আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিটিআরসির নির্দেশে কমে গেছে ইন্টারনেটের গতি

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একটি নির্দেশনায় দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে। বিটিআরসির নির্দেশে ইন্টারনেটে কোনো কিছু আপলোড করার ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ ব্যান্ডউইডথ, সহজ ভাষায় গতি কমিয়ে দিতে বলা হয়েছে। দেশ থেকে ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়ার মূল মাধ্যম আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গত বুধবার বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক সাবিনা ইসলামের পাঠানো একটি ই-মেইলে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএসপি) বিটিআরসি কোনো চিঠিপত্র দেয়নি।
এদিকে বিটিআরসি দাবি করছে, এ নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

কিন্তু আইআইজি ও আইএসপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্দেশনা বাতিলের কোনো চিঠি তাঁরা পাননি।
বিটিআরসির পরিচালক (স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনা) সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা কীভাবে হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণের স্বার্থে বিটিআরসি ১৫ মে রাতে সাময়িকভাবে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এ নির্দেশ দেয় আইআইজিগুলোর জন্য। চার ঘণ্টায় তিনটি মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের কল আসা-যাওয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। কিন্তু রাত ১১টার পরই ইন্টারনেটের ওপর এ বাধা উঠিয়ে দিতে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। ’
কিন্তু আইআইজি-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, এ নির্দেশ তুলে দেওয়ার কোনো চিঠি তারা পায়নি।

বরং ১৬ মে সন্ধ্যায় কয়েকটি আইআইজিকে আইএসপির জন্য আপলোড ব্যান্ডউইডথ ৯০ শতাংশ কমিয়ে মাত্র ১০ শতাংশ করার নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। এতে যখন ইন্টারনেট-সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে থাকে, তখন রাত ১১টায় এ নির্দেশনা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আপলোড গতি সীমিত রাখার নির্দেশ গতকাল রাত পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়নি।
বিটিআরসির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আইআইজি যেন ১৫ মে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের গ্রাহকদের (আইএসপি) কেনা ব্যান্ডউইডথের ক্ষেত্রে আপলোড ব্যান্ডউইডথ সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করে। তবে ব্যান্ডউইডথের এই নিয়ন্ত্রণ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান (বেসিস সদস্য), ট্রাভেল এজেন্ট, দূতাবাস এবং সরকারি সংস্থার ভিপিএনে (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) থাকবে না।

পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বিটিআরসিকে দিতে হবে।
ইন্টারনেটের সার্বিক গতি আপলোড বা তথ্য প্রেরণ এবং ডাউনলোড বা তথ্য গ্রহণ—এই দুই কাজের জন্য থাকা ব্যান্ডউইডথের ওপর নির্ভর করে। বিষয়টা ব্যাখ্যা করে ফাইবার অ্যাট হোমের সিএসও সুমন আহমেদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধরুন, কোনো আইএসপি ১০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ আইআইজির কাছ থেকে কিনল। এর অর্থ হলো, ডাউনলোডের জন্য ১০ ও আপলোডের জন্য ১০ এমবিপিএস পাওয়া। বিটিআরসির নির্দেশ অনুযায়ী এখন ডাউনলোডের ক্ষেত্রে ১০ এমবিপিএস ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে, তবে আপলোডের জন্য পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২ দশমিক ৫ এমবিপিএস।


নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা যায়, আপলোডের ব্যান্ডউইডথ নিয়ন্ত্রণের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের সার্বিক গতি ধীর হয়ে যাবে। গুগলে তথ্য খোঁজার ক্ষেত্রে, ফেসবুকে ছবি দেওয়া, ই-মেইলে ফাইল যুক্ত করা, কোনো ভিডিও পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সমস্যা হতে পারে।
আপলোডের গতি তিন-চতুর্থাংশ কমিয়ে দিলে দেশের আউটসোর্সিং শিল্পের সঙ্গে জড়িত মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সারদের ওপর এর প্রভাব পড়বে সরাসরি। এ ব্যাপারে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়েবল্যাবের প্রধান নির্বাহী এনায়েত হোসেন বলেন, ‘যাঁরা গ্রাফিক ডিজাইন, ত্রিমাত্রিক মডেলিংসহ ফাইল পাঠানোর কাজ করেন, তাঁরা এ সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ, দেশে বসে বিদেশের ক্রেতার কাছে তাঁদের বড় বড় ফাইল পাঠাতে হয়।


যে কারণে ব্যান্ডউইডথ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, সে ব্যাপারে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আপলোড ব্যান্ডউইডথ নিয়ন্ত্রণ করে ভিওআইপির অবৈধ ব্যবহার রোধ করা সম্ভব নয়। ওটা বন্ধ করতে হলে প্রযুক্তির অনেক গভীরে কাজ করতে হবে। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.