আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

##সে##লা##ই## (অসময়ের তিন ফোঁড়)

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)
ফোঁড়ঃ ৩ বিকেলের আলোমাখা টেবিলে আমরা দুজনে বসে তোমার খয়েরি চোখের গাঢ় কাজল দেখলাম চোখের পাঁপড়িগুলো নেই (কেউ এসে তুলে নিয়ে গেছে) ডান চোখের কিনার থেকে লাল ঠোঁটের প্রান্ত অবধি ছুরি দিয়ে চিরে দিয়েছে কেউ ঠোঁট থেকে হাসির কিছু টুকরো কণা চোখের দিকে সিঁড়ি ভেঙে উঠে যাচ্ছে তোমার কষ্ট লাগছে। তোমার ব্যথা লাগছে। তুমি হাসছো না। তুমি কাঁদছো না। আসো আমরা এদিক-ওদিক তাকাই।

দু’জনের মাঝে কিছু লতাগুল্ম আদরে বেড়ে উঠেছে। তোমার আঙুলে আশ্রয় নিয়েছে তারা। টেবিলের পেট ফুঁড়ে নদী জেগে উঠছে। নদীতে আমি ডুব দিলাম, সাঁতরে ভুস করে ভেসে উঠলাম। তোমার স্ফীত উদরের কাছাকাছি।

এই তীরে প্রবল জলের ক্রন্দন। মৃত-আলোয় নদী থেকে বিন্দু বিন্দু পানি উঠে আসছে তোমার কোলে, আমি সেখানে মাটি খুঁড়তে শুরু করলাম, মাটির ভেতরে শামুক, শামুকের খোলে সে, তার হাতখানা ছোট, হাতের মুঠিতে তোমার চোখের পাপড়িগুলো ঝুরঝুর করে ঝরে পড়লো সেই নদীতে *** -১২.৪.১০ *** ফোঁড়ঃ ২ ফোরসেপ হাতে তুমি আমাকে কাটছিলে চারবার এদিক ওদিক কৌণিক পোচে ভূখণ্ড কেটে ফেলে জোড়াতালি কাঁটাতার মেখে সেখানে চড়ুইয়ের ঘর বসানো বাড়ি থেকে সূর্যরশ্মি তীর্যক উড়ে এসেছিল। তোমার নখের ভেতর চুলের ভেতর মরাত্বকের ভেতর জন্মজ ডাক ছেড়ে কাঁদা ত্রিরাত্রবয়সী বালিকা আমার কানে চিৎকার পৌঁছে দিল বলে ধাতব টিনের বিছানায় উপুড়মুখী শুয়ে থাকা তোমাকে দেখে আমিও পাশে নগ্ন-উন্মুল ঊর্ধ্বাকাশ মাপি আর ফাটল ফাটল বেছে ফেলি উকুন বাছার মতোন। অ্যামোনিয়াগন্ধ সে'সময়ে আমাদের মাঝে অভিলম্ব ধরে ঝুলে থাকা শিরদাঁড়ায় জমে যাচ্ছিল। *** -২৬.১১.৮ *** ফোঁড়ঃ ১ এখন চোখের ওপরে খড় দিয়ে তৈরি সুতো আর শাবল দিয়ে তৈরি সুঁই দিয়ে কেউ একজন আমার চোখ সেলাই করে দিচ্ছে।

চোখের দুই পাতা চিরে গিয়েছিলো জন্ম-মুহূর্তে। তারপরে চেরাফুটোয় গলগলিয়ে রঙ ঢুকেছে; আলো, বাতাস, পিতা, মাতা, সহোদরা ঢুকে গেছে এবং মেডুলায় তাদের কাদালেপা ঠাণ্ডাঘর বানিয়েছে। সেই চোখচেরা গুহামুখে প্রবল প্রতাপী তরুণীর শাদা শাদা ফুল আর অগ্নি ঢুকে গেছে (সাথে নিয়েছে কুষ্ঠভিখারিনীর গলিত হাত ও জটামাখা চুল। সেই চোখ আজ শাবলসুঁইয়ে কেউ কড়কড় করে সেলাই করে দিচ্ছে, এক কোণে এক টুকরো ফাঁকা ছিলো তখনও! সেই উপবৃত্তাকার ফাঁক দিয়ে সূর্যগ্রহণের আলো প্রবেশ করেঃ শেষ আলো। তারপরে শেষ একপোচে সাঁ করে আলো বন্ধের কান্নার তীক্ষ্ণ চিৎকার ভেসে আসে।

আমি থরথরানো দু'হাত তুলে সেলাইকর্তার লোমশ ধাতব হাত চেপে ধরিঃ ওরে মাগো! এবারে ক্ষান্ত দে! আমার দু'চোখ বুজে গেছে চিরতরে! আমি আর কোন রঙ-রূপ-রস-গন্ধ-শোভা দেখবো না! *** -২৬.১১.৮
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।