আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতালের ক্ষয়ক্ষতি



প্রায় সাড়ে তিন বছর পর দেশে আবার হরতালের নামে অরাজকতা শুরু হয়েছে। মুক্ত বুদ্ধি (!!) বন্ধুরা বলতে পারেন অরাজকতার কথা কেন উঠছে? হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার। এ সব বিষয়ে আমার বোধের সীমা বদ্ধতা আছে। আমি বুঝি অধিকাংশ মানুষের জন্যে যা মঙ্গলকর তাই গণতান্ত্রিক। হরতালের কতজনের লাভ জানি না, ক্ষতি বিস্তর লোকের।

এই যে নৌ যান ধর্মঘট চলছে তাতে মানুষের যে ভোগান্তি কোন হরতালে তার ক্ষাত পোষানো যাবে। এবারের হরতালের কারন পত্রপত্রিকায় যা পড়েছি তা হলো মজুরি বৃদ্ধি সহ দীর্ঘদিনের কিছু অমীমাংসীত দাবি দাওয়া। বেতন বৃদ্ধি হয়েছে এবং মোটামুটি সন্তোষজনক ভাবেই হয়েছে। তাহলে ধর্মঘট কাটছে না কেন? একটি কারন হচ্ছে বেতন বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় নৌ যান শ্রমিক ফেডারেশন বলে একটি দল উপস্থিত ছিল না। বেতন বাড়লো আর আমি থাকলাম না সে মিটিংয়ে তাহলে আমার ক্রেডিবিলিটি কোথায়? সেই ক্রেডিবিলিটি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াতেই যাত্রীদের ভোগান্তি।

হরতালে যিনি ক্ষতিগ্রস্থ হন নি তাঁকে এ সব বুঝানো দুষ্কর। একটি ব্যক্তিগত অভিঞ্গতা শেয়ার করি। আমি তখন কালিয়াকৈরের কাছাকছি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। যে প্রতিষ্ঠানের একটি কঠিন নিয়ম ছিলো হরতালের সময় সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা যাবেনা । তখন তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে সারা দেশে আন্দোলন চলছে।

পতিত স্বৈরাচার, ৭১ এর ঘাতক দালাল আর স্বাধীনতার ধারক বাহক তখন মিলেমিশে একাকার। ১৯৯৬ এর ফেব্রুয়ারী হবে সম্ভবত। সেই সময়ের থ্রি মাস্কেটিয়ার্স তিন দিনের হরতাল ডেকেছে। জনগনের জীবন ওষ্ঠাগত। আমার কাছে বেড়াতে এসে আমার ভাইএর দুই বছরের ছেলেটি অসুস্খ হয়ে পড়েছে।

তাকে ঢাকায় নেয়া দরকার। হরতালের শেষের দিকে জোরাজুরি থাকেনা। সেই ভরসায় অফিসের মাইক্রোবাসে রওনা দিলাম। ৪জন শিশু আর ৪ জন নারীপুরুষ নিয়ে আমাদের মাইক্রোবাস জয়দেরপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে পৌছালো। জয়দেব পুরে তখন সন্ধ্যা নামছে।

খবর পেলাম হরতালের মেয়াদ আরও দু'দিন বেড়েছে। একটানা পাঁচদিন হরতাল। বায়লাদেশে আর কখনও হয়নি। তাই বিষয়টি খুব একটা গ্রাহ্য্য করলাম না। বোর্ড বাজার পর্যন্ত পৌছে বুঝলাম কি ঝুঁকিটা নিয়েছি।

এটি হাসান উদ্দিন সরকারের এলাকা। তিনি তখনও জাতীয়তাবাদী ধানেরশীষ হননি। পল্লীবন্ধু এরশাদের সৈনিক। শহুরে বাহন তার পছন্দ হবে কেন? রোগি, শিশু, নারী কারো দোহাই দিয়েই পার পেলাম না। হাসান সাহেবের নির্দেশে গাড়ির সব কটি কাঁচ ভেঙে দেওয়া হলো।

অরোহীদের আতঙ্ক, ভয় ইথ্যাদির কথা । আর বলতে চাই না। পরদিন অফিসে বড় কর্তার কোপানলে পড়লাম। আমার মত অর্বাচীনদের জন্যেই সরকারের এই দুর্গতি। হরতালের মধ্যে কেন গাড়ি বের করলাম ইত্যাদি।

আমারও জীদ চেপে গেল বললাম সরকারের যে ক্ষতি হয়েছে তা আমি পুষিয়ে দেব। তারপর থেকে শুরু হলো দুর্ভোগের চুড়ান্ত। সে সময় কাঁচের দাম পড়েছিল ২৬ হাজার টাকা। আমার প্রায় অড়াই মাসের বেতনের সমান। প্রতি মাসে বেতনের পর কাঁচের কিস্তি দিতাম।

এভাবে শেষ হলো নয়টি দুঃসহ মাস। কাঁচের কিস্তির পর আমার স্ত্রী এত অল্প টাকায় সংসার কি ভাবে টেনে নিয়ে যেত ভাবলে এখন অবাক লাগে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.