আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'কেরোসিনের অভাবে অনেক রাতেই মরিয়মের হারিকেন নিভে গেছে।



বাবা আ. রশিদ দিনমজুর। মা রাশিদা বেগম গ্রামীণ সড়ক মেরামতের নারীশ্রমিক। বাড়ির সব রান্নাবান্নাসহ ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা মরিয়মকেই করতে হয়। এরপর নিজের পড়াশোনা। এরই মধ্যে সে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে।

দিনমজুর বাবা-মা তাঁদের প্রতিদিনের কাজে ব্যস্ত থাকায় এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনও স্কুলে যেতে পারেনি মরিয়ম। পরদিন সকালে স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষক নিজে আসেন মরিয়মের বাড়িতে। যথারীতি মরিয়মের সাংসারিক ব্যস্ততা দেখে কেঁদে ফেলেন প্রধান শিক্ষক। জড়িয়ে ধরেন তাকে। 'মা, তুই এখনো রান্নার কাজ করছিস? তুই যে জিপিএ ৫ পেয়েছিস! তোর মা-বাবা কই? ডাক ওদেরকে, সুখবরটা শোনা!' মা তখন রাস্তার কাজে দূর গ্রামে ব্যস্ত।

বাবা বরগুনার বাজারে দিনমজুরের কাজে। মরিয়মের এমন উত্তরে নির্বাক বনে যান প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ফরাজী। বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি গ্রামের আ. রশিদ হাওলাদার ও রাশিদা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে মরিয়মই বড়। ছোট ভাই রাজীব একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। অপর দুই ভাইবোন মামুন ও হিরামণি দুজনই শিশু শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী।

মরিয়মের এ সুখবরে আনন্দে দুচোখ ভিজে ওঠে বাবা-মায়ের। প্রতিবেশীরা আসেন মরিয়মকে দেখতে। মরিয়ম তার ভালো ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় কালের কণ্ঠকে জানায়, চুলার কাছ থেকে উঠেই তার স্কুলে যাওয়া এবং স্কুল থেকে ফিরেও তার আবার চুলার কাছেই বসতে হয়েছে। তবু প্রতিদিনের এত কাজ তার পড়াশোনায় এতটুকু ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। মরিয়ম জানায়, 'দিনে আমার অনেক কাজ থাকলেও সারা রাত ছিল একান্তই আমার।

ইচ্ছে থাকলে শত কাজের মাঝেও ভালো ফল করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল। ' বড় হয়ে মরিয়ম ডাক্তার হতে চায়। মরিয়মের দরিদ্র মা রাশিদা বলেন, 'কেরোসিনের অভাবে অনেক রাতেই মরিয়মের হারিকেন নিভে গেছে। কিন্তু ওর মনোবল কখনোই নেভেনি।

' তিনি বলেন, 'মরিয়ম প্রায়ই বলত, 'দেখে নিও মা, আমি ভালো রেজাল্ট করবই। '

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।