আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'ইয়াবা ঐশীকে' লেখা খোলা চিঠি



ঐশী, সঙ্গত কারণেই তোমাকে 'প্রিয়' বলে সম্বোধন করতে পারলাম না। তুমি নিজেই স্বীকার করেছ, নিজ হাতে বাবা-মার বুকে ছুরি চালাও বা না চালাও, তাদের খুনের ব্যাপারে তোমার প্রত্যক্ষ সংস্লিষ্টতা আছে। এমতাবস্থায় শুধু আমি কেন, সমগ্র দেশবাসী তোমাকে ধিক্কার জানাচ্ছে। আমিও অতিমানব নই যে তোমার সুইসাইড লেটার পড়ে, আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়ে তোমার কৃতকর্মকে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখব। তারপরও তোমার লেখা সুইসাইডাল লেটারের আমি রিপ্লাই দিচ্ছি।

এক্ষেত্রে তুমি আমাকে চেন কিনা, সেটা বিবেচ্য নয়। তার কারণ তুমি নিজেই তো চিঠিটাতে জানিয়েছ যে চিঠিটি তুমি লিখছ কোন অপরিচিত ব্যক্তিকে। হ্যা, আমি তোমার অপরিচিতই বটে। তবে সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে আজ তুমি আমার পরিচিত! তোমার যে পরিচিতি সংবাদমাধ্যমে ফুটে উঠেছে, তা বলছে তুমি একজন মাদকাসক্ত কিশোরী। যেকোন মাদকসেবীর চিন্তাধারা সাধারণ মানুষের চিন্তাধারার চেয়ে অপেক্ষাকৃত অস্বাভাবিক হবে।

তোমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আরও যেটা উল্লেখযোগ্য, তা হল তুমি এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী। মাদকের প্রভাবে হোক বা অন্য যেকারণেই হোক, তোমার সাথে ঘটা ঘটনাগুলো সম্পর্কে তুমি নিজের মনে যে যুক্তি তৈরি করেছ, তা স্বচ্ছ নয়। মাদকের প্রভাব আর প্রকৃত বাস্তবমুখিতার অভাবে তুমি ফ্যান্টাসির জগতে চলে গিয়েছ। নিজের অপ্রাপ্তি তোমাকে মানসিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।

কিন্তু এ থেকে মুক্তির জন্য মাদকের আশ্রয় নেয়ার যে সিদ্ধান্ত, এ থেকে প্রমাণ হয় যে মাদকাসক্ত হবার আগে থেকেই তুমি মানসিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিলে, তুমি মানসিকভাবে অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছিলে। নিজের কিসে ভাল, কিসে মন্দ সে সম্পর্কে তুমি যুক্তির চেয়ে অনেক বেশি আবেগের মোহে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলে। কিন্তু ওই যে বললাম, তুমি মাদকসেবনের আগে থেকে মানসিকভাবে অনেক দুর্বল ছিলে, এ সিদ্ধান্ত নিয়েও আমি অনেক কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি। কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি পরের কিছু ঘটনা থেকে। কোন মানুষকে খুন করতে পারে শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তির মধ্যে ব্যাপক মানসিক শক্তি রয়েছে।

আবার অনেক অ্যামেচার কিলারও আছে যারা ঝোঁকের বশে কাউকে খুন করে ফেলে এবং তারপর তীব্র বিবেকদংশনে ভোগে। অবশ্যই তুমি দ্বিতীয় তালিকায় পড় না। কারণ তুমি তোমার বাবা-মাকে ঝোঁকের বশে খুন কর নাই। এর আগে তোমার মস্তিষ্ক নিশ্চিতভাবে ব্যাপক চিন্তাভাবনা করেছে এবং বাবা-মাকে খুন করার ক্ষেত্রে তুমি যে পন্থা অবলম্বন করেছ, অবশ্যই তা সুদূরপ্রসারী প্ল্যানিংয়ের ফসল। আরেকটা বিষয় চমকে ওঠার মত।

বাবা-মাকে মারার পরও কিন্তু তুমি বিচলিত হয়ে পড় নাই। একা এসে থানায় ধরা দেবার মাধ্যমে তুমি তোমার মানসিক দৃঢ়তার প্রমাণ দিয়েছ। এবং এখনো আমরা এই মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় পেয়ে যাচ্ছি। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালেও তুমি অস্বাভাবিক রকমের স্বাভাবিক রয়েছ। এ থেকে আমরা কোন সিদ্ধান্তে উপনিত হব? তুমি কি তাহলে মাদকাসক্ত হবার আগে মানসিকভাবে দুর্বল ছিলে কিন্তু মাদকসেবনের পর তোমার মধ্যে পৈশাচিক মানসিক শক্তি জন্মেছে? এতো সাংঘাতিক ব্যাপার, তবে অসম্ভব নয় অবশ্যই।

তবে তোমার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় ঘটতে পারে। ওই যে বললাম কিশোরী বয়সেই তুমি ফ্যান্টাসির জগতে বিচরণ করছ, তাই তুমি মানসিক দুর্বলতা থেকে নয়, নিজের মনোজগতে গড়া ফ্যান্টাসিকে আরও পাকাপোক্ত করতেই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছিলে। জানি, এ বিষয়টাকে এতটা তলিয়ে চিন্তা করার কিছু নাই। হয়ত স্রেফ বাজে বন্ধুর পাল্লায় পড়েই তুমি মাদকে আসক্ত হয়েছিলে। কিন্তু আমি তা মানব না।

এ তো বড়ই কমন ব্যাপার। কিন্তু যে মেয়ে নিজ হাতে তার বাবা-মাকে খুন করতে পারে, তারমধ্যে বড় ধরণের মানসিক সমস্যা ছিল, তা ধরে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত। আসলেই তোমার মানসিক সমস্যা আছে। কারণ তোমার মধ্যে ডক্টর জেকিল আর মিস্টার হাইড বিদ্যমান। হয়ত এটা প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে তবে তোমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেক সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান।

বাবা-মাকে খুনের মাধ্যমে তোমার ভেতরকার যে পৈশাচিকতা ফুটে উঠেছে, তেমনি তোমার লেখা সুইসাইডাল লেটারে তোমার অসহায়ত্বও ফুটে উঠেছে। আবার সুইসাইডাল লেটারে লেখা তোমার কিছু জ্ঞানগর্ভ কথা থেকে উচ্চমার্গের দর্শনেরও পরিচয় পাওয়া যায়। এই লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে, জীবন সম্পর্কে কখনো হয়ত তুমি অনেক স্বচ্ছভাবে চিন্তাভাবনা করেছ। কিন্তু ওই যে বললাম তোমার ব্যাপারে আমি কনফিউজড, সেই কনফিশন আমাকে এখানেও তাড়া করেছে। জীবন সম্পর্কে যদি তোমার স্বচ্ছ ধারনাই থাকে, তাহলে তুমি কেন আত্মহননের চেষ্টা করবে? কেনই বা পরবর্তিতে আবার নিজের জনক-জননীকে খুন করবে? সবমিলিয়ে একটা কথাই বলতে পারি।

খুব সম্ভব মাদকের ছোবলেই আমরা একটা কিশোরী মেয়ের আপাত জীবনাবসান দেখতে চলেছি। তোমার সাথে মাত্র ১৮ বছরের জীবনে যা যা হল, এরপর কি আর তুমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে? আমি ৯৯% নিশ্চিত, তুমি তা পারবে না। তারপরও তোমার প্রতি আমার শুভকামনা থাকল। হিউম্যান সাইকোলজি যে কতটা বিদঘুটে এবং বৈচিত্রময় হতে পারে, তুমি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তারপরও আমি আশা করি, জীবনের নানা বাক-পরিবর্তনে তোমার মনে যে প্যাঁচ লেগে গেছে, সেই প্যাঁচ একদিন খুলবে।

আর সেদিন তুমি মন খুলে আমাদের সামনে গোটা বিষয়টা ব্যক্ত করতে পারবে। কেন তুমি এমনটা করলে। কেন? কেন? আমরা সবাই সেইদিনের অপেক্ষায় আছি। ইতি, পৃথিবী নামের সেই ছেলেটি

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।