বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বছর খানেক পড়ে ছিল ‘ইন্ট্রাঅপারেটিভ ইমেজিং সিস্টেম’ নামের হূদেরাগ চিকিৎসার আধুনিক একটি যন্ত্র। এখন যন্ত্রটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানেও যন্ত্রটি চালু নেই।
এমন যন্ত্র মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালের চাহিদার ভিত্তিতে কেনে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। তবে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলের তৎকালীন পরিচালক আফজালুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যন্ত্রটি বাক্সবন্দী হয়ে ছিল।
এখানে চালানোর লোক নেই। মিটফোর্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, তারা এই যন্ত্রের কোনো চাহিদা দেয়নি।
কেন্দ্রীয় ঔষধাগার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চাহিদা নেই এমন চিকিৎসাযন্ত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থে অতীতেও কেনা হয়েছে, এখনো কেনা হচ্ছে। এ বছরের ৩০ জুন অর্থবছর শেষ হবে। এই সময়ে প্রচুর চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা হবে।
যন্ত্র কেনা নিশ্চিত করতে দরপত্র মূল্যায়নের তিনটি কমিটিও ভাঙা হয়েছে। প্রথম দফায় তিন কমিটি ভেঙে একটি করা হয়। পরে ২১ এপ্রিল আরেকটি কমিটি করা হয়েছে।
চাহিদা না থাকলেও যন্ত্র ক্রয়: বছর দেড়েক আগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার পাঁচটি ‘ইন্ট্রাঅপারেটিভ ইমেজিং সিস্টেম’ কিনেছিল। এই যন্ত্র দিয়ে শরীরের ভেতরে অস্ত্রোপচার বা কোনো কিছু সংযোজন করার সময় কম্পিউটার মনিটরে দেখা যায়।
দুটি যন্ত্র দেওয়া হয়েছিল জাতীয় হূদেরাগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল, সিলেট মেডিকেল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেওয়া হয়েছিল একটি করে।
কেন্দ্রীয় ঔষধাগার সূত্রে জানা গেছে, দুই মাস আগে বগুড়ার যন্ত্রটি মিটফোর্ডে, সিলেটেরটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং কুমিল্লারটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক (ভান্ডার ও সরবরাহ) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের (হাসপাতাল-সেবা) চাহিদা অনুযায়ী এসব যন্ত্র কেনা হয়। দাম পড়েছিল ২০ কোটি টাকা।
বায়োজিন ফার্মা যন্ত্রগুলো সরবরাহ করেছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল-সেবা) আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই চাহিদা দেওয়া হয়েছিল।
মোমের চুলা: মোম গলানো ২২টি চুলা কিনতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চুক্তি অনুযায়ী একটি চুলার দাম সাত হাজার ৯০০ ইউরো বা প্রায় আট লাখ ২২ হাজার টাকা। মূলত রোগ নির্ণয় বিভাগে এই চুলার ব্যবহার বেশি।
ঢাকা মেডিকেলসহ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব চুলার কোনো চাহিদাপত্র দেওয়া হয়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, হাতে বানানো চুলায় কাজ চলে যায়। খরচ পড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ভারতীয় চুলার দাম ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আর ইউরোপের সবচেয়ে ভালো চুলার দাম প্রায় লাখ টাকা।
গত বছর ১৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ঔষধাগার চুলা সংগ্রহের ঋণপত্র (এলসি) খোলার টাকা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রি-সার্ভিস এডুকেশনের লাইন ডিরেক্টরকে চিঠি দেয়। এক লাখ ৭৩ হাজার ইউরোতে এমএস ডায়ামেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই চুলা সরবরাহ করবে।
এ বিষয়ে সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রি-সার্ভিস এডুকেশনের লাইন ডিরেক্টরের চাহিদার ভিত্তিতে এই চুলা কেনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আবদুল হান্নান বলেন, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে আগের লাইন ডিরেক্টর এসব চুলা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বছর দুই আগে ১০টি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কিনেছিল।
একটিও সচল নয়। এখন আরও বেশি দাম দিয়ে নতুন ১০টি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কেনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
কমিটি ভাঙাভাঙি: কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের কেনাকাটার জন্য দরপত্র মূল্যায়নে তিনটি কমিটি ছিল। একটির প্রধান ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ। অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও সাইফুল ইসলাম অন্য দুই কমিটির প্রধান ছিলেন।
এগুলো ভেঙে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি কমিটি করে মন্ত্রণালয়। এই কমিটির প্রধান করা হয় খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহকে। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সিফায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গত ২১ এপ্রিল নতুন করে আকেটি কমিটি করা হয়। এই কমিটির প্রধান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) সুবাস কুমার সাহা।
কমিটি ভাঙাভাঙির ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তিনটি কমিটির পৃথক সভায় সময় অনেক বেশি নষ্ট হয়। কাজের সুবিধার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। বর্তমানে আরেকটি কমিটির বিষয়ে গতকাল রোববার তিনি বলেন, কাজে বিলম্ব হওয়ায় নতুন কমিটি করা হয়েছে।
একজন তিন পদে: কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে আখতারুজ্জামান একা তিনটি পদে রয়েছেন। তিনি জাতীয় হূদেরাগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা।
ওই হাসপাতাল থেকেই বেতন-ভাতা তোলেন। অভিযোগ আছে, ব্যবসায়ীদের একটি অংশের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তাঁকে তিন পদে রাখা হয়েছে। দুজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, আখতারুজ্জামানের কারণে তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না।
এক বছর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৭তম বিসিএসের এই কর্মকর্তাকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে ডেস্ক কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাঁকে ক্রয় কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিয়েছে।
আর স্থানীয় নির্দেশে তিনি হিসাবরক্ষণের কাজও করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এ রকম তো হওয়ার কথা নয়। স্বাস্থ্য বিভাগে দায়িত্ব পালনের লোকের অভাব নেই। তিনি বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবেন।
আখতারুজ্জামান জানান, তাঁকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে দায়িত্ব দিয়েছে, তিনি তা-ই শুধু পালন করছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।