আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিজিটাল ভাবনায় হোচট!



শহরতলীর একটি অজো পাড়া গাঁয়ে জন্ম। বেড়ে ওঠা এখানেই। ছোট বেলা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের কবিতা পড়তাম আর ভাবতাম কোন ভাবনা থেকে তিনি লিখেছেন " বিশ্ব জগত দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে"। ধীরে ধীরে এক ক্লাস দুই ক্লাস করে মাধ্যমিকে যখক পড়া শুরু করলাম তখন ইন্টারনেট নামক শব্দটির সাথে প্রথম পরিচয়। কিন্তু ইন্টারনেট কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং এর বাস্তব সুবিধা বুঝতে খুবই কষ্ট হত।

পরীক্ষা পাশের জন্য কন্ঠস্থ করেছে ইন্টারনেট নিয়ে লিখিত রচনা। মাধ্যমিক পেরিয়ে যখন কলেজের বারান্দায় পা রাখলাম তখন কোন কোন সময় মোবাইল নামক একটি জিনিসের নাম শুনতে পেতাম। শুনতাম কোন তার ছাড়াই এটা সাথে নিয়ে এক দুর দেশে কথা বলা যায়। একটি প্রাইভেট হাসপাতালে বাবার অবস্থা যখন খুবই আশংকা জনক পর্যায়ে তখন এখানকার ইন্টার্নি ডাক্তার একজন বিখ্যাত ডাক্তারকে নাকি মোবাইল ফোনে কল করে নিয়ে এসেছিলেন। তার কোমরে গোজা একটি যন্ত্র দেখে বুঝলাম এটিই বুজি সেই মোবাইল ফোন।

আগ্রহ দমাতে না পেরে ইন্টার্নি ডাক্তারকে জিঞ্জেস করে নিশ্চিত হয়েছিলাম। তখনাকার সময় ভাবনা ছিল আহা! আমার যদি একটি মোবাইল ফোন থাকতো। আর তখন থেকেই কবি নজরুলের শত বছরের পুরনো স্বপ্নের কথা স্মরণ হলো এবং ভাবলাম ভবিষ্যত দ্রষ্টা তিনিই। তাঁর এ ভবিষ্যত বাণী যে কতখানি বাস্তব তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন একটি পরিবারে অন্তত: একটি মোবাইল ফোন নেই এটি ভাবা যায় না (জন প্রতি তো আছেই)।

এমনকি রিকশা চালক, ভ্যান চালকসহ অনেক ভিখারীর হাতেও এখন এটি দেখে মানুষ আর অবাক হয় না। বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সুবাদে এখন গ্রামে গঞ্জেও ব্যবহৃত হতে ইন্টারনেট। আমরা গ্রামের যারা অধিবাসী তারা টিএন্ডটি নামক জিনিসটি এখনো পাইনি কিন্তু মোবাইলের কল্যাণে এখন যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমরা আর পিছিয়ে নই। এমনকি ইন্টারনেট নামক স্বপ্নের জিনিসটিও অজোপাড়া গাঁয়ের এক কুটিরে বসে ব্যবহার করতে দেখে কেউ আর বিস্ময় প্রকাশ করে না। বর্তমান সরকার দিন বদলের অঙ্গিকার নিয়ে দেশকে একটি ডিজিটাল দেশে রুপান্তরের ভিষণ নিয়ে এনে হাজির হয় দেশবাসির কাছে।

বিশেষ করে তরুনদেরকে একটি ডিজিটাল দেশ উপহার দেয়ার অঙ্গিকার করে। আর তাই তরুনরাই বেশি উৎসাহি হয়ে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করতে বর্তমান সরকারকে সমর্থন করেছিল। ইতোমধ্যে দেশ কতটা ডিজিটালাইজড হয়েছে তা নিয়ে আমার কথা নয়, কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তুরুণ প্রজন্মের আগ্রহের কথা কারো অজানা নয়। প্রাইভেট কোম্পানি গুলোর সুবাদে তরুণ প্রজন্ম যখন অজানাকে জানা আর অচেনাকে চেনার জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে ঠিক তখনই ডিজিটাল ভাবনাকে হোচট মেরে সারা বিশ্বে যোগাযোগ রক্ষাকারী জনপ্রিয় একটি সামাজিক ওয়েব সাইট ফেসবুক বন্ধ করে দিল তখন একটি বারও ভাবলনা যে, কোন একজন ব্যক্তি বা গোষ্টির অপব্যবহারের দায় এদেশের প্রায় ১০ লক্ষ ফেসবুক ইউজার নেবে কেন? এদেশের এ ১০লক্ষ জনগন যে বর্হিবিশ্ব থেকে ছিন্ন হয়ে যাবে তা কি একবারও ভাবার প্রয়োজন মনে পড়েনি? এটা কি শুধু স্রেফ আনন্দ বিনোদনের মাধ্যম? অবশ্যই না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষ এতোই ব্যস্ত যে, অনেক সময় ফোনে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠে না আর পত্র বিনিময় তো কল্পনাই করা যায়না।

ফেসবুক সেই জায়গায় কাজ করে আমাদের সাথে সারা বিশ্বের যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। শুধু তাই নয় এটা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য বর্হিবিশ্বে তুলে ধরার একটি মাধ্যম। অন্যদেশকে জানার এবং দেশে বসে সারা বিশ্বের মানুষকে এক করার একটি মাধ্যম হচ্ছে এটি। এক কথায় বিশ্বায়নের এ যুগে ফেসবুক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। গত দুদিন যাবত সারা দেশে এ নিয়ে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে।

বর্হিবিশ্বেও এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। তাই বর্তমান সরকারের কাছে সর্নিবন্ধ আবেদন অনতি বিলম্বে এ জনপ্রিয় সাইডটি খুলে দিন নতুবা ডিজিটাল ভাবনা যেভাবে হোচট খেয়েছে সেটি আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.