আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বোধের মৃত্যূ...............।

ভোর হোক তোমারও জানালায়,ভোর হোক ধ্বংসস্তুপে। চাপা পড়া শহরে,শহীদ স্বরণীর পীচঢালা পথে। রোদ্র আসুক আশাবাদী অহ্মর হয়ে,বেঁচে থাকার উৎসাহে তোমার রাইফেল বিনীত হোক মানুষের অনন্তকালের ইতিহাসের পায়ে।

উৎসর্গঃ মহান সব নেতা-নেত্রীদের । কোলে নিয়ে যাদের চুমু দিতে ইচ্ছে করে ।

আমার ঘরে গত দুইদিন হলো একটা পাথর এনে রেখেছি । রাস্তার ধারে খুব অবহেলায় পড়ে থাকা অতি সাধারণ একটি পাথর । উচ্চতা আর ঠিক কতটুকু প্রসারিত তার ধারণা খুব আমূল পরিবর্তন না করেও বলে দেয়া যায় উচ্চতা দুই ফুট আর চওড়া একফুট । ধূসর , চাকচিক্যহীন । ওজন তাই বলে কম নয় ।

রেলস্টেশন থেকে ঘামতে ঘামতে ঘরে বয়ে এনেছি আমার কাছে মহা মূল্যবান মনে হওয়া এই নির্বিষ পাথরটি । নাহ্, নীলা , রক্ত প্রবাল,গোমেট, পান্না, রেড স্টোন,টরমালিন,রুবী কিছুই নয় । স্রেফ ধূসর ,অস্পষ্ট একটি পাথর । যার আদতে কোন নাম ছিলো না । বলবার মত কোন ঠিকানা ছিলো না ।

যার কোন ঘর ছিলো না, বাড়ী ছিলো না ,যার কোন পরিচয় ছিলো না । আমি এই পাথরের নাম দিয়েছি “ব-দ্বীপ” । ব-দ্বীপের সাথে আমি কথা বলি সারাক্ষণ । কিন্তু ব-দ্বীপ আমার সাথে বলে না । বলবেই বা কি করে ? ব-দ্বীপ তো একটি পাথর ।

বোবা ও কালা একটি পাথর । তারপরেও আমি কল্পনা করে নেই আমার এই পাথরটি আমার কথা শুনতে পায়, আমার কথা বুঝতে পারে, আমার বিষন্নতার প্রতিটি নিঃশ্বাস তার বোধগম্য হয়ে উঠে । এই পাথরটির সাথে কথা বলতে বলতে এক সময় আমার মনে হতে লাগলো, পাথরটি আর পাথর নেই । কেমন যেন জ্বলজ্যান্ত একটি দেশ হয়ে গেছে । একটি ভরা যৌবনময়ী একটি দেশ ।

যার নদী আছে, খাল আছে, ক্ষেত আছে, লক্ষ-কোটি পরিশ্রান্ত সাধারণ মানুষ আছে , দুঃখ আছে, কষ্ট আছে । আমি অসত্য জেনেও এসব কল্পনা করি , কল্পনার দেশটির কোন সীমা আর পরিসীমা নেই, এই নির্ভরতা বুকে আছে বলেই, আরো সাহস পাই । ওহ্ ভালো কথা । আপনাদের তো বলাই হয়নি আমার পরিচয় । আমার পরিচয় দেবার মত তেমন কিছুই নেই ।

আমি কোন নেতা নই, নেতার পূত্র নই, আমি শেখ নই,আমি রহমান নই । আমি মূলত কেউ নই । বাবা একটা নাম রেখেছিলেন । সে নামেই আমাকে সবাই জানে । আমার নামটিও খুব আহামরি কিছু নয় ।

আমার পিতৃপ্রদত্ত নামটি হলো নির্বোধ । নির্বোধ নামেই আমাকে সবাই চেনে । সুতরাং আপনারা খুব একটা অবাক হবেন না । নির্বোধরা পাথর কুড়িয়ে আনবে, তাকে মুছবে,তাকে নিয়ে কল্পনা করবে,তার সাথে কথা বলবে, এই তো স্বাভাবিক । যা বলছিলাম ।

আমার ব-দ্বীপ নামের পাথরের সাথে কথা বলতে বলতে আমার এমন অবস্থা হয়েছে যে, এই পাথরের সাথে কথা না বললে আমার ঘুম হয় না , খেতে ইচ্ছে করে না , কারো সাথে মিশতে ইচ্ছে করে না । কিছুই ভাল্লাগে না । সুতরাং আমি নির্বোধ সারাদিন এই পাথরখানা নিয়েই ভাবি । আগেই বলেছি এই পাথরটিকে আমার একটি দেশের মত মনে হওয়া শুরু হয়েছিলো । শুধু ক্ষেত,নদী,মানুষ এগুলো ছাড়াও আমার কল্পনাতে আমি এই পাথরের মধ্যে দেখতে পেলাম অবিকল মানুষের মত কিছু কুৎসিত প্রাণীকে ।

দিনে দিনে এই কুৎসিত প্রাণী কেমন যেন তার লালা ছড়িয়ে,তার কিল বিল করা হাত-পা গুলো নাড়িয়ে কেমন করে যেন আমার পাথরের ভেতর দেশটিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিতে চাইছে । আমি অনেক চেষ্টার পরে জানতে পারলাম এই কদাকার মানুষ রূপী জানোয়ারগুলোর একজনের নাম । ঠিক জানতে পারলাম বলাটা হয়ত ঠিক হয়নি , কদাকার প্রাণী গুলোর একজন এসেই আমাকে তার পরিচয় দিলেন । জানতে পারলাম তার নাম রাজনীতিবিদ । মানুষের এমন একটা কদর্য নাম হয় কিনা জিজ্ঞেশ করতেই, মি.রাজনীতিবিদ আমাকে জবাব দেন, “আমাদের দেখে কি মানুষ মনে হয় ?” আমি অবশ্য এই প্রশ্নে একটু লজ্জা পেয়ে যাই ।

তাইতো !! আমি কি জিজ্ঞেশ করছি ? এই কদাকার জন্তুগুলোকে মানুষ মনে হবে কেন ? আচমকাই সম্বিত ফিরে পাই মি.রাজনীতিবিদের গমগমে কন্ঠস্বরে । তিনি বলতে শুরু করেন । “ আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন , আমরা কি করি ? আমরা মানুষকে কষ্ট দেই, দুঃখ দেই, লুট করি, মিথ্যা বলি,হত্যা করি,আগুন লাগাই, এমন কোন অন্যায় নেই, আমরা করি না । আপনি কোন আন্দাজে আমাকে মানুষ ভাবলেন? কি নাম আপনার ?” আমি মৃদূ স্বরে জবাব দেই, আমার নাম নির্বোধ । এই শুনে মি.রাজনীতিবিদ খ্যা খ্যা করে হাসতে থাকেন ।

“ ও…তাই বলেন । নির্বোধ । হা হা হা হা । আপনি তাহলে যা খুশি ভাবতে পারেন । নির্বোধের আবার ভাবনা-চিন্তা ।

হা হা হা হা ” এই করে মি. রাজনীতিবিদ কেমন যেন একটা নির্মম শব্দ করে হেসে যেতেই থাকেন । কুতসিত মি.রাজনীতিবিদের এই ভয়ানক হাসির দমকেই কিনা জানি না , আমার চিন্তার সুতো কেটে যায় । আমি আবিষ্কার করি আমি সেই দুইফুট বাই একফুট ধূসর পাথরটির সামনে বসে আছি । আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার জন্য প্রতিদিন এই পাথরটির সামনে বসে থাকা আর যতসব উদ্ভট চিন্তা আর ভাবনা করাটা একদম ঠিক হচ্ছে না । একে তো আমার নাম নির্বোধ, তার উপর আবার সব কিছু কেমন করে যেন গুলিয়ে ফেলছি ।

নিজেকে প্রবোধ দেই । নাহ্ । আর এই পাথরের সামনে নয় । নির্বোধ বলেই সম্ভবত নিজেকে সামলাতে পারি না । আবার আসতে হয় পাথরটির সামনে ।

আমার কল্পনার দেশটিকে আমি নিমিষেই ভুলতে পারি না । দিনে দিনে কি করে যেন এই আকারহীন ,বাস্তবহীন, একটি দেশকে আমার সত্যিকারের দেশ বলে মনে হতে লাগলো । আমি এই কল্পনার দেশের মানুষ আর কদর্য রাজনীতিবিদ নামের লোকটাকে নিয়ে সারাটা সময় কি এক উৎকন্ঠা নিয়ে কাটাতে লাগলাম । এভাবে আমি সারাদিনই ব-দ্বীপ নামের বিবর্ণ পাথরটির সামনে কারন কিংবা অকারণে বসে থাকি । কখনো হাঁটু গেড়ে, কখনো হাঁটু ছেড়ে , কখনো ঝিমাই,কখনো জেগে,কখনো বসে,কখনো শুয়ে ।

আমার দুঃখের কথা বলি, বিষন্নতার কথা বলি, ব-দ্বীপের ভেতরকার দেশটিকে নিয়ে আমার স্বপ্নের কথা বলি,আশার কথা বলি । আমার স্বপ্ন দেখা চলতে থাকলেও আমার কল্পনার রাজ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয় না । আমার কল্পনার ব-দ্বীপের মানুষগুলোর কেমন যেন পরাজিত হতে থাকে । একদিন অবশ্য মি.রাজনীতিবিদ এসে তার সেই কদর্য হাসিটুকু শুনিয়ে গেলো । কেমন যেন গা হিম করে দেয়া হাসি ।

মনে হয় এই হাসি পৃথিবীর হাসি নয় । পৃথিবীর বাইরের কোন এক পৃথিবীর কাছ ঘেসে ধেয়ে আসা আতঙ্ক । আমি এই এই কুৎসিত রাজনীতিবিদের পাশেই লক্ষ্য করি, কিছু চেনা মানুষকে । যাদের আমি ভেবেছিলাম নির্যাতিত । শোষিত ।

সেসব কিছু মানুষ এইসব কদর্য প্রাণী গুলোর সাথে যোগ দিয়ে সেই ছম ছমে হাসিটিকে আরো তীব্র করে তোলে । রাতের পর রাত যেন বিদীর্ণ হয়ে যায় সেসব আকুল হাসির শব্দে । পরিশিষ্টঃ একদিন পরাজিত ব-দ্বীপের মানুষগুলো ক্ষুধায় আর বঞ্চনায় পাথরের ওইপাশ থেকে মাথা ঠোকে । মরিয়া হয়ে ওঠে মৃত্যূর জন্য । আর আমি ?? আমি মাথা ঠুকতে থাকি এই পাশ থেকে ।

ক্রোধে,লজ্জায় আর হতাশায় । রক্তে রক্তে আমার ধূসর পাথর খানা লাল হয়ে যেতে থাকে । আমার বোধহীন মগজ গুলো ব-দ্বীপ নামের এক কল্পনার দেশে মিশে যেতে থাকে । থাকেই… কেউ কখনো জানতে পারেনি, একজন নির্বোধের এইভাবে মৃত্যু হয়েছিলো । কোন এক সময় না জানা সময়ে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.