আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজামীদের মুখোমুখি জঙ্গি নেতা সাইদুর : জেএমবি নয়, সিরিজ বোমার নেপথ্যে ছিল জামায়াত



সমকাল প্রতিবেদক সমকাল / ১৬ জুলাই ২০১০ জামায়াতের নির্দেশে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির বর্তমান আমির সাইদুর রহমান। জামায়াত নিজেদের দোষ আড়াল করতেই এ হামলার দায়ভার জেএমবির ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। ফাঁসি হওয়া শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দিলেই জামায়াতের এসব পরিকল্পনার কথা সবাই জানতে পারত। গত বুধবার রাতে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ তথ্য দেন জঙ্গি নেতা সাইদুর। এদিকে সিআইডি হেফাজতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান দাবি করেছেন, একাত্তরে পল্লবী এলাকার গণহত্যায় তিনি জড়িত ছিলেন না।

অন্য কোনো কামারুজ্জামান এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। ওই ব্যক্তিই একাত্তর সালে পল্লবী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের দোসর হয়ে কাজ করেছিল। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জিজ্ঞাসাবাদে একাত্তরের গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী সব অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচাতে এ তথ্য দেন কামারুজ্জামান। একাত্তরের গণহত্যার একটি মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে কামারুজ্জামানকে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করছে। একই মামলায় রিমান্ডে আছেন জামায়াতে ইসলামীর আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা।

আবারও নিজামীদের মুখোমুখি সাইদুর : ডিবি কার্যালয়ে জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী ও জেএমবির আমির সাইদুরকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। চার জনই বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে ডিবির হেফাজতে রয়েছেন। বুধবার রাতে জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতাকে তৃতীয় বারের মতো মুখোমুখি করা হয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবির আমির সাইদুরের। বিভিন্ন সময়ে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে তাদের আবারও মুখোমুখি করা হয় বলে ডিবি কর্মকর্তারা জানান। ডিবি সূত্র জানায়, মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মাওলানা সাইদুর রহমান নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীকে বলেন, 'আপনারাই তো দেশ ও ইসলামের শত্রু।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলায় সরাসরি আপনাদের হাত ছিল। জামায়াত কর্মীরাই জেএমবির নামে এ হামলা চালায়। সারাদেশে জেএমবির নেটওয়ার্ক ছিল না। ' এ সময় মুজাহিদ ও নিজামী তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সামনেই সাইদুর রহমানকে বেশি বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেন। পরে সাইদুর রহমান ডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, 'আমি যে কথা বলব তার কোনোটাই তারা অস্বীকার করতে পারবেন না।

শায়খ রহমান ও বাংলাভাই নিজামী ও মুজাহিদের সৃষ্টি। তারাই আর্থিক সহায়তা দিয়ে জেএমবিকে জঙ্গি তৎপরতায় নামতে বাধ্য করেছে। পরবর্তীকালে মুজাহিদ, নিজামী নিজেদের আড়াল করতে কৌশলে বাংলাভাই, শায়খ আবদুর রহমানসহ জেএমবির অন্য নেতাদের র‌্যাবের হাতে ধরিয়ে দেন। গ্রেফতার হওয়ার পর বাংলাভাই ও শায়খ রহমান বারবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সাংবাদিকদের সামনে কখনও হাজির করা হয়নি।

সাংবাদিকদের সামনে তাদের হাজির করা হলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসত। ' এ সময় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নিশ্চুপ থাকলেও নিজামী ও মুজাহিদ বেঈমান মোনাফেক বলে সাইদুর রহমানকে ভর্ৎসনা করেন। মাওলানা সাইদুর রহমান বলেন, 'জেএমবির বড় দুর্দিনে আমি আমিরের দায়িত্ব নিয়েছি। আমি আমির হওয়ার পর কোনো সহিংস তৎপরতা চালাইনি। ' সিআইডি কার্যালয়ে কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা : পল্লবী থানায় একাত্তরের গণহত্যা মামলা তদন্ত করতে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ কমিটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে। তদন্ত টিমকে সহায়তা করবেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শেখ মোঃ মারুফ হাসান। গতকাল সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ পুলিশ সুপার শেখ মোঃ মারুফ হাসান বলেন, 'একাত্তরে পল্লবী এলাকায় গণহত্যা চালানোর সময় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন মোল্লা। এ গণহত্যার বিচার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মোল্লা ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে এ ঘটনায় নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লাসহ ১০ জন এবং অজ্ঞাত ৬০-৭০ জনের নামে গণহত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।

মারুফ হাসান আরও বলেন, মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে এরই মধ্যে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে। এছাড়া মামলার প্রত্যক্ষদর্শীদেরও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। সিআইডি সূত্র জানায়, বুধবার রাতে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তারা নীরব থাকেন।

পল্লবী থানার মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে চুপ থাকলেও পরে কথা বলেন কামারুজ্জামান। তিনি বলেন, 'আমি সেই কামারুজ্জামান নই। যে এ ধরনের হত্যাকা েআলাদা কেউ এ হত্যাকা চালিয়েছিল যার দায়ভার আমার ওপর পড়েছে। ' এ সময় সিআইডি কর্মকর্তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কামারুজ্জামানের ব্যাপারে তথ্য চাইলে তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। পরে কর্মকর্তারা কামারুজ্জামানকে বলেন, 'আপনি একাত্তরে হত্যা, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

যার যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। ' এরপর কামারুজ্জামান আর কোনো কথা বলেননি। সিআইডি সূত্র জানায়, জেএমবি ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু তারা সহজে মুখ খুলছেন না। কামারুজ্জামানের কাছ থেকে অনেক প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ জামায়াত নেতা বেশ ধীরস্থিরভাবে তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। পল্লবীর গণহত্যা মামলায় মুজাহিদ রিমান্ডে : পলল্গবীর গণহত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গতকাল বৃহস্পতিবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর নূরুল ইসলাম সিদ্দিকী মুজাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানান। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম রোখসানা বেগম হ্যাপী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুজাহিদকে তিন দিন হেফাজতে রাখার অনুমতি দেন। রিমান্ড বাতিল আবেদন নামঞ্জুর : জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুলিশি রিমান্ড বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।

তাদের রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায় অনুসরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফিজিওথেরাপি, বালিশ, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। ব্লাস্ট বনাম রাষ্ট্র মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল রায়ে পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন না করা, জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্বচ্ছ কাচের ভেতর আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য বলা হয়। হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় রিমান্ড চেয়ে আবেদন : অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ৭ দিনের রিমান্ড শুনানির তারিখ আগামী ১৮ জুলাই নির্ধারণ করেছেন আদালত।

ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আলী হোসাইন বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। রমনা থানায় ২০০৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দায়ের হওয়া এ মামলায় সাঈদীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। মামলাটি বর্তমানে অধিকতর তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ১৮ জুলাই মামলার কেসডকেট (সিডি) উপস্থাপনের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলা একাডেমীর বইমেলা থেকে ফুলার রোডের বাসায় যাওয়ার সময় অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে মৌলবাদীরা কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।