আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিজিটাল সিস্টেম, এনালগ পাবলিক

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

০১) বিল পরিশোধ করা আরও সহজ। বিল পে চিহ্নিত দোকানের পাশাপাশি জিপি মোবাইল থেকেও এই বিলটি পরিশোধ করতে পারেন। বিল পে সংক্রান্ত যে কোন প্রয়োজনে কল করুন ১২০০ (জিপি) অথবা ০১৭১৩-২৩৪৫৬৭ (যে কোন নম্বর থেকে) নম্বরে। ০২) গ্রামীণ ফোনে বিল পে সার্ভিস এর মাধ্যমে বিল পরিশোধ সহজ ও ঝামেলামুক্ত। মোবাইল বিল পরিশোধের নিশ্চয়তার এস.এম.এস দেখুন এবং রসিদ বুঝে নিন।

বিল পে সংক্রান্ত যে কোন প্রয়োজনে কল করুন ১২০০ (জিপি) অথবা ০১৭১৩-২৩৪৫৬৭ (যে কোন নম্বর থেকে) নম্বরে। ০৩) প্রতি মাসে আপনার বিলের পরিমাণ ও পরিশোধের শেষ সময় মোবাইল ফোনে বিনা মূল্যে পেতে জিপি মোবাইল হতে টাইপ করুন regdpdccustomer number এবং পাঠিয়ে দিন ১২০০ নাম্বারে। অন্য মোবাইল ব্যবহারকারীগণ কল করুন ০১৭১৩-২৩৪৫৬৭ বিদু্যৎ বিলের সাথে এই লেখাগুলো দেয়া থাকে। এই লেখার ভরসায় চিন্তা করলাম, অনেক তো লাইন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘামে ভিজে ভিজে ব্যাংকে বিল দিলাম। এবার দেশে ডিজিটাল সিস্টেম এসে গেছে।

আর ঘামে ভিজে ভিজে বিল জমা দেয়ার লাইনে দাঁড়াতে হবে না। যথারীতি খোঁজ লাগালাম গ্রামীণ ফোন বিল পে সেন্টার কোনটা। যেখান থেকে মোবাইল রিচার্জ করি সেখানে একদিন সকালে গিয়ে হাজির হলাম। সাথে বিদু্যৎ ও গ্যাস বিল। কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়ে রিচার্জ সেন্টারের মালিক বললেন, তাদের ওখানে বিল পে ব্যবস্থা নাই।

কোথায় বিল পে আছে তিনি জানেন না। আবার খোঁজ লাগালাম। রিক্সা নিয়ে একের পর এক রিচার্জের দোকানে গেলাম। কেউ রাজি হল না। অবশেষে শেখ টেল নামে এক দোকানের সন্ধান দিলেন একজন।

ওখানে নাকি বিল পে করা যায়। আহ, বিরাট শান্তি। জীবনে প্রথমবার ডিজিটাল বিল দেব। শেখ টেল এ গেলাম। উনি বললেন, হ্যা, আমরা বিল নেই।

যাক, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে কথা। দেশের নাম তো আর খালি খালি বদলায় নাই ? উনি আমার বিদু্যৎ ও গ্যাস বিল দেখে বললেন, আপনাকে রশিদ কেটে দিচ্ছি কিন্তু এস.এম.এস কর্নফারমেশন এখন পাবেন না। কারণ কী ? আমি জানতে চাইলাম। উনি জানালেন, এত টাকা সব সময় তাদের মোবাইলে ভরা থাকে না।

কোন বিল এলে তারপর উনি টাকা ভরেন এবং বিল পরিশোধ করেন। আমি কেবল একটা অস্থায়ী দোকানদারের দেয়া রশিদ গ্রহণ করে টাকা দিয়ে এলাম। গ্রামীণ ফোনের স্থায়ী রশিদ পেলাম না। উনি বললেন, আপনি এস.এম.এস পেলে তারপর এসে স্থায়ী রশিদ ও বিলগুলো নিয়ে যাবেন। আমি তাকে টাকা দিয়ে অস্থায়ী রশিদ নিয়ে হাসিমুখে চলে এলাম।

তারপর অপেক্ষা আর অপেক্ষা। এস.এম.এস তো আর আসে না। তিন দিন কেটে গেল। ইতিমধ্যে কত কত খারাপ কথা ভেবে ফেললাম। এই বাটপারের দেশে যে কোন অনিশ্চয়তায় পড়লে প্রথমেই সব আশংকার কথাগুলো মনে ভীড় করে।

অবশেষে ৩দিন অপেক্ষা করার পর গেলাম সেই দোকানে। উনি বললেন, উনারা টাকা ভরতে দেরি করায় ইতিমধ্যে বিল পে করার শেষ সময় চলে চলে গেছে। তাই এই মাসে আর বিল পরিশোধ করা সম্ভব না। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। বললাম, একটা ফোন করে তো আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারতেন।

তাহলে তো আমাকে ৩ দিন অপেক্ষা করতে হত না। যাই হোক, সেই মাসে বিল দেয়া হল না। পরের মাসে এর জের হিসেবে বিদু্যৎ বিল বকেয়াসহ দিতে হল। ২ মাস পর মেজাজ ভালো হয়েছে। চিন্তা করলাম, বয়স যাই হোক, ডিজিটাল হতে দোষ কোথায় ? আবারও বিল নিয়ে ছুটলাম ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিশোধ করার ধান্দায়।

ওই দোকানে গিয়ে জানলাম, উনারা আর বিল পে করেন না। কারণ বিল পে করে সার্ভিস চার্জ বাবদ যা পান তাতে করে পোষায় না। তারচেয়ে বরং রিচার্জ করে ভালো আয়। এরপর রোখ চেপে গেল। অনেক দোকানে গেলাম।

কেউই বিল পে সার্ভিস দেয় না। কেন আপনারা সার্ভিস দেন না ? উনারা বললেন, মাসে একটা দুইটা বিলের জন্য হাজার হাজার টাকা ফোনে ভরে ফেলে রাখা সম্ভব না। মানুষ এই সার্ভিস না নিলে আমাদের কী দোষ ? মোট কথা, মাসে দুই একজন মাত্র বিল পে সেন্টারের মাধ্যমে বিল দেয়। এই দুই একটা বিলের জন্য তো এত টাকা ফোনে ভরে ফেলে রাখা যায় না। যদি অনেক অনেক লোক বিল পে সার্ভিস ব্যবহার করত, তবে এই সার্ভিস দিয়ে দোকানদারদের ভালো আয় হত।

এর মধ্যে পরের মাসের বিল নিয়ে গেলাম ঢাকায়। নানা দোকানে খোঁজ করলাম। কেউ বলতে পারল না কোথায় বিল পে আছে। একজন বলল, পল্টনে গ্রামীণ ফোন সেন্টারে যান। গেলাম।

বিরাট লাইন। এই লাইনেই যদি দাঁড়াই তাহলে আর বিল পে সেন্টারে কেন ? বুদ্ধি করে লাইনে দাঁড়ালাম না। সোজাসুজি কাউন্টারে সামনে গিয়ে চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের এখানে বিদু্যৎ বিল দেয়া যাবে। কাউন্টারে বসা ভদ্রলোক তার কম্পিউটার গুতোতে গুতোতে বললেন, আমাদের লাইনে একটু সমস্যা আছে। আপনি কালকে আসুন।

আর যাওয়ার ইচ্ছা হয় নাই। পরের দিন লাইন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘামে ভিজে ভিজে ব্যাংকে বিল দিলাম। আমাদের দেশের মানুষ এখনও ডিজিটাল হয় নাই। ব্যাংকের এই লাইনে না দাঁড়িয়ে যদি সবাই ডিজিটাল সিস্টেমে বিল দিত, তবে মহল্লায় মহল্লায় বিল পে সেন্টার গড়ে উঠত। আমাদের সময় বাঁচত, আর দোকানদারদেরও দু পয়সা আয় হত।

কেবল মাত্র অভ্যাসের বশে মানুষ এই ডিজিটাল সিস্টেম গ্রহণ করছে না। সবারই সন্দেহ, যদি বিল নিয়া কোন গণ্ডগোল লেগে যায়। দেশ ডিজিটাল হলেও আমরা তো এনালগ পাবলিক।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.