আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধুর মৃত স্ত্রী

কবিতা

বন্ধুর মৃত স্ত্রী আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ স্ত্রী মারা গেলে সে কি আর স্ত্রী থাকে বা তার সাথে কিরকম সম্পর্ক হয় যখন সে শুধু মাটির সম্পত্তি। বেঁচেথাকা সময়ে যে কাছাকাছি ডাকাডাকি আলোঅন্ধকারে দেখাদেখি দিনেরাতে হয় এখন এমন তো কিছু আর হয় না। মানে শরীরী থাকা ছাড়া সম্পর্কটা কেমন হয় কোনো যোগাযোগ কি ঘটে যা উপস্থিতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। অথবা বন্ধুর মৃত স্ত্রীকে কি নামে ডাকা যায় যাকে আমি বারান্দায় বা স্কুলের মাঠে কোনোদিন দেখিনি বা যার স্বামী যে আমার বন্ধু আবার দীর্ঘদিন একা একা থেকে হঠাৎ একদিন মনে করে মানুষের আর একটি স্ত্রী লাগে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সে কিভাবে আর একটি মেয়েকে স্ত্রী নামে নিতে চায় যেখানে উপস্থিতি স্ত্রী হওয়ার একটা প্রধান শর্ত।

তখন ঐ যে মৃত স্ত্রী মানে গতকালও যে মোমবাতির নিচে চির সঙ্গী ছিল তার ফেলে যাওয়া খোলস কি করে। সেকি আবার নতুন স্ত্রীর হাড় মাংস রক্ত চুল আঙুল মিহি স্কিনের উপর জায়গা নেয়। চলতে চলতে এসব ভাবতে ভাবতে একদিন মতি ভাই আমার বন্ধুর বাসায় চলে আসি। আবার বন্ধুর মৃত স্ত্রী এত আর কাছাকাছি হয় না যখন দেখি বন্ধু আবার একটা লাল রঙের টি সার্ট পড়ে দরোজা খুলে দাঁড়ায়। পরে যে আবার একসময় খোলা ছাদে এসে সিগারেট ধরায় যখন একটু একটু রাত, বৃষ্টি পড়ে দোলনাটা একটু ভিজে যায়।

তাতে বন্ধু তেমন কিছু করে না শুধু রান্নাঘরের চুলোর আগুনটা বন্ধ করে দিয়ে আমাদের সাথে বসে থাকে। দরোজার সামনেই নাকেমুখে সর্বগন্ধ হানা দেয়। সুতরাং বুঝে ফেলি বন্ধু প্রথমে বেশ মনোযোগ দিয়ে পাঁকশাক করেছে। ঘরে ঢুকতেই সালাম দিয়ে প্রথমে একটা নতুন পরিচিতির পালা চলে হাত ধরা হাসি দেয়া বাড়িটার গল্প এসব চলে। আমরা রান্নার কথা বলি তখন আবার হাসতে হাসতে মতি ভাই খাবারের কথা বলে।

আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে একসময় টেবিলে খাবার দেয়। টেবিলে পরিবেশনটা এমন যে গ্লাস প্লেট আর লবণদানিটা কি সুন্দর ছবি! এমনভাবে সাজানো যে আরো ক্ষুধা লাগে বেশি মানে পরিবেশন যেমন সরাসরি আহ্বান করে। আমি বলি মতি ভাই এগুলো আসেলে কে করছে? এমন সাংঘাতিক প্রীতিমূলক আপনি তো!। এতে তিনি কোনো কথা না বলে টেবিলটার দিকে ইশারা করে। তো প্রথমে দেখি অনেক কিছু রান্না করা ছোট মাছের সাথে পুঁইশাক ডাল মুরগীর মাংসের ঝোল বেশ কায়দা করে ছন্দপতন নাই।

প্রশংসা করতে করতে সময় যায় যদিও আমরা লজ্জা পাই তলে তলে। তো খাবার চলে কারণ সবুজের প্রতি সাধারণ একটা চাপ থাকে তাই হঠাৎ একটা কাঁচা মরিচ খাওয়ার ইচ্ছা মনে জাগে। বলি মতি ভাই একটা কাঁচা মরিচ দেন। মতি ভাই টেবিলের পাশে স্লাইড ডোরটার দিকে চোখ মারে। স্লাইড ডোরটা এত বড় একটা গ্লাস বাহ কোনোদিন দেখিনি।

তারপর দেখি পাশে খোলা ছোট বারান্দা একটা। সাথে সাথে নিচের দিকে দু একটা ফুলের টব। প্রথমে ফুল বলে মনে হয় কিন্তু পাতাগুলো দেখে বিশ্বাস হয় একটা কাঁচা মরিচের গাছ। এখনো বেঁচে আছে শ্বাস নিচ্ছে রোদেমেঘে একটু একটু করে। তখন ধীরে ধীরে সন্ধ্যা তাই আলোআঁধারিতে গাছের পাতাগুলোকে ঠিক আর সবুজ মনে হয় না।

পাতায় পাতায় আবার পাখির বিষ্ঠা শুকিয়ে যাওয়া শাদা চুন। মতি ভাই হাসে আকাশের দিকে তাকায় আবার বলে শিরিন মারা যাওয়ার পর আর হাত দেই নাই তেমন। এইখানে আসতেও ভুইলা গেছি। মাঝে মধ্যে সিগারেটে টান দিতে বার হই আর কি ঐ যে দেখতেছেন না একটা ডাব গাছ ঐটা আমাদের প্রিয় একটা গাছ ছিল। আমি আর শিরিন এখানে বইসা বইসা ডাব গুনতাম এক দুই তিন মজা লাগত।

এসব বলতে বলতে মতি ভাই আমার হাত ধরে। লক্ষ করি বেশ বাতাস লাগে এখানে কারণ কোনো দেয়াল রাখা হয়নি কোনদিকে। সবদিকেই খোলা। আর একটা লুকনো দড়ি এমনভাবে যে কেউ দেখবে না মানে খুব যত্ন করে দড়িটা লাগানো হয়েছে। শাড়ি কাপড়ের ছায়া শরীরের ভার দড়ির উপর পড়ছে।

বাইরে থেকে আবার আমরা ভেতরে আসি। তো আবার আমাদের খাওয়া চলে গন্ধ নাকে লাগে। মাছগুলো এমন ভাবে ভাজা যে একটা হাত এসে লাল ঝোলের মধ্যে দোল মারে। পোড়া পেঁয়াজের পাতা পানিতে কার মুখ হয় স্লাইড ডোর দিয়ে আবার কাঁচা মরিচের সবুজ আসে। এর মধ্যে একটা টিলিফোন আসেলে মতি ভাই ওঠে যায়।

তখন টেবিলের উপরে আমি আর রানি যে আমার বউ অপেক্ষা করি আর ভাত খাই। আমি টেবিলটার গায়ে হাত দিই কারণ এখানে এইরকম টেবিল খুব একটা দেখা যায় না। খুব ভারি এই চার তলায় উঠাতে গেলে কতজন লোক লাগবে হায় হায় ছোট কিন্তু মোস্ট সফিসটিকেটেড। মতি ভাই প্রবেশ করে বলে খান খান, জানি না কেমন লাগতাছে, সরি আমার একটা ফোন আসছিল। সবার মাথা খারপা হইয়া গেছে।

খালি প্রশ্ন আর প্রশ্ন। তাতে আমরা বলি বেশ ভালো হইছে রান্না। আহা পুঁইশাকের তরকারি কতদিন ধরে খাই না ভাই। এ কথা শুনে মতি ভাই আমাদের সাথে খেতে বসে। এত সুন্দর টেবিলটার দিকে তাকিয়ে আমি কিন্তু টেবিলটার কথা ভুলে যাই না বলি মতি ভাই এই টেবিলটার কাহিনী বলেন।

এতে মতি ভাইয়ের মুখে একটা পরিবর্তন দেখতে পাই। মানে মুখের রঙ কেমন যেন লালচে হয়ে গেল যেমন সুন্দর মানুষের প্রায়ই হয়। বলে শিরিন একদিন বিশেষ অর্ডার দিয়া টেবিলটা জাপান থাইকা আনছিল জাপান থেকে একটি লোক আইসা লাগাইয়া দিয়া গেছে বুঝলেন। এতে আমি অবাক হই মানুষের এত শখ। বেশ বেশ তো আমার মাত্র কাঠের একটা টেবিল তাও আবার সেকেণ্ড হেন্ড দোকান থেকে কেনা।

আস্তে আস্তে খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ি। হাত ধোয়ার জন্য বাথরুমের দিকে যাই কিন্তু ঢুকেই আহা বন্ধুর মৃত স্ত্রীর বাথরুম। দেখি বেশ বড় আর নীট এণ্ড ক্লিন বাথরুমটা। আমার এরকম একটা থাকলে মাঝে মাঝে ঘুমোতে পারতাম। কিরকম একটা গন্ধও আছে চেনা জানা সাবানের সাথে পুরনো শাড়ি কাপড়ের গন্ধ।

পুরানা পল্টনের আমার বোনের বাসায় এরকম একটা গন্ধ পাই মাঝে মাঝে। একসময় হাত যখন বাড়ালাম টেপের পানির দিকে তখন শীতকাল আর নয়। সজোরে গ্রীষ্মকাল এসে পড়েছে বিছানার উপরে। টেপ থেকে যে ঠাণ্ডা পানিটা গড়িয়ে পড়ল তাতেও একটা গন্ধ পেলাম কেমন কাঁচা বাঁশের ভেতরের সুঘ্রাণ বা এই যে একটু আগে ভাতের সাথে কাঁচামরিচ খেতে চেয়েছি তার গন্ধ। পানি মুখে ঢেলে ঢেলে আমাকে দেখি সামনের আয়নায় আমার ছবি।

আমিইতো। পানিতে হাত ধুই পানি কেন এত হিম প্রতিবেশী যা আবার বোনের মতো লাগে ডাক দেয় জাগিয়ে দেয়। হঠাৎ আয়নার দিকে আবার চোখ যায় শব্দ পেয়ে তাকাই। না কেউনা শুধু আমিইতো। বের হওয়ার জন্য তৈরী হই কিন্তু একটা সবুজ মতো গাছের ছায়া চোখের মধ্যে পড়ে।

ঠিক দাঁড়িয়ে ছিল বাথটাবের কাছ ঘেঁষে। নিচে একটা নীল চুড়ি- একদম চোখ বের করে তাকিয়ে। এদিকে রানি মানে আমার বউ মতি ভাইয়ের সাথে আলাপ করছে। যে মেয়েটার কথা ওরা বলছে ও আবার আমার বউয়ের কাছের বান্ধবী। কেয়া নামের এই মেয়েটি মালিবাগে একটা ছোট বাচ্চা নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকে আর একটি এন জিওতে কাস্টমার সার্ভিসের চাকরি করে।

আমি একটু একটু চিনি একবার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামী দিনেরাতে অফিসের একটা মেয়ের সাথে বিয়ের মতো একটা সম্পর্ক করে বলে কেয়ার সাথে থাকা হয়নি। কিন্তু মতি ভাই মিয়েটার ছবি আগেই দেখে নেয় যা সে ই-মেইল থেকে পায়। বলে আমার পছন্দ হইছে মাশাল্লাহ ভদ্রমহিলা মনে হইল। তবে জানি না উনার আমাকে কেমন লাগবে।

অনেক কথা বলার আছে বুঝলেন। একজায়গায় দুজনে বইসা একটু আলাপ কইরা নিতে হইব। রানি কেয়ার আর একটা ছবি বের করে বলে মতি ভাই দেখেন দেখেন আর একটা সুন্দর ছবি আছে। মতি ভাই এক চোখে মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখে। কেয়া একদম নায়িকার মতো দেখতে চোখ ফেরানো যায় না।

শরীরে ইচ্ছে মতো হালকা নীল একটা শাড়ি পড়া। স্টুডিওতে ফ্যান ছেড়ে বাতাসে চুল উড়ছে যেন মেঘ ধরছে এমন। রানি বলে দেখেন দেখেন একদম নাটকের অপি করিম। আমি টেলিভিশনের দিকে চোখ দিয়ে রেখেছি যদিও টিভি অফ। শাদা ফুল তোলা একটা পর্দা যা আবার অনেক ময়লা।

পাশে একটা ছোট টুল উপরে ফুলদানি। মরাগাছ পাতা ঝরছে। উপরে একটা গ্লাস অনেকটা পুকুরের মতো। সাঁতার কাটছে কেউ। এখন শীতকাল তো আর পাশে এত সুন্দর গোসলখানা থাকতে যেখানে এইমাত্র নীল চুড়িটা দেখলাম হা করে তাকিয়ে।

পুকুরে আবার চোখ যায় তাকিয়ে আছে কেউ আমদেরকে দেখছে। কিন্তু না আমারই মুখ ওখানে। আমার পিপাসা লাগে মনে করি আবার পানি কেন এত প্রতিবেশী। তো কিছু দিনের মধ্যে সব কিছু পাকাপাকি হয়ে গেলে মতি ভাই রানির বান্ধবী কেয়ার সাথে কথামত একদিন একান্ত গোপনে দেখা করে ফেলে। কেয়া দূর থেকে আমার বউয়ের সাথে টেলিফোনে আলাপ করে।

মতি ভাইয়ের গল্প। বলে আমরা প্রথমে কথা বলি পরে মতি আমার হাত ধরে আমাকে চায় বলে আমি তোমারে সুখী করব। তারপর আমরা রেষ্টুরেন্টে ভাত খাই পার্কে চানাচুর খাই। মতি ভাই আমার আঙুল টিপে দেয় বলে কেয়া তুমি বেশ ভাল মেয়ে। আমার মন ধরছে।

আমি বুঝতে পারি ওদের মধ্যে একটা প্রেমের মতো সম্পর্ক হয়েছে যা বেশ জমে উঠেছে। ওপাশ থেকে রানির হাসির শব্দ শোনা যায় কেয়ার সাথে যা ঘটে। কিন্তু আমার হঠাৎ মতি ভাইয়ের বাসাটার কথা মনে আসে। আর সেই টেবিলটা জাপান থেকে আনা সাথে সাথে শাদা ভারি গ্লাস সামনে স্লাইডিং ডোর খুললেই কাঁচামরিচের গাছটা আর বাথরুমটা তার শাড়ি কাপড়ের গুমোট গন্ধ তো আছেই। একটা ঝিম মারা পুকুর-আয়না যেখানে আমার ছবিটাও ভেসে উঠেছে।

সাথে সাথে কেয়ার ঘোমটা পড়া ছবিটাও নীল রঙের শাড়ি পড়া কেয়া সেই জাপানি ডাইনিং টেবিলে এসে বসেছে। একদিন রানির বান্ধবীর সাথে মানে কেয়ার সাথে মতি ভাইয়ের সত্যি সত্যি বিয়ে হয়। তখন মৃত স্ত্রী আর স্ত্রী হয় না বা মৃত স্ত্রী মরার পরে কী হয়?। কি নামে তাকে ডাকা যায়?। কুড়ি বছরের ঘর সংসার যার তাকে কী ভূমিকা দেয়া যায় যে শখ করে জাপান থেকে ভারি ডাইনিং টেবিল সংগ্রহ করেছিল তাকে কোথায় রাখা যায়।

যেদিন কেয়া মতি ভাইয়ের বউ বা স্ত্রী হিসাবে ঘরে আসবে বলে ঠিক হয় আমি তখন সেই কাঁচামরিচের গাছ বাথরুম টিভি শাদা বিছানাটার ভবিষৎ বিষয়ে কোনো কূলকিনারা পাই না। চিন্তা করি যদি যাই আবার কি সেই ভারি টেবিলটা দেখতে পাবো যা বন্ধুর মৃত স্ত্রী সব সময়ই জাপান ধেকে কেনে আনে। আর সেই সবুজ রঙের তরকারি কি কেয়া রাঁধতে পারবে সেদিন যেভাবে রান্না করা হয়েছিল বা মতি ভাই বা কেউ রান্না করেছিল। আর ঠিক বাথরুমের যে আয়না টিভির পাশে যে আয়না যা আবার ছোট পুকুর প্রতি সন্ধ্যায় যেখানে গোসল করে সে কী নীল চুড়িটার জন্য আবার বাথরুমটায় ফিরে আসবে? সেখানে আমি নিজেকেও দেখেছিলাম কিনা সঠিকভাবে বলতে পারছিনা আর ঐ কাঠের শক্ত ভারি টেবিলটা তার উপরও কারো তো একটা চোখ থাকে। ১৭/০১/২০১০


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।