আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কওমি মাদরাসা: প্রতিক্রিয়াশীলতাই যার জন্ম-উৎস

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু। ১। দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠা হয় ইংরেজ-শাসনামলে। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মূল লক্ষ্য ছিল শত্রু-কবলিত দেশকে শত্রুমুক্ত করা।

তাই দেখা যায়, শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান র. এক পর্যায়ে এসে মাদরাসা ত্যাগ করেন এই অভিযোগ তুলে যে, মাদরাসা যে-উদ্দেশ্যে নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তা থেকে সরে এসেছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠাকালে তাকে বোঝানো হয়েছিল যে, এর লক্ষ্য ইংরেজ তাড়ানো। কিন্তু মাদরাসা যখন একান্ত পঠন-পাঠন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যদি ইংরেজ শাসনের প্রকোপ না থাকতো, তাহলে এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠা হত কি-না সন্দেহ। মোট কথা হল, মাদরাসাটি ইংরেজ শাসনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে অস্তিত্ব ধারন করে।

২। দেওবন্দ মাদরাসায় দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন মাওলানা কারী তাইয়িব। তিনি প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসিম নানুতবির নাতি। কিন্তু মজলিশে-শুরায় এক সময় তার কতিপয় কর্মপ্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, মতবিরোধের তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

সে-সময় মাদরাসার পরিস্থিতি ভীষণ নাজুক হয়ে পড়ে। তখন মাওলানা কারী তাইয়িব বিফল মনোরথ হয়ে দেওবন্দের পাশেই দারুল উলুম দেওবন্দ ওয়াকফ নামে আরেকটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। যদি কারী তাইয়িব সাহেবের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত না হত, তাহলে নির্ঘাত এ মাদরসার প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন আসত না। ৩। বড় কাটারা মাদরাসায় বেশ সুনামধন্য এবং যোগ্য কয়জন মানুষের সমাবেশ ঘটে ছিল।

আবদুল ওহাব (পীরজী হুজুর র.), শামসুল হক (সদর সাহেব হুজুর র.), মুহাম্মদুল্লাহ (হাফেজ্জী হুজুর র.)। কিন্তু এক সময় তাদের মাঝে মতবিরোধ ঘটে। শোনা যায়, এ বিরোধ ছিল বাংলায় পাঠদান নিয়ে। শামসুল হক প্রতিষ্ঠা করেন লালবাগ মাদরাসা আর মুহাম্মদুল্লাহ করেন কামরাঙ্গীর চর মাদরাসা। যদি তাদের মতের অমিল না হত, তাহলে পরবর্তী মাদরাসা দুটির জন্ম হত না।

৪। রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কারণে মাওলানা অজিজুল হক (শাইখুল হাদিস) এর কর্মজীবন অসহ্য হয়ে ওঠে। তিনি তখন লালবাগ মাদরাসায়। তার সহকর্মীরা প্রায় সবাই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তখন সেখান থেকে তিনি বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মুহাম্মদপুরের জামিয়া আরাবিয়া মাদরাসা।

যদি তিনি লালবাগেই থাকার সুযোগ পেতেন, তাহলে মুহাম্মদপুরে এসে এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতেন না। ৫। রাহমানিয়া মাদরাসায় আজিজুল হক সাহেবের এক ঘনিষ্ট শাগরেদ হল মুফতি মনসুরুল হক সাহেব। এক সময় মুফতি মনসুরুল হক সাহেবের সঙ্গে গুরুর মতবিরোধের সূচনা হয়। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক যে কোনো কারণেই হোক, মাদরাসায় থাকা তার জন্য দুঃসহ হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি গিয়ে পাশেই আরেকটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সঙ্গে পূর্বপ্রতিষ্ঠিত রাহমানিয়া মাদরাসার মালিকানা নিয়ে উভয় পক্ষ আদালতে ব্যয়বহুল মামলা দায়ের করেন। এ মামলা এখনো সচল। ৬। চট্টগ্রামের মোটামুটি প্রান্তে পটিয়া মাদরাসা।

মাওলানা ইউনুস (হাজী সাহেব হুজুর)-এর সময় এর আর্থিক সচ্চলতা তৈরি হয়। এক সময় তার মৃত্যু ঘটে। তখন পদ ও প্রভাব নিয়ে সিনিয়র শিক্ষকদের মাঝে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। ব্যস, আর যাই কোথা? মাওলানা সুলতান জওক এখান থেকে বের হয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন দারুণ মাআরিফ। মুফতি আবদুর রহমান এরপর ঢাকায় আবাস গড়েন, বসুন্ধরা এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন এক বিপুলায়তন মাদরাসা।

৭। এই রকম ভাবে দেখা যায়, প্রতিটি বা অধিকাংশ মাদরাসার প্রতিষ্ঠা ঘটেছে সৃজনশীল কোনো লক্ষ্য নিয়ে নয়। বরং অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ। আর এ জন্যই এ শিক্ষা ব্যবস্থাটি বারবার প্রতিক্রিয়াশীলতার ভেতরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। ব্যক্তি জীবনে হোক বা জাতীয় জীবনে কোথাও এ শিক্ষাধারাটি নতুন কোনো সংযোজন ঘটাতে পারছে না।

প্রতিক্রিয়াশীলতার বৃত্ত থেকে বের হতে না পারলে এটা তার পক্ষে সম্ভবও হবে না। কারণ, পৃথিবী এগোয় সৃজনশীলতার ভিত্তিতে, সৃজনশীল আচরণ ও প্রবণতাই পরিচিতি ও প্রকৃতি নির্ধারণ করে, যা অপরাপর সমাজ ও গোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে, বাঁচার ও বেঁচে থাকার শর্ত তৈরি করে। কওমি মাদরাসা যতদিন সেই শর্ত তৈরি করতে না পারবে, ততদিন তার বাঁচা-মরার প্রশ্ন নিয়ে ব্যস্ত থাকেত হবেই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.