আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নগুলো আশার ভেলায় ভাসিয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছি সুদিনের আশায়

সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিতমধুর বাণী আড়ালে গাবে গান। গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি। এই ব্লগের©শান্তির দেবদূত।
১. এ্যাজোকো (AGOCO-Arabian Gulf Oil Company), এখানকার সবচেয়ে বড় চারপাঁচটা তেল কোম্পানির মধ্যে অন্যতম। বছরপাচেক আগের ঘটনা, একটা প্রজেক্টের ব্যাপারে কথা বলতে বাবা গেলেন প্লানিং ডিপার্টমেন্টের চিফের সাথে দেখা করতে।

বাবাকে দেখেই উনি জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কী ইন্ডিয়ান?” -নাহ, আমি বাংলাদেশি। তারপর ঐ অফিসারের প্রতিক্রিয়া হলো দেখার মত। রীতিমত বাবাকে জড়িয়ে ধরে তার সে কী উল্লাস! সে বললো, “জানো, আমি কানাডায় পিএইচডি করেছি, আমার সুপারভাইজার ছিলেন বাংলাদেশি এক প্রফেসর, উনি আমাকে যে পরিমান সাহায্য সহযোগীতা করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। তারপর থেকে সুযোগ পেলেই আমি বাংলাদেশিদের সাহায্য করার চেষ্টা করি। ” বলা বাহুল্য এই অফিসারের সাহায্যে বাবার মাধ্যমে সেবার বিশাল একটা প্রজেক্ট পেয়েছিল এখানকার এক বাংলাদেশি কোম্পানি।

যাই হোক যে কারনে এত ঘটনার বয়ান তা হলো, “সেই নাম না জানা বাংলাদেশি প্রফেসরের কিছু উপকারের বিনিময় যে এত বছর পর এভাবে পাওয়া যাবে তা কী কেউ ভেবেছিলো?” আমরা অনেকেই ভাবি, “আরে ধুর, এর উপকার করে আমার কী লাভ?” এই ভাবনাটা একেবারেই ভুল। আমরা কেউ যদি কারও কোন উপকারই করি তবে তা কোনভাবেই বিফলে যায় না, অনেক বছর পর হলেও তা শতগুণ হয়ে ফিরে আসবে, এটাই প্রকৃতির রীতি। আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তারা প্রত্যেকেই একেকজন এম্বাসেডর, আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। মানুষের প্রতি করা আমাদের ছোট ছোট উপকার, একটু মিষ্টি ব্যবহার, মিষ্টি কথা, নিদেরপক্ষে একটু হাসি হয়তো দেখা যাবে পর্বতসম ঠেউ হয়ে ফিরে আসছে। ২. প্রায় চল্লিশ বছর লিবিয়া ছিল ইটালির কলোনি এবং ১৯৫১ সালে তারা এই এলাকা ছেড়ে যায়।

কলোনি থাকলে যা হয়, অন্যায় অত্যাচার, হত্যা, লুন্ঠন সবই করেছিলো তারা; এইসবের জন্য কিছুদিন আগে ইটালি সরকার লিবিয়ার কাছে ক্ষমা চায় ঠিক এই ভাষায়, "It is my duty, as a head of government, to express to you in the name of the Italian people our regret and apologies for the deep wounds that we have caused you," এতবছর পর ঠিক কী হলো যে ইটালি সরকার এভাবে ক্ষমা চাবে লিবিয়ার জনগণের কাছে? আসল কথা হলো বানিজ্য। এই ক্ষমা চাওয়ার পরপরই লিবিয়ার সাথে তাদের একটা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। চুক্তিমোতাবেক ইটালি আগামি ২৫ বছর, বছরে ২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে অবকাঠামো খাতে। আর প্রতিবছর কিছু লিবিয়ানদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে ইটালিতে পড়াবে। এখানে একটা জিনিস খেয়াল করার মত, তারা কিন্তু ক্ষতিপূরন হিসানে নগদ অর্থ দিচ্ছে না, বরং বিনিয়োগ করছে।

মোটাদাগে এটা বলা যায়, এই বিনিয়োগের মাধ্যমে এরচেয়েও শতগুণ প্রফিট তারা তাদের ঘরে নিয়ে যাবে, আর ক্ষেত্রবিশেষে এদের স্বার্থ দেখবে স্কলারশিপ নিয়ে ইটালি থেকে পড়াশুনা করে আশা উচ্চপদস্থ এইসব শিক্ষিত ছেলেপুলেরা। ৩. কিছুদিন আগে এনওসি (NOC-National Oil Corporation, তেল ও গ্যাস সংক্রান্ত যাবতীয় বিনিয়োগ, নতুন নতুন তেলক্ষেত্র অনুসন্ধান ইত্যাদি এই সংস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করে সরকার) ১২ জনের এক গ্রুপকে ইঞ্জিনিয়ারিং ও অর্থনীতি পড়ার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলো। ইন্ডিয়ান একটা গ্রুপ খুব চেষ্টা করেছিলো এদের যেন ইন্ডিয়াতে পাঠানো যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেনি। যে সব কারনে তারা পারেনি তার মধ্যে প্রধান কারণ হলো সাধারন লিবিয়ানরা ইন্ডিয়ানদের খুব একটা পছন্দ করে না। কেন যেন এদেশের সাধারন মানুষের ধারন হিন্দুরা নোংরা প্রকৃতির হয়।

এই সুযোগটা বাংলাদেশ খুব ভালো ভাবে নিতে পারে। বাংলাদেশের ৫টা পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে যদি প্রতিবছর প্রতিটিতে ৫ জনকে বৃত্তি দিয়ে পড়ার ব্যবস্থা সরকার করে তাহলে প্রতি বছর ২৫ জন হয়। ৪ বছরে এই ১০০ জন, এরা সবাই যখন দেশে ফিরে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি করবে তখন এদের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি এই দেশে গড়ে উঠবে সেটা টাকায় হিসাব করা সম্ভব না। আর ব্যবসায়িক লাভের কথা নাইবা বললাম। যে কোন তরুন যখন একটা দেশে ৪/৫ বছর থাকে সেই দেশ সম্পর্কে তাদের এক ধরনের আবেগ তৈরি হয়, মায়ার বাধনে জড়িয়ে পড়ে।

আমি দেখেছি আমাদের ভার্সিটিতে প্রতি বছর কাশ্মির, শ্রীলংকা থেকে বেশি কিছু ছেলে পড়তে আসতো, এদের এভাবে পড়িয়ে বাংলাদেশ সুদুরপ্রসারী কিভাবে লাভবান হচ্ছে সেটা আমার জানা নাই, কিন্তু লিবিয়ার মার্কেট সবে মাত্র প্রস্ফুটির হচ্ছে। এই কারনে ইউরোপ, আমেরিকা, ইন্ডিয়া, চায়না, থাইল্যান্ডের পুরা নজর এদের উপর। বাংলাদেশের কী কোন পরিকল্পনা বা মাথা ব্যাথা আছে এ নিয়ে? কোন দেশ বাংলাদেশ থেকে কয়েক লক্ষ শ্রমিক নিবে এই খবর শুনে আমার আহ্লাদিত হয়, কিভাবে আরও শ্রমিক পাঠানো যায় সেটাই আমাদের সরকারের টার্গেট, আর আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়ার টার্গেট এখানকার আইটি মার্কেট ধরার, কন্সট্রাকশন মার্কেট ধরার, কন্সালটেন্সি মার্কেট ধরা। সময় হয়েছে আমাদের নজর উচু করার, বিশ্বাস করার সময় হয়েছে আমরাও পারি। অনেক আশায় বুক বাঁধি একদিন আমাদের দেখে প্রথমেই কেউ বলবে না যে “তুমি কি ইন্ডিয়ান” বরং দক্ষিণ এশিয়ার কাউকে দেখলে প্রথমেই বলবে “ও! তুমি কী বাংলাদেশি”।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।