শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি কী করবে তা নিয়ে দলের ভিতরে নানামুখী আলোচনা চলছে। তবে দলের একটি অংশ যে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যেতে চায় তা এখন স্পষ্ট। এ নিয়ে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তাছাড়া জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইস্যুতেও দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির অভ্যন্তরে বিভক্তি রয়েছে। দলের এক গ্রুপ জামায়াতমুক্ত বিএনপি দেখতে চায়, আবার অন্য গ্রুপ জামায়াতকে জোটভুক্ত রাখার পক্ষে।
সর্বশেষ গত ১ আগস্ট আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করলেও তিনি এ কথা স্পষ্ট করেই বলেছেনÑকোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা বিএনপি সমর্থন করে না। রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত বলে বিএনপি মনে করে। তবে বিএনপির রাজনৈতিক বক্তব্য যাই হোক না কেন আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ হওয়ায় বিএনপিতে চলছে বড় ধরনের অস্থিরতা। বিএনপির নীতিনির্ধাকরা মনে করছেন ১৮ দলীয় জোটে বিএনপির পরই জামায়াতের অবস্থান।
সাংগঠনিক শক্তির দিক দিয়ে কখনো কখনো তা বিএনপিকেও ছাপিয়ে যায়। ১৮ দলের বাকি ১৬টি দলের অবস্থা খুবই করুন। ব্যক্তি নির্ভর এসব দলের কোনো জনসমর্থনও নেই। এমতাবস্থায় জামায়াত নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হলে সে ক্ষেত্রে ১৮ দলীয় জোটের ভবিষ্যত কোন পথে যাবে। আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল বিএনপি।
কারণ আন্দোলন করে মহাজোটের সঙ্গে কুলিয়ে ওঠার মত শক্তি ও সাহস যে বিএনপির নেই সে কথা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও ভালভাবেই জানেন। ফলে এখন জামায়াত নির্বাচন না করতে পারলে জামায়াত কি বিএনপিকে ভোট দেবে নাকি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকারের দেয়া ফাঁদে পা দিবে। কিংবা ইসির নিবন্ধন পাওয়ার শর্তে আওয়ামী লীগের অধীনেই নির্বাচনে যাবে জামায়াত। নাকি হেফাজতের সঙ্গে একিভূত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রািতশোধ নিবে। ওদিকে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় মুসলিম বিশ্বের হস্তক্ষেপ চেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ওদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে এ ধরনের অস্থিরতার বিষয়টি জানা গেছে। তারা স্বীকারও করেছেন, দলের গুটিকয়েক নেতা আছেন, যারা খালেদা জিয়াকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে নেয়ার চেষ্টা করছেন। কূটনীতিকপাড়ায়ও দলটির নেতাদের সঙ্গে এমন আলোচনা হচ্ছে, যা ডালপালা হয়ে বিএনপির রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করছে। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। কারণ, সরকারের জনপ্রিয়তা এমন জায়গায় নেমেছে যে কারচুপি করেও পরাজয় ঠেকানো সম্ভব হবে না।
তা ছাড়া বর্তমানে মিডিয়া এতোটা শক্তিশালী যে, ব্যাপকভাবে কারচুপিও করা সম্ভব নয়। যদিও এমন যুক্তি মানছেন না দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী। তারা মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে আবারও ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ। এ জন্য আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। এটি তাদের মাস্টার প্ল্যান।
আর কয়েকটি নির্বাচনে মিডিয়া যেভাবে দৃষ্টি রাখতে পারে, সারাদেশে ৩০০ আসনে নির্বাচন হলে মিডিয়ার পক্ষে ওইভাবে কাজ করা সম্ভব হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ ধরনের খবর তাদের কাছে নেই। এবার এ রকম কিছু হলে নেতাকর্মীরা প্রতিহত করবে। ’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে ভবিষ্যতে দল লাভবান হবে, না-কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটি বলার সময় এখনও আসেনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় ‘প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘লো মঁদ’ পত্রিকা থেকে তথ্য নিয়ে।
’ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার হেফাজতের শক্তিকে উপেক্ষা করতে পারছে না। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে হেফাজত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যদিও এই দলটি এখনও সরাসরি রাজনীতিতে আসতে রাজি নয়। কারণ দলটির বিবেচনায় রাজনীতি এখনও পুরোপুরি ‘বিশুদ্ধ’ নয়। প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল অস্বস্তিকর অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে।
কারণ দেশটির সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আওয়ামী লীগকে বিরোধী দল ও হেফাজতের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কারণ বিরোধী দল এটা জোর দিয়ে দাবি করছে, নির্বাচনে সম্ভাব্য হার এড়াতে সরকারি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের অধীনে বাংলাদেশের মৌলবাদী দলগুলো একত্রিত হচ্ছে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৫ মে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের পর দলটিকে নিয়ে রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। কারণ ওই মহাসমাবেশে দলটি তাদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফীর নির্দেশে ১৩ দফা দাবি আদায়ে ৫ মে ঢাকার রাস্তায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হয়। ১৩ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, জনসমক্ষে ছেলেমেয়েদের অবাধে বিচরণ নিষিদ্ধকরণ, ভাস্কর্য অপসারণ এবং সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা এ কথাটি পুনর্স্থাপন। পরে হেফাজতের ওই আন্দোলন সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অর্ধশত মানুষ নিহত এবং বহুজন গ্রেফতার হন। সেই থেকে হেফাজতে ইসলাম গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছে।
সরকার হেফাজতের ‘শক্তি দেখানো’ সেই আন্দোলন নিয়ে এখনও ভীত। হেফাজতে ইসলামের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনা সরকারের নারীর সমান অধিকার দেয়ার প্রতিবাদে ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়। এরপর চলতি বছর শাহবাগে ধর্মনিরপেক্ষ হাজার হাজার লোকের আন্দোলন শুরু হলে হেফাজত নতুন করে জেগে ওঠে। দলটির অধিকাংশ কর্মী মাদ্রাসার ছাত্র। এরা গ্রামের মধ্যবিত্ত সমাজ থেকে উঠে আসা দরিদ্র-অর্ধশিক্ষিত।
কিন্তু শাহবাগের ওই আন্দোলনকে মৌলবাদী দলগুলো ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে থাকে। ব্লগারদের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। ফরহাদ মজহারের উদ্ধৃতি টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হেফাজতের আন্দোলনে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নেই। কিন্তু দলটিকে একঘরে করে রাখা হলে এটি আরও মৌলবাদী হয়ে উঠতে পারে। ’ সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ মৌলবাদী দলগুলোকে এ সুযোগে নিজেদের দলে টানছে হেফাজত।
হেফাজতের ছত্রছায়ায় আসা এসব দল অভূতপূর্ব একতা দেখাচ্ছে বলেও গার্ডিয়ান দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রিয়াজ গার্ডিয়ানকে জানান, গত ৩০ বছরে ধর্মকে অবলম্বনকারী মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রাজনীতি, সমাজ প্রায় সব ক্ষেত্রকেই প্রভাবিত করেছে। আর যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে নারীদের অধিকার ক্ষুণœ হবে, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। সরকার সংখ্যালঘু মানুষগুলোকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মত দেন আলী রিয়াজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার এক শিক্ষাবিদ গার্ডিয়ানকে জানান, আওয়ামী লীগ হারতে যাচ্ছে এই ভেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মৌলবাদীদের সমর্থন ছাড়া আপনি জিততে পারেন, কিন্তু তাদের বিপক্ষে গিয়ে জয় পাবেন না। তাই আগামী নির্বাচনে শফীর দলের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ।
‘হস্তক্ষেপ’ চায় পাকিস্তান জামায়াত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল এবং দলটির নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশে
হস্তক্ষেপ করার জন্য মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান জামায়াত। পাকিস্তান জামায়াতের আমির সৈয়দ মুনাওয়ার হাসান ১ আগস্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আক্রান্ত হচ্ছে। নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে এবং তাদেরকে যাবজ্জীবন সাজা, এমনকি মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হচ্ছে।
’ সৈয়দ মুনাওয়ারকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানের দি নিউজ লিখেছে, আদালতের এই রায়কে ‘অসাংবিধানিক, আংশিক ও পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ভারতপন্থী হাসিনা ওয়াজেদ সরকারের’ প্রতিহিংসা রোধে বিশ্বের সব দেশ, গণতান্ত্রিক শক্তি ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহকে ভূমিকা রাখার আবেদন জানিয়েছেন পাকিস্তান জামায়াতের আমির। এক রিট আবেদনের রায়ে বাংলাদেশ হাইকোর্ট রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। এই রায়ের ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, কেননা আইন অনুযায়ী, কেবল নিবন্ধিত দলই বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। মুনওয়ার তার বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘এতোদিন তথাকথিত ট্রাইব্যুনাল এ কাজ করলেও এখন একই কাজে নেমেছে হাইকোর্ট। নির্বাচন থেকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে দূরে রাখতেই জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
’ উপমহাদেশের বিতর্কিত ধর্মীয় রাজনীতিক আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে দলটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। জামায়াতের তখনকার পূর্ব পাকিস্তান শাখার আমির গোলাম আযমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সে সময় বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটানো হয় বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ঘোষিত রায়গুলোতে উঠে এসেছে। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের দায়িত্ব নেন গোলাম আযম। একাত্তরে যুদ্ধাপাধের দায়ে চলতি মাসেই এক রায়ে তাকে ৯০ বছরের কারাদ- দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল।
ট্রাইব্যুনালের এই বিচারকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলায় পাকিস্তান সরকারেরও সমালোচনা করেছেন জামায়াত আমির মুনাওয়ার। তার ভাষায়, পাকিস্তান সরকারের এই অবস্থান ‘জঘন্য অন্যায়’ ও ‘পুরোপুরি অনাকাক্সিক্ষত’। তিনি দাবি করেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জামায়াতের পক্ষে দাঁড়ালেও মূলত ভারতের আদেশে দলটিকে জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখতে এবং ধ্বংস করতে চায় শেখ হাসিনা সরকার। ’ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো- তারা বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছেন এবং একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন’ বানচাল করতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেছেন। পাকিস্তানকে ‘ঐক্যবদ্ধ রাখার সংগ্রামের জন্যই’ বাংলাদেশে জামায়াত নেতাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
পাকিস্তানের দুনিয়ানিউজ ডট টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাবেক জামায়াত আমির গোলম আযম ও তার সহযোগীদের ওপর হাসিনা সরকারের আক্রমণের বিরুদ্ধে শুধু মৌখিক প্রতিবাদ নয়, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবল থেকে তাদের মুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববাসী, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তান জামায়াতের আমির। মুনাওয়ার দাবি করেছেন, গত চার দশক ধরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে, যার কারণে দল ভাল জনসমর্থনও পেয়েছে। ‘জামায়াত বাংলাদেশের ক্ষমতায়ও ছিল। তাই দলটিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে এবং এর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে দেয়া ঢাকা হাইকোর্টের রায় গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারকে হত্যার সামিল। ’
জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
রায় ঘোষণার আধা ঘণ্টার মধ্যেই জামায়াত এর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছে। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পাঁচটি মামলায় জামায়াতকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে রায় দিয়েছিলেন। গত ১ আগস্ট বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন। তবে কোন বিচারপতি ভিন্ন মত দিয়েছেন, তা বলা হয়নি। রায়ে আদালত বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে রুল অ্যাবসলিউট (রুল মঞ্জুর) করা হলো।
নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে যে নিবন্ধন দিয়েছে, তা অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত। এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। রায় ঘোষণার পর জামায়াতের পক্ষে আইনজীবীর আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল করার বিষয়ে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে দলটির পক্ষে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি আবেদন করা হয়। রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের কৌঁসুলি মহসীন রশিদ বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে আদালত রুল মঞ্জুর করেছেন।
নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার কারণগুলো পরে পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এ রায়ের সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। ফলে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে দলীয় প্রতীক নিয়ে জামায়াত আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জামায়াতের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘আমরা আপিল করেছি। ফলে বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
আমি মনে করি, আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারব। আর আপিল বিভাগ রায় স্থগিত করলে তো পারবই। ’ ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন ব্যক্তি। প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয় গত ১২ জুন।
ওদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা বিএনপি সমর্থন করে না। রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত বলে বিএনপি মনে করে। ’ গত ২ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘রায়ের ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটি একটি বিচারিক ব্যাপার।
এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। ’ সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘সরকার তাদের ব্যর্থতা, পরাজয় বুঝতে পেরে একদলীয় নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। এখন তারা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার কাজ শুরু করেছে। ’ এটি তাদের দলীয় প্রতিক্রিয়া হলেও দলের ভেতর চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। জামায়াত নিষিদ্ধ হলে তাতে বিএনপির লাভ না লোকসান তা নিয়ে চলছে বিএনপিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
বিএনপির একটি বড় অংশ চাচ্ছে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করুক। তাহলে জামায়াতের এসব লোক বিএনপিতে যোগ দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান করবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তাতে জামায়াতকে ক্ষমতার ভাগও দিতে হলো না, অন্যদিকে মহাজোটেরও পতন হল। অন্য একটি গ্র“প মনে করে জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও বিএনপির কোনো লাভ নেই।
কারণ অতীতে জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও অন্য নামে পুনরায় রাজনীতির মাঠে ছিল এবারও হয়তো সেদিকেই যাবে জামায়াত। কাজেই এখানে জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও বিএনপির খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে চিন্তার বিষয় হলো জামায়াত নিষিদ্ধ হলে জামায়াতের অসংখ্য ক্যাডার বিএনপি বা এর অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে ঢুকে জঙ্গীবাদি আচরণ শুরু করলে দেশ-বিদেশে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনার সৃষ্টি হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।