পণ হিসেবে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত অর্থ, যে কোন সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদকে যৌতুক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বাবা : উকিল সাহেব তাহলে মুসলিম বিয়েতে যে দেনমোহর ধরা হয় ও দেয়া হয় তাওতো যৌতুক হবে? উকিল : না, তা হবে না।

কারণ, ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ২(খ) ধারায় বলা হয়েছে- যৌতুক বলতে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) মোতাবেক ব্যবস্থিত দেনমোহর বা মোহরানা বুঝাবে না। বাবা : যৌতুক দেয়া ও নেয়া কি অপরাধ ? উকিল : হ্যাঁ, যৌতুক দেয়া-নেয়া উভয়ই আইনের চোখে সমান অপরাধ। ব্যাখ্যা : ২ বাবা : যৌতুক নিলে কি শাস্তি হতে পারে ? উকিল : যৌতুক নেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ যা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। যৌতুক আদায়ের জন্য নির্যাতন করলে বা স্ত্র্রীর মৃত্যু ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতুদন্ড। ব্যাখ্যা : ৩ বাবা : যৌতুকের জন্য নির্যাতিত নারীরা কোথায় জরুরী চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন ? উকিল : কিছু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্যাতিত নারীদের জরুরী স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে।

যেমন : ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র জেলা হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (বিভাগীয় পর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অবস্থিত) বিভিন্ন বেসরকারী সেবা কেন্দ্র বাবা : যৌতুক নিরোধে কোন প্রতিষ্ঠান কি আইনগত সেবা দেয় ? উকিল : যৌতুকের কারণে কোন নারী নির্যাতিত হলে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইনগত সহায়তা উপ-পরিষদ তাদেরকে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে থাকেঃ অভিযোগ পাওয়া মাত্র বাদীনি/বিবাদীর নাম, ঠিকানা ও অভিযোগ এর বিবরণী সহ একটি ফর্মে অভিযোগ গ্রহণ। উক্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনে তদন্ত করা হয়। বিবাদীকে অভিযোগের বিবরণী উল্লেখ করে তার বক্তব্য পেশ করার জন্য অন্ততঃ পক্ষে ১/২ সপ্তাহ সময় দিয়ে চিঠি দেয়া হয়। বিবাদীপক্ষ তাদের বক্তব্য মহিলা পরিষদের আইন সহায়তা কমিটির কাছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রদান না করলে তাদের কাছে তারপর আরো ২টি চিঠি পাঠানো হয়। বিবাদীপক্ষ তাদের বক্তব্য পেশ করলে উভয় পক্ষের বক্তব্য তাদের পরস্পরের উপস্থিতিতে শুনানীর জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

উক্ত নির্ধারিত তারিখে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সালিসীর মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। সালিসের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসায় ব্যর্থ হলে বাদীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয় এবং তাদেরকে প্রয়োজনে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়। বাবা : যৌতুক নিরোধে কোন কোন প্রতিষ্ঠান আইনগত সেবা প্রদান করে ? উকিল : যৌতুক নিরোধে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আইনগত সেবা দিয়ে থাকে। যেমন- ঠিকানা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যালয়, সুফিয়া কামাল ভবন, ১০/বি/১ সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০ ফোন -৭১৬৯৭০১, ফ্যাক্স ৮৮-০২-৯৫৬৩৫২৯, ই-মেইল: ওয়েব : http://www.mahilaparishad.org মহিলা আইনজীবী সমিতি, ৪৮/৩, মনিকো মিনা টাওয়ার, পশ্চিম আগারগাঁও, ঢাকা, ফোন-৯১৪৩২৯৩ ই-মেইল : http://www.bnwla.org.bd আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ৭/১৭, ব্লক-ই, লালমাটিয়া, ঢাকা, ফোন-৮৩১৫৮৫১, ৮১২৬১৩৪, ৮১২৬১৩৭ ৮১২৬০৪৭, ই-মেইল : http://www.askbd.org/web/ ব্লাস্ট, ১/১ পায়নিয়ার রোড/ ওয়াইএমসিএ, কাকরাইল, ঢাকা, ফোন-৮১৭১৮৫, ৯৩৪৯১২৬ বাবা : স্থানীয়ভাবে কোন কোন প্রতিষ্ঠান আইনগত সহায়তা প্রদান করে ? উকিল : আমাদের স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান যৌতুক নিরোধে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে। যেমন- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/মহিলা ও পুরুষ সদস্য পৌরসভার চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কমিশনার নিকটবর্তী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক জেলা জজের নেতৃত্বে আর্থিকভাবে অসহায়দের সেবাদান কর্তৃপক্ষ নিকটস্থ এনজিও/বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যারা এ বিষয়ে কাজ করছেন মানবাধিকার সংগঠন সমূহ মহিলা মন্ত্রণালয়ের আওতায় মহিলা অধিদপ্তরের আইন সহায়তা সেল।

বাবা : যৌতুক দেয়া ও নেয়া বন্ধ করার জন্য আমরা কি করতে পারি ? উকিল : সংশ্লিষ্ট মহল যেমনঃ সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগের উচিত যৌতুক নিরোধ আইন সর্ম্পকে সবাইকে জানানো ও ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে আইনী সহায়তা প্রদান করা। যৌতুক সর্ম্পকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। তরুণদের মধ্যে যৌতুক বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে, যৌতুক বিহীন বিয়েতে তাদের উৎসাহিত করতে হবে, তরুণীদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠতে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কার্যকর অংশগ্রহণে জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এজন্য স্থানীয় এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক -সংস্কৃতিক সংগঠন গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

নারী ও পুরুষ উভয়কে সমভাবে শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ প্রদান এবং তাদের সম-মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যৌতুকের জন্য তানিয়ার উপর অত্যাচার করার কারণে মাসুদ ও বাবা-মা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১১ ধারার খ উপধারা অনুযায়ী কারাগারে শাস্তি ভোগ করছেন। যৌতুকের কারণে আমাদের দেশের অসংখ্য নারী নানা রকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুক দেয়া ও নেয়া উভয়ই সমান অপরাধ।

তাই এ ধরণের অপরাধ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সচরাচর জিজ্ঞাসাঃ প্রশ্ন ১: যৌতুক গ্রহণ ও যৌতুক প্রদান কি অপরাধ? উত্তর: আইনের চোখে যৌতুক গ্রহণ ও যৌতুক প্রদান দুটোই অপরাধ। প্রশ্ন ২: যৌতুকের জন্য স্ত্রীর মৃত্যু ঘটালে বা সাধারণ অথবা মারাত্মক জখম করলে কি শাস্তি হতে পারে? উত্তর: আইন অনুযায়ী, যৌতুকের জন্য স্ত্রীর মৃত্যু ঘটালে স্বামীর মৃত্যুদন্ড হতে পারে এবং মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে এবং উভয়ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থদন্ড হবে। যৌতুকের জন্য মারাত্মক জখম করার শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ১২ বছর কিন্তু সর্বনিম্ন ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং উক্ত দন্ডের অতিরিক্ত অর্থদন্ড। যৌতুকের জন্য সাধারণ জখম করলে তার জন্য ১ থেকে ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং উক্ত দন্ডের অতিরিক্ত অর্থদন্ড।

প্ রশ্ন ৩: যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হলে কি করা যায়? উত্তর: আদালতে যৌতুক আইনে মামলা দায়ের করতে হবে অথবা আইন সহায়তাকারী সংগঠন সমূহের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। প্রশ্ন ৪: দেনমোহরকে কি যৌতুক বলা যাবে? উত্তর: না, দেনমোহরকে কখনোই যৌতুক বলা যাবে না। তথ্যসূত্রঃ যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০(২০০৩-সংশোধিত)। নারীর আইনগত অধিকার ও সহায়তা, পৃষ্ঠা:৯, সম্পাদনা: নবী, বেলা, প্রকাশনায়: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, প্রকাশকাল:১৫.১০.১৯৯২।

যৌতুক, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, কাকলী, নাছিমা খাতুন, পৃষ্ঠা-৩৯, উন্নয়ন পদক্ষেপ, একাদশ বর্ষ, ডিসেম্বর ২০০৪-ফেব্রুয়ারি ২০০৫। প্রজনন স্বাস্থ্য,নিরাপদ মাতৃত্ব এবং জেন্ডার সহায়িকা, পৃষ্ঠা নং-২২,২৩, প্রথম সংস্করণ: মে-২০০৭, প্রকাশক:আইইএম ইউনিট, পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, আর্থিক সহযোগিতায়: জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)। মাইনর এ্যাক্টস্, ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া, পৃষ্ঠা- ৪৭৯- ৪৮০, নিউ ওয়ার্সী বুক কর্পোরেশন, ২০০২। যৌতুক : ব্যাখ্যা ব্যাখ্যা : ১ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ২ ধারা অনুযায়ী: বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী না হলে, এ আইনে যৌতুক বলতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রদত্ত যে কোন সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে বুঝাবে, যা¾ (ক) বিবাহের এক পক্ষ অপর পক্ষকে; অথবা (খ) বিবাহের কোন একপক্ষের পিতা মাতা বা অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক বিবাহের যে কোন পক্ষকে বা অন্য কোন ব্যক্তিকে বিবাহকালে বা বিবাহের পূর্বে বা পরে যে কোন কালে বিবাহের পণ হিসেবে প্রদত্ত বা প্রদান করিতে সম্মত হয়; তবে, যৌতুক বলতে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) মোতাবেক ব্যবস্থিত দেনমোহর বা মোহরানা বুঝাবে না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (২০০৩-সংশোধিত) এর ২ (ঞ) ধারা অনুযায়ী : ‘যৌতুক অর্থ’ (ক) কোন বিবাহের বর বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সাথে জড়িত বর পক্ষের অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত বিবাহের সময় বা তারপূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসেবে বিবাহের কনে পক্ষের নিকট দাবীকৃত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ; অথবা (খ) কোন বিবাহের কনেপক্ষ কর্তৃক বিবাহের বর বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সাথে জড়িত বর পক্ষের অন্য কোন ব্যক্তিকে উক্ত বিবাহের সময় বা তারপূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসেবে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ।

ব্যাখ্যা : ২ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারা অনুসারে যে কোন ব্যক্তি কর্তৃক যৌতুক প্রদান বা যৌতুক গ্রহণ করা অথবা যৌতুক প্রদান বা যৌতুক গ্রহণে সহায়তা করা দন্ডনীয় অপরাধ। এ আইনের ৪ ধারা অনুসারে যৌতুক দাবী কারও অপরাধ। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ১১(ক), ১১(খ), ১১(গ) ধারায় যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা বা মৃত্যু ঘটানো বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করা অপরাধ। ব্যাখ্যা : ৩ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হলে, ১ থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় ধরণের শাস্তি হতে পারে। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (২০০৩ -সংশোধিত)’ এর ১১ (ক) ধারা অনুযায়ী, যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ড এবং মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে এবং উভয়ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।

‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (২০০৩-সংশোধিত)’ এর ১১(খ) ধারা অনুযায়ী, যৌতুকের জন্য মারাত্মক জখম করার শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ১২ বছর কিন্তু সর্বনিম্ন ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং উক্ত দন্ডের অতিরিক্ত অর্থদন্ড। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (২০০৩ -সংশোধিত)’ এর ১১ (গ) ধারা অনুযায়ী, যৌতুকের জন্য সাধারণ জখম করলে অনধিক ৩ বছর কিন্তু সর্বনিম্ন ১ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং উক্ত দন্ডের অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবেন। এই আইনের আওতায় স্বামী, স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে যে কোন ব্যক্তি যৌতুকের জন্য নারীকে (স্ত্রীকে) নির্যাতন করলে সে-ই অভিযুক্ত হবেন। সুত্রঃ Click This Link যৌতুকের বিরুদ্ধে শ্লোগান- এই আমাদের আলোঘরে যৌতুক আজ অন্ধকার/ যৌতুক চায় এই সময়ে মনের দু’চোখ অন্ধ কার? অন্ধ মানুষ মনের ঘরে যৌতুকহীন আলো/ জলদি করে মনের ঘরে বুদ্ধি দিয়ে জ্বালো...  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.