আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাজমুল সাহেবের জন্মদিন

কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন।

নাজমুল ইসলাম সাহেব আনন্দিত হবেন না লজ্জা পাবেন ঠিক বুঝতে পারছেন না। ৫০ বছর বয়স হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি তার।

তার ছেলে মেয়েরা মিলে ঠিক করছে বাবার জন্মদিন পালন করা হবে। কোনোরকম ঘরোয়া পরিবেশে না। মহা হুলস্থুল ভাবে। পারলে হাতি ঘোড়ার ব্যাবস্থাও যদি করা যায় আর কি!! আজকে থেকে ৫০ বছর আগে নাজমুল ইসলাম সাহেবের যখন জন্ম হ্য় সেটা খুব ভালো সময় ছিলনা। বস্তুত দেখা যায় তার জন্মদিনের সময় সব অঘটনগুলা ঘটে।

তার জন্মের কয়েকদিন পর তার বাবা মারা যান। তাদের কষ্টের সংসারে জন্মদিন পালন করা সম্ভব নয়। কিন্তু তার আশেপাশে অনেকের জন্মদিন পালন উৎসব দেখে তিনি মাঝে মাঝেই কেমন জানি বিষন্ন হয়ে উঠতেন। যদিও তিনি সেটা কাউকে বুঝতে দেননি কখনো। ছোটোবেলার জন্মদিনের আবেগ বড়বেলায় থাকেনা কিন্তু তিনি বেশ অবাক করে খেয়াল করলেন তার সব অঘটনগুলা জন্মদিনের কয়েকদিন আগেই ঘটে।

তিনি ছাত্র মোটামুটি ভাল ছিলেন কিন্তু এস এস সি এর রেজাল্ট তার ভাল হয়নি এবং তার ধারনা এটা জন্মদিনের কয়েকদিন আগে প্রকাশ হয়েছিল বলে। নিজের জন্মদিনের দিন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যান কিন্তু তার বন্ধুর সেইখানে চাকরি হইয়ে যায় তার হয় না। এছাড়াও ছোটোখাট বিভিন্ন অঘটন তো জন্মদিনের সময় হতই। বড় অঘটনটাও সেরকম ভালই ছিল। তার ৩৫ তম জন্মদিন এর দিন তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে তার আরেক বন্ধুর হাত ধরে চলে যায়।

তার স্ত্রী কে তিনি বড়ই ভালবাসতেন কিন্তু তারপরও এমন কেন ঘটল তিনি বুঝতে পারেন-নাই। তার তিন ছেলেমেয়েকে তিনি নিজেই কোলে পিঠে মানুষ করেন। এই একটা জায়গায় তিনি বেশ সফল। ছেলে মেয়েগুলা উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে। বাবার জন্মদিন পালন করাটা তাদের খুবই শোভা পায়।

নাজমুল ইসলাম সাহেবের জন্মদিন উপলক্ষে সেই এলাহি কারবারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। নাজমুল ইসলাম সাহেব এত বছর বয়সেও বাচ্চাদের মত উত্তেজনা অনুভব করছেন। গোপনে তিনি চোখের পানিও মুচছেন। তার ছেলে মেয়েরা বাবার জন্মদিন এর বাজেট করেছে এটা অবশ্য তারা বাবাকে বলেনি। তারা এটা গোপনে করেছে।

কিন্তু নাজমুল সাহেব সেটা জানেন। নাজমুল ইসলাম সাহেব তার বিবাহিত স্ত্রীর কথা ভাবছেন। তার বন্ধুর কথা ভাবছিলেন। তার জীবনটার কথা ভাবছিলেন। নাজমুল ইসলাম সাহেবের এরকম ভাবার সময় কোথেকে জানি ফোন আসল।

তার বন্ধু মরণ ব্যাধি রোগে আক্রান্ত। তাকে সারিয়ে তোলার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। নাজমুল ইসলাম সাহেব একবার জানি কি ভাবলেন। তারপর তার ছেলে মেয়েদের কাছে গেলেন। নাজমুল ইসলাম সাহেব তার জন্মদিনে বেশ কিছু টাকা পেলেন।

তার জন্মদিন উদযাপনের জন্য যে বাজেট করা হয়েছিল সেটা তিনি তার ছেলে মেয়েদের কাছে অনেকটা হাত পাতার মত নিলেন। তারা তার বাবাকে যদি আসলেই জন্মদিনের উপহার দিতে চায় তাহলে জানি ওই টাকাটাই দেয়। ছেলেমেয়েরাও বুঝল বাবা কিসে খুশি হবেন। নাজমুল ইসলাম সাহেব তার বন্ধুর চিকিৎসা করাতে রওনা হলেন। তার স্ত্রী সেখানে আছেন সেটা নিয়ে তার খুব বেশি মাথাব্যাথা নেই।

কোন মানুষের জীবনের থেকে বড় আর কিছু হতে পারেনা। কিছু কিছু মানুষের ভাগ্যে আসলে জন্মদিন ব্যাপারটাই নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.