আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এলোচিন্তা ১: আবদুস সালাম, সারাবিশ্বে সমাদৃত, নিজগৃহে নিপীড়িত জ্ঞান-তাপস

জাদুনগরের কড়চা
১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের সংসদ আহমেদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম হিসাবে সরকারীভাবে ঘোষণা করে। রীতিমত আইনে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয় এটা। এর প্রতিবাদে পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ আবদুস সালাম চলে যান স্বেচ্ছা নির্বাসনে। মুশকিল হয় যখন ১৯৭৯ সালে আবদুস সালাম নোবেল পুরস্কার পেয়ে বসেন। ধর্মান্ধ জেনারেল জিয়া তখন ক্ষমতায়, সংবিধান পালটে আহমেদীয়াদের উপরে খড়গহস্তে চালাচ্ছেন নিপীড়ন, সেই জেনারেল জিয়াকেই টিভিতে কাষ্ঠ হাসি দিয়ে আবদুস সালামের পাশে দাঁড়াতে হয়।

কাটমোল্লাদের খুশি করতে অবশ্য জিয়া কাঁচি নিয়ে নেমে পড়েন, যেখানেই আবদুস সালাম ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত কোনো শব্দ উচ্চারণ করেন তাঁর ভাষণে, আল-কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দেন, কেটে দেয়া হয় সেই অংশ। (ছবি, CERN-এ সালামের নামে রাখা হয়েছে রাস্তার নাম) প্রচন্ড প্রতিভাবান আবদুস সালাম ম্যাট্রিক পাস করেন মাত্র ১৪ বছর বয়সে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নম্বর পান তিনি। ইতালির ত্রিয়েস্তে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার গবেষণাকেন্দ্র। শেলডন গ্লাসো আর স্টিভেন উইনবার্গের সাথে ১৯৭৯ সালে পদার্থে নোবেল পান সালাম, মৌলিক কণিকার দুর্বল নিউক্লীয় বল ও তড়িৎচুম্বকীয় বলকে একীকরণের তত্ত্ব ও দুর্বল তড়িৎ প্রবাহের উপরে তাঁদের কাজের জন্য।

নোবেল পুরস্কারের ঘোষণায় বলা হয়, "... for their contributions to the theory of the unified weak and electromagnetic interaction between elementary particles, including inter alla the prediction of the weak neutral current." নোবেল পেয়েও কেবল ধর্মের কারণে আবদুস সালাম ছিলেন পাকিস্তানে উপেক্ষিত। সারা বিশ্বের কাছে সম্মাননা পেলেও লাহোরে তাঁর নিজের বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান দেয়নি কোনো। দায়সারা গোছের একটা ডাকটিকিট পাকিস্তান সরকার প্রকাশ করেছে বটে, কিন্তু মৃত্যুর পরেও ছাড়েনি তাঁকে। ১৯৯৬ সালে অক্সফোর্ডে মারা যান সালাম। কবর হয় রাবওয়া শহরে।

পাকিস্তান সরকারের আক্রোশের শিকার এই শহরের নাম সরকারী খাতায় পালটে চেনাব নগর করে দেয়া হয়েছে ততোদিনে, কারণ একটাই, এখানে আহমেদীয়া সম্প্রদায়ের বাস। সালামের কবরের এপিটাফে লেখা ছিলো, "FIRST MUSLIM NOBEL LAUREATE"। সালামের মৃত্যুর দুই বছর পরে এই এপিটাফটিও রেহাই পায়নি। স্থানীয় এক ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে মুছে ফেলা হয় "MUSLIM" শব্দটি, এপিটাফের শূন্যস্থানে এখন কেবলই লেখা রয়েছে, "FIRST __ NOBEL LAUREATE" (এখানে ক্লিক করে ছবিটি দেখে নিন) ধর্মান্ধতার আক্রোশ এখনো রেহাই দেয়নি প্রফেসর সালামকে, মৃত্যুর এতো পরেও। ২০০৬ সালে সালামের মৃত্যুর ১০ম বার্ষিকীতে পাকিস্তানের ডেইলি টাইমসে তাই দুঃখ করে লেখা হয়, Pakistan needs to feel guilty about what it has done to the greatest scientist it ever produced in comparison to the lionisation of Dr AQ Khan who has brought ignominy and the label of ‘rogue state’ to Pakistan by selling the country’s nuclear technology for personal gain. Can we redeem ourselves by doing something in Dr Salam’s memory on this 10th anniversary of his passing that would please his soul and cleanse ours? এতো বঞ্চনার পরেও সালাম ছিলেন দেশপ্রেমিক, দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলেও নোবেল পুরস্কারের অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তাঁর এই সম্মানকে তাঁর দেশের সম্মান বলে তুলে ধরেছেন।

তবে সালামের চোখে পদার্থবিজ্ঞান ছিলো সার্বজনীন, সারা বিশ্বের সব দেশের জ্ঞানপিপাসু বিজ্ঞানীদের পরিশ্রমের ফল, সালামের ভাষায়, "The creation of Physics is the shared heritage of all mankind. East and West, North and South have equally participated in it." Nobel prize Banquet speech (ছবি - উইকিপিডিয়া)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।