আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উড়ালসেতুতে দূরত্ব কমেছে, দুর্ভোগ কমেনি মিরপুরবাসীর

উড়ালসেতু চালু হওয়ায় বিমানবন্দরের সঙ্গে দূরত্ব কমে গেলেও দুর্ভোগ বেড়েছে রাজধানীর মিরপুরবাসীর। মাত্র ২০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই উড়ালসেতু পেরিয়ে যানবাহনগুলো ধমকে যায় কালসী রোড়ের প্রবেশমুখে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কালসী রোড সংস্কার না হওয়া, পুলিশি সহায়তায় অবৈধ দখলদার ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যই তাঁদের এই ভোগান্তির কারণ। এ বছর চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় আগামী বছর সড়কটি সংস্কারের আশা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
গত ২৭ মার্চ প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭৯৩ মিটার দীর্ঘ ও ১৫ দশমিক ৫২ মিটার প্রস্থ মিরপুর-বিমানবন্দর উড়ালসেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

উড়ালসেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছিল সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক অরগানাইজেশনের অধীনে ১৬ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন।

ভাঙাচোরা আর দখলদারি
উড়ালসেতুটির কারণে মহাখালীর ব্যস্ততম সড়ক এড়িয়ে অল্প সময়ে রাজধানীর উত্তরা ও বিমানবন্দরমুখী হতে পারছেন মিরপুরবাসী। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সোয়া এক কিলোমিটার দীর্ঘ কালসী রোড। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এর প্রস্থ প্রায় ১০০ ফুট। আকারে বড় হলেও দখলদারেরা প্রায় ৭০ ফুট আয়ত্তে নিয়ে পাল্টে দিয়েছে সড়কটির আকার।

কালসী রোডের পূবরী সিনেমা হল প্রান্তে রয়েছে ফলের দোকান, বাসস্ট্যান্ড, টেম্পোস্ট্যান্ড, রিকশাস্ট্যান্ড। মাঝপথের দখলে পুরোনো গৃহনির্মাণসামগ্রী, গাড়ি মেরামতের কারখানা, ফলের দোকান ইত্যাদি। আর শেষ প্রান্তে কবরস্থান অংশবিশেষ, কালসী কুদরত এলাহী জামে মসজিদের অর্ধেক এবং সাংবাদিক আবাসিক কলোনির বিপরীতে যুবলীগের কার্যালয়ের পুরোটাই চলে এসেছে মূল সড়কে। তাই কালসী রোড়ের পিচঢালা পথের প্রশস্ততা মাত্র ২০ ফুট। তাও আবার অনেক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ।

এমনকি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানো হলেও বিদ্যুতের খুঁটিগুলো আগের মতো মাঝখানে রয়ে গেছে। সে কারণেই আগের তুলনায় যান চলাচল বেড়ে যাওয়ায় সকাল-সন্ধ্যায় এ সড়কটি পেরিয়ে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের সড়কে যেতে আধা ঘণ্টা সময় গড়িয়ে যায়।
প্রতিদিন এই সড়কের ওপর দিয়ে চলাচলকারী আতিকুর রহমান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘লাভ হয়েছে কেবল বারিধারা ডিওএইচএস থেকে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে উড়ালসেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কালসী রোডের মুখে এসে গাড়ির চাকা আর ঘোরে না। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই।



চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য
ব্যস্ত কালসী রোডের ওপর দিয়ে লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করছে প্রতিদিন। উড়ালসেতুর কারণে এই সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন এখানকার অধিবাসীরা। এখানে দায়িত্ব পালনকারী এক ট্রাফিক কর্মকর্তা জানান, অর্ধশতাধিক মিনিবাস, টেম্পো ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল করছে প্রতিদিন। এ ছাড়া অগণিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও আছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে কয়েকজন চাঁদাবাজ প্রতিটি বাস থেকে প্রতিদিন ৪০০, প্রতিটি টেম্পো থেকে ২০০ ও ইজিবাইকপ্রতি ১২০ টাকা চাঁদা নিচ্ছে।

তবে ব্যাটারিচালিত একেকটি রিকশার মালিকের কাছ থেকে শ্রমিকলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে জামিল ও আলম মাসে টোকেন দিয়ে ৮০০ টাকা চাঁদা নিয়ে থাকেন। টোকেন নিয়ে রিকশাচালকেরা অবশ্য কালসী রোড নয়, পুরো মিরপুর-পল্লবীর প্রধান সড়ক এক মাসের জন্য দাপিয়ে বেড়ানোর সুযোগ পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিকশাচালক জানান, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ আটকালে টোকেন দেখালেই ছেড়ে দেয়। তিনি আরো জানান, জামিলের কার্ডে সুবিধা পাওয়া যায় বেশি। এ ব্যাপারে জামিলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে যাওয়ার পথে ভাঙাবাজারে শ্রমিক লীগ অফিসের সামনে এলে টোকেন দিয়ে দিই।

মাসের মাঝামাঝি চাঁদার হার কমে যায়। ’
এদিকে সরাসরি পুলিশের সহায়তায় সড়ক দখল করে থাকা পাঁচ শতাধিক দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। তবে রাস্তা সংস্কার করা হলে চাঁদাবাজি থাকবে না জানিয়ে মিরপুর অঞ্চলের পুলিশের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এ পর্যন্ত কালসী রোডে পাঁচ-ছয়বার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু সকালবেলা উচ্ছেদ হলে রাতে আবারও তারা বসে যায়। দখলদারেরা মনে করে বিদ্যুতের খুঁটির পরের জায়গায় বসে পড়লে কিছু হবে না।

তবে খুঁটিগুলো দুই পাশে সরিয়ে রাস্তা সংস্কার হলে দখলদারেরা আর থাকতে পারবে না। উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ আরও জানান, কালসী রোড এখন মহাসড়কে রূপ নিয়েছে। তাই এখান থেকে রিকশা-ভ্যানের মতো ধীরগতির যান চলাচল বন্ধ হলে যানজট কমে যাবে।

ঝুলে আছে সিটি করপোরেশনের প্রস্তাব
এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কালসী রোড সংস্কারে প্রায় ২৫ কোটি টাকা থোক বরাদ্দের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মাহমুদ রেজা খান। তবে এ পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল খায়ের।

তিনি বলেন, ‘টাকা পেলে আগামী বছর কাজ শুরু করতে পারব। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.