আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এদেশে ভারতীয় চলচিত্র প্রদর্শনের বিরুদ্ধে কথা বললেই ভারতের বিরুদ্ধে অথবা পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলা বোঝায় না! এই ব্যাপারটা একজন পার্টটাইম সাংবাদিকের অবশ্যই বোঝার কথা!!!

একমুখাপেক্ষি না হয়ে যা কিছু ভাল তা গ্রহন করা উচিৎ...

“কালচারের সংস্কৃতি নাই, নলেজের গিয়ান নাই!!” এটা আমার খুব প্রিয় একটা ডায়ালগ, যার কোনো অর্থ খুঁজে পেলেও পেতে পারেন সেই অমূল্য রতন যা দিয়ে একটা বক্র রেখা চলে যাবে অনেক দূরে, কোনো এক ক্রিকেট মাঠে, যেখানে ফুটবল খেলা হয়, আর একটা মাইকেল জ্যাকসন হাতে এপলের আইপড, পায়ে বিল গেটসের জুতা. . . “ কি আশীফ রবি ভাই, লাইনটা পড়তে অনেক কষ্ট হলো বুঝি? আর একবার পড়ে দেখেনতো অর্থটা বুঝতে পারেন কিনা। আপনিতো ফুলটাইম ভাবুক, অর্থটা নিশ্চয়ই আর কেউ না বুঝলেও আপনি বুঝতে পারবেন. . . সরাসরি এটাক করে বলি, কিছু মাথা মোটা পাবলিকের এটা বোঝা দরকার যে বাংলাদেশের আয়তন ভারতের তুলনায় অনেক অনেক গুন ছোটো। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ভারতের জনসংখ্যার তুলনায়ও অনেক কম। জনসংখ্যা এবং আয়তনের মতোই বাংলাদেশে প্রদর্শনী হলগুলোর সংখ্যা ভারতের তুলনায় অনেক কম। প্রদর্শনী হলগুলোর কথায় কেনো আসলাম তা আর কারো মাথায় না আসলেও অন্তত আশীফ রবি ভাইয়ের মাথায় আসার কথা।

কেনোনা, যেসব মাথামোটা পাবলিকের কথা বললাম তাদের মধ্যে আশারাখি রবি ভাই কখনই পড়বেন না! দেশীয় চলচিত্রঃ একটা সময় ছিলো যখন এই বাংলা চলচিত্র দেখার জন্য আমরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। সময়টা ১৯৯১/৯২/৯৩ সাল। তখন মাসে একবার কোনো এক শুক্রবারে বাংলা চলচিত্র দেখানো হতো। তাই প্রতি শুক্রবারে বেলা তিনটার একটু পরেই অধীর আগ্রহ নিয়ে সবাই বিটিভি চালু করে রাখতো অথবা আগের দিন রাতেই অনুষ্ঠানসূচি দেখে অনেকেই নিশ্চিত হতো যে আজ বাংলা চলচিত্র দেখাবে কিনা। যদি ছবি দেখানো না হতো, অথবা বলা হতো যে আজ দেখবেন মুভি অফ দ্যা উইক. . . . তখন অনেকেরই মেজাজটাই খারাপ হয়ে যেতো।

বাংলা ছবি না দেখতে পারায় অনেকেরই যে ঘুম হারাম হয়ে যেতো তা এখন হয়তো অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হবে! সত্তর এবং আশির দশকের বাংলা চলচিত্র নিয়ে একটু পর্যালোচনা এবং পার্থক্য করার চেষ্টা করলেই বোঝা যায় যে দেশীয় চলচিত্র ঠিক উন্নতির পথেই এগুচ্ছিল। প্রযুক্তির ব্যাবহারের সাথে সাথে অভিনয়েও পরিবর্তন আসছিলো। তেমনিভাবে সত্তর এবং নব্বইয়ের দশকের বাংলা চলচিত্রগুলোও পাশাপাশি পর্যালোচনা করলে আপনি নিজেই অনেক অনেক পার্থক্য দেখতে পাবেন। পার্থক্যটা যেমন অভিনয়ের দিক থেকে পাবেন তেমনি প্রযুক্তির ব্যাবহার অথবা দৃশ্যধারণের মান থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই পার্থক্য পাবেন। তারপরও আমি/আমরা/আপনারা বলবেন যে বাংলা চলচিত্র উন্নতির দিকে এগুচ্ছিলো না? অথবা বাংলা চলচিত্র কোনো মানেরই নয় অথবা এতটাই নিন্মমানের যা দেখার রূচিই অনেকের নেই! ও. . . আপনি অথবা আপনারাতো নাক ছিটকিয়ে আমাদের চলচিত্রের সাথে তুলনা করছেন ভারতীয় অথবা উন্নত বিশ্বের চলচিত্রের!! অথচ এই বাংলা ছবি দেখার জন্যই একসময় ঘরে ঘরে হৈ-হুল্লোর লেগে যেতো! একটা সময় আমরা ”বাংলা ছবি” বলে কখনই নাক ছিটকাটাম না, একসময় বাংলা ছবি নিয়ে আমাদের চাওয়াটা আকাশ ছোঁয়ার মতো ছিলো না! কিন্তু নব্বইয়ের দশকের মাঝখানে এসে হঠাৎ করে আমাদের চাওয়াটা এতোটা বেড়ে গেলো কেনো সেটা একটা গভীর পর্যালোচনার বিষয়।

এখনকার টিনএজাররা দেশীয় চলচিত্রের ক্ষেত্রে “বাংলা চলচিত্র” শব্দটা ব্যাবহার করে নাক ছিটকায়! এখানে টিনএজারদের মূলত কোনো দোষ নেই। এমনকি সাধারণ মানুষরা যারা এখন বাংলা চলচিত্র মানের কারণে দেখেন না, তাদেরও কোনো দোষ নেই। কেনোনা সাধারণরা যা কিছু ভালো তাই গ্রহণ করবে। সাধারণরা কখনই ভাববে না যে কোনটা দেশীয় এবং কোনটা বিদেশীয়! চলচিত্রে অশ্লিলতা এবং কম বিনিয়োগের ছবিঃ বাংলা চলচিত্রে খারাপের পরিবর্তনটা মূলত ১৯৯৭ সালের দিকে শুরু হয়। বিশেষ করে ১৯৯৮ সালের কিছু চলচিত্র শুধুমাত্র অশ্লিলতাকেই কেন্দ্র করে তৈরী করা হয়।

সেসব চলচিত্রে ছিলোনা তেমন কোনো গল্প, ছিলোনা তেমন কোনো ভালো অভিনয়ের অংশ। যেনো চলচিত্রের কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলো অশ্লিলতা। বাংলা চলচিত্র তার অতীত ইতিহাসই যেনো হারিয়ে ফেলেছিলো তখনই। এসব চলচিত্র তৈরীর মূল লক্ষই ছিলো কম পরিশ্রমে অথবা কম বিনিয়োগে কিছু মুনাফা অর্জন। আর প্রযোজকরা চলচিত্রে বেশী বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছিলেন কেনোনা তখন হলবিমূখী দর্শকদের সংখ্যা অনেক অনেক বেড়ে গিয়েছিলো।

অশ্লিলতার মূল কারণ, কম বিনিয়োগের ছবি এবং প্রদর্শনী হলে দর্শক সংখ্যাঃ লক্ষ করলে দেখা যাবে যে ১৯৯৩-৯৪ এর পর থেকে ধীরে ধীরে আমাদের হলগুলোতে দর্শক সংখ্যা কমতে থাকে এবং ৩-৪ বছরের মধ্যে হলবিমৃখী দর্শকের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। প্রদর্শনী হলগুলোতে হঠাৎ দর্শক কমতে শুরু করলো কেনো? চলচিত্রের মানের কারণে? অবশ্যই না। এবং অবশ্যই হ্য. . . দুরকম উত্তর, কারণ ব্যাপরটা পুরোপুরিই আপেক্ষিক. . . চলচিত্রের মান আগেও যেমন ছিলো তখনও তেমনই ছিলো। কিন্তু আগে দর্শক হলে যেতো আর এখন যখন দর্শক বাংলা চলচিত্র থেকে ভালো মানের চলচিত্র ঘরে বসেই দেখতে পেলো তখন অনেকেই হলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বলতে শুরু করলো “বাংলা ছবির মান! ছিঃ কি জঘন্য!! বাংলা ছবির প্রিন্ট, কি জঘন্য!! বাংলা ছবি কেউ দেখে নাকি!!” চলচিত্র দেখাটা বিনোদনের অংশবিশেষ মাত্র। আপনি ঘরে বসে হিন্দি/উন্নত বিশ্বের ঝকঝকে চলচিত্র দেখছেন, অথচ হলে গিয়ে ঘোলা প্রিন্টের বাংলা চলচিত্র দেখছেন না? আপনার ভেতরতো দেশপ্রেমই নাই!! এই যুক্তি/মন্তব্য বিনোদনের ক্ষেত্রে খাটে না!! কখনোই না!! বিনোদনতো বিনোদনই।

আপনার হাতে অপশন আছে ’ক’ অথবা ’খ’ ব্যবহার করার। ’ক’ হলো দেশী, আর ‘খ’ হলো বিদেশী। ‘ক’ এর তুলনায় ‘খ’ এর মান অনেক ভালো। সুতরাং সাধারণ মানুষকে যখন দুটো অপশন দেয়া হবে তখন সবাই ‘খ’-ই ব্যাবহার করবে। কেনোনা তার অতো চুলকানি নেই যে দেশপ্রেম দেখাতে গিয়ে নিন্মমানের প্রোডাক্ট ব্যবহার করবে।

মূলত এটা আসলে দেশপ্রেমের পর্যায়েই পড়ে না। মানুষ সবসময়ই যে কোনো মূল্যে ভালো সার্ভিসটা পেতে চাইবে। দেশের বৃহৎ স্বার্থে কিছু কিছু ব্যাপার নিয়ে সরকারের অবশ্যাই ভাবা উচিৎ। উপরের উদাহরণটাকেই একটু ভাবার চেষ্টা করুন। মানুষকে ‘খ’ এর অপশনটা না দিলে মানুষ ‘ক’ ব্যবহার করেই কিন্তু অভ্যস্ত থাকতো এবং একসময় এদেশে নিশ্চয়ই ’খ’ তৈরী হতো, সময় হয়তো লাগতো।

সময় নষ্ট হলেও বড় পরিমানের রাজস্ব কিন্তু তখনই আসত এবং ‘খ’ তার মানের কারনে দেশের বাইরেও গ্রহনযোগ্যতা পেতে পারতো। অন্যদিকে অনেকের জীবিকারও একটা ব্যবস্থা হতে পারতো। ব্যাপারটা পরিস্কার হওয়ার জন্য একটা উদাহরণ দেই, ভারতে যখন টাটা কোম্পানি প্রস্তাব করলো যে তারা গাড়ি তৈরী করবে তখন ভারত সরকার বাইরে থেকে গাড়ি আমদানী করইা বন্ধ করে দিয়েছিলো। টাটা কোম্পানিকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার জন্য এবং নিজেদেরকে কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে সাবলম্বি হওয়ার জন্য এবং বড় পরিমানের রাজস্ব আদায় করার জন্য এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছিলো। আমাদের দেশে সরকারকে এরকম যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় না! দেখা যাবে কি করে! আমাদের দেশের সরকারের বেশীরভাগ এমপি/মন্ত্রিরাই মাথামোটা পাব্লিক! ভারত সরকার তাদের দেশে আমাদের টিভি চ্যানেল নিষিদ্ধ করে আর আমাদের সরকার এবং আমরা তাদের চ্যানেল নিয়েই মেতে থাকি! এখন আবার তাদের চলচিত্র নিয়ে মাতার চেষ্টা করছি!! কি হাস্যকর! হলে কেনো দর্শক সংখ্যা কমতে শুরু করেছিলো এবং বাংলা চলচিত্র কেনো ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছিলো? এইসব প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই একদিন দিতে হবে।

এইসব পরিস্থিতি তৈরীর জন্য যারা দায়ী তাদেরকে একদিন না একদিন কাঠগোড়ায় দাড়াতেই হবে। যেমনটা দাড়াতে হতো বানিজ্য মন্ত্রি ফারুক সাহেবকে, যিনি একটু বেশী কথা বলেন, আর কাজ করেন কম। একদিন নিশ্চয়ই কাঠগোড়ায় দাড়াতে হবে ১৯৯১-৯৬ সালের তৎকালীন বানিজ্যমন্ত্রি এবং মস্তিষ্কহীন খালেদা জিয়াকে! দেশের মানুষ একদিন তাদেরকে প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে স্মরণ করবে। দেশে বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবল আসলে তথ্য পাচার হয়ে যাবে, আর দেশে ডিশ অথবা স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো অথবা শুধুমাত্র ভারতীয় চ্যানেলগুলো নিয়ে আসলে দেশের সাংস্কৃতির উপর কোনো প্রভাবই পড়বে না, কেমন মাথামোটা ওরা!! আসলে এতটা গভীরে চিন্তা করার ক্ষমতাই ওদের ছিলোনা!! ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে প্রদর্শনী হলগুলোতে দর্শক কমে যাওয়ায় প্রযোজক পরিচালকেরা কম বিনিয়োগের ছবি বানাতে শুরু করেছিলো। ছবি ফ্লপ হলেও ক্ষতিটা যেনো তারা পুষিয়ে নিতে পারতেন সেরকম চিন্তাভাবনা করেই তারা বিনিয়োগ কমিয়েছিলেন।

একসময় তারা আবিষ্কারও করেছিলেন যে যারা হলে যাচ্ছেন তার বেশীরভাগই নিন্মশ্রেনীর এবং যেসব ছবিতে অশ্লিল দৃশ্য দেখানো হচ্ছিল সেসব ছবিই যেনো হিট তালিকায় চলে আসছিলো। আর এরপরই অশ্লিল ছবির যুগটা চলে আসে এবং সুশীল সমাজের লোকজন বলতে শুরু করেছিলো হায় হায়! বাংলা ছবির এ কি হলো!! হল মালিকদের ধান্ধাঃ হল মালিকদের প্রয়োজন শুধুই টাকা. . . . আর এই টাকা উপার্জন করতে গিয়ে যদি প্রদর্শনী হলগুলোতে পর্নও দেখাতে হয়, তাহলেও তারা পিছ পা হবে না। একসময় এই হল মালিকগণই রাড়তি টাকা ইনকামের আশায় বাংলা চলচিত্রে কাটপিস যুক্ত করতেন । সেইসব ভিডিওগুলো এখনও হয়তো কারো না কারো কাছে খুঁজে পাওয়া যাবে। ঐ ভিডিওগুলো/কাটপিসের সাথে পর্নের খুব একটা পার্থক্য করা যায় না।

সরাসরি বলি, হয়তো থ্রি এক্স না, কিন্তু ওগুলো টুএক্স এর চেয়ে একটু বেশীই! এখন যদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে দেশের হলগুলোতে পর্ন চলচিত্র মুক্তি দেয়া হবে তবে হলের মালিকগণ নিশ্চিত এর সমর্থনে মিছিল বের করবেন এবং আশীফ রবির মতো অনেকেই হলে পর্ন চলচিত্র মুক্তি দেয়ার সমর্থনের মিছিলে যোগ দিবেন। (যদিও আশীফ রবি ভাই পর্ণ চলচিত্র মুক্তির মিছিলে নয় বরং ভারতীয় চলচিত্র মুক্তি দেয়ার মিছিলে যোগ দিয়েছেন!) এইসব মিছিলের মূলবক্তব্য হবে রাজস্ব আয়। একজন প্রযোজকের ভাবনা, বাংলা/ভারতীয়/উন্নত বিশ্বের চলচিত্রে বিনিয়োগের পরিমানঃ একজন প্রযোজক সবসময়ই চাইবে মুনাফা অর্জন করতে। চলচিত্রে তার বিনিয়োগ করার মূল কারণই মুনাফা অর্জন এবং মুনাফার পরিমান যতটা সম্ভব বাড়ানো যায় এটাই তার লক্ষ্য। একটা সময় ছিলো তখন আমাদের বাঘা নায়ক মান্নার(মান্নার কথা মনে হলেও একটা জলজ্যন্ত বাঘের ছবি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে!) চলচিত্র একই সময়ে ৫০০ টি প্রদর্শনীতে মুক্তি পেতো।

প্রযোজকরা তখন তাকে নিয়ে নির্মিত চলচিত্রের জন্য বড় রকমের বাজেট দিয়ে চলচিত্র বানাতে সাহস দেখাতো। এখন মান্না নেই, তবে মান্নার জায়গাটা সাকিব খান খুব ভালোভাবেই কেড়ে নিয়েছে। এখন সাকিব খানের চলচিত্র একই সময়ে ৫০০ টি প্রদর্শনীতে মুক্তি পায় কিনা তা বলতে পারলাম না কিন্তু একটা তথ্য দেই যে সাকিব খান একটা চলচিত্র করার জন্য প্রযোজকদের কাছ থেকে ৪০ লাখ করে টাকা নিয়ে থাকেন। কিন্তু কথা হলো ভারতের একজন প্রযোজক অথবা উন্নত বিশ্বের একজন প্রযোজক এবং বাংলাদেশী একজন প্রযোজক কি সম পরিমান অথবা কাছাকাছি পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন? ভারতের একজন প্রযোজক চলচিত্র বানাতে কয়েক’শ কোটি রুপি (বাংলাদেশের হিসেবে বলতে পারেন কয়েক’শ কোটি টাকা) চোখ বন্ধ করেই বিনিয়োগ করে থাকেন, কিন্তু বাংলাদেশের প্রযোজকদের পক্ষে চোখ বন্ধ করে এতো টাকা বিনিয়োগ করা কখনই সম্ভব নয়। এর কারন যেমন দেশের আয়তন, তেমনি জনসংখ্যা এর সাথে যুক্ত হবে মোট প্রদর্শনী হলের সংখ্যা এবং আরও যুক্ত হবে বিশ্বে চলচিত্রটির চাহিদা/গ্রহনযোগ্যতার পরিমান।

আর উন্নত বিশ্ব চলচিত্র তৈরী করতে কয়েক’শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে। ওদেরতো বিলিয়ন-মিলিয়নের হিসাব! আর আমাদের? যে দেশের মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে সে দেশের মানুষ হয়ে আমরা মিলিয়ন/বিলিয়ন টাকায় গড়া ছবির সাথে আমাদের কয়েক কোটি টাকায় বানানো ছবির তুলনা করি!! তাও আবার শিক্ষিতরা!! ছিঃ ধিক্কার নিজেদেরকে!!! ভারতীয় চলচিত্র মুক্তি পেলে দেশীয় চলচিত্রের মানের উন্নয়ন হবে, এটা একটা ভুল চিন্তাধারাঃ আপনি হয়তো ভাবছেন যে ভারতীয় চলচিত্র এদেশে এলে আমাদের প্রযোজক পরিচালকরা ভালো চলচিত্র বানাতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন। একেবারেই ভুল চিন্তা! ভালো চলচিত্র বানানোর আগ্রহ অনেকেরই আছে, কিন্তু পুঁজিটা নাই! পুঁজিটা আসবে কোথা থেকে? আপনার পকেট থেকে? নাকি সরকারের পকেট থেকে? ভারতের চলচিত্র এমনিতেই ভারতসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে মুক্তি পায়(সব চলচিত্র না)। এর মধ্যে আমাদের দেশেও যদি ওদের চলচিত্র মুক্তি পায় তবে ভারতের প্রযোজকরাতো আকাশে উড়তে থাকবেন. . . . আরও টাকা বিনিয়োগ করবেন. . . কেনোনা ভারতের প্রেক্ষাগৃহসহ বাংলাদেশের আরও ৫০০ টি প্রেক্ষাগৃহে তাদের চলচিত্র মুক্তি পাবে। আমাদের প্রযোজকরা কিসের আশায় এতো টাকা বিনিয়োগ করবে? তারা কি ভারতীয় ছবির সাথে পাল্লা দিতে পারবে? তাদের ছবি কি মানসম্পন্ন হলেও ভারতের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি পাবে? তারা কি সত্যিই বিপুল পরিমান টাকা বিনিয়োগ করার ক্ষমতা রাখে? এইসব প্রশ্নের উত্তরে মাথা মোটা পাব্লিকেরা কি বলে? ভারতীয় চলচিত্র এদেশের হলগুলোতে প্রদর্শীতো হতে দিলে হয়তো রাজস্ব আদায় হবে, কিন্তু দেশের সংস্কৃতিক অঙ্গনটা পুরোপুরিই পরিবর্তিত হবে।

বিশেষ করে দেশীয় চলচিত্র পুরোপুরিই ধ্বংসের মুখে পড়বে। মূল কারণ, ভারতের চলচিত্রগুলোর সাথে পাল্লা দেয়ার মতো অর্থ আমাদের নেই! একটা চলচিত্র তৈরী করার জন্য ওরা যতটাকা বিনিয়োগ করতে পারবে আমাদের প্রযোজকরা এতটাকা বিনিয়োগ কখনই করতে পারবে না! ওদের চলচিত্র মুক্তি পায় সাড়া বিশ্বে কয়েক হাজার হলে, আর আমাদের চলচিত্র মুক্তি পায় মাত্র হাতে গোনা শ’খানেক হলে। বাংলা চলচিত্রের গ্রহনযোগ্যতাঃ বাংলাদেশের চলচিত্রগুলো এখনো বিশ্বে তেমন গ্রহনযোগ্যতা পায়নি। এর কারন যে শুধুই চলচিত্রের মান তা কিন্তু নয়। বিশ্বের কাছে আমরা এখনো অনেক ছোটো হয়েই আছি।

এমনকি বড় কিছু করলেও বিশ্ব আমাদেরকে সবসময়ই ছোটো করে দেখতে চায়! দেশ হিসেবেতো ছোটই, বিশ্ব জাতি হিসেবেও আমাদেরকে ছোটো করে দেখে। এর অনেক কারণও রয়েছে। সেই বিশ্লেষনে না গিয়ে এইটুকু বলি, হুমায়ূন আহমেদকেতো আমরা অনেকই বড়ো করে দেখি। কিন্তু এই হূমায়ূন আহমেদকে হূমায়ূন আহমেদ নামে জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য কতটা কষ্ট করতে হয়েছে তা সবচেয়ে ভালো তিনিই বলতে পারবেন। কিন্তু তিনি যদি উন্নত বিশ্বের একজন নাগরিক হতেন তবে তাকে হয়তো এতোটা কষ্ট করতে নাও হতে পারতো।

উন্নত বিশ্বের অনেক লেখকই আছেন যারা একটা বই লিখে লাখ ডলার কামিয়ে ফেলেন, আমাদের দেশে কি এমন কোনো লেখকই নেই যিনি একটা বই লিখে লাখ ডলার কামাতে পারেন? সায়েন্স ফিকশন জাফর ইকবালও লেখেন, সায়েন্স ফিকশন জে কে রোলিংও লেখেন। পার্থক্য হলো জে কে রোলিং তিনি সারা বিশ্বে সমাদৃত হন, আর জাফর ইকবাল শুধুমাত্র বাংলাদেশে!! (আপেক্ষিকতায় অন্যান্য দেশের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন না করাই ভালো)। জে কে রোলিং এর হ্যারি পটার এর সিরিজ বের হয় চলচিত্র হিসেবে আর জাফর ইকবালের নায়ীরা একপর্বের বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে! বিশ্বে আমাদের চলচিত্রের গ্রহনযোগ্যতা পেতে হয়তো আরও বছর দশেক সময় লেগে যেতে পারে। আর ভারতীয় চলচিত্র তার স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর সারা বিশ্বে তেমনকোনো গ্রহনযোগ্যতা পায়নি! হিসেব করলে দেখা যাবে যে আমাদের চলচিত্র আমাদের স্বাধীনতার পর তুলনামূলকভাবে বেশ দ্রুতই গ্রহনযোগ্যতা পেতে শুরু করেছে। আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর মনপুরার মতো ভালো প্রিন্টের ছবি দর্শকদের দেখাতে পেরেছি।

শুধু মনপুরাই নয়। হুমায়ূন আহমেদের বেশ কিছু ছবি, আর ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবিগুলোর প্রিন্ট কোয়ালিটি বেশ ভালো। তবে আমরা ভারত থেকে সবসময়ই হয়তো বেশ কিছু বছর পিছিয়ে থাকবো। এমনিতেই স্বাধীনতা পেতে ভারতের তুলনায় আমাদেরকে ২৪ বছর বেশী অপেক্ষা করতে হয়েছে। একটা দেশের স্বাধীনতার সাথে যদি সে দেশের উন্নয়নের সম্পর্কটা আপনি বুঝে না থাকেন তবে উপরের বর্ননাটুকু পুরোটাই আপনার মাথার উপর দিয়েই যাবে।

শেষকথাঃ গতো পরশু পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম পাবলো পিকাসোর একটি ছবি নিলামে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমান ৭০০ কোটি টাকারও উপরে। এই টাকা দিয়ে বাংলাদেশে একটা ছোটোখাটো ব্রিজ তৈরী করে ফেলা সম্ভব। আমাদের দেশে কি এমন কোনো চিত্র শিল্পি নেই যার ছবি/পেইন্টিং কোটি টাকায় বিক্রি হতে পারে? হয়তো পাবলোপিকাসোর মতো শিল্পি আমাদের নেই, কিন্তু বড় বড় মানের শিল্পি আমাদেরও আছে, আমাদের যা নেই তা হলো টাকা!! আমরা অনেক গরিব! এটাই আমাদের মূল সমস্যা! তবে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি মাত্র ৩৮ বছর হলো। আমরা এখনো শৈশবে।

এরই মাঝে আমরা পড়েছি লোভীদের হাতে. . . !!! আমাদেরকে আরও সময় দেয়া উচিৎ. . . আর আশীফ রবি ভাই, যদি মেনেই নিতে না পারেন যে বাংলাদেশে জন্মের কারণে আপনি বড় পর্দায় ভারতীয়/উন্নত বিশ্নের চলচিত্র দেখতে পারছেন না, তবে সিউরলি ভারতে/উন্নত বিশ্বে চলে যান! আর যদি দেশে থাকতে ইচ্ছে করে এবং বড় পর্দার লোভ সামলাতে না পারেন তবে একটা প্রজেক্টর কিনে নিন, কিছু টাকা খরচ করে বাসায় থ্রিডি সাউন্ড সিষ্টেম তৈরী করে হল পরিবেশ বানিয়ে আপাতত ভারতীয় চলচিত্রের সাথে সাথে উন্নত বিশ্বের ভালো ভালো চলচিত্র দেখুন। আর টাকা না থাকলে মাঝে মাঝে খোঁজ রাখুন টি, এস, সি অথবা পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনে। সেখানে মাঝে মাঝেই ১০-২০ টাকায় কারো জীবন বাঁচাতে ভারতীয়সহ উন্নত বিশ্বের এবং দেশীয় ভালোভালো চলচিত্রগুলো বড় পর্দায় দেখানো হয়। চলে আসুন, আপনারও কিছুটা তৃপ্তি হলো এবং কারো হয়তো জীবনও বেঁচে গেলো. . . ওহ!!! ইদানিং আর এসব নিয়ে লিখি না!! -------------------------------------------------------- -------------------------------------------------------- প্রসঙ্গের বাইরের কথাঃ ১. একজন সাংবাদিক হয়ে রাজাকার শব্দটাকে সস্তা না বানানোই ভালো। অন্যদের কাছ থেকে সস্তায় এ শব্ধটা শুনলেও সত্যিই আপনার কাছ থেকে আশ করি না।

২. খেলা দেখানো এবং প্রদর্শনী হলে চলচিত্র দেখানো দুটো বিষয়কে এক করা কখনই ঠিক নয়। দুটোর প্রেক্ষাপট সম্পূর্ন ভিন্ন এবং এদের মধ্যে একটি সরাসরি সংস্কৃতির সাথে যুক্ত। ৩. আর বিনোদনের সাথে মূলত দেশপ্রেমের সম্পর্কটা পুরোপুরিই আপেক্ষিক। আপনি যেদিকটা ভেবে দেশপ্রেমের কথা বলেছেন তা হয়তো সরাসরি দেশপ্রেমের সাথে যুক্ত নয়, তবে সেরকম কথা বলে দেশকে কিছুটা হলেও ছোটো করা হয়! যদিও ব্যাপারটা সত্য যে বাংলাদেশে জন্মে আপনি কেনো একপ্রকার বিনোদন থেকে বঞ্চিত হবেন!! ----------------------------------------------- রবি ভাইয়ের মূল লেখাটা এখানে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.