আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আকাশটাকে বাড়িয়ে দাও

আমি সফল হতে চাই

আমার কোথায় থেকে এসেছি? কি আমার পরিচয়? আমার জন্ম য়ে পৃথিবীতে তা কি কোটি বছর হতেই এই একই রকম নাকি যুগে যুগে এটি পরিবর্তনশীল আমার ভবিষ্যত কি। আমরা কোথায় চলেছি? আমাদের কি চলার শেষ নেই ? এমন হাজারো প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরাপাক ও প্রশ্নের উত্তরের খোজেঁ আমরা আজ বিজ্ঞানের এই অবস্থানে। জীবন যাত্রা মান উন্নয়নের ধারায় আমরা অনেক অগ্রসরমান। যেখানে আমরা নিকট আত্মীয়ের খবর নিতে দুতিন দিন অপেক্ষা করতে হত সেখানে মূহূতেই কোন এক ভীন দেশের বস্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে পারি। সময়ের প্রয়োজনে শতাব্দীর পর শতাব্দী একদল অনুসন্ধিৎসু ও দুঃসাহসী মানুষের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে মানুষ জয় করেছে অজেয়কে।

মানুষের পদচারণা আজ দুর্গম গিরি, সমুদ্র, পর্বত অতিক্রম করে মহাকাশের সুবিশাল ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। মানুষ ছুটে চলছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। সেখানে এঁকে দিচ্ছে মানব সভ্যতার পাদটীকা, উত্তোলন করেছে বিজয় পতাকা কিন্তু মানুষের এ সাফল্য অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব হয়নি। হাজারো প্রচেষ্টা ও সাধনার দ্বারাই লিপিবদ্ধ হয়েছে আজকের মানব সভ্যতার মহাকাশ জয়ের কাহিনী। একটা সময় মনে করা হত মহাকাশ গমন একটি অবাস্তব কল্পনা মাত্র।

জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন, গণিত প্রভৃতি বিজ্ঞান বিষয়ের গবেষকরা সৌরশক্তি এবং মহাবিশ্বের নক্ষত্রপুঞ্জ সম্বন্ধে কতিপয় ধারণার বিকাশ ঘটান। খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম ও ৬ষ্ঠ শতকে গ্রীক দার্শনিক থ্যালিস এবং পিথাগোরাস পৃথিবীকে প্রথমবারের মত গোলাকার হিসেবে অভিহিত করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতকে সামোয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যারিষ্ট্রাকাস পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান বলে ধারণা প্রদান করেন। অন্য আরেকজন গ্রীক বিজ্ঞানী খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে তারকারাজি এবং চাঁদের গতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অবতারণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় খ্রিষ্টাব্দে পোটোলমি নামক আলেকজান্দ্রিয়ার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী অনুমান করেন পৃথিবী সৌরশক্তির কেন্দ্র।

এভাবেই শুরু মহাকাশ সম্পর্কে মানুষের প্রাথমিক ধারণার বিকাশ। আধুনিক ধারণার বিকাশ এরপর দীর্ঘ সময়ের মধ্যে মহাকাশ সম্পর্কে মানুষের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ধারণার বিকাশ ঘটেনি। প্রায় ১৪০০ বছর পর ১৬০০ শতকে পোল্যান্ডের প্রখাত জ্যোতির্বিদ নিকোলাস কোপার্নিকাস মহাকাশ সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক, পদ্ধতিগত এবং আধুনিক ধারণা প্রদান করেন। এভাবে শুরু হল মানুষের হাজার বছরের প্রচেষ্টার বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি। পরবর্তীতে টাইকো ব্রাহি, গ্যালিলিও, অ্যডাম্যান্ড হ্যালি, স্যার উইলিয়াম হার্সেল, স্যার জেমস জীনস্ প্রমুখ জ্যোতির্বিদ মহাকাশ গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।

উল্লেখ্য, মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে পদার্থবিদ ও গাণিতিকদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। ১৬৫৪ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী গিউরিক, সপ্তদশ খ্রিষ্টাব্দে স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ধারণা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। যদিও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক পূর্বে তথাপি বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এসে মহাশূন্য গমন সম্ভব হয়েছে মানুষের পক্ষে। ১৯২৬ সালের ১৬ মার্চ রবার্ট গোডার্ড কর্তৃক রকেট আবিষ্কারের ফলে মহাকাশ যাত্রার পথ অনেক বেশি কাক্সিক্ষত ও প্রত্যাশিত হয়ে ওঠে মানুষের কাছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবং স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন পুনরায় মহাকাশ অভিযানের গতি বেগবান হয়।

বিশ্বের পরাশক্তিগুলো নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মহাকাশ ভ্রমণে অধিক মনোনিবেশ করে। বিশেষতঃ ১৯৫০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হলে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে National Aeronautic and Space Administration (NASA)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। মহাশূন্যের কক্ষপথে প্রেরিত প্রথম প্রাণী হল লাইকা নামক একটি রাশিয়ান কুকুর।

এটি মহাকাশে প্রেরিত প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণীও বটে। ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর তাকে রাশিয়া কর্তৃক মহাশূন্যে প্রেরণ করা হয় স্পুটনিক-২ মহাকাশযানের মাধ্যমে। উল্লেখ্য, এই মহাকাশযানটি পৃথিবীতে ফিরে আসেনি এবং মহাকাশযানটি ছেড়ে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কুকুরটির মৃত্যু ঘটে। আশ্চর্যের বিষয় ২০০২ সালের পূর্ব পর্যন্ত রাশিয়া এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কোন তথ্য প্রকাশ করেনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ১১ এপ্রিল রাশিয়াতে লাইকার একটি স্তম্ভ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

মূলত এ কুকুরটির মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে মানুষের মহাকাশ যাত্রার সম্ভাবনা যাচাই করা হয়। আজও রাশিয়াসহ সারা বিশ্বে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে লাইকা নামক কুকুরটি স্মরণীয়। মহাশূন্যে প্রথম মানব রাশিয়ার নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশ প্রদক্ষিণ করেন। ভস্তক-১ নামক মহাকাশযানে চড়ে তিনি ১০৮ মিনিটের মত মহাকাশে অবস্থান করেন। মহাশূন্যে প্রথম মানবী রাশিয়ান নভোচারী ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা মহাশূন্যের প্রথম মহিলা নভোচারী।

১৯৬৩ সালের ১৬ জুন ভস্তক -৫ মিশনে তিনি মহাকাশে গমন করেন। মহাকাশে প্রথম আমেরিকান পুরুষ : এ্যালান সেফার্ড (৫ মে, ১৯৬১ ) আমেরিকান মহিলা : ড. স্যালি রাইড (১৮ জুন, ১৯৮৩ ) ব্রিটিশ পুরুষ : মাইকেল ফোলি (১৯৯৯) ব্রিটিশ মহিলা : হেলেন সারমান মুসলিম পুরুষ : সুলতান সালমান ইবনে আবদুল আজিজ (১৯৮৫) মুসলিম মহিলা : আনুশেহ আনসারী (১৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৬) চাঁদে মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি তার জনগণের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন যে, ১৯৬০ এর দশকের মধ্যে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ চাঁদে অবতরণ করবে। তারই ধারাবাহিকতায় এ্যাপোলো-১০ নামক মহাকাশযান প্রেরণ করা হয় ১৯৬৯ সালের ২৬ মে। কিন্তু এটি সফল হতে পারেনি। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই এ্যাপেলো-১১ নামক মহাকাশযান কেনেডি স্পেস সেন্টার হতে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।

৩ জন নাবিকের তথা কমান্ডার নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স এবং এডউইন অলড্রিন এ ঐতিহাসিক অভিযানের অভিযাত্রী হন। ১৯৬৯ সালের ২ জুলাই নীল আর্মস্ট্রং পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে চাঁদে অবতরণ করেন। চন্দ্র পৃষ্ঠে এঁকে দেন মানব সভ্যতার পদচিহ্ন। উত্তোলন করেন বিজয় পতাকা। ১৯৬৯ সালের ২৪ জুলাই ঐতিহাসিক সফল এ যাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে এ্যাপোলো -১১ এবং এর ৩ জন নাবিক।

উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মহাকাশ অভিযান মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে আজও সারা বিশ্বে চলছে বিরামহীন প্রচেষ্টা। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মহাকাশ অভিযানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল : বেলুন ফ্লাইট ১৯১২ সালে ইউরোপ তথা ব্রিটেনকর্তৃক বেলুন ফ্লাইটের অভিযান পরিচালনা করা হয়। মূলত এর মাধ্যমেই বিংশ শতাব্দীতে মানুষের মহাকাশ অভিযানের সূচনা ঘটে। যদিও এটি একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছিল। স্পুটনিক-১ মহাশূন্যে প্রেরিত প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ হলো স্পুটনিক-১।

এটি ১৯৫৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর রাশিয়া কর্তৃক মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর আয়তন ছিল ৫৮ সে.মি. (গোলাকৃতির) এবং ওজন ছিল ১৮৩.৯ পাউন্ড। স্পুটনিক-২ ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর রাশিয়া কর্তৃক স্পুটনিক-২ উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণ করা হয়। উল্লেখ্য স্পুটনিক-১ স্যাটেলাইটের সফলতার সঙ্গে ‘লাইকা’ নামক একটি কুকুরকে ৭ দিনের জন্য মহাকাশে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু এ অভিযান ব্যর্থ হয়।

ভস্তক-১ মহাশূন্যে প্রেরিত প্রথম মানব মহাকাশ অভিযানের নাম হল ভস্তক-১। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল রাশিয়ার তথা বিশ্বের প্রথম মহাকাশ প্রদক্ষিণকারী নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন এ অভিযানের মাধ্যমে সফল হন। ভস্তক-৫ ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন ভস্তক- ৫ রাশিয়া কর্তৃক মহাকাশে প্রেরণ করা হয়। রাশিয়ার তথা বিশ্বের প্রথম মহিলা নভোচারী ভেলেস্তিনা তেরেসকোভা এ অভিযানের মাধ্যমে মহাকাশ প্রদক্ষিণ করেন। এক্সপ্লোরার-১ ১৯৫৮ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র প্রেরিত প্রথম মহাকাশ উপগ্রহ হল এক্সপ্লোরার-১।

রাশিয়ার স্পুটনিক-১ এবং স্পুটনিক-২ উৎক্ষেপণের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এ উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করে। মারস মঙ্গল গ্রহে প্রেরিত রাশিয়ার প্রথম মহাকাশযান। যা ১৯৬০ সালে ২৫ মে মঙ্গলের উদ্দেশে যাত্রা করে। স্কাইল্যাব ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রেরিত একটি মহাকাশযান। পরবর্তীতে এ নামে যুক্তরাষ্ট্রে একটি মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠে।

সুয়েসি জাপান কর্তৃক প্রেরিত প্রথম মহাকাশযান হচ্ছে সুয়েসি। এটি ১৯৮০ সালে মহাকাশে প্রেরিত হয়। মারস পাথফাইন্ডার ১৯৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক মঙ্গল গ্রহে প্রেরিত অভিযান। এ অভিযানটি মঙ্গল গ্রহে প্রেরিত অন্যান্য অভিযানের তুলনায় অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়েছে। মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে এ মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।

আজও বিজ্ঞানীরা তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে , তাদের দৈনন্দিন নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে। যুক্তির আকাশকে বাড়িয়ে দেবার কারনে এটি সম্ভব হয়েছে, বৈজ্ঞানিক ধারণা আর গবেষণাই এ আকাশকে বাড়িয়ে দেয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।