আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘোলা পানিতে মাছ শিকার

O Allah! Please lead me from unreal to The Reality!!

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আস সালামু আলাইকুম! [লেখাটি আগে অন্য ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে এবং অনুমতিক্রমে এখানে প্রকাশ করা হচ্ছে। somewhereinblog, peaceinislam সহ বিভিন্ন ব্লগে শিয়াদের insidious অগ্রযাত্রা দেখে, পোস্টটি এখানে আজ প্রকাশ করা সঙ্গত মনে হলো। ] বাংলাদেশ ঘোলা পানির দেশ । কথাটা খেয়াল করেছেন কখনো? নদী, নালা, খাল, বিল সর্বত্র ঘোলা পানির ছড়াছড়ি - এমনকি ওয়াসার পানিও অনেক সময় মারাত্মক রকমের ঘোলা দেখতে পাওয়া যায়। এই তো সেদিন, যখন ঢাকায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হলো, খবরের কাগজে যত ছবি দেখেছি সবই ছিল ঘোলা পানির।

”ঘোলা পানিতে মাছ শিকার” বলে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে আমাদের দেশে। ঘোলা পানির সাথে মাছ ধরার সম্পর্ক কিভাবে স্থাপিত হয়েছে, আমার ঠিক জানা নেই। বরং সারা জীবন দেখেছি, পরিস্কার পানিতে মাছ শিকারই সহজ এবং উপভোগ্য - যে জন্য সমুদ্রের পানিতে বলতে গেলে দেখে দেখে মাছ ধরা হয় (বড়শী দিয়ে অথবা সাগর সৈকতে বর্শা জাতীয় জিনিস দিয়ে)। তবে, ঢাকা যখন ঘোলা পানিতে সয়লাব হয়ে গেল, তখন অনেককেই দেখা গেছে যত্রতত্র মাছ ধরতে। সাধারণত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এধরনের বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকলেও, এই অভিব্যক্তির ব্যবহার অন্যত্রও রয়েছে।

যারা Autobiography of Malcolm-X বইখানি পড়েছেন, তাদের হয়তো মনে থাকেবে যে, Malcolm-X মূলধারা ইসলামে আসার আগে, Nation of Islam-এর কর্মী ছিলেন, যিনি রাস্তা-ঘাটে ঘুরে ঘুরে তার সংগঠনের জন্য convert যোগাড়/সংগ্রহ করতেন। এই convert যোগাড় করাকে, তারা তাদের ভাষায় fishing বা ”মাছ ধরা” বলে আখ্যায়িত করতেন। এই অভিব্যক্তির একটা বিশেষ মানে রয়েছে। ৬০-এর দশকের শুরুতে, কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী তখন কেবল ক্রীতদাসত্বের জোয়াল থেকে মুক্তি পাচ্ছে। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তারা অপেক্ষাকৃত সরল বা, শুনতে খারাপ শোনালেও, "নির্বোধ" ছিল।

তাই, বৈষম্যের শিকার হবার ব্যাথা বা তাদের আবেগকে ব্যবহার করে, সহজেই তাদেরকে দলে টানা যেত - আর এই দলে টানার কর্মকান্ডকেই তারা fishing বলে আখ্যায়িত করতেন। নিউ ইয়র্কের হারলেমের রাস্তাঘাটে ম্যালকম-এক্স fishing করে বেড়াতেন। ব্যক্তিগত ধর্মীয় পরিচিতির দিক থেকে বিচার করলে, আমাদের দেশও এখন তেমন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে - বলা যায়, একধরনের Identity Crisis রয়েছে অনেকের মাঝেই। তার অনেকগুলো কারণের কয়েকটি হচ্ছে: ১) নিজের ধর্ম-বিশ্বাস সম্বন্ধে অজ্ঞতা। সাধারণের এই সম্বন্ধে কোন পড়াশোনা নেই বললেই চলে।

২) পুরাতন বা সনাতন (traditional) ধর্মীয় আচার-আচরণের উপর আস্থা হারানো। ৩) স্যাটেলাইট টেলিভিশনের বদৌলতে ইন্দ্রিয়সুখের সামগ্রীর অবাধ প্রবাহ থাকায় নৈতিক অবক্ষয়। ৪) ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়সুখের আরো hardcore সামগ্রীর গোপন অথচ সস্তা সরবরাহ থাকায়, জীবনের সবটুকু সময়, সুখানুভূতির খোঁজে নিয়োজিত করা এবং সুস্থ চিন্তার কোন অবকাশ না থাকা। ৫) ইন্টারনেট থেকে হাজারো ব্র্যান্ডের ধর্মীয় ”শিক্ষা-সামগ্রী” থেকে, নিজের ”ভালো লাগা” সামগ্রী বেছে নেয়া। বিশেষত, মৌলিক জ্ঞানের অভাব থাকাতে সত্যাসত্যের বিচার করতে না পারা থেকে বিভ্রান্ত হওয়া।

৬) অর্থনৈতিক হতাশা থেকে জীবনে দিশেহারা বোধ করা। ........ইত্যাদি। উপরোক্ত কারণসমূহ, ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর জন্য বাংলাদেশকে এক ideal fishing ground বলে গণ্য করার সুযোগ করে দিয়েছে। এখানে অগণিত গোষ্ঠী এখন ”ঘোলা পানিতে মাছ শিকার” করতে ব্যস্ত। ক'দিন আগে, এক রাতে নিছক কৌতুহলবশত আমি ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করতে চাচ্ছিলাম যে, আমাদের দেশে কোন কোন খৃস্টান ”ফিরক্বা” বা denomination-এর মিশনারী কর্মকান্ড বা চার্চ রয়েছে।

আমি বেশ অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম যে, এদেশে অন্তত ১৯টি ”ফিরক্বার” ৪০৫১ টি চার্চ রয়েছে এবং ২০০৯ সালে তাদের আরো ৬১৬টি নতুন চার্চ প্রতিষ্ঠার টার্গেট রয়েছে। সূত্র: www.ncfbangla.org/members.htm । প্রয়াত শ্রদ্ধেয় আহমেদ দিদাত, দক্ষিণ আফ্রিকার ”নির্বোধ” মুসলিমদের মাঝে খৃস্টান মিশনারীরা কি করে fishing করে বেড়াতো, সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন যে, একখানা বাইবেল দেখিয়ে তারা সাধারণ মুসলিমদের জিজ্ঞেস করতো,”এটা কি আল্লার কিতাব নয়?” মুসলিম মাত্রই জানে যে, আমাদের সকল আসমানী কিতাবে বিশ্বাস করতেই হবে - সুতরাং, সে না করবে কি করে? পরবর্তী প্রশ্ন হতো, ”তাহলে তো এখানে যে সব কথা রয়েছে, সে সবও সত্য, তাই নয় কি? আল্লাহর কথা তো আর মিথ্যা হতে পারে না!" এখানেও একজন অজ্ঞ মুসলিম অসহায় বোধ করতো - সত্যিই তো, আল্লাহ্ তো আর মিথ্যা বলেন না!! এভাবেই নিজের ধর্ম-বিশ্বাস সম্বন্ধে অজ্ঞ কোন মুসলিম, মিশনারী পাদ্রীদের পাতা fallacyর ফাঁদে পা দিত। "নির্বোধ” মুসলিম জানতো না যে, তার ধর্ম-বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা (আ.)-এঁর কাছে যে ইঞ্জিল নাযিল হয়েছে - এটা তাকে বিশ্বাস করতেই হবে, সত্যি! তবে এখনকার বাইবেল যে, ইঞ্জিল নয় বরং আল্লাহর কিছু বাণীর সাথে সিংহভাগ মানবরচিত গল্পের মিশ্রণ - এটাও তার ধর্মবিশ্বাস, যা কিনা আল্লাহ্ নিজেই কুর’আনে বলেছেন। যাহোক, এবার আমার মূল বক্তব্যে আসি।

somewhereinblog বা amarblog-এ অবিশ্বাসী নাস্তিক থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধর্মের প্রতিনিধি, তথা ইসলামের নামে যত ধারা রয়েছে, তার প্রায় সবকটির লেখালেখি বা মতামত চোখে পড়ে। আমি যেহেতু কেবল দ্বীনের দাওয়াত দিতে চাই - কোন চর দখল করার ইচ্ছা আমার নেই, তাই আমি একধরনের নীরব সহ-অবস্থানের নীতি গ্রহণ করে থাকি। তবু যে দু'টো বিষয় আমাকে অবাক করে তা হচ্ছে: ক) নাস্তিক তথা ইসলাম বিদ্বেষীদের আধিক্য, দৌরাত্ম, স্পর্ধা ও intolerance । খ) "শিয়া-doctrine"-এর সরব উপস্থিতি। আমি আগেই ঠিক করেছিলাম যে, আল্লাহর একটা আদেশ অনুযায়ী কাউকেই কখনো গালি-গালাজ করবো না: Revile not ye those whom they call upon besides Allah, lest they out of spite revile Allah in their ignorance. Thus have We made alluring to each people its own doings. In the end will they return to their Lord, and we shall then tell them the truth of all that they did. (Qur'an, 6:108) তাই কখনো কারও কটুক্তি বা অত্যুক্তির জবাব দিতে চাইনি।

তবু, এই ভেবে অবাক হয়েছি যে, “ডট.কম” সংস্কৃতির বদৌলতে, বাংলাদেশে স্থানীয় বাঙালীদের ভিতরেই একটা sizeable শিয়া জনগোষ্ঠী গড়ে উঠছে সন্তর্পণে - Thanks to: ইরানীয়ান কালচারাল সেন্টার, তাদের ফ্রি বই-পুস্তক, প্রচারণা কার্যে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দক্ষতা এবং তেহরান রেডিওর বাংলা অনুষ্ঠান (বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলোও এক্ষেত্রে সমূহ কৃতিত্বের দাবীদার। ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার রেডিমেড মডেল হিসাবে, রাজনৈতিক ফ্যাক্টরটাই তাদের কাছে প্রধান হয়ে উপস্থিত হয়েছে - তাতে আক্বীদাহ/বিশ্বাস গোল্লায় গেল কিনা, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন অনুভব করেননি তারা বা হয়তো এখনো সেই অবসরই হয়নি তাদের)। খৃস্টানরা যদি ৪০৫১টা চার্চ খুলে ২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী ৩,৫০,১১৬ জনের একটা জনসংখ্যা তৈরী করতে পারে, তবে শিয়ারা বাদ থাকবে কেন? বাংলাদেশে রয়ে যাওয়া বিহারী জনগোষ্ঠীর সদস্যরাই কেবল শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি - এমন একটা (ভুল??) ধারণা নিয়েই আমরা বড় হয়েছি। কিন্তু আজ দেখছি মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে, আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মুসলিমদের এই ক্ষয়িষ্ণু বা wanning অবস্থা মোকাবিলা করতে, আমি মনে করি যে, লেখা-লেখি ও দাওয়াতই হচ্ছে একমাত্র পথ বা পদ্ধতি।

আর তা করতে গিয়ে [বাধ্য না হলে] অন্যের দোষ ধরার চেয়ে, অনেক অনেক বেশী জরুরী হচ্ছে, নিজের দ্বীন সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করা ও জানা। সত্যাসত্য জানার "কষ্টিপাথর” যদি আপনার হাতে থাকে, তবে আপনাকে ঠকায় কে বলুন! সেজন্য এপর্যন্ত চেষ্টা করেছি সেই লক্ষেই কিছু লেখালেখি করতে - আর আমার প্রচেষ্টা বলা যায় "নিজের-ঘর-সামলানো"। আর তাই, যে দুই একজন দয়া করে আমার লেখা পড়েছেন, তারা হয়তো জেনে থাকবেন যে, আমি সবসময় শুদ্ধ বিশ্বাস কি, তা জানার তাগিদ দিয়েছি। আমি কুর’আন হাদীসের আলোকে এটাও দেখানোর চেষ্টা করেছি যে, দ্বীনের শুদ্ধ রূপ কেবল একটা এবং একটাই - সেটা যে আমার বলাটাই, তা not necessarily। আমি ভুলের উপর থাকলে, আমার উচিত হবে সেই "একমাত্র” পথের সন্ধান করা এবং পাওয়া মাত্র নিজেকে সেই পথের উপর নিয়ে যাওয়া।

কিন্তু সম্প্রতি "হৈচৈ” নিকনেম ব্যবহারকারী "শিয়া-doctrine"-এর প্রচারক একজন ব্লগার [somewhereinblog-এ] Al-Muraja'at A Shi'i-Sunni dialogue নামে একটা পোস্ট দেয়াতে [তার মত আরো অনেকে রয়েছেন যেমন somewhereinblog -এ "জাগরণ" বা " ঝড়১২৩" নিকধারি ব্লগাররা, peaceinislam-এ "শান্তি" বা "শিয়ামুসলমান" নিকধারি ব্লগাররা], তার "soft target", নিজের দ্বীন সম্বন্ধে অজ্ঞ আমাদের দেশের সাধারণ মুসলিমদের, "শিয়া-doctrine" সম্বন্ধে একটু জানানোর প্রয়োজন অনুভব করছি । তিনি Shi'i-Sunni dialogue-এর কথা এনেছেন - আজকাল প্রায়ই দেখা যায়, শিয়া ও সুন্নীদের ভিতর একটা জোড়াতালি patch-up-এর চেষ্টা করেন অনেকেই, যেটাকে কেবলই বিশেষ উদ্দেশ্য মাথায় রেখে unity for the sake of unity-র প্রচেষ্টা বলে মনে হয়েছে আমার । আমি অন্তত, আমার ক্ষুদ্র ক্ষমতায় যতটুকু সম্ভব, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে সত্যাসত্য জানার একটা সুযোগ করে দিতে চাই - তারপর তারা যদি শিয়া হয়ে যেতে চান বা শিয়াদের সাথে একতাবদ্ধ হতে চান, তবে তা হবে তাদের নিজস্ব জ্ঞান-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত - আর আমিও চেয়ে দেখার দায় থেকে অনেকাংশেই মুক্ত হবো ইনশা’আল্লাহ। তবে একটা জিনিস আমার পরিস্কার করে দেয়া উচিত: আমি কোন বিতর্কে জড়াতে চাইনা। আমি পাঠকদের জন্য কেবল কিছু ইনফরমেশন তুলে দিতে চাই - তা তারা শুনলেন কি না শুনলেন তার দায়-দায়িত্ব তাদের।

আমরা প্রত্যেকেই শেষ বিচারের দিনে, আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে একা দাঁড়াবো। আপাতত আগ্রহী পাঠকের জানার জন্য কেবল কতগুলি লিংক তুলে দিচ্ছি: www.sunnahonline.com/ilm/aqeedah/0042.htm www.islam-qa.com/en/ref/97448/shi'a abdurrahman.org/innovation/shiismExpositionandRefutation.html www.understand-islam.net/site/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=69 www.islamhouse.com/p/190228 আল্লাহ্ হাফিজ!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।