আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই ছেলেটি - ০২



সেই ছেলেটি - ০১ ---------------------- ----------------------------------- ----------------------------------------------- ------------------------------------------------------------------------ কলেজে ছেলেটি যেন আর ও জনপ্রিয় হয়ে উঠল। বন্ধুরা তাকে ছাড়া থাকতে পারে না, শিক্ষকদের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র সে। আর দরীদ্র বাবা মায়ের অনেকখানি ভরসা ছেলেটি। ইন্টারমিডিয়েটে ও ছেলেটি আশানুরুপ ফল করল। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পরে যখন শহরের ছেলে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করছে, সে সময়ে ছেলেটি ব্যস্ত বাবাকে কৃষিকাজে সহযোগীতা করতে এবং টিউশনি করতে।

কিন্তু উপরওয়ালা বোধ হয় এখানেই থেমে থাকতে চান নি, রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার মাসখানেক আগে ছেলেটির বাবা সবাইকে কাদিয়ে এজগতের মায়া ত্যাগ করলেন, ছেলেটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বাবার মৃত্যূ শোক সামলাতে না সামলাতে ইন্টারমিডিয়েট এর ফলাফল, আর সেখানে এবার ও চমক। সারাদেশের মিডিয়ায় ছেলেটিকে নিয়ে হৈ চৈ, কিন্তু কোথায় ছেলেটি! বাবাকে হারানোর ব্যথা সে তখন ও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হয়ে ও সে মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার কথা ভাবতে ও পারল না, কারন তার সে ধরনের কোন প্রস্তুতি ছিল না। বাবার মৃত্যূ শোক কিছুটা সামলে উঠে সে এলো শহরে, উদ্দেশ্য উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া।

সে যেদিন শহরে এলো সেদিনই ছিল মেডিকেলে ফরম জমা দেয়ার শেষ দিন, কাজেই মেডিকেল এর চিন্তা বাদ। ইঞ্জিনিয়ারিং এর কথা ভেবে দেখল সেখানেও সম্ভব নয়, কারন হাতে সময় মাত্র ১৫ দিন। কাজেই ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ার সিদ্ধান্ত নিলো, প্রস্তুতির জন্য সহযোগীতা করতে এগিয়ে এলো তার দু:সম্পর্কের এক কাজিন, তার সহযোগীতায় একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলো সে। কোচিং করতে হলে শহরে থাকতে হবে, সে তো অনেক খরচের বিষয়, কোথায় পাবে সে এত টাকা! সমাধান ও বের করে দিল সেই কাজিন, কয়েকটা টিউশনি যোগাড় করে দিল তাকে, আর সে আয়ে নিজের পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে শুরু করল সে। শহরে পড়তে আসলে ও সে শহরের হালচাল তেমন কিছু বুঝত না, প্রচন্ড মেধাবী হওয়া সত্বেও সে ছিল খুবই সাধামাঠা আর শহুরে জীবনে অনভ্যস্ত।

কোচিং এ তার সহপাঠিরা অনেকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে, শহরের কালচারে মানুষ তারা, অনেক স্মার্ট আর সে এসব সহপাঠীদের সাথে তেমন মিশতে পারত না। কোচিং এ ভর্তি হয়ে সে আর ও একটি বিষয় আবিস্কার করল আর তা হলো এতদিন সে যা পড়েছে তা তেমন কাজে আসছে না ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি তে। ভর্তি পরীক্ষার পড়াশুনা সম্পূর্ণ আলাদা। তাই সে পড়াশুনা আর টিউশনির মধ্যেই ডুবিয়ে রাখল নিজেকে। কোচিং এর শুরুর দিকে একটি ক্লাসটেস্ট এ সে অংশ নিতে বাধ্য হলো, কিন্তু ঐ কোর্স এর কোন ক্লাস এর আগে সে করেনি, তারপর ও নিজের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির বলে সে পরীক্ষায় বসল, যথারীতি পরীক্ষা ও দিল এবং ফলাফলে দেখা গেলো ত্রিশ এর মধ্যে সে ২৭ পেয়ে তৃতীয় হয়েছে, আর তার পাশের বেঞ্চ এ বসা সুন্দরী সহপাঠীনি ২৫ পেয়েছে।

ফলাফল পেয়ে সুন্দরী সহপাঠীনি'র ক্ষোভ, সে তার পাশের বান্ধবীকে বলছে "শালা ক্ষ্যাত কোত্থেকে এসে প্রথমদিনই আমাদের টপকে গেলো"। দূর্ভাগ্যবশত ছেলেটি এই কথাটি শুনে ফেলে এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে আজকের পর থেকে কোন পরীক্ষায় ঐ মেয়েকে তার উপরে যেতে দিবে না এবং সেভাবে নিজেকে তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সত্যি সত্যি এরপর থেকে ছেলেটি প্রতিটি ক্লাস পরীক্ষা এবং মডেলটেস্ট এ পূর্ণমার্ক পেয়েছে ফলে কেউ তাকে টপকাতে পারেনি। কোচিং এর সবাই আশাবাদী ছেলেটিকে নিয়ে, সে ও আশা করছে ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো একটা বিষয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ পাবে সে। (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।