আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ পাবলিক টয়লেট কান্ট্রি

ক্লিন'স অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ড

পাবলিক টয়লেট যারা ব্যবহার করেছে অথবা কোন হাইওয়ে রেস্তোরার টয়লেট- তারা হয়তো উপলব্ধি করবেন ব্যাপারটা। টয়লেটের বাইরে যখন কিউতে দাড়ানো থাকে কেউ, তথন ভিতরের লোকটি কেন তারাতারি বের হচ্ছেনা তাই নিয়ে জোড় সমালোচনা চলে। এমনকি ভিতরে বসে প্রাকৃতিক কর্ম ব্যতিত আরো কী (কু)কর্ম করছে লোকটি তাই নিয়েও চলে খিস্তি খেউর। কিন্তু যখনই বাইরের লোকটি ভিতরে যায়, তখন তারও চরিত্র হয় আগের লোকটির মতো। সেও অতিরিক্ত সময় নেয় তার বাওয়েল ক্লিয়ার করতে।

আর বাইরের লোকগুলো তার ওপরও আগের মতোই চালায় বাক্যবাণ। এভাবে যে-ই যায় লংকায়, সে-ই হয়ে যায় রাবণ। বাংলাদেশের সর্বত্র আজ রাবণের আত্মীয় স্বজনের বসবাস। মেথর থেকে শুরু করে মহাকর্তা- সবাই নিজ নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যা খুশি তাই করতে পারে। নিজের ব্যাপারে ষোল আনার সাথে আরো দুই আনা যোগ করতে তার বিবেকে বাধে না, কিন্তু অন্যকে দুই আনা স্বার্থ দিতে তার ঘোর আপত্তি।

পাবলিক টয়লেটের অসহিঞ্চুতা এখন সর্বত্র। কয়েকটি উদাহরণ দিই| ঈদে বাড়ি যাবো বলে টাকা তুলতে গিয়েছিলাম ব্যাংকে। আমার ব্যাংকটির সেবার মান এতো খারাপ যে, পারতপক্ষে আমি ও পথ মাড়াই না। ভাগ্যিস তাদের এটিএম কার্ড আছে। আমি এটিএম কার্ডের ওপর ভর করে চলছি।

মতিঝিল গিয়ে দেখি এটিএম বুথের সামনে কিউ। আমি লাইনে দাড়ালাম। কিছুক্ষণ পরই আমার পিছনে এসে দাড়ালো একজন মধ্যবয়স্ক লোক। ত্রিশ সেকেন্ডের মাথাতেই সে শুরু করলো ননস্টপ বকবক। ভিতরের লোকটি কী করছে এতোক্ষণ?? এতো দেরী লাগে নাকি টাকা তুলতে?কয় টাকা তোলে? বেশী টাকা তুললে এখানে আসলো কেন, চেক দিয়ে তুলতো-ইত্যাদি, ইত্যাদি।

যাইহোক কিছুক্ষণ পর ভিতরের লোকটি বের হলো। তার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হলো। এই টাকা নিয়ে লোকটি বাসায় পৌছতে পারে কিনা সন্দেহ। পথেই ভস্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। আমি জানি এই লোকটিও যখন বুথে ঢুকবে তখন সে ভুলে যাবে যে আরো কিছু লোক বাইরে লাইনে দাড়িয়ে আছে।

– পাবলিক টয়লেট সিনড্রোম। এবার দ্বিতীয় উদাহরণে আসি। কয়েক মাস হলো আমার বড় ভাই গাড়ি কিনেছেন। আমরা ঈদ উপলক্ষ্যে প্রথম গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। চারভাই এক গাড়িতে।

কিছু একটা হয়ে গেলে আমরা বেহেশত দোযখে যেখানেই যাই-ক্ষতি নেই, কিন্তু আমাদের বাবা-মা একেবারেই অসহায় হয়ে পড়বেন। তাই গাড়িতে প্রথম বাড়ি যাবার উত্তেজনার সাথে উদ্বিগ্নতাও আছে। গাড়িটা নতুন। এখনো কোন স্ক্র্যাচ পড়েনি। স্ক্র্র্যাচ পড়ার আগ পর্যন্ত তাই একে নিয়ে অতিরিক্ত একটা সতর্কতা আছে।

যাই হোক- ভোররাত চারটায় আমরা রওয়ানা দিলাম। উদ্দেশ্য মাওয়া ফেরিঘাট। ফেরিঘাটে পৌছাতে খুব একটা সময় লাগলো না। প্রাইভেট কারের জন্য রাখা জায়গায় আমরা একটা সাড়ির একেবারে শেষ দিকে জায়গা পেলাম। কয়েকটা ফেরি আসলো গেলো, গাড়ির কিউ আগাচ্ছে না।

সকালের আলো ফুটলো। আমাদের পাশের কিউ থেকে আমাদের পরে আসা গাড়ি এগিয়ে গেল। আমাদের ডান দিকের রেন্ট এ কারের মাইক্রোগুলো ট্রাকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো। যাকে পায় তাকেই ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে গেলো বীরদর্পে। আমাদের সাইড মিররগুলোকে কোন রকমে ক্ষমা করলো পাশের গাড়িটা।

আগেই বলেছি গাড়িটা আমাদের নতুন। এই যুদ্ধে আমরা অবতীর্ণ হতে পারিনা। তাহলে গাড়িটা অক্ষত নিয়ে বাড়ি যাবার আশা নেই। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সব গাড়িওয়ালা একসাথে ফেরিতে ওঠার রাস্তায় ঢোকার চেষ্টা করেছে। ফলে কেউই উঠতে পারছে না।

সব গাড়ি আটকা পড়েছে। একটা আারেকটার গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আমার কাছে মনে হলো গুলিস্তানের মোড়ের রিকশাওয়ালাদের সাথে এই গাড়িচালক কেতাদুরস্ত মানুষগুলোর মানসিকতায় কোন তফাত নেই। একটু পর শুনলাম আমাদের গাড়ির পাশ থেকে দাড়িয়ে একলোক চিৎকার করছে- ভাই আমাদেরও যেতে দেন, সবাই লাইন ধরে যান। দেখলাম লোকটার গাড়িটা কিউতে পেছনে আছে।

তাই সে এই কথা বলছে। যুদ্ধে এগিয়ে থাকলে তার এই বোধ থাকতো বলে মনে করছি না। অনেক্ষণ পর আমাদের গাড়িটা যখন এগিয়ে যাবার সুযোগ পেলো তখন সামনে এক ধুন্ধুমার কান্ড চলছে। এবার ফেরার কথা। ঢাকায় ফিরছি।

আজব আরেক অভিজ্ঞতা হলো। আমরা দুপুর বারোটায় রওয়ানা হয়েছি আমাদের বাড়ি থেকে। ফেরিঘাটে যখন পৌছলাম তখন চারদিক বেশ ফাকা। মনে হলো বেশ নির্ঝঞ্জাট ফিরতি যাত্রা হতে যাচ্ছে আমাদের| হঠাৎ এক ভিআইপি গাড়ি আসলো। ফেরিঘা্টের ভিআইপি যাত্রী এক দর্শনীয় বস্তু|যারা দেখেনি তারা এক মর্ম বুঝবেনা| বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী হয়ে যান প্রত্যেক ভিআইপি ফেরিঘাটে।

তাদের বিষয়ে অন্য এক সময়ে লিখবো। যাইহোক এই ভিআইপি গাড়ির পিছু পিছু অনেক পরে আসা দুতিনটি গাড়ি ঢুকে গেলো। তাদের পিছন পিছন পিছনের সব গাড়ি উঠে গেলো ফেরিতে। তাদেরকে কেউই ফিরাতে পারলো না। আমাদের গাড়িটা অনেক আগের সিরিয়ালে থেকেও উঠতে পারলো না।

আরেকটা ফেরির জন্য অপেক্ষা করে আমরা নামাজে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পরই ফেরি আসলো। ফেরি অনেক ফ্রিকোয়েন্টলি যাতায়াত করছে। মানুষ একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে সবাই উঠতে পারতো বেশ ধীরে সুস্থে। কিন্তু সবাই আগে উঠতে গিয়ে সবাই পিছনে পড়ে যাচ্ছে।

বেশ কয়েকটা গাড়ি একে অপরের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো। নেকসট টাইম আমি গাড়ি নিয়ে ফেরিঘাটে আসলে চারদিকে আয়রনম্যানের বর্ম পড়িয়ে আসবো। এবার আকাশপথের ঘটনা বলি। আমি জীবনে দুবার আকাশ পথে ভ্রমণ করেছি। প্রথমবার ভারতে।

হায়দ্রাবাদ থেকে কোলকাতা-ঢাকা। আর দ্বিতীয়বার ঢাকা- নিউইয়র্ক। এমিরেটসের ইকোনোমি ক্লাস। যাবার সময় খুব একটা বুঝতে পারিনি, খেয়ালও করিনি। এতো দুরদেশে যাচ্ছি।

নানা দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন ছিলো মন। আসার সময় খেয়াল করলাম। দুবাই থেকে ঢাকার পথে বিমান উঠার সময় দেখলাম বিমান বালাদের সুন্দর মুখ অত্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন। এমনকি নিতান্ত সাধারণ সৌজন্যবশতও কেউ আমার হাসিমুখের জবাব দিলোনা। আমি অত্যন্ত আহত এবং অবাক হলাম।

কিন্তু ভিতরে ঢুকে বুঝলাম তাদের এই বিষন্ন মুখের অর্থ। শত শত বাঙালি। সবাই মোটামুটি আট নম্বর গেটলক বাসের স্টাইলে ইচ্ছেমতো ঠাসাঠাসি করছে। এর মধ্যে কোন বিমান বালার না আসাই ভালো। তাও মাথার উপরের কেসিংগুলো যখন জিনিসপত্রের ভারে পড়ে যাচ্ছিলো তখন কেউ কেউ সেগুলো সামলানোর জন্য আসতে বাধ্য হলো।

বিমানে উঠার পর তারা একের একের পর বিয়ারের অর্ডার করে যাচ্ছিলো। আর বিমান জিয়া বিমান বন্দরের মাটি ছুতে দেরী নাই, বেশীরভাগ লোক দাড়িয়ে তাদের বাক্স পেটরার হিসেব নিতে যুদ্ধে নেমে গেলো। বিমানে ভ্রমনের জন্য পাইলটের ধন্যবাদটুকু না নিয়েই সবাই বিমান থেকে নামার জন্য রেডি। অথচ, তখনও বিমান ঠিক মতো থামেই নি। লোকগুলো যদি ধৈর্য ধরে যদি পাচটা মিনিট অপেক্ষা করতো তাহলে তাদেরকে নিয়ে বিমানটি আবার আকাশে উড়ে যেতো এ কথা বিশ্বাস করা যায়না।

কারণ তাতে এমিরেটস এয়ারলাইনের কোন লাভ আছে বলে মনে করিনা। কিন্তু তারপরও এ যেনো আমাদের আজন্ম অভ্যাস। কোন পরিবর্তন নেই এ মানসিকতার। পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে প্লেন- সব জায়গায় একই অসহিঞ্চুতা। সারা দেশ এক বিকট পাবলিক টয়লেট সিন্ড্রমে আক্রান্ত!! ক্লিন সন্ধ্যা ৫.১৫ পদ্মার বুক


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.