আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি এমন কেনো???

. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া...
ছুরি কাঁচি ধার হয় ভোতা হয় বলেই জানতাম। মানুষও যে ধার হয় তা জেনেছি আমার এক মামীর কাছে। বিয়ের পর থেকেই উনি দেখছেন আমি একাই বা বাচ্চাদের নিয়ে হুটহাট করে ঢাকা চলে আসছি, ঢাকা এসে খুঁজে খুঁজে আত্মীয়দের বাসা বের করছি। মামী খুব ভিতু, মামাকে ছাড়া এক পাও চলতে পারেন না। তাই উনার কাছে আমার এই চলাফেরা কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের চাইতেও উত্তেজক ব্যাপার।

উনি আমায় দেখলেই বলতেন ‘বাব্বাহ! তোমার কি ধার’! উনার মুখে শুনতে শুনতে আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে আমি খুব ধারালো। অবশ্য বিয়ের পর পরই ধরা পড়ে যে ঐ মামীর মানসিক সমস্যা আছে। তাই পাগলে কি না বলে আর ছাগলে কি না খায়..... আসি ভোতা প্রসঙ্গে- ঐ মামীকে দেখেই আমার মনে হতো, মামী খুব ভোতা। পরবর্তীতে আমার কুম্ভকর্নও ঐ দলে সামিল হয়েছে। কবে যে আমার ধার কমে মরচে পরে গিয়েছি তা বুঝতেই পারিনি।

বুঝতে পারলাম আমার মেয়ের কথায়। মেয়েঃ মা মিথুন যে এমপিত্রিটা দিয়েছে, ওটা কি ব্যাবহার করেন? আমিঃ না। মেয়েঃ কি করেছেন ওটা? আমিঃ আলমারীতে রেখে দিয়েছি। মেয়েঃ গুড। ওটা কি আলমারীতে রেখে দেয়ার জন্য দিয়েছে? আমিঃ (চুপ) মেয়েঃ ওটা আমাকে দিয়ে দিয়েন আমি গান ভরে দিবো।

আমিঃ আচ্ছা। তারপরই আমার টনক নড়ে। খোঁজ খোঁজ খোঁজ। পুরো আলমারী তন্ন তন্ন করেও ওটার হদিস পেলাম না। ঘরের মানুষকে জিজ্ঞেস করে ঝাড়ি খেলাম।

“ আমি কি জানি, কোথায় কি রাখো কিছুই মনে রাখতে পারোনা যখন তবে রাখো কেনো? কোন যত্ন নেই, খেয়াল নেই হ্যানো ত্যানো............ একদিন মেয়ে এসে বল্লো “কই আমাকে এমপিথ্রিটা দিলেননা? কি বলবো আমি? বিব্রত হয়ে বললাম, ওটা খুঁজে পাচ্ছিনা। মেয়ে কেমন করে যেন তাকালো। মরমে মরে ভাবলাম, ওকি ভাবছে? আমি ইচ্ছে করেই দিচ্ছিনা? মেয়েঃ মা, যে সুটকেসে আপনার শাড়ীগুলো তুলে রেখেছেন ওটা নামিয়ে রাখবেন। আমি এসে রোদে দেওয়াবো। আমিঃ ঠিক আছে।

তবে তুমি আমায় ফোনে একটু মনে করিয়ে দিও। নাহলে তো আমি ভুলে যাই। বেশ কয়েকদিন ভুলে যাওয়ার পর ওটা নামানো হলো। মেয়ে এসে ওটা খুল্লো। মেয়েঃ একি? আর শাড়ী কই? আমিঃ কেনো? আছে তো! মেয়েঃ ঐ যে আপনার কাতান, বেনারশী গুলো, ওগুলো গেলো কোথায়? আমিঃ .........ইয়ে...মানে...ইয়ে...... মেয়েঃ ওগুলো কাকে দান করা হলো? আমিঃ বারে, ঐ তো সেলিনার বিয়ে ঠিক হলো, ওকে দিলাম একটা, রীনাকে একটা, ফালানি কে একটা আর... মেয়েঃ ওগুলো তো আমি জানি।

তারপরও তো অনেক শাড়ী ছিলো মা। আমি কি নেয়ার জন্য বলছি? আমিঃ ( মিনমিন গলায়) আমি কি তাই বলছি নাকি? মেয়েঃ তাহলে আপনি সব দান করে বসে আছেন কেনো? আমিঃ আমি কি কোথাও যাই? যে ওগুলো পড়বো? তুমিও তো পড়না। ঘরে থেকে নষ্ট হওয়ার চেয়ে গরীবের কাজে আসবে। মেয়ে রাগ করে উঠে যায়। গজগজ করে বলে, “ উফ! মা, আপনি একেবারে ভোতা হয়ে গিয়েছেন”।

পিছন থেকে ডাকি, “যাহরার লেহেঙ্গার জন্য শাড়ী নিয়ে যাও”। “লাগবেনা, ওগুলো আপনি আপনার ঐ ইয়াসমিন কেই দিয়ে দেন”। রাগ করে মেয়ে চলে যায়। আর আমি ভোতার মত বসে থাকি।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।