আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিলেটে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের গোলাগুলি

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি গুলিবর্ষণ, সংঘর্ষে আজ রোববার রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী টিলাগড় এলাকা। কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান করা নিয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান ও বরখাস্ত হওয়া সাবেক সভাপতির পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ বন্দুক, রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, গোলাগুলি ও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ হয়। এতে সাংবাদিক ও ছাত্রলীগের পাঁচজন কর্মী আহত হয়েছেন।

প্রকাশ্যে অস্ত্র বহনের ছবি তোলার সময় প্রথম আলোর আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদসহ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদক ও চিত্রগ্রাহককে ধাওয়া দেওয়া হয় ও মারধর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ তাঁর পক্ষের কর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এ সময় কলেজের পার্শ্ববর্তী টিলাগড় পয়েন্টে অবস্থান নেয় জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরণ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন পক্ষ। দুপুর ১২টার দিকে হিরণের পক্ষে একদল কর্মী ‘ধর ধর...’ চিত্কার দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকেন। এ সময় ক্যাম্পাসে থাকা পংকজের পক্ষ তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।

হিরণের পক্ষ থেকে পাল্টা গুলি ছোড়া হয়। এরপর পংকজের পক্ষ ক্যাম্পাস থেকে চলে যায়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হন। এর মধ্যে ছাত্রলীগের কর্মী মিঠু তালুকদার, উজ্জ্বল, তুষারকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উভয় পক্ষকে দোনালা পাঁচটি বন্দুক নিয়ে পাল্টাপাল্টি গুলি করতে দেখা গেছে। একজন শিক্ষার্থী জানান, পুলিশের অবস্থান ছিল প্রধান ফটকের সামনে। এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফটক দিয়ে নিরাপদে বের হয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। প্রকাশ্যে অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী প্রথম আলো ডটকমকে জানান, ক্যাম্পাসে তাঁর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন। গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা গেলেও কারা করেছে, এ বিষয়ে পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ছিলাম। সবকিছু একসঙ্গে করা সম্ভব না। ’
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরণ মাহমুদ বলেন, বরখাস্ত হওয়া ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পংকজ একদল সশস্ত্র বহিরাগতকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকেন। ছাত্রলীগ তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ধাওয়া করে তাঁদের ক্যাম্পাসছাড়া করেছে। ’ পংকজের দাবি, ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়া তাঁর পক্ষের নিরীহ ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলা করার প্রস্তুতি ঠেকাতে গিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে।

বন্দুকসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র তাঁর প্রতিপক্ষরা বহন করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সাংবাদিকদের ওপর হামলা
প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিকেরা জানান, সংঘর্ষ চলাকালে অস্ত্রধারীরা বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির প্রতিবেদক ও চিত্রগ্রাহককে মারধর করে ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করে। সময় টিভির চিত্রগ্রাহক নওশাদ আহমেদের হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নেন ছাত্রলীগের ওই পক্ষের কর্মীরা। ক্যামেরা উদ্ধার করতে গিয়ে সময় টিভির প্রতিবেদক আবদুল আহাদকে মারধর শুরু করলে উপস্থিত কয়েকজন সংবাদকর্মী তাঁকে উদ্ধার করেন।

সাংবাদিকদের প্রতিবাদী অবস্থান
ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বেলা দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদী অবস্থান নেন কর্তব্যরত সাংবাদিকেরা।

সিলেট টেলিভিশন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকরামুল কবিরের নেতৃত্বে শতাধিক সাংবাদিক সেখানে অবস্থান নেন। সাংবাদিকেরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাহপরান থানার পুলিশের ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন। বেলা তিনটায় সেখানে যান সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার এজাজ আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরা হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন সাংবাদিকদের। পুলিশের আশ্বাসের পরে প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।