আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাবিশ্বঃ রহস্যময় একটি জগৎ

একি কান্ড হলো
মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানের জ্ঞান এর পর্যবেক্ষণের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সীমানা প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সময় মহাবিশ্ব খুব ক্ষুদ্র পরিসরে বিস্তৃত ছিল। এখন এর ব্যাস ধরা হয় ৯.৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ (আলো প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে। এরূপে আলো এক বৎসরে যে পথ অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে)।

এখন আমাদেরকে এই বিস্তৃত মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করতে হয়। সময়ের ব্যবধানে হয়তোবা মহাবিশ্বের আকার আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে খুব কমই জানি। যে পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি সেটি মহাবিশ্বের কোন্ জায়গায় অবস্থান করছে আমরা তা জানি না। পর্যবেক্ষনের সাথে আমরা অন্যান্য জ্যোতিষ্কের দূরত্ব ও বেগ পৃথিবী সাপেক্ষেই নির্ণয় করে থাকি।

অর্থাৎ আমরা ধরে নিয়েছি আমরা মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থান করছি। কেননা মহাবিশ্ব সমরূপী (যেকোনো দিকে যেকোনো সময়ে এর ঘনত্ব একই)। প্রাচীনকালে মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের ধারণা কেমন ছিল সেটি বিশ্লেষণ করার আগে আমাদের জানতে হবে তাদের কাছে গবেষণা করার জন্য কি ধরণের উপকরণ ছিল। তাদের ছিল দৃষ্টিশক্তি, ছিল দিনের আকাশে সূর্য এবং রাতের আকাশে চাঁদ ও তারকারাজি। তারা তাদের দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে সূর্যকে, রাতের আকাশকে এবং তারা যে পৃথিবীতে বসবাস করেছে তাকে।

আমরা যদি ক্ষণিকের জন্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির কথা ভূলে যাই এবং ভূলে যাই আধুনিক বিজ্ঞানের যুক্তিগুলো তাহলে আমরা কিরকম মহাবিশ্ব দেখতে পাবো? আমরা দেখতে পাবো আমরা যে পৃথিবীতে বসবাস করছি সেটি সমতল। সূর্য সকালবেলা কোন এক জায়গা থেকে উদিত হয় এবং সন্ধায় আবার ডুবে যায়। আমাদের মাথার উপর ছাদের মত বিশালাকায় আকাশ এবং তার সাথে লাগানো অনেকগুলো তারকা। এগুলো হচ্ছে আমাদের প্রত্যক্ষলব্ধ জ্ঞান। প্রাচীন গ্রীসে মানুষ মনে করতো পৃথিবী সমতল।

এর উপর রয়েছে তাবুর ছাদের ন্যায় বিশালাকায় আকাশ। যেখানে অবস্থান করে তারকারা। মহাবিশ্বে অদৃশ্য আরেকটি জগৎ রয়েছে যেটি আকাশের পিছনে অবস্থান করছে। সেখানে রয়েছে স্বর্গ ও নরক যার বাসিন্দা হচ্ছে দেবতারা। পৃথিবীর নিচেও মহাবিশ্ব বিস্তৃত ছিল।

পৃথিবীটা দাড়িয়ে আছে কচ্ছপের পিঠের উপর যার নিচেও রয়েছে অসংখ্য কচ্ছপের স্তর। আমরা যদি আমাদের প্রত্যক্ষলব্ধ জ্ঞানের সাথে তাদের এই ধারণাকে মিলাই তাহলে আমরা তাদের পর্যবেক্ষণকে তাদের সময়ের প্রেক্ষাপটে খুব নিম্নমানের বলতে পারি না। আমরা যদি ক্ষণিকের জন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা ভূলে যাই এবং চিন্তা করি আমাদের গোল পৃথিবীতে অবস্থানটা কেমন হবে, তাহলে খুব সাধারণ জ্ঞান থেকেই আমরা বলতে পারবো একটি গোল বলের উপর কোন জিনিস রাখলে সেটি যেমন গড়িয়ে পড়ে তেমনি আমরাও সবাই গড়িয়ে পড়বো। গোল পৃথিবী ঃ গ্রীকরা যখন বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমন করা শিখলো এবং তারা যখন ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেল তখন ক্রমশ তাদের মনে সমতল পৃথিবী সম্পর্কে সন্দেহের জন্ম দিল। ৩৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল তার বিখ্যাত অন দ্যা হেভেন (ঙহ ঃযব ঐবধাবহ) বইটিতে পৃথিবী যে গোল তার পিছনে কয়েকটি যুক্তি দেখিয়েছিলেন।

প্রথমত, দূর থেকে জাহাজ আসার সময় তার পাল আগে দেখা যায়। যদি পৃথিবী সমতল বা চ্যাপ্টা থালার মত হত তাহলে জাহাজের সম্মূখভাগ আগে দেখা যেত। দ্বিতীয়ত, ধ্রুবতারাকে উত্তর গোলার্ধ থেকে যতটা উপরে দেখায়, দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে দেখলে ততটা উপরে দেখায় না। মিশর ও গ্রীস থেকে আলাদা আলাদাভাবে ধ্রুবতারার এই আপেক্ষিক অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হয়। যেহেতু ধ্রুবতারা উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করে সেহেতু উত্তর গোলার্ধ থেকে দেখলে একে মাথার উপরে অবস্থান করছে বলে মনে হবে।

কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে দেখলে একে দিগন্ত রেখায় অবস্থান করছে বলে মনে হবে। তবে এরিস্টাকাস করেন যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণটি। তিন দেখান চন্দ্রগ্রহণের কারণ সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী আসা। আর চন্দ্র গ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর সব সময় গোলাকার হয়। পৃথিবী যদি চ্যাপ্টা থালার মত হত তাহলে সূর্য ঠিক যখন পৃথিবীর মাঝখানে নিচে অবস্থান করে কেবল তখইি পৃথিবীর ছায়া হত গোলাকার।

অন্যথায় হয় সরলরৈখিক নতুবা উপবৃত্তাকার। কিন্তু পৃথিবীর ছায়া সব সময়ই গোলাকার। পৃথিবী কেন্দ্রীক মহাবিশ্বঃ এরিস্টটল মনে করতো পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থান করছে এবং অন্যান্য গ্রহ ও তারকারা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে টলেমী (চঃড়ষবসু) এরিস্টটলের তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে মহাবিশ্বের একটি প্রতিরূপ অঙ্কন করেন যার কেন্দ্রে অবস্থান করছে পৃথিবী এবং যাকে ঘিরে রয়েছে আটটি গোলক। এই গোলকগুলো বহন করতো চন্দ্র, সূর্য, সেই যুগে আবিষকৃত পাঁচটি গ্রহ _ (বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি) এবং সর্বশেষ ছিল তারকারা।

এই তারকারা পরস্পরের সাপেক্ষে সর্বদা একই অবস্থানে থাকে, কিন্তু তারা একত্রে আকাশের এপার থেকে ওপারে ঘোরে। এই শেষ গোলকের বাইরে কি ছিল তা জানা সম্ভব ছিল না। তবে চার্চ মনে করতো বাইরে ছিল স্বর্গ ও নরক। সূর্য কেন্দ্রীক মহাবিশ্বঃ পৃথিবী কেন্দ্রীক মহাবিশ্ব দীর্ঘদিন টিকে ছিল। কারণ চার্চ এটিকে গ্রহণ করেছিল।

আর ধর্মীয় ব্যাখার চিরন্তন সত্যের কথা মাথায় রেখে কেউ এই তত্ত্বের বিপরীত কোন পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেনি। কিন্তু ১৫১৪ সালে পোলিশ পুরোহিত নিকোলাস কোপার্নিকাস প্রকাশ করেন সৌরকেন্দ্রীক মহাবিশ্বের চিত্র। তবে তিনি এটি নিজের নামে প্রকাশ না করে বেনামে প্রকাশ করেছিলেন। যখন জানা গেল এটি কোপার্নিকাস প্রকাশ করেছে ততদিনে কোপার্নিকাস মারা গেছে। কোপার্নিকাসের মতে সূর্য কেন্দ্রে স্থিরভাবে াঅবস্থান করে আর পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ সূর্যকে বৃত্তাকার পথে পরিভ্রমন করে।

কিন্তু এই বৃত্তাকার গতিপথের ব্যাপারে আপত্তি তোলেন ডেনমাকেৃর জ্যোতির্বিদ নাক কাটা টাইকো ব্রাহে ( এক মল্লযুদ্ধে তার নাক কাটা পড়ে, সেই থেকে তিনি একটি স্বর্ণের কৃত্রিম নাক ব্যবহার করতেন এবং তাকে নাক কাটা টাইকো ম্রাহে বলা হয়)। কেননা পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞানের বৃত্তকার গতি মিল ছিল না। তবে জোহান কেপলার ও গ্যালিলিও গ্যালিনি এই দুইজন জ্যোর্তিবিদ কোপানিকামকে প্রকাশ্যভাবে সমর্থন করেন। পৃথিবী কেন্দ্রীক মহাবিশ্বের উপর সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসে ১৬০৯ সালে। এই বছর গ্যালিলিও নিজের আবিষ্কার করা দুরবিক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে পান বৃহস্পতির উপগ্রহগুলো বৃহস্পতিকে প্রতক্ষিণ করছে যদিও সবকিছুরই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার কথা।

ইতিমধ্যে জোহান কেপলার কোপার্নিকাসের দেওয়া বৃত্তাকার কক্ষপথের পরিবর্তন করেন। তিনি বলেন, গ্রহগুলো বৃত্তাকার পথে চলমান নয়। এটি উপবৃত্তাকার পথে চলমান। তার এই উপবৃত্তআকার কক্ষপথের সাথে পর্যবেক্ষণ করার ফলাফলের অনেক মিল ছিল। তার ধারণা ছিল গ্রহগুলোকে এই উপবৃত্তাকার পথে ঘুরতে বাধ্য করে এক প্রকার চৌম্বক বল।

তিনি এর উপর ভিত্তি করে তিনটি সূত্র প্রদান করেন যা কেপলারের গ্রহগতি সম্পর্কিত সূত্র নামে পরিচিত। এরপর গ্যালিলিও গ্যালিলি করেন আরেকটি যুগান্তকারী পরীক্ষা। তিনি একটি ঢালু পথে কতকগুলো ভিন্ন ভরের মার্বেল ছেড়ে দেন এবং তাদের পতন পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন মার্বেলগুলো একই সাথে গড়িয়ে পড়ছে। যদি তারা ছিল ভিন্ন ভিন্ন ভরের।

এর পিছনের অন্তর্নিহিত কারণ তিনি আবিষ্কার করতে পারেন নি। এর ব্যাখ্যা পাওয়া অনেক পরে ১৬৮৭ সালে। স্যার আইজ্যাক নিউটন তার কিলোসোকিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিরা ম্যাথামেটিকা গ্রন্থটি প্রকাশ করার পর। তিনি এখানে শুধুমাত্র স্থানকালে গ্রহগুলো কিরূপে চলাচল করে তার ব্যাখ্যাই দেননি সাথে সাথে গ্রহগুলোর কক্ষপথ সম্পর্কেও নিশ্চিত ধারণা দিয়েছেন। এই তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণাই একে অপরকে তার নিজ দিকে আকর্ষণ করে যা তাদের ভরের সমানুপাতিক এবং দুরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

অসীম মহাবিশ্ব ও সসীম মহাবিশ্বঃ এতদিন মহাবিশ্ব বিস্তৃত ছিল একটি ক্ষুদ্র পরিসরে। কিন্তু নিউটনীয় তত্ত্বনুসারে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজদিকে আকর্ষণ করে। সুতরাং কোন বস্তুকণাই স্থির থাকতে পারে না। তারা এই আকর্ষণ বলের কারণে সর্বদা গতিশীল াথাকবে। কিন্তু যদি মহাবিশ্ব অসীম হয় তাহলে তারা একে অপরের উপর পতিত হবে।

কেননা যখন তারা সীমিত এলাকায়ই ছুটাছুটি করে তখন অবশ্যই তারা এক সময় একে অপরের খুব নিকটে চলে আসবে এবং তারা মহাকর্ষ বলের দরুণ একে অপরকে আকর্ষণ করবে এবং একজন আরেকজনের উপর পতিত হবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ১৬৯১ সালে নিউটন াবললেন, তারকার সংখ্যা যদি অসীম হয় এবং তারা যদি অসীম স্থানে ছুটাছুটি করে তাহলে আর এই রকম সমস্যা থাকে না। কেননা তাহলে ছুটাছুটি করার জন্য তাদের পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে এবং তাদের পতিত হবার মত কোন নির্দিষ্ট কেন্দ্র থাকবে না। কেননা অসীম মহাবিশ্বের সব বিন্দুকেই কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু ১৮৩২ সালে অসীম স্থির মহাবিশ্বের ব্যাপারে আপত্তির সমাধান করার চেষ্টা করেন।

হাইরিস ওলবারস্ বলেন, মহাবিশ্ব যদি অসীম হয় তাহলে দৃষ্টির প্রতিটি রেখাই একটি তারকার পৃষ্ঠে শেষ হবে এবং রাাত্রিতেও সমস্ত আকাশ সূর্যের মত উজ্জ্বল দেখবে। তিনি এর বিরূদ্ধে যুক্তি দেখান যে, দুর থেকে আসা তারকার আলো অন্তবর্তী পদার্থ দ্বারা শোষিত হবে। ফলে আমরা তা দেখতে পাবো না। কিন্তু এরকম যদি ঘটে তাহলে অন্তবর্তী পদার্থগুলোও উত্তপ্ত হবে এবং আমরা রাতের আকাশে সম্পূর্ণটাই সূর্য পৃষ্ঠের মত দেখতে পাবো। এই সমস্যা এড়াবার একটি মাত্র পথ আছে।

আর সেটি হল তারকাগুলো চিরকালই ভাস্বর নয়। এটি কালের কোন এক সময় সৃষ্টি হয়েছে এবং কালের কোন এক সময় হয়তবা এর সমাপ্তি ঘটে। ফলে উত্তপ্ত হওয়ার পর্যাপ্ত সময় তার থাকছে না। মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিকাশঃ বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিক পর্যন্ত জগতের আবহাওয়া সম্পর্কে একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার হল কেউই মহাবিশ্ব বিস্তৃত হচ্ছে না সংকুচিত হচ্ছে এ রকম প্রস্তাব উত্থাপন করেন নি। সাধারণত মেনে নেওয়া হয়েছিল, হয় মহাবিশ্ব চিরকালই অপরিবর্তিত অবস্থায় বর্তমান ছিল, নতুবা কোন এক সময় বর্তমানে যেরূপ তেখছি মোটামুটি সেরূপেই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল।

এবং মহাবিশ্বের এইরূপ সৃষ্টির একটি সময় সীমাও নির্ধারণ করেছিল তৎকালীন চার্চ। সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পকর্ীয় হস্তক বুক অব জেনেসিস (ইড়ড়শ ড়ভ এবহবংরং) বই অনুসারে মহাবিশ্বের বয়স সাত হাজার বছরের মত। কিন্তু ১৯২৭ সালে াএকজন বেলজিয়ামের রোমান ক্যাথলিক চার্চের পুরোহিত জর্জ লেমাইতার বলেন, মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে একটি আদিম কণার মহাবিস্ফোরণের ফলে। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন বিগ নয়েজ (ইরম হড়রংব)। পরবর্তীতে ১৯২৯ সালে এডুইন হারল এই তত্ত্বের পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফল পখাশ করেন এবং এর নাম রাখেন বিগ ব্যাং (ইরম ইধহম)।

তিনি বলেন যেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন, সে দিকেই দেখা যাবে সুদুরের নীহারিকাগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অন্য ভাষায় মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে অতীতে বস্তুপিন্ডগুলো পরস্পরের নিকট ছিল এবং সে সময় মহাবিশ্বের ঘনত্ব ছিল অসীম। ধরা হয় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে এই বিস্ফোরণটি হযেছিল এবং বিস্ফোরণের ফলে শক্তির বিকিরণ শুরু হয় এবং বস্তুকণাগুলো একে অপরের কাছ থেকে ছুটতে থাকে। খুবই ক্ষুদ্র সময়ের (১০-৩৩ ংবপ) ব্যবধানে এর প্রথম দফা সম্পন্ন হয়।

দ্বিতীয় দফায় নিউক্লিয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে মাঝারিা সাইজের পরমাণু (লোহা, নিকেল ইত্যাদি) তৈরি হয় এবং বিকরণ চলতে থাকে এবং মহাবিশ্ব সমপ্রসারিত হতে থাকে। এই সমপ্রসারণ কতদিন চলবে তা অজানা। ধারণা করা হয় চিরকালই চলতে থাকবে এই সমপ্রসারণ। তৃতীয় দফায় মহাবিশ্বের পরিণতি কি হবে তাও আমরা জানি না। মহাবিশ্বের এখনও অনেক রহস্যই আমরা জানি না।

মহাবিশ্বের রয়েছে এমন পদার্থ যার রয়েছে ৭৪% শক্তি। কিন্তু আমরা এই গুপ্ত পদার্থ সম্পর্কে জানি না। আমরা জানি না ২২% নন-রাসায়নিক পদার্থ সম্পর্কে। অথচ আমরা এদের উপস্থিতি অনুভব করি। আমরা যা জানি তা মাত্র ৪% পদার্থ সম্পর্কে।

তাছাড়া মহাবিশ্বের সমপ্রসারণের ত্বরণগতির কারণও আমরা জানি না। মহাবিশ্বের যে বিষয়গুলোর উপর বিজ্ঞানের দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে তা নিম্নরূপঃ ১. মহাবিশ্ব সমরূপী অর্থাৎ যেকোন দিকে ঘনত্ব একই। ২. মহাবিশ্ব সমপ্রসারিত হচ্ছে। ৩. মহাবিশ্ব সমতল বিশিষ্ট। ৪. মহাবিশ্বের এক চতুর্থাংশে পদার্থ ও তিন-চতুর্থাংশে ডার্ক এনার্জি (উধৎশ বহবৎমু) রয়েছে।

এক চতুর্থাংমের মধ্যে আবার এক পঞ্চমাংশ আমাদের জানা (ইধৎুড়হরপ) এবং বাকি অংশ নন-ব্যারিয়নিক। যে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণে রয়েছেঃ ১. মহাবিশ্ব কতবেগে সম্পসারিত হচ্ছে। ২. কি পরিমাণ বস্তু এই মহাবিশ্বে রয়েছে। ৩. ডার্ক এনার্জি এবং ডার্ক ম্যাটার (উধৎশ সধঃঃবৎ) এর ধর্ম এবং প্রকাশ। ৪. কেন মহাবিশ্ব সমরূপী।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।