আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘সামিউলের লাশ’-সে দায়বদ্ধতা ইসলামী আদর্শ বিবর্জিত বর্তমান অবক্ষয়যুক্ত সমাজ আর কত অস্বীকার করতে পারবে?



গতকালের সব পত্রিকায় “মায়ের পরকীয়ার বলি শিশু সামিউর” শীর্ষক মর্মান্তিক, মর্মন্তুদ খবর পত্রস্থ হয়েছে। অথচ ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশু সামিউল আজিম। মাত্র ছয় বছর বয়স তার। মানুষের সম্পর্কের জটিলতা, কলুষতা বোঝার ক্ষমতা তার এখনও হয়নি। মা আর বাবাকে ঘিরেই তার ভালোবাসার দুনিয়া।

অথচ নিয়তির নির্মম পরিহাসে স্নেহময়ী মায়ের পরকীয়া সম্পর্কই তার জন্য কাল হলো। পথের কাঁটা ভেবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হলো তাকে। এ ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর আদাবরে। চারদিন নিখোঁজ থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাসার অদূরে বস্তাবন্দি অবস্থায় সামিউলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যায় জড়িত সন্দেহে তার মা আয়শা হুমায়রাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজের পরকীয়ার কথা স্বীকার করে আয়শা বলেছেন, তার প্রেমিক আরিফই এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারবে। তবে পুলিশের ধারণা, আয়শাও এ ঘটনায় জড়িত। শিশুটির বাবা কেএম আজিমও স্ত্রীকেই সন্দেহ করছেন। তিনি আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর সমকালকে জানান, প্রাথমিক তদন্ত এবং আয়শাকে জিজ্ঞাসাবাদে পরকীয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পরকীয়ার আপত্তিকর কোনো মুহূর্ত দেখে ফেলায় সামিউলকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথবা আয়শা-আরিফ তাদের সম্পর্কের বাধা ভেবেও শিশুটিকে সরিয়ে দিতে পারে। প্রতিদিনের মতোই বিকেলে খেলতে গিয়েছিল সাড়ে পাঁচ বছরের খন্দকার সামিউল আজিম। কিন' সেদিন আর বাসায় ফেরেনি সে। দুই দিন পর তার বস্তাবন্দী মৃতদেহ পাওয়া গেল বাসার কাছে এক খোলা জায়গায়।

শিশুটির শরীর বরফঠাণ্ডা। নাকে-মুখে শুকনো রক্তের ধারা। পুলিশের ধারণা, তাকে হত্যা করে রাখা হয়েছিল ফ্রিজে। পরে খুনি সুযোগ বুঝে লাশ বস্তায় ভরে ফেলে রেখে গেছে। আদাবর থানার অপারেশন কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরিফের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন।

আয়শা বলেন, ১৯ জুন রাতে স্বামী বাসায় ঢোকার সময় আরিফকে তিনি ছাদে পাঠিয়ে দেন। স্বামী ঘুমিয়ে গেলে আরিফকে মোবাইলে ফোন করে ডেকে আনেন। আবার ভোর হওয়ার আগেই আয়শা আরিফকে ছাদে পাঠিয়ে দেন। পরদিন সকালে তাঁর স্বামী আজম বাইরে গেলে আরিফকে আবার ডেকে আনেন তিনি। আয়শা পুলিশকে জানান, ছেলে সামিউল অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি বুঝতে পেরে বাবাকে বলে দিতে চেয়েছিল।

এরপর আরিফের পরামর্শে নিজের সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা নেন তিনি। অপরদিকে জীবিত ‘রোশনীর ক্ষোভের কথা’ গত ১৩ইনভেম্বর/২০০৯ ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় বক্স আইটেমে ছাপা হয়েছে। বর্ণনায় এসেছে, “প্রায় রাতেই রোশনীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। গভীর রাতে মায়ের হাসির ঝঙ্কারে তার মনে কেমন এক ধরনের কাঁপনের সৃষ্টি করে। টেলিফোনে মায়ের দীর্ঘ কথোপকথন শুনতে শুনতে এই বয়সেই বিনিদ্র রজনী কাটে তার।

কেমন এক ধরনের ঘেন্না জন্মে যায় মায়ের উপর। রাত জেগে সে যে কথা শোনে, তা মাকে বুঝতে দেয় না। কি করবে ভেবেও কূল করতে পারে না। ১০-১২ বছর বয়স হলেও সে এটা বোঝে যে, মা নিশ্চয়ই খারাপ কোন কাজ করছে। না হলে সে ঘুমিয়ে পড়ার পর গোপনে এসব করবে কেন?” রোশনীর দুঃখের কথাও সেই সাথে যুক্ত হয়েছে রোশনীর ভাষায়- “আর বাবা তো মাকে অনেক ভালবাসে।

শুধু তার অপছন্দ এমন খোলামেলা পোশাকে, সেজেগুঁজে মায়ের অপর একটি লোকের সঙ্গে বাইরে যাওয়া। গভীর রাত করে বাড়ি ফেরা। এসব একদম ভাল লাগেনা রোশনীর। স্কুল থেকে ফিরে অনেকদিনই ফ্ল্যাটের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে কলিংবেল দিতে দিতে পা ব্যথা হয়ে গেলেও মা সহজে দরজা খোলে না। খুললেও ঘরে ঢুকেই অপরিচিত লোকটিকে বসে থাকতে দেখে তার ভাল লাগে না।

আমেরিকাপ্রবাসী বাবাকেও এসব জানাতে ইচ্ছা করে। কিন' কি থেকে কি হয়, এক অজানা শঙ্কাও কাজ করে তার মনের ভেতর। ” রোশনীর ক্রোধের কথাও একই রিপোর্টে এসেছে- “মা’র কাণ্ড দেখে তাকে তার মেরে ফেলতে ইচ্ছা করে। ” রোশনীর লজ্জার কথাও পত্রস্থ রিপোর্টে স্থান পেয়েছে- “এ রাতে কৌতুহলী হয়ে পা টিপে টিপে রোশনী পাশের ঘরে গিয়ে দরজার আড়ালে আড়ি পাতে। এরপর সে যা শোনে তাতে সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঘরে এসেই বাবাকে ফোন করে।

তানজিদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার মায়ের অবৈধ সম্পর্কের কথা খুলে বলতে গিয়ে তার বড় কান্না পায়। মা’র কাণ্ড বাবাকে খুলেও বলতে পারে না। ছোট হলেও একথা বলতে তার কথা কেবলই জড়িয়ে পড়ে। ” এদিকে পত্রিকায় প্রকাশিত রোশনীর এতসব ক্ষোভ, দুঃখ, লজ্জা আর ক্রোধের বিপরীতে রোশনীর মা- লিমা যা করেছে তা হলো- “এর মধ্যে হঠাৎ পাশের ঘর থেকে তার মা এসে বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়ের হাত থেকে টেলিফোন সেটটি নিয়ে নেয়। কতটুকু শুনেছে বলে স্বামীকে এবার পাল্টা প্রশ্ন করে।

স্বামী কিছু বলার আগে নিজেই বলে দেয়, সবই যখন জেনেছ তাহলে এটুকুও জেনে রাখ, আমি তানজিদকে বিয়ে করেছি। ব্যস, লাইনটি কেটে দিয়ে আর কোনো যোগযোগ রাখে না স্বামীর সঙ্গে। পরদিন প্রবাসী স্বামীর টাকাপয়সা এবং একমাত্র কন্যার জন্য সঞ্চিত ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ অর্ধশত ভরি গহনা নিয়ে কন্যাকে একা ফেলে রেখেই পালিয়ে যান রোশনীর মা। ডাকে স্বামীকে একটি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়ে বিয়ে করে ওই তানজিদকে। ” উল্লেখ্য, আঠারো বছর আগে পারিবারিকভাবেই রোশনীর মা- লিমার সঙ্গে আব্দুল মজিদের বিয়ে হয়।

আজিমপুরে ঢাবি কর্মচারীদের স্টাফ কোয়ার্টারে বাস করত লিমা ও তার পরিবার। বরিশালের ছেলে মজিদের পারিবারিক সচ্ছলতা ছিলো। ঢাকাতে নানারকম পারিবারিক ব্যবসা থাকার পরও সংসাতে অতিরিক্ত স্বাচ্ছন্দের আশায় বিয়ের বছর কয়ে পরেই মজিদ সৌদি আরব চলে যায়। মাঝেমধ্যেই সে দেশে আসত। সৌদি থেকে সাইপ্রাস হয়ে ২০০০ সালে পাড়ি জমায় আমেরিকাতে।

বিয়ের পাঁচ বছর পর তাদের ঘরে কন্যা রোশনীর জন্ম। আমেরিকাতে গ্রীনকার্ড পাবার পর থেকেই স্ত্রী-কন্যাকে আমেরিকায় নিয়ে যেতে চাইলেও লিমা রাজি হতো না। তবে স্বামী দেশে এলেই তাকে নিয়ে ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর এবং ভারতে ঘুরতে যেতেন। স্বামী ফেরে আসতে চাইলে কন্যার ভবিষ্যৎ মনে করিয়ে দিয়ে আরও কয়েকটা বছর কষ্ট করার জন্য বলত স্বামীকে। বেচারা স্বামী ঘূণাক্ষরেও স্ত্রীর সম্পর্কে অন্য কোন চিন্তা করেনি।

এ যাবৎ বিদেশ থেকে ব্যাংকে পাঠানো নগদ ৬৭ লাখ এবং বিভিন্ন ব্যক্তি মারফত পাঠানো আরও ৪০ লাখ টাকা, প্রিয় কন্যার জন্য গড়ে দেয়া ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ অর্ধশত ভরি গহনার সবই সঙ্গে নিয়ে চম্পট দিয়েছে লিমা। কামরাঙ্গীরচর এলাকায় মজিদের নির্মাণাধীন একটিসহ মোটি দুটি বাড়ি থেকেও গত তিন বছরে মাসিক ভাড়া- সবই গেছে লিমার দখলে। আমেরিকার গ্রীনকার্ড এবং কন্যা রোশনী ছাড়া আজ নিঃস্ব আব্দুল মজিদ। সম্পদ ফিরে না ফেলেও সে লিমার জালিয়াতির বিচার চায়। (দৈনিক জনকণ্ঠ : ১৩ই নভেম্বর-২০০৯) মূলত রোশনীর পিতা মজিদের এ বিচার প্রার্থীতা আজকের সমাজের কাছে।

যে সংস্কৃতি-সমাজ আজ লালন করছে তার কাছে। কারণ, সংস্কৃতিবাদীরা যে বল্গাহারা জীবনদর্শন তথা উন্মাতাল আনন্দ, ভোগবাদী জীবন-উদ্দামতার বিস্তার ঘটিয়ে চলছে তার গুটি আজকের হতভাগা রোশনীর মা লিমা। তবে সমাজ আজ শুধু এক চরিত্রহীনা লিমাই তৈরি করছেন না বরং সমাজ আজ যে সংস্কৃতি ধারণ করছে তার গর্ভে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে লাখ লাখ লিমা। বর্তমান সংস্কৃতি যে সমাজকে সমাজচ্যুত করছে তার এক প্রত্যক্ষ উদাহরণ লিমা। নিজের জীবন ত্যাগ করে মেয়ের জীবন রক্ষা করে এরকম উদাহরণেই সমাজের জন্ম হয়েছে।

কিন' আজকের বল্গাহারা সংস্কৃতি সমাজে ওইসব লিমা তৈরি করছে- যারা ক্লান্ত-শ্রান্ত স্কুল ফেরত মেয়েকে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে বাড়ির ভিতরে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকে। (নাউযুবিল্লাহ) আজকের সংস্কৃতি-সমাজে ওইসব মা তৈরি করেছে যারা নিজের মেয়ের মায়াকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ফেলে স্বামীর ধন-সম্পদ নিয়ে পর-পুরুষের হাত ধরে উধাও হচ্ছে। বলাবাহুল্য, যা গত তিন দশক আগেও এদেশে কল্পনা করা যেত না। কিন্তু জামাতের ছোহবতে থেকে বিএনপি সরকার যখন প্রথমবার ডিস-এন্টেনা চালু করলো এবং দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে দেশে অসংখ্য টিভি চ্যানেলের দার খুলে দিলো তার সুবাদে প্রতি মিনিটে হাজারো চ্যানেল থেকে একসাথে প্রদর্শিত পরকীয়ার হাজারো ছবকে অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মেয়ে লিমার মনেও তা প্রভাব ফেললো। সমাজে প্রচলিত লক্ষ লক্ষ পরকীয়ার জোয়ারে সেও গা ভাসালো।

কিন' নিঃস্ব ক্ষুব্ধ তথা মহা হতভাগা হলো- লিমার নিষ্পাপ শিশু রোশনী এবং তাদের সুখের জন্য বিদেশের মাটিতে খেটে খাওয়া তার বাবা আব্দুল মজিদ। আব্দুল মজিদ বিচার চেয়েছে। কিন্তু তার বিচার কী বর্তমান সমাজ দিতে পারবে? সমাজ কী বর্তমানে সে যোগ্যতা বহন করছে? বরং সমাজ আজ যা ধারণা করেছে তা ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকার ওই রিপোর্টে আরো প্রকাশ পেয়েছে- “জানা গেছে, তানজিদের সঙ্গে পোপন মেলামেশার কারণেই হঠাৎ করেই গর্ভবতী হয়ে পড়ে লিমা। প্রথমে সন্তানটি নষ্ট করার চেষ্টা করলেও লিমার শারীরিক সমস্যা থাকায় তা সম্ভব হয়নি। যে কারণে পুত্রটিকে এখন মজিদের বলেই পরিচয় দিচ্ছে।

অথচ স্বামী মজিদের দাবি এটি অবৈধ সন্তান। কারণ, গত এক বছরের বেশি সময় থেকেই সে দেশে ফেরেনি। লিমা এবং তার দ্বিতীয় স্বামী বর্তমানে আজিমপুর এলাকার নিউ পল্টন লাইনের একটি বাড়িতে বসবাস করছে। নতুন বিয়ে করে ফ্ল্যাটে উঠার পর হঠাৎ সন্তান জন্মানোতে বেকায়দায় পড়ে এই দম্পতি। তখন থেকেই সে আগে স্বামী থাকার বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছে স্বীকার করে।

এ নিয়ে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যে সৃষ্টি হয়েছে। ” বলাবাহুল্য, এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও লিমা নিজের মধ্যে এমন সাহস পেয়েছে যে, সে অবলীলাক্রমে অবৈধ সন্তানের কথা স্বীকার করেছে। স্বীকার করতে পেরেছে। কারণ, টিভি চ্যানেলের ছবক ছাড়াও আশে-পাশের অনেক উদাহরণ তার মনে এমন স্বাভাবিকতার মাত্রা এনে দিয়েছে। সেই সাথে দিয়েছে আরেকটি স্বাভাবিক পরিণতির পূর্বাভাষ।

সেটা হলো- লিমা যেমন তানজিদের অবৈধ সন্তান ধারণা করেছে তেমনি এখনই যদি সমাজ সচেতন না হয়, এখনই যদি পঙ্কিলতার প্রসবকারী বর্তমান শিল্প-সংস্কৃতির অবসান না ঘটায় তাহলে অতিশীঘ্রই এমন সময় আসবে- যখন গোটা দেশই বলতে গেলে অবৈধ সন্তান তথা হারামজাদায় ভরে যাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।